চট্টগ্রাম বিভাগে অবৈধ দখলে সাড়ে তিন লাখ একর- ভূমি দস্যুতা সমাচার ॥ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ২ by মাকসুদ আহমেদ
চট্টগ্রাম বিভাগে কৃষি অকৃষি মিলিয়ে অবৈধ দখলে থাকা জমির পরিমাণ ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৭৮৮ একর। এমনকি চট্টগ্রামে অবৈধ দখলমুক্ত হয়নি প্রায় ৯ হাজার এক একর খাস জমি।
কয়েক হাজার কোটি টাকা মূল্যের এসব খাস জমি দখলে রেখেছে সরকারের আমলা থেকে শুরম্ন করে ভূমি অফিসের দারোয়ান পর্যনত্ম অনেকেই। ভূমি অফিস থেকে তথ্য নিয়ে ভূমিদসু্যরা সরকারী খাস ও পরিত্যক্ত জায়গা দখলের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জমিও দখলের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছে সরকারের মূল্যবান সম্পত্তি অবৈধ দখলে রেখে ভাড়া বাণিজ্যের মাধ্যমে। জেলা প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগের ও ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে নিজেরা যেমন দখলে নেমেছে তেমনি ভূমিদসু্যদেরও মাসোহারার মাধ্যমে অবৈধ তৎপরতা অব্যাহত রাখতে সহযোগিতা করছে।বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিভাগে কৃষি অকৃষি মিলিয়ে অবৈধ দখলে থাকা জমির পরিমাণ ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৭৮৮ একর, এ বিভাগে অর্পিত ৪৮ হাজার ৩০৭ একর, পরিত্যক্ত ৭০১ একর এবং সরকারী প্রতিষ্ঠানের ২ লাখ ৪ হাজার ২১৫ একর জমি অবৈধ দখলে রয়েছে। তবে এসব সরকারী সম্পত্তির দখলদারদের কোন তালিকা নেই বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে। সূত্র জানিয়েছে, দখলদারদের তালিকা প্রেরণের জন্য জেলা প্রশাসনকে তাগাদা দিলেও এখনও তারা তালিকা তৈরি করতে পারেনি। এৰেত্রে জেলা প্রশাসন এবং তহসিল অফিসের গাফিলতি রয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্রমতে, চট্টগ্রামের আনাচে কানাচে এমনকি শহরের প্রাণকেন্দ্রেও সরকারী ভূমি অবৈধ দখলে রেখেছে ভূমিদসু্যরা। ভূমি অফিস ও জেলা প্রশাসনের পৃথক পৃথক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে চট্টগ্রামে ১৪টি উপজেলায় সরকারী খাস ও পরিত্যক্ত জমির পরিমাণ প্রায় ৯ হাজার একর। কয়েক হাজার কোটি টাকা মূল্যের এসব জায়গায় ভূমিদসু্যরা অবাধে ভাড়া বাণিজ্য চালিয়ে আসছে। কিন্তু প্রশাসন নিশ্চুপ ভূমিকায় থেকে তাদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায় করছে। সমপ্রতি ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে আসা এক চিঠিতে পরিকল্পনা কমিশনের উপপ্রধান সায়েদুজ্জামানের অবৈধ দখলে থাকা বি এস দাগ নং-৭২, ৭৩, ৭৪, ৭৫, ৭৬, ৭৯ ও ৮২ দাগে থাকা ৮০ কোটি টাকা মূল্যের ভূমি পুনরম্নদ্ধারের ফাইল চট্টগ্রামে আসলেও জেলা প্রশাসন মাসোহারা নিয়ে চুপসে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম মহানগরসহ ১৪টি উপজেলার পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৯ হাজার একর সরকারী খাস ও পরিত্যক্ত ভূমির মধ্যে নগরীতেই রয়েছে প্রায় ২৯১ একর। মীরসরাইয়ে ১ হাজার ৪৪২ একর, সীতাকুন্ডে ২২৭ একর, হাটহাজারীতে ৭৯৬ একর, ফটিকছড়িতে ৯৯০ একর, রাউজানে ১ হাজার ২৭৪ একর, রাঙ্গুনিয়ায় ৪১৭ একর, সন্দ্বীপে ৪০৩ একর, বোয়ালখালিতে ৫১৭ একর, পটিয়ায় ৫০৭ একর, চন্দনাইশে ৩৪৫ একর, সাতকানিয়ায় ৪৩২ একর, লোহাগাড়ায় ১০১ একর, আনোয়ারায় ৬২৭ একর ও বাঁশখালিতে ৫৭৩ একর ভূমি এখনও পুনরম্নদ্ধার হয়নি। এসব ভূমি থেকে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে তেমনি অবৈধ দখলে থাকা ভূমিদসু্যরা নিজেদের আখের গুছিয়ে কোটিপতি বনে যাচ্ছে।
চান্দগাঁও সার্কেল ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং-১৪-৩৩৭/০৮-২৮৯৬/এসএ তারিখ: ১৪/৮/২০০৮-এর এক চিঠিতে ১৬০ কাঠা সরকারী পরিত্যক্ত ভূমি অবৈধ দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেয়া হলেও জেলা প্রশাসন চান্দগাঁও সার্কেল ভূমি অফিসে চিঠি চালাচালির মধ্য দিয়ে ফাইল চাপা দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছে।
No comments