বিএনপি ও জামায়াত নেতা দেখভাল করত পাকি জঙ্গীকে
বাংলাদেশে আত্মঘাতী জঙ্গীদের আনাগোনা বেড়েছে। দেশী-বিদেশী জঙ্গীরা মিলে বড় ধরনের আত্মঘাতী স্কোয়াড গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে। এর নেপথ্যে কাজ করে যাচ্ছে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীরা।
গ্রেফতারকৃত জঙ্গীদের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের গঠিত বিশেষ ইসলামী দলের সরাসরি যোগাযোগ ছিল। দলীয় নির্দেশেই এক বিএনপির নেতা ও তার সহোদর ছাত্রশিবির নেতা গ্রেফতারকৃত জঙ্গীদের আশ্রয় দিয়েছিল। আগামী ১০ মার্চ তারা সশরীরে ভারতে বড় ধরনের হামলায় অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। জঈশ-ই-মোহাম্মদের ৫ সদস্যের একটি সুইসাইড স্কোয়াড চলতি সপ্তাহেই বাংলাদেশে পেঁৗছানোর কথা ছিল। তবে বাংলাদেশে তাদের কোন এসাইনমেন্ট ছিল কি-না, তা নিশ্চিত নয়। এদিকে র্যাবের গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেফতারকৃত ৫ জঙ্গীর বিরম্নদ্ধে রাজধানীর কলাবাগান থানায় সন্ত্রাস দমন ও পাসপোর্ট আইনে মামলা হয়েছে। জঙ্গীদের আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত পাকিসত্মানী আত্মঘাতী জঙ্গী রেজোয়ানকে ৭ দিনের ও অপর ৪ জঙ্গীকে ৩ দিনের করে রিমান্ডে পাঠিয়েছে।র্যাবের গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জঈশ-ই-মোহাম্মদ আল কায়েদার সিস্টার জঙ্গী সংগঠন। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরেই জঈশ-ই-মোহাম্মদের তৎপরতা রয়েছে। আল কায়েদার ফমর্ুলা অনুযায়ী_ যেসব দেশ জঙ্গীবাদের উর্বর ভূমি হতে পারে সেসব দেশে প্রথমে দেশীয় জঙ্গীদের উত্থান ঘটানো হয়। কোন কারণে দেশীয় জঙ্গীরা ব্যর্থ হলে পরে বিদেশী জঙ্গীদের পাঠানো হয়ে থাকে। বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ উত্থানে হোঁচট খাওয়ায় পাকিসত্মানের একাধিক জঙ্গী সংগঠন বাংলাদেশে তৎপরতা শুরম্ন করে। এসব বিদেশী জঙ্গী সংগঠন শুধু দেশীয় জঙ্গী সংগঠনকে দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় আল কায়েদার আদলে গড়ে ওঠা জঙ্গী সংগঠন জঈশ-ই-মোহাম্মদ ও লস্কর-ই-তৈয়বাকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। এ জঙ্গী সংগঠন দুটোতে আত্মঘাতী জঙ্গীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। জঈশ-ই-মোহাম্মদের সবচেয়ে মারাত্মক আত্মঘাতী জঙ্গীরাই পাকিসত্মানের বাইরে কাজ করে। গ্রেফতার হওয়া রেজোয়ান আহম্মেদ সেই ভয়ঙ্কর প্রকৃতির আত্মঘাতী জঙ্গী টিমের সদস্য। পাকিসত্মানের জঈশ-ই-মোহাম্মদের আত্মঘাতী জঙ্গীদের মধ্যে সে প্রথম সারির। গত বছরের ১২ নবেম্বর বাংলাদেশে আমেরিকান দূতাবাসে হামলা পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত এলাকা থেকে লস্কর-ই-তৈয়বার পাকিসত্মানী জঙ্গী সৈয়দ আব্দুল কাইয়ুম আজহারী ওরফে সুফিয়ান, মোহাম্মদ আশরাফ ওরফে জাহিদ ও মোহাম্মদ মনোয়ার আলী ওরফে মনোয়ারকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ উত্তরা ও টঙ্গী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। ইতোপূর্বে লস্কর জঙ্গী গ্রেফতার হলেও জঈশ-ই-মোহাম্মদের আত্মঘাতী জঙ্গী গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা বাংলাদেশে এই প্রথম।
এদিকে পাকি জঙ্গী রেজোয়ানের দাবি, সে ৪ মাস আগে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। কিন্তু গোয়েন্দারা বলছে, রেজোয়ান আহম্মেদ প্রায় ৬ মাস আগে বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশ প্রবেশ করেই সে আত্মগোপনে চলে যায়। এজন্য তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছিল না। এমনকি বর্তমান সরকারের আমলে প্রায়ই পাকিসত্মানী জঙ্গীরা বাংলাদেশে আনাগোনা করছে। এসব বিদেশী জঙ্গীকে চাকরি বা নানা কাজের অজুহাতে বাংলাদেশে আসার সুযোগ করে দেয়া হয়। পাকিসত্মান থেকে আসতে সহযোগিতা করেছে যুদ্ধাপরাধীদের গঠিত ইসলামী দলটি। তাদের ডাকেই রেজোয়ান আহম্মেদ বাংলাদেশে আসে। র্যাবের গোয়েন্দা শাখার শীর্ষ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে জানান, বাংলাদেশে রেজোয়ানের সবকিছু দেখভাল করে চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জের সাত নম্বর বড়কুল ইউনিয়নের বিএনপির সভাপতি মহিউদ্দিন ও তার সহোদর ছাত্রশিবির নেতা সালাউদ্দিন। পাকিসত্মান থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ওই বাড়িতেই আশ্রয় পায় সে। কয়েক দিন রেজোয়ান সালাউদ্দিনের বাড়িতেই বসবাস করে। এ সময় মহিউদ্দিন ও সালাউদ্দিন সহোদর রেজোয়ানকে তার পাকিসত্মানী বন্ধু হিসেবে বাড়ির সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। পরবতর্ীতে তারা এদেশীয় বিভিন্ন জঙ্গীর সঙ্গে রেজোয়ানকে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। পর্যায়ক্রমে তারা ৪ জঙ্গী একত্রিত হয়। গ্রেফতারকৃত ৫ জঙ্গীর মধ্যে নান্নু মিয়া ওরফে বেলাল ম-ল ওরফে বিলস্নালের সঙ্গে পাকি জঙ্গীর আগেই যোগাযোগ ছিল। বিলস্নাল মূলত জঈশ-ই-মোহাম্মদের বাংলাদেশী এজেন্ট হিসেবে কাজ করছিল। বিলস্নাল পাশর্্ববর্তী দেশের জঙ্গীদের সীমানত্ম পারাপারের ব্যবস্থা করে থাকে। ইতোপূর্বে বিলস্নাল বহু জঙ্গীকে সীমানত্ম পারাপারে সহায়তা করেছে। এদেশীয় জঙ্গী ইমাদ উদ্দিন ওরফে মুন্না, আবু নাসের মুন্সী ও সাদেক হোসেনের সঙ্গে পাকি জঙ্গী রেজোয়ানের দেখা সাৰাত না হলেও যোগাযোগ ছিল।
পরে মহিউদ্দিন ও সালাউদ্দিন সহোদর মিলে তাদের পরিচিত মুন্না ও সাদেকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। রেজোয়ান মোস্ট ওয়ান্টেড, এ বিষয়টি গ্রেফতারকৃত সবারই জানা। পরে রেজোয়ানসহ ৫ জঙ্গীকে রাজধানীর মিরপুর রোডের ৩৫ নম্বর সুকন্যা টাওয়ারের এফ-৫ নম্বর ফ্যাটে বসবাসের ব্যবস্থা করে দেয় ওই সহোদর। জঙ্গীরা ওই ফ্যাটেই বসবাস করে আসছিল। ওই বাসায় মাঝে মাঝেই জঙ্গীদের গোপন বৈঠকও বসত।
র্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইং সূত্র জানায়, সম্প্রতি বাংলাদেশের সব জঙ্গী সংগঠন একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এটি সম্ভব হলে বাংলাদেশে বড় ধরনের অঘটন ঘটে যাওয়া বিচিত্র নয়। গ্রেফতারকৃত জঙ্গীদের আগামী ১০ মার্চ ভারতে বড় ধরনের হামলায় সশরীরে অংশ নেয়ার কথা ছিল। এ জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছিল। যুদ্ধাপরাধীদের গঠিত একটি বিশেষ ইসলামিক দল এর নেপথ্য নায়ক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। এমনকি রেজোয়ান পাকিসত্মান থেকে তাদের কথায়ই বাংলাদেশে এসেছে। যুদ্ধাপরাধীরা রেজোয়ানকে নিশ্চয়তা দিয়েছিল, বাংলাদেশে তার কোন সমস্যা হবে না। যদি কিছু হয়, তার দেখভাল করবে যুদ্ধাপরাধীদের দলটি। তাদের কথামত জঈশ-ই-মোহাম্মদের ৫ সদস্যের একটি আত্মঘাতী স্কোয়াড বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। তবে এসব জঙ্গীর বাংলাদেশে কোন বড় ধরনের এসাইনমেন্ট ছিল কি-না, তা নিশ্চিত নয়।
No comments