একুশ শতক- ডিজিটাল বাংলাদেশ ॥ ধারণাপত্র ও প্রসঙ্গ কথা-এক by মোস্তাফা জব্বার
২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে বর্তমান জাতীয়
সংসদের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ
গড়ে তোলার অঙ্গীকার ঘোষণা করার পর এক বছরেরও বেশি সময় পার করে ২০১০ সালের
ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে শেখ হাসিনার সরকারকে অন্তত দৃঢ়তার সাথে আরও
স্পষ্টভাবে তার অঙ্গীকার ও পরিকল্পনা ব্যক্ত করতে দেখা গেল।
এর আগে অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত তার বাজেট বক্তৃতায়, প্রধানমন্ত্রী তার
বিভিন্ন ভাষণে এবং সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও নীতি নির্ধারকগণ নানাভাবে
ডিজিটাল বাংলাদেশের সংজ্ঞা বা ধারণা তুলে ধরেছেন। বছর শেষে সরকারের
বর্ষপূর্তিতে গত ৬ জানুয়ারি ২০১০ প্রকাশিত সরকারী ক্রোড়পত্রে আমার লেখায়
ডিজিটাল বাংলাদেশকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একুশ শতকের
সোনার বাংলা বলে শনাক্ত করা হয়। খুব সংৰেপে হলেও এটি স্পষ্ট করা হয় যে,
ডিজিটাল বাংলাদেশ কোন অলীক বিষয় নয়_এটি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত
স্বাধীনতার সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌছে দেয়া ও জাতীয় সমৃদ্ধির একটি
অঙ্গীকার।
এই ঘটনার পর পরই সরকারের আরও দুটি বড় কর্মকা- এটি স্পষ্ট করে যে, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সরকারের অঙ্গীকার আরও স্পষ্ট। গত ২ ও ৩ মার্চ ২০১০ আনত্মর্জাতিক টেলিকম ইউনিয়নের মহাসচিব হামাদুন আই টু্যরের বাংলাদেশ সফরকালে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়টি আরও স্পষ্ট করা হয়। যদিও সেই সময়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণাপত্র উদ্বোধন করা হয়েছে বলে কোন কোন মিডিয়ায় খবর প্রচারিত হয়_ বস্তুত সেটি অফিসিয়ালি ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশের জনসংযুক্তির পরিকল্পনা প্রকাশ করা। অবশ্য উদ্যোক্তারা কখনও কখনও এরকমভাবে কথা বলেছেন যে, সেটি আসলেই ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণাপত্র বলে প্রতীয়মান হতে পারে। এই উপলক্ষে সরকারের ডাক ও তার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যে নিবন্ধটি প্রকাশ করা হয়েছে তাকে "ডিজিটাল বাংলাদেশ ॥ জনসংযুক্তির পরিকল্পনা" বলা হলেও এটি পাঠ করলে স্পষ্টতই বোঝা যাবে যে এর বিষয়বস্তু ডিজিটাল বাংলাদেশ-এর ধারণাপত্র। নিবন্ধের আলোচনা থেকে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকে না। এই ধারণাপত্রের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন পেশ করেন যাকে ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণাপত্র বলে মনে করতেই হবে। যেহেতু উপস্থাপনাটি সজীব ওয়াজেদ জয়ের সেহেতু নিবন্ধটিকেও তার চিনত্মার ফসল বলে আমি মনে করছি। যতদূর জানা গেছে, বিটিআরসি এই ধারণাপত্রের বিষয়টি সংকলিত করলেও ১ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন যমুনায় এই বিষয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাথে বিটিআরসির লেখক দলের চূড়ানত্ম আলোচনা হয় এবং তারই ফসল হচ্ছে নিবন্ধ ও প্রেজেন্টেশন। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে শুরুতে বিটিআরসি আমার ও আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক নূহ উল আলম লেনিনের সাথে ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণাপত্র নিয়ে আলোচনা করেন। ৬ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে বাংলাদেশের সকল পত্রিকায় প্রকাশিত সরকারী ক্রোড়পত্রে ছাপা হওয়া আমার লেখাটি আমি বিটিআরসিকে পাঠাই। তাদের কাছে আমি ইউএনডিপির আনির চৌধুরীর ডিজিটাল বাংলাদেশ লেখাটিও দেখি। ওটির একটি কপি আমার কাছে পাঠানো হয়। তবে শেষ পর্যন্ত যে দলিলটি প্রকাশিত হয় তাকে একেবারেই সজীব ওয়াজেদ জয়ের ধারণা বলেই মনে করতে হবে। স্মরণ করা যেতে পারে, আর কারও লেখায় ডিজিটাল বাংলাদেশের এই ধারণাটি প্রকাশিত হয়নি। এমনকি এই ধারণাপত্রে বা প্রেজেন্টেশনে যেসব বিষয় ছিল সেগুলোও কোথাও এভাবে আলোচিত হয়নি।
অন্যদিকে গত ৪, ৫, ৬ মার্চ ২০১০ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন সেল এবং বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে ঢাকার বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারে আয়োজন করা হয় দেশের প্রথম ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা। এই মেলার পৃষ্ঠপোষক ছিল ইউএনডিপি। মেলায় কেবল যে সরকারের মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর বা সংস্থাগুলো অংশ নিয়েছে তা-ই নয় বরং বেসরকারী খাতসহ ডিজিটাল বাংলাদেশের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রায় সকলেই এতে যোগ দেয়। এটি হয়ে ওঠে ডিজিটাল সরকারের একটি শোকেস।
এক ॥ হামাদুন টু্যরের সফর ও ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণাপত্র : প্রথমেই আমরা আইটিইউ-এর মহাসচিবের সফরের প্রতি দৃষ্টি দিতে চাই। টু্যরের সফরের প্রথম অনুষ্ঠানটির সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের ডাক ও তার মন্ত্রণালয়ের পৰ থেকে ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গত ২ মার্চ ২০১০ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ॥ জনসংযুক্তির পরিকল্পনা-এর উন্মোচন করেন। সেই অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ঘোষণায় যা বলেছেন তার মধ্যে রয়েছে_
ক) এক বছরের মধ্যে দেশের এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদকে ফাইবার অপটিক সংযোগের আওতায় আনা হবে। খ) ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য দেশের সকল হাসপাতালকে তথ্যপ্রযুক্তি সুবিধার আওতায় আনতে হবে। এরই মধ্যে সকল সরকারী হাসপাতালে কম্পিউটার, ইন্টারনেট সংযোগ ও ওয়েবক্যাম দেয়া হয়েছে। শিক্ষাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও এই সংযোগ দেয়া হচ্ছে। গ) তথ্য পারাপারের সুবিধার জন্য দেশকে আরও সাবমেরিন কেবল সংযোগে যুক্ত করা হবে।
অনুষ্ঠানে প্রদত্ত প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণার একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। তাতে ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি হলে তাতে মানুষের ডিজিটাল জীবনধারা কেমন হবে তার অংশ বিশেষ দেখানো হয়।
তবে অনুষ্ঠানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল, প্রধানমন্ত্রীর পুত্র ও বিশিষ্ট কম্পিউটার বিজ্ঞানী সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় ৩৫ মিনিটের একটি মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন। এর সাথে উল্লিখিত ধারণাপত্রও উপস্থাপনা করা হয়। ধারণাপত্রে ডিজিটাল বাংলাদেশের সংজ্ঞা হিসেবে বলা হয়, "Digital Bangladesh can be defined as a happy, prosperous, educated population; free from discrimination, corruption, poverty and hunger, which is truly a people’s state and whose driving force is the digital technology. It encompasses the hopes, dreams and aspirations of the people of Bangladesh. Bangladesh, like most developing countries, recognizes the potential of ICT as an unprecedented lever for economic emancipation as well as an enabler for poverty reduction and human development, both of which are of equal importance.
উল্লেখ করা প্রয়োজন যে সরকারের বর্ষপূর্তির ক্রোড়পত্রে ডিজিটাল বাংলাদেশের সংজ্ঞাকে এভাবে লেখা হয়েছে : "ডিজিটাল বাংলাদেশ হচ্ছে সেই সুখী, সমৃদ্ধ, শিৰিত জনগোষ্ঠীর বৈষম্য, দুর্নীতি, দারিদ্র্য ও ৰুধামুক্ত বাংলাদেশ যা প্রকৃতপৰেই সম্পূর্ণভাবে জনগণের রাষ্ট্র, এবং যার মুখ্য চালিকাশক্তি হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। এটি বাংলাদেশের জনগণের উন্নত জীবনের প্রত্যাশা, স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা। এটি বাংলাদেশের সকল মানুষের ন্যূনতম মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর প্রকৃষ্ট পন্থা। এটি একাত্তরের স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের রূপকল্প। এটি বাংলাদেশের জন্য স্বল্পোন্নত বা দরিদ্র দেশ থেকে সমৃদ্ধ ও ধনী দেশে রূপান্তরের জন্য মাথাপিছু আয় বা জাতীয় আয় বাড়ানোর অঙ্গীকার। এটি বাংলাদেশে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সোপান। এটি হচ্ছে একুশ শতকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা।"
এই উপস্থাপনায় জনাব জয় ডিজিটাল বাংলাদেশের চারটি খাতের প্রাধিকারের কথা বলেন। যদি বলা হয় যে, জয়ের চিনত্মায় এগুলো ডিজিটাল বাংলাদেশের স্তম্ভ-তবে ভুল বলা হবে না। সেই খাতগুলো হলো, ই-গবর্নেন্স, আইটি এডুকেশন, আইটি শিল্প ও আইটি আউটসোর্সিং। জয়ের উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, ই-গবর্নেন্সের আওতায় থাকছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সরকারের সেবা প্রদান, দুর্নীতির উচ্ছেদ, সরকারী সেবার দৰতা বৃদ্ধি এবং অনলাইন সরকারী সংগ্রহ সংক্রান্ত তথ্যাবলী। ই-গবর্নেন্স বিষয়ে মূল ইংরেজী ধারণাপত্রে বলা হয়েছে, "When people think of Digital Bangladesh, this is the sector they think of. That?s because this is the most visible area of the government?s direct efforts towards Digital Bangladesh. This is also the one area which is completely in the government?s hands. E-governance in a nutshell is computerizing all government data and providing all government services electronically. Our government has taken many different initiatives in this regard.
জনাব জয় তার উপস্থাপনার সাথে প্রদত্ত নিবন্ধে ই-গবর্নেন্স-প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর কথাও বলেন। তিনি বলেন, Our government has set up websites for all district administrations through their own web portals. The Machine Readable Passport project is another example. A pilot project has been undertaken to computerize land registration. The Ministry of Health has connected all union health clinics and enabled consultations with experts in Dhaka via teleconferencing. In the financial services side we have introduced electronic money transfers and online payments. We are also in the process of introducing mobile payments. There are countless other examples of e-governance projects that have been undertaken and this will continue until one day, anyone requiring any government service or information will be able to obtain it electronically, either through a computer or a mobile device.
ই-গবর্নেন্স-এর প্রয়োজনীয়তা বা কার্যকারিতা প্রসঙ্গে বলা হয়, There are obviously two major advantages of e-governance. Firstly, it tremendously improves the efficiency of government services and information delivery. Presently, with paper based records it can take weeks if not months to simply get detailed information from a government agency or department. Applications and processes can take even longer as the paperwork shuttles back and forth between departments. Making all of this electronic eliminates makes it possible to get done in a matter of hours what could take weeks. Secondly, it virtually eliminates the possibility of corruption. As all transactions are digitized, there becomes an electronic trail which makes it extremely difficult, if not impossible to manipulate the system. This makes it impossible to extort the end user.
প্রসঙ্গত দৃষ্টানত্ম হিসেবে উলেস্নখ করা হয় যে, To give one example, the National ID system with the electronic voters list makes it extremely difficult to register false voters and thus makes election rigging much more difficult. Our government also plans to put all government procurement information online. This makes the process completely transparent and tender manipulation will become a thing of the past.
ঢাকা, ১১ মার্চ ২০১০ লেখক তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ-এর প্রণেতা ই-মেইল : mustafajabbar@gmail.com, ওয়েবপেজ : www.bijoyekushe.net
এই ঘটনার পর পরই সরকারের আরও দুটি বড় কর্মকা- এটি স্পষ্ট করে যে, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সরকারের অঙ্গীকার আরও স্পষ্ট। গত ২ ও ৩ মার্চ ২০১০ আনত্মর্জাতিক টেলিকম ইউনিয়নের মহাসচিব হামাদুন আই টু্যরের বাংলাদেশ সফরকালে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়টি আরও স্পষ্ট করা হয়। যদিও সেই সময়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণাপত্র উদ্বোধন করা হয়েছে বলে কোন কোন মিডিয়ায় খবর প্রচারিত হয়_ বস্তুত সেটি অফিসিয়ালি ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশের জনসংযুক্তির পরিকল্পনা প্রকাশ করা। অবশ্য উদ্যোক্তারা কখনও কখনও এরকমভাবে কথা বলেছেন যে, সেটি আসলেই ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণাপত্র বলে প্রতীয়মান হতে পারে। এই উপলক্ষে সরকারের ডাক ও তার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যে নিবন্ধটি প্রকাশ করা হয়েছে তাকে "ডিজিটাল বাংলাদেশ ॥ জনসংযুক্তির পরিকল্পনা" বলা হলেও এটি পাঠ করলে স্পষ্টতই বোঝা যাবে যে এর বিষয়বস্তু ডিজিটাল বাংলাদেশ-এর ধারণাপত্র। নিবন্ধের আলোচনা থেকে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকে না। এই ধারণাপত্রের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন পেশ করেন যাকে ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণাপত্র বলে মনে করতেই হবে। যেহেতু উপস্থাপনাটি সজীব ওয়াজেদ জয়ের সেহেতু নিবন্ধটিকেও তার চিনত্মার ফসল বলে আমি মনে করছি। যতদূর জানা গেছে, বিটিআরসি এই ধারণাপত্রের বিষয়টি সংকলিত করলেও ১ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন যমুনায় এই বিষয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাথে বিটিআরসির লেখক দলের চূড়ানত্ম আলোচনা হয় এবং তারই ফসল হচ্ছে নিবন্ধ ও প্রেজেন্টেশন। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে শুরুতে বিটিআরসি আমার ও আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক নূহ উল আলম লেনিনের সাথে ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণাপত্র নিয়ে আলোচনা করেন। ৬ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে বাংলাদেশের সকল পত্রিকায় প্রকাশিত সরকারী ক্রোড়পত্রে ছাপা হওয়া আমার লেখাটি আমি বিটিআরসিকে পাঠাই। তাদের কাছে আমি ইউএনডিপির আনির চৌধুরীর ডিজিটাল বাংলাদেশ লেখাটিও দেখি। ওটির একটি কপি আমার কাছে পাঠানো হয়। তবে শেষ পর্যন্ত যে দলিলটি প্রকাশিত হয় তাকে একেবারেই সজীব ওয়াজেদ জয়ের ধারণা বলেই মনে করতে হবে। স্মরণ করা যেতে পারে, আর কারও লেখায় ডিজিটাল বাংলাদেশের এই ধারণাটি প্রকাশিত হয়নি। এমনকি এই ধারণাপত্রে বা প্রেজেন্টেশনে যেসব বিষয় ছিল সেগুলোও কোথাও এভাবে আলোচিত হয়নি।
অন্যদিকে গত ৪, ৫, ৬ মার্চ ২০১০ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন সেল এবং বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে ঢাকার বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারে আয়োজন করা হয় দেশের প্রথম ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা। এই মেলার পৃষ্ঠপোষক ছিল ইউএনডিপি। মেলায় কেবল যে সরকারের মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর বা সংস্থাগুলো অংশ নিয়েছে তা-ই নয় বরং বেসরকারী খাতসহ ডিজিটাল বাংলাদেশের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রায় সকলেই এতে যোগ দেয়। এটি হয়ে ওঠে ডিজিটাল সরকারের একটি শোকেস।
এক ॥ হামাদুন টু্যরের সফর ও ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণাপত্র : প্রথমেই আমরা আইটিইউ-এর মহাসচিবের সফরের প্রতি দৃষ্টি দিতে চাই। টু্যরের সফরের প্রথম অনুষ্ঠানটির সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের ডাক ও তার মন্ত্রণালয়ের পৰ থেকে ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গত ২ মার্চ ২০১০ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ॥ জনসংযুক্তির পরিকল্পনা-এর উন্মোচন করেন। সেই অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ঘোষণায় যা বলেছেন তার মধ্যে রয়েছে_
ক) এক বছরের মধ্যে দেশের এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদকে ফাইবার অপটিক সংযোগের আওতায় আনা হবে। খ) ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য দেশের সকল হাসপাতালকে তথ্যপ্রযুক্তি সুবিধার আওতায় আনতে হবে। এরই মধ্যে সকল সরকারী হাসপাতালে কম্পিউটার, ইন্টারনেট সংযোগ ও ওয়েবক্যাম দেয়া হয়েছে। শিক্ষাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও এই সংযোগ দেয়া হচ্ছে। গ) তথ্য পারাপারের সুবিধার জন্য দেশকে আরও সাবমেরিন কেবল সংযোগে যুক্ত করা হবে।
অনুষ্ঠানে প্রদত্ত প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণার একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। তাতে ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি হলে তাতে মানুষের ডিজিটাল জীবনধারা কেমন হবে তার অংশ বিশেষ দেখানো হয়।
তবে অনুষ্ঠানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল, প্রধানমন্ত্রীর পুত্র ও বিশিষ্ট কম্পিউটার বিজ্ঞানী সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় ৩৫ মিনিটের একটি মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন। এর সাথে উল্লিখিত ধারণাপত্রও উপস্থাপনা করা হয়। ধারণাপত্রে ডিজিটাল বাংলাদেশের সংজ্ঞা হিসেবে বলা হয়, "Digital Bangladesh can be defined as a happy, prosperous, educated population; free from discrimination, corruption, poverty and hunger, which is truly a people’s state and whose driving force is the digital technology. It encompasses the hopes, dreams and aspirations of the people of Bangladesh. Bangladesh, like most developing countries, recognizes the potential of ICT as an unprecedented lever for economic emancipation as well as an enabler for poverty reduction and human development, both of which are of equal importance.
উল্লেখ করা প্রয়োজন যে সরকারের বর্ষপূর্তির ক্রোড়পত্রে ডিজিটাল বাংলাদেশের সংজ্ঞাকে এভাবে লেখা হয়েছে : "ডিজিটাল বাংলাদেশ হচ্ছে সেই সুখী, সমৃদ্ধ, শিৰিত জনগোষ্ঠীর বৈষম্য, দুর্নীতি, দারিদ্র্য ও ৰুধামুক্ত বাংলাদেশ যা প্রকৃতপৰেই সম্পূর্ণভাবে জনগণের রাষ্ট্র, এবং যার মুখ্য চালিকাশক্তি হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। এটি বাংলাদেশের জনগণের উন্নত জীবনের প্রত্যাশা, স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা। এটি বাংলাদেশের সকল মানুষের ন্যূনতম মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর প্রকৃষ্ট পন্থা। এটি একাত্তরের স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের রূপকল্প। এটি বাংলাদেশের জন্য স্বল্পোন্নত বা দরিদ্র দেশ থেকে সমৃদ্ধ ও ধনী দেশে রূপান্তরের জন্য মাথাপিছু আয় বা জাতীয় আয় বাড়ানোর অঙ্গীকার। এটি বাংলাদেশে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সোপান। এটি হচ্ছে একুশ শতকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা।"
এই উপস্থাপনায় জনাব জয় ডিজিটাল বাংলাদেশের চারটি খাতের প্রাধিকারের কথা বলেন। যদি বলা হয় যে, জয়ের চিনত্মায় এগুলো ডিজিটাল বাংলাদেশের স্তম্ভ-তবে ভুল বলা হবে না। সেই খাতগুলো হলো, ই-গবর্নেন্স, আইটি এডুকেশন, আইটি শিল্প ও আইটি আউটসোর্সিং। জয়ের উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, ই-গবর্নেন্সের আওতায় থাকছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সরকারের সেবা প্রদান, দুর্নীতির উচ্ছেদ, সরকারী সেবার দৰতা বৃদ্ধি এবং অনলাইন সরকারী সংগ্রহ সংক্রান্ত তথ্যাবলী। ই-গবর্নেন্স বিষয়ে মূল ইংরেজী ধারণাপত্রে বলা হয়েছে, "When people think of Digital Bangladesh, this is the sector they think of. That?s because this is the most visible area of the government?s direct efforts towards Digital Bangladesh. This is also the one area which is completely in the government?s hands. E-governance in a nutshell is computerizing all government data and providing all government services electronically. Our government has taken many different initiatives in this regard.
জনাব জয় তার উপস্থাপনার সাথে প্রদত্ত নিবন্ধে ই-গবর্নেন্স-প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর কথাও বলেন। তিনি বলেন, Our government has set up websites for all district administrations through their own web portals. The Machine Readable Passport project is another example. A pilot project has been undertaken to computerize land registration. The Ministry of Health has connected all union health clinics and enabled consultations with experts in Dhaka via teleconferencing. In the financial services side we have introduced electronic money transfers and online payments. We are also in the process of introducing mobile payments. There are countless other examples of e-governance projects that have been undertaken and this will continue until one day, anyone requiring any government service or information will be able to obtain it electronically, either through a computer or a mobile device.
ই-গবর্নেন্স-এর প্রয়োজনীয়তা বা কার্যকারিতা প্রসঙ্গে বলা হয়, There are obviously two major advantages of e-governance. Firstly, it tremendously improves the efficiency of government services and information delivery. Presently, with paper based records it can take weeks if not months to simply get detailed information from a government agency or department. Applications and processes can take even longer as the paperwork shuttles back and forth between departments. Making all of this electronic eliminates makes it possible to get done in a matter of hours what could take weeks. Secondly, it virtually eliminates the possibility of corruption. As all transactions are digitized, there becomes an electronic trail which makes it extremely difficult, if not impossible to manipulate the system. This makes it impossible to extort the end user.
প্রসঙ্গত দৃষ্টানত্ম হিসেবে উলেস্নখ করা হয় যে, To give one example, the National ID system with the electronic voters list makes it extremely difficult to register false voters and thus makes election rigging much more difficult. Our government also plans to put all government procurement information online. This makes the process completely transparent and tender manipulation will become a thing of the past.
ঢাকা, ১১ মার্চ ২০১০ লেখক তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ-এর প্রণেতা ই-মেইল : mustafajabbar@gmail.com, ওয়েবপেজ : www.bijoyekushe.net
No comments