এমআরপি চুরি-দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত হোক
এমআরপি (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) ছিল সময়ের দাবি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যখন এমআরপি চালু করেছে, বিভিন্ন দেশের প্রবেশ ও বহির্গমন পথগুলোয় এমআরপির চাহিদা তৈরি হয়েছে, তখন এ ক্ষেত্রে পুরনো পাসপোর্ট প্রথা আঁকড়ে থাকার বিশেষ যুক্তি নেই।
আশার কথা, দেরিতে হলেও বাংলাদেশ এমআরপি প্রযুক্তি গ্রহণ করেছে, গ্রাহকরাও এমআরপি নিয়ে উৎসাহিত হয়েছেন। সবাই স্বীকার করেন, নতুন ব্যবস্থাপনায় উন্নত প্রযুক্তির পাসপোর্ট সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হওয়ায় নাগরিকদের হয়রানি কমেছে। পাসপোর্ট অফিসে দালাল ও দুষ্টলোকদের দৌরাত্ম্য যেমন কমেছে, তেমনি পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতারও অবসান ঘটেছে। এমআরপি প্রযুক্তিতে পাসপোর্টে ডিজিটাল পদ্ধতিতে গ্রাহকের সব তথ্য সনি্নবেশিত হয়। যে কোনো স্থান থেকে সেগুলো পাঠোদ্ধার করা সম্ভব। আন্তর্জাতিক বা দেশীয় অপরাধীর তালিকার সঙ্গেও পাসপোর্ট মিলিয়ে নেওয়া সম্ভব। ফলে এ প্রযুক্তির মাধ্যমে সহজে অপরাধী বা অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের গমনাগমন ঠেকানো সম্ভব। ইতিবাচক উদ্যোগ হলেও বাংলাদেশে এমআরপি চালু হওয়ার পর একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। বেশকিছু মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট চুরির ঘটনা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে। পাসপোর্ট একটি স্পর্শকাতর ডকুমেন্ট। চুরি হওয়া পাসপোর্ট যদি অপরাধী ও অবৈধ কারবারিদের হাতে চলে যায়, তবে তা ভীষণ দুশ্চিন্তার বিষয়। ফলে চুরি হয়ে যাওয়া পাসপোর্ট উদ্ধারে সার্বিক তৎপরতা চালানো উচিত। কে বা কারা চুরির সঙ্গে জড়িত তা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বের করা উচিত। সমকালে প্রকাশিত সংবাদ থেকে বোঝা যায়, এ ক্ষেত্রে গাফিলতি হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গাফিলতির জন্য এমআরপি তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত বিদেশি সংস্থার দায়ও থাকতে পারে। যদি তা-ই হয়, তবে তা স্বাভাবিকভাবেই নাগরিকদের উদ্বিগ্ন করে তুলবে। এ ক্ষেত্রে সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট সব মহলের এগিয়ে আসা উচিত। পাশাপাশি পাসপোর্ট তৈরির উপাদানগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। প্রস্তুত পাসপোর্টের সুরক্ষার দায়িত্বও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের। সর্বোপরি পাসপোর্টে সংরক্ষিত নাগরিকদের তথ্যাবলি আমানত হিসেবেই দেখতে হবে। নাগরিকদের তথ্যাবলির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হবে। কেউ যেন নাগরিকদের তথ্যাবলি ব্যবহার করে তা অসৎ উদ্দেশ্যে কাজে লাগাতে না পারে, সে জন্য সবাইকে তৎপর হতে হবে। তবে সবার আগে দরকার পাসপোর্ট চুরির ঘটনার রহস্যভেদ। এ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা, কালক্ষেপণ নাগরিকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাই শুধু বাড়িয়ে তুলবে। ফলে এ বিষয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের মনোযোগ দেওয়া উচিত।
No comments