প্রাথমিক ও জেএসসির ফল-ছোটদের বড় সাফল্যে অভিনন্দন
দেশের হাজারো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং লাখ লাখ পরিবারে আনন্দ ও খুশির বন্যা_ সংবাদপত্র ও বেতার-টেলিভিশনের এ খবরে বিন্দুমাত্র অতিরঞ্জন নেই। বৃহস্পতিবার পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষার বোর্ড ফাইনালের ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে দেশ-বিদেশের সর্বত্র অল্প
সময়ের মধ্যেই এ বার্তা ছড়িয়ে পড়ে_ বাংলাদেশে ২০১২ সালের পঞ্চম শ্রেণীর বার্ষিক পাবলিক পরীক্ষায় জিপিএ ৫ বেড়েছে এক লাখেরও বেশি। পাসের হার প্রায় শতভাগ। অনুত্তীর্ণ মাত্র তিন শতাংশেরও কম। অষ্টম শ্রেণী শেষে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট বা জেএসসি এবং মাদ্রাসা বোর্ডের জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট বা জেডিসিতে পাসের এই হারও গত বছরের তুলনায় বেশি। উভয় পরীক্ষায় সমানতালে এগিয়ে চলেছে ছেলে ও মেয়েরা। অষ্টম শ্রেণী থেকে জেএসসি পাস করে যারা নবম শ্রেণীতে উঠল তাদের মধ্যে ৪৪ হাজারের বেশি পেয়েছে জিপিএ ৫, গত বছরের তুলনায় ১৪ হাজারেরও বেশি। সমকাল পরিবারের পক্ষ থেকে উত্তীর্ণ সব শিক্ষার্থীকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। তাদের পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। এটা এখন নিশ্চিত করেই বলা যায়, শহর-বন্দর-গ্রাম সর্বত্রই সব শ্রেণী-পেশার মানুষ শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছে। এমনকি বস্তিবাসী কিংবা গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানরাও আর বিদ্যালয়ের বাইরে থাকছে না। কেন এ বিপুল সাফল্য, তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ-মূল্যায়ন শুরু হয়েছে। কেউ বলছেন, সব বিষয়কেই গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। সব ছাত্রছাত্রীকে বিনামূল্যে বই সরবরাহের সরকারি পদক্ষেপ ফের আলোচনায়। সময়মতো বই প্রকাশ করে রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের আনাচে-কানাচের সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই পেঁৗছে দেওয়া এক অনন্য অর্জন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সময়ের কাজ সময়মতো করছে এবং মানসম্পন্নভাবে করছে। বাংলাদেশের সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এ নজির অনুসরণ হতে থাকলে বাংলাদেশের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হতে বেশি সময় দরকার হবে না। অনাবিল আনন্দমুখর সময়েই কিছু বিষয়ের প্রতি সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা উচিত বলে আমরা মনে করি। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মতোই প্রাথমিক সমাপনী ও জেএসসিতে সেরাদের সেরা স্কুলের তালিকায় রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ প্রধান কয়েকটি শহরের স্কুলগুলো। এখন যারা নবম শ্রেণীতে উঠল, আগামী দুই বছর পর তারাই এসএসসিতে অংশ নেবে এবং ভালো ফল করার তালিকায় ফের জ্বলজ্বল করবে তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম। এটা অবশ্যই কৃতিত্ব। একই সঙ্গে ক্রমান্বয়ে শহর ও গ্রাম সর্বত্র আরও অনেক ভালো স্কুল গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য স্কুলের ব্যবস্থাপনা ভালো করা চাই। সৎ ও যোগ্যদের এ জন্য দায়িত্ব দিতে হবে। আর চাই ভালো পড়ানোর মতো শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়া ছাত্রছাত্রীরা যাতে স্কুলশিক্ষকের পেশা বেছে নিতে উৎসাহী হন, সে জন্য বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা বিপুলভাবে বাড়াতে হবে। রেকর্ড ফলের সময়েও কেন কিছু স্কুলে কেউ পাস করল না, তার অনুসন্ধান দরকার। প্রায় সবাই পাস করেছে এবং জিপিএ ৫ প্রাপ্তিতে রেকর্ডের সময়েই আরও একটি বিষয়ে মনোযোগ অপরিহার্য_ শিক্ষার মান বাড়ানো হচ্ছে অব্যাহত প্রক্রিয়া। যারা ভালো করেছে তাদের আরও ভালো করার প্রতি মনোযোগী করে তুলতে হবে এবং অন্যদেরও এ দলে শামিল করাতে প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
No comments