এরশাদকে হটাতে লাশ হলো নূর হোসেন, কিন্তু দুই নেত্রীর কাছে গণতন্ত্র কতটুকু নিরাপদ by বিপূল খান
গণতন্ত্রের সুফল এদেশের জনগণ এখনো পর্যন্ত
না পেলেও গণতন্ত্র সম্পর্কে কম বেশি সকলেরই জানা। তবে মজার ব্যাপার হলো
হরবড়ই এ দেশের ফল হলেও এ সম্পর্কে ততোটা ওয়াকিবহাল নয় দেশর সকলে।
সুধী পাঠক এ ফলটি আজকের লেখায় প্রাসঙ্গিক বলেই হরবড়ইয়ের একটা গল্প দিয়ে আজ শুরু করছি।
আমার
আত্মীয় এক সময় বাংলাদেশ বেতারের সংবাদ পাঠক খোন্দকার ফারুখ হোসেন। প্যারিস
থেকে দেশে ফেরার সময় কিছু কমলা লেবু এনেছিলেন। সে লেবুর ফেলে দেওয়া বীজ
থেকে গাছ বড় হয়েছিল। আর ওমনি শুরু হয়েছিল তার দীর্ঘ পরিচর্যা।
অতি আদর যত্নে গাছটি ধীরে ধীরে ফলবান গাছে পরিণত হলো। কমলালেবুর সাদৃশ ফলও এসেছিল গাছে। পরিবাবের সবাই মহাখুশী কারণ পাবনা শহরে তারা বোধ হয় কমলালেবুর চাষে পথিকৃত হতে যাচ্ছেন।
ফলটি খাওয়ার উপযোগী হলে সবাই যখন মুখে দিল সহসাই পরিবেশ তখন গেল পাল্টে। সকলেরই ভুরু গেল কুচকে। চোখ গড়িয়ে এলো জল। চোখে মুখে ফুটে উঠলো হতাশার রেখা।
এর কারণ একটাই। তাহলো প্রতিা আর প্রাপ্তির সমন্বয়হীনতা। আসলে উৎপন্ন ফলটি কমলালেবু সাদৃশ বলেই সকলের মনে সৃষ্টি করেছিল প্রত্যাশা আর গুণাবলীতে সম্পূর্ন ভিন্ন প্রকৃতি হওয়ায় সকলের মনে জন্ম নিয়েছিল হতাশা।
সেটি স্বাদে সুস্বাদুর পরিবর্তে এতোই টক ছিল যে তা বাঘের পশ্চাৎপদে প্রবেশ ঘটালে বাঘ দিক বিদিক শুন্য হয়ে পালাতে দৌঁড় শুরু করত। অবশেষে এই অদুরে ফলটির নাম দেওয়া হল হরবড়ই।
কারন হরবড়ই হল অত্যাধিক টক জাতীয় দেশীয় এক ধরনের অবহেলিত ফল।
গত ২৯ ডিসেম্বর এমনই এক ঘটনা ঘটে গেল জাতীয় জীবনে। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সভাপতি ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাধারন সম্পাদক পদে পুনরায় নির্বাচিত হলেন। কাউন্সিলররা আগামীতে দল পরিচালনায় পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠনে দলীয় সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের কাছে মতা অর্পণ করেন।
প্রাপ্ত মতায় মতাবান দলীয় সভানেত্রী ও দেশের গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের ভাষা পরিহার করে কাউন্সিলরদের উদ্দেশে বল্লেন, ‘সৈয়দ আশরাফসহ মুরুব্বিদের সঙ্গে আলোচনা করে পূর্নাঙ্গ কমিটি করব।’
যা গণতন্ত্রের ভাষায় হতে পারতো আপনারা আমাকে যে মতা দিয়েছেন আমি সেই মতাবলে কাউন্সিলরদের গোপন ভোটে বিভিন্ন পদের জন্য বিভিন্ন নেতা ঠিক করছি ‘আর এর মাধ্যমে সারা দেশের নেতা ও কর্মীদের একটা মেসেজ দেওয়া যেত যে এক ব্যক্তির সন্তুটি নয়, দলের জন্য কাজ করলে মাঠ পর্যায় থেকে জাতীয় নেতৃত্বে উঠে আসাও সম্ভব।’
আর এভাবেই মাঠ পর্যায়ের নেতাদের মাঝে জনসম্পৃক্ত কর্মকান্ডে নিজেদের বেশি নিয়োজিত করতে মনোযোগী হতেন। দলীয় রাজনীতিতে গণতন্ত্র চর্চা সুসংহত হতো। দলটি আগামীতে দেশের জনগণের মাঝে গণতন্ত্রের প্রকৃত সুবাতাস ছড়াতে পারতো।
কিন্তু তা হলো না। আর না হওয়াটা আমাদের জাতীয় নেতৃত্বের অজ্ঞতা নাকি প্রজ্ঞাহীনতা তা বলা মুশকিল।
তবে ১৯৭৫-এর ১৫ আগষ্টের পট পরিবর্তনের পর দেশে চাকুরীজীবি কাম রাজনীতিবীদ সাহেবরা দেশে যে অগতান্ত্রিক ধারার নোংরা রাজনীতির প্রবর্তন করে দেশের বারোটা বাজিয়ে গেছেন, দেশের গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনার মুখে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা থাকলেও কার্যত তিনি যেন সেই ধারাটির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছেন।
দলীয় সভাপতির ইচ্ছা পূরণে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পরিবর্তে জিয়াউর রহমানের প্রবর্তিত জাতীয়তাবাদীর মডেলই যেন তাকে আকৃষ্ট করেছে বেশি। সে মুদ্রাতেই যেন তিনি নিজ দলের কিংবা দেশীয় রাজনীতির ভবিষ্যত হিসাব মিটাতে চাচ্ছেন। এতে গণতন্ত্র লাঞ্চিত হচ্ছে হোক তাতে কার কি?
গনতন্ত্র চর্চার এমন হাল চিত্রে প্রসঙ্গ ক্রমে উঠে আসে বিগত এরশাদ সরকারের মতাধর মন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেমের কথা।
এরশাদ পতন আন্দোলনে দেশের জননেত্রী ও দেশনেত্রী এক রাতে মিলিত হয়েছিলেন জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বামীর মহাখালিস্থ সরকারী বাসভবনে।
সে সময় এক জনসভায় শাহ মোয়াজ্জেম বলেছিলেন, ‘আমরা জানি গভীর রাতে নর-নারী একান্তে মিলিত হলে নব জাতকের জন্ম হয়। কিন্তু আজ গভীর রাতে আমাদের দেশের দুই নারী নেত্রীর ঘটবে মহামিলন, দেখা যাক জাতি তাতে কি পায়।’
এরশাদ পতনের দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পর আজ পর্যন্ত জাতি যা পেল তা কি ভোটবিহীন দলীয় নেতা নির্বাচনের অন্তরালে নিরংকুশ আধিপত্য নির্মানের সংস্কৃতি?
তাই যদি হয় তবে এরশাদকে হটাতে শহীদ নূর হোসেনের লাশের উপর দাঁড়িয়ে এই দুই নেত্রীর কাছে গণতন্ত্র কতটুকু নিরাপদ থাকলো।
সত্যিই জাতির দূভাগ্য, চাকুরীজীবি কাম রাজনীতিবীদদের রোপিত বিষবৃরে ফল গণতন্ত্রের মানসকন্যার খেতাবধারী শেখ হাসিনার গণতন্ত্রের সকল চিন্তা চেতনাকে কলুষিত করে ফেলেছে।
আওয়ামী লীগের জাতীয় সন্মেলনে সে কথারই যেন প্রতিধ্বনিত হয়েছে সর্বেেত্র। কথা উঠেছে দেশের গণতন্ত্রের মানসকন্যার গণতন্ত্র চর্চা নিয়ে। এটাই যদি গণতন্ত্রের মানসকন্যার গণতন্ত্রের রূপকল্প হয় তবে দেশে দীর্ঘায়িত হবে রাজনীতিবিদদের গণতন্ত্র গণতন্ত্র খেলা।
যা দেশীয় রাজনীতির মাঠে রাজনীতিবীদদের উদ্ভাবিত নব সংস্করনের এই গণতন্ত্রের ফর্মূলাটি তার ভবিষ্যত নামকরণে পড়বে মহা সংকটে। আর জনগনকে গণতন্ত্র নামক কমলা লেবুর প্রত্যাশায় অপো করতে হবে হরবড়ই প্রাপ্তির জন্য।
তাই জনগনকে আর ফাঁকি নয়, গণতন্ত্রকে আর অপমান নয়, দেশীয় রাজনীতিবিদদের উদ্ভাবিত গণতন্ত্রের এখনোই সরাসরি নামকরণ করা হোক হরবড়ই।
[লেখক : লেখক ও কলামিস্ট।]
অতি আদর যত্নে গাছটি ধীরে ধীরে ফলবান গাছে পরিণত হলো। কমলালেবুর সাদৃশ ফলও এসেছিল গাছে। পরিবাবের সবাই মহাখুশী কারণ পাবনা শহরে তারা বোধ হয় কমলালেবুর চাষে পথিকৃত হতে যাচ্ছেন।
ফলটি খাওয়ার উপযোগী হলে সবাই যখন মুখে দিল সহসাই পরিবেশ তখন গেল পাল্টে। সকলেরই ভুরু গেল কুচকে। চোখ গড়িয়ে এলো জল। চোখে মুখে ফুটে উঠলো হতাশার রেখা।
এর কারণ একটাই। তাহলো প্রতিা আর প্রাপ্তির সমন্বয়হীনতা। আসলে উৎপন্ন ফলটি কমলালেবু সাদৃশ বলেই সকলের মনে সৃষ্টি করেছিল প্রত্যাশা আর গুণাবলীতে সম্পূর্ন ভিন্ন প্রকৃতি হওয়ায় সকলের মনে জন্ম নিয়েছিল হতাশা।
সেটি স্বাদে সুস্বাদুর পরিবর্তে এতোই টক ছিল যে তা বাঘের পশ্চাৎপদে প্রবেশ ঘটালে বাঘ দিক বিদিক শুন্য হয়ে পালাতে দৌঁড় শুরু করত। অবশেষে এই অদুরে ফলটির নাম দেওয়া হল হরবড়ই।
কারন হরবড়ই হল অত্যাধিক টক জাতীয় দেশীয় এক ধরনের অবহেলিত ফল।
গত ২৯ ডিসেম্বর এমনই এক ঘটনা ঘটে গেল জাতীয় জীবনে। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সভাপতি ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাধারন সম্পাদক পদে পুনরায় নির্বাচিত হলেন। কাউন্সিলররা আগামীতে দল পরিচালনায় পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠনে দলীয় সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের কাছে মতা অর্পণ করেন।
প্রাপ্ত মতায় মতাবান দলীয় সভানেত্রী ও দেশের গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের ভাষা পরিহার করে কাউন্সিলরদের উদ্দেশে বল্লেন, ‘সৈয়দ আশরাফসহ মুরুব্বিদের সঙ্গে আলোচনা করে পূর্নাঙ্গ কমিটি করব।’
যা গণতন্ত্রের ভাষায় হতে পারতো আপনারা আমাকে যে মতা দিয়েছেন আমি সেই মতাবলে কাউন্সিলরদের গোপন ভোটে বিভিন্ন পদের জন্য বিভিন্ন নেতা ঠিক করছি ‘আর এর মাধ্যমে সারা দেশের নেতা ও কর্মীদের একটা মেসেজ দেওয়া যেত যে এক ব্যক্তির সন্তুটি নয়, দলের জন্য কাজ করলে মাঠ পর্যায় থেকে জাতীয় নেতৃত্বে উঠে আসাও সম্ভব।’
আর এভাবেই মাঠ পর্যায়ের নেতাদের মাঝে জনসম্পৃক্ত কর্মকান্ডে নিজেদের বেশি নিয়োজিত করতে মনোযোগী হতেন। দলীয় রাজনীতিতে গণতন্ত্র চর্চা সুসংহত হতো। দলটি আগামীতে দেশের জনগণের মাঝে গণতন্ত্রের প্রকৃত সুবাতাস ছড়াতে পারতো।
কিন্তু তা হলো না। আর না হওয়াটা আমাদের জাতীয় নেতৃত্বের অজ্ঞতা নাকি প্রজ্ঞাহীনতা তা বলা মুশকিল।
তবে ১৯৭৫-এর ১৫ আগষ্টের পট পরিবর্তনের পর দেশে চাকুরীজীবি কাম রাজনীতিবীদ সাহেবরা দেশে যে অগতান্ত্রিক ধারার নোংরা রাজনীতির প্রবর্তন করে দেশের বারোটা বাজিয়ে গেছেন, দেশের গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনার মুখে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা থাকলেও কার্যত তিনি যেন সেই ধারাটির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছেন।
দলীয় সভাপতির ইচ্ছা পূরণে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পরিবর্তে জিয়াউর রহমানের প্রবর্তিত জাতীয়তাবাদীর মডেলই যেন তাকে আকৃষ্ট করেছে বেশি। সে মুদ্রাতেই যেন তিনি নিজ দলের কিংবা দেশীয় রাজনীতির ভবিষ্যত হিসাব মিটাতে চাচ্ছেন। এতে গণতন্ত্র লাঞ্চিত হচ্ছে হোক তাতে কার কি?
গনতন্ত্র চর্চার এমন হাল চিত্রে প্রসঙ্গ ক্রমে উঠে আসে বিগত এরশাদ সরকারের মতাধর মন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেমের কথা।
এরশাদ পতন আন্দোলনে দেশের জননেত্রী ও দেশনেত্রী এক রাতে মিলিত হয়েছিলেন জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বামীর মহাখালিস্থ সরকারী বাসভবনে।
সে সময় এক জনসভায় শাহ মোয়াজ্জেম বলেছিলেন, ‘আমরা জানি গভীর রাতে নর-নারী একান্তে মিলিত হলে নব জাতকের জন্ম হয়। কিন্তু আজ গভীর রাতে আমাদের দেশের দুই নারী নেত্রীর ঘটবে মহামিলন, দেখা যাক জাতি তাতে কি পায়।’
এরশাদ পতনের দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পর আজ পর্যন্ত জাতি যা পেল তা কি ভোটবিহীন দলীয় নেতা নির্বাচনের অন্তরালে নিরংকুশ আধিপত্য নির্মানের সংস্কৃতি?
তাই যদি হয় তবে এরশাদকে হটাতে শহীদ নূর হোসেনের লাশের উপর দাঁড়িয়ে এই দুই নেত্রীর কাছে গণতন্ত্র কতটুকু নিরাপদ থাকলো।
সত্যিই জাতির দূভাগ্য, চাকুরীজীবি কাম রাজনীতিবীদদের রোপিত বিষবৃরে ফল গণতন্ত্রের মানসকন্যার খেতাবধারী শেখ হাসিনার গণতন্ত্রের সকল চিন্তা চেতনাকে কলুষিত করে ফেলেছে।
আওয়ামী লীগের জাতীয় সন্মেলনে সে কথারই যেন প্রতিধ্বনিত হয়েছে সর্বেেত্র। কথা উঠেছে দেশের গণতন্ত্রের মানসকন্যার গণতন্ত্র চর্চা নিয়ে। এটাই যদি গণতন্ত্রের মানসকন্যার গণতন্ত্রের রূপকল্প হয় তবে দেশে দীর্ঘায়িত হবে রাজনীতিবিদদের গণতন্ত্র গণতন্ত্র খেলা।
যা দেশীয় রাজনীতির মাঠে রাজনীতিবীদদের উদ্ভাবিত নব সংস্করনের এই গণতন্ত্রের ফর্মূলাটি তার ভবিষ্যত নামকরণে পড়বে মহা সংকটে। আর জনগনকে গণতন্ত্র নামক কমলা লেবুর প্রত্যাশায় অপো করতে হবে হরবড়ই প্রাপ্তির জন্য।
তাই জনগনকে আর ফাঁকি নয়, গণতন্ত্রকে আর অপমান নয়, দেশীয় রাজনীতিবিদদের উদ্ভাবিত গণতন্ত্রের এখনোই সরাসরি নামকরণ করা হোক হরবড়ই।
[লেখক : লেখক ও কলামিস্ট।]
No comments