জামায়াত-শিবিরের ম্যানহোল রাজনীতি by ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান
১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মকে
ব্যবহার করে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। এজন্য জামায়াতে ইসলামী বা পাকিস্তান
আমলের ইসলামী ছাত্র সংঘের রাজনীতি বন্ধ হয়ে যায়।
এর মূল
কারণ ছিল ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষ
হত্যা করে এবং মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠন করে। আধুনিক তুরস্কের জনক মোস্তফা
কামাল পাশাও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন। কারণ সে সময়
তুরস্কের অনেক সুলতানই ধর্মকে ব্যবহার করে স্বৈরতন্ত্র চালু রেখেছিলেন।
এমনকি যাঁরা রাষ্ট্রের মঙ্গলের জন্য কথা বলতেন, তাঁদের অনেককে তুর্কী
সুলতান ইসলামের নামে হত্যা করতেন। ধর্মের নামে তুরস্ককে অপশক্তির হাতে ছেড়ে
দিতেও তাঁরা কুণ্ঠাবোধ করেননি। এজন্য ধর্মের পবিত্রতা রা করার জন্যই
রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। আফগানিস্তানে বাদশাহ্
আমানুল্লাহ্ও একই নীতি অনুসরণ করেন। পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের বেশির ভাগ দেশেই
ধর্মের নামে রাজনীতি নেই। কারণ এতে মূলত ধর্মই কলুষিত হয়।
পাকিস্তান ও বাংলাদেশে জামায়াত ইসলামী মাওলানা মওদুদীর অনুসারী। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি মুসলিম দেশে জামায়াত-শিবিরের অনুরূপ সংগঠন রয়েছে। মিসর ও সৌদি আরবে ইখওয়ান আল মুসলিমীন, ইরানের ফেদায়ান ইসলাম ও ইন্দোনেশিয়ার নাহ্জাতুল ওলামা দল এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই দলগুলোর মূল স্লোগান 'আল্লাহ্র আইন কায়েম করা।' তাঁদের বক্তব্য হলো, বর্তমানে মুসলমানরা যেভাবে ধর্মীয় অনুশাসন ও আচার পালন করে তা সঠিক নয়। তাঁরা মানুষের তৈরি আইনের প্রতি আস্থাশীল নন। কোরানের আইনের বাইরে তাঁরা কোন আইনে বিশ্বাস করেন না। কোন দেশের শাসক ইসলাম ধর্মের অনুসারী হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের দলভুক্ত না হলে তাঁরা তাঁকে 'কাফের' বলে গণ্য করেন। মহানবী (সা.)-এর মৃত্যুর পর প্রত্যাদেশ (ওহী) আসা বন্ধ হয়ে যায়। সেই হিসেবে মহানবীর জীবদ্দশায় যেসব আয়াত নাজিল হয়েছে কোরানভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েমের জন্য, এর ওপরই নির্ভর করতে হবে। মহানবী (সা.) যে মদিনার পত্তন করেছিলেন, পরে খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগে এই রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন ঘটে। এমনকি নতুন নতুন শুল্ক আরোপ করা হয়। এমনকি শুল্ক আদায়ের পরিমাণও কোন কোন ক্ষেত্রে কম-বেশি হয়েছে। তাহলে এক্ষেত্রে প্রশ্ন করা যায় যে, খোলাফায়ে রাশেদীনের খলিফারা মহানবীর বিরম্নদ্ধে বা আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন কি-না। উমাইয়া ও আব্বাসীয় আমলে (৬৩২-৭৫০ খ্রি.) রাষ্ট্রের আয়তন বৃদ্ধির সাথে সাথে নতুন নতুন সঙ্কট তৈরি হয়। এসব সঙ্কট শাসকরা নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা দ্বারা নিরসন করেন। তাহলে এসব সমাধানকে অনৈসলামিক বলা যুক্তসঙ্গত হবে কি-না সেটিও প্রশ্নসাপে। এমনকি ইরানেও এখন ইসলামের নামে মানুষের শাসনই বহাল আছে। ইরানের মজলিশে (আইনসভা) যেসব আইন প্রতিনিয়ত তৈরি হয়, তা যে মানুষই রচনা করে তা জামায়াত-শিবির বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে তুলে ধরে না। এক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী বা ছাত্রশিবির ইসলামের মূল বাণী 'মানবকল্যাণের জন্য রাষ্ট্র' তা জনসাধারণের কাছে এড়িয়ে যায়। জামায়াত ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত দু'টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছে। তখন তারা একবারও বলেনি যে, ঐ মন্ত্রণালয়ের নিয়ম-কানুন অনৈসলামিক। এমনকি তাদের ওপর দায়িত্বপ্রাপ্ত শিল্প ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে এই সময় অনেক নতুন আইন সংসদে পাস হয়েছে। সেগুলোকেও তাঁরা ইসলামী আইন বলেননি। তাহলে আল্লাহর আইনের সেস্নাগান যে রাজনৈতিক ভাঁওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়, তা ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত পরিষ্কার হয়েছে।
জামায়াত তাদের রাজনৈতিক গুরু হিসেবে মওদুদীকে উপস্থাপন করলেও তারা মিসরের হাসান আল বান্নারও অনুসারী। তিনি 'ইখওয়ান আল মুসলিমীন' দলের প্রতিষ্ঠাতা। হাসান আল বান্নার জীবন অনেক বৈচিত্র্যময় ও ঘটনাবহুল। খুবই সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসে পরে একটি ধর্মীয় রাজনৈতিক সংগঠনের (ইখওয়ান) প্রধানে উত্তীর্ণ হন। তাঁর স্লোগানের সাথে জামায়াতের স্লোগানের যথেষ্ট মিল রয়েছে। ধর্মীয় সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিচ্যুতি মুসলমানদের পতনের কারণ হিসেবে তিনি উলেস্নখ করেন। এজন্য তিনি প্রথমে 'পাপ প্রতিরোধ সমিতি' গঠন করেন। তাঁর আহ্বানে নিম্নবিত্ত, ভূমিহীন কৃষক ও ধর্মীয় শিক্ষায় শিতি জনগোষ্ঠী বেশি সাড়া দেয়। সাধারণত সমাজের হতাশাগ্রস্ত মানুষই 'আল্লাহর নামে' পরিচালিত হাসান আল বান্নার ইখওয়ানের অনুসারী হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীও আল্লাহর নামের আড়ালে তাদের সকল অপকর্মকে ঢেকে দিতে চায়। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রোপটে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গরিব ঘরের সন্তান, স্কুল পালানো বখে যাওয়া বালক অথবা রোগাক্রান্ত শিশুর মা-বাবার মানতের কারণে তাদেরকে মাদ্রাসায় পাঠানো হয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ মাদ্রাসা আর্থিক দীনতার মধ্য দিয়ে চলে। এখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরাও সমাজের সচ্ছল ব্যক্তিদের সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। দৈনন্দিন পরনির্ভরতা ও এক ধরনের কঠোর জীবন-যাপনের মধ্যে থেকে ক্রমপরিবর্তনশীল সমাজ ও জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে তারা পিছনে পড়ে যায়। এসব ছাত্র এক সময় ধর্মীয় স্লোগানে মগ্ন হয়ে ছাত্রশিবিরের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধাদি লাভ করে তাদের অনুসারী হয়। হাসান আল বান্নার ইখওয়ানও এভাবেই গঠিত হয়েছিল। এমনকি সৌদী আরব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আব্দুল আজিজ ইবনে সৌদের 'ইখওয়ান'-এরও এভাবে উত্থান হয়েছিল।
ইখওয়ান দলের সাংগঠনিক কাঠামো ও জামায়াত-শিবিরের সাংগঠনিক কাঠামো একই ধরনের। দলের নিয়ম-কানুন অনেকটা ফ্যাসিস্ট। দলটি কয়েকটি সত্মরে বিভক্ত। প্রত্যেকটি স্তরের আবার অনেক সেল রয়েছে। প্রত্যেক সেলের একজন নেতা থাকেন। কোন বিষয়ে নেতার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। নেতার নির্দেশ অমান্য করলে তার শাস্তি অনিবার্য। নেতার প্রতি প্রত্যেক সদসস্যের শর্তহীন আনুগত্য। এক্ষেত্রে নিজস্ব মতপ্রকাশের কোন সুযোগ নেই। জামায়াত-শিবিরও একই নিয়মে পরিচালিত। তাদের সংগঠনের প্রতিটি ইউনিটের সাপ্তাহিক সভা হয়। সংশ্লিষ্ট ইউনিটের প্রত্যেক সদস্য তার কাজকর্মের সাপ্তাহিক রিপোর্ট প্রদান করে। শিবিরের দলীয় কিছু গোপনীয় কাগজপত্রে দেখা যায় যে, দলীয় সদস্যবৃন্দের বাইরে তাদের অমুসলিম 'বন্ধু' ও 'সমর্থক' রয়েছে। সঙ্কটকালে তারা বিভিন্ন সুবিধার বিনিময়ে এদেরকে গোয়েন্দা হিসেবে ব্যবহার করে (এমনকি সামপ্রতিককালে তবলীগ জামাতের মধ্যেও তারা অনুপ্রবেশ করছে। প্রত্যেক সেলের নেতা তার সদস্যদের ভাল-মন্দ খোঁজখবর নেয় এবং বিপদে এগিয়ে যায়। এভাবে নিজেদের মধ্যে সহমর্মিতা ও এক ধরনের চেন অব কমান্ড গড়ে ওঠে। দলে সদস্যভুক্তির পর নেতৃত্বের শীর্ষে উঠতে বিভিন্ন পর্যায়ে এক ধরনের পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে তাদের। এতে উত্তীর্ণ হলে পরবর্তী ধাপে যাবার সুযোগ সৃষ্টি হয়। প্রত্যেক স্তরের সদস্যদের কিছু আর্থিক সুবিধা আছে। শিবিরের কর্মীদেরকে মাঠ পর্যায়ে কাজ করার জন্য ত্রেভেদে বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল প্রদান করা হয়। এ ছাড়া পদের গুরুত্ব অনুযায়ী কিছু বেতনেরও ব্যবস্থা আছে। জামায়াতের ঢাকা মহানগর শাখার সেক্রেটারির জন্য দলীয়ভাবে ৩০ লাধিক টাকার গাড়ি বরাদ্দ আছে বলে জানা যায়। সদস্যদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ শুধু সদস্যদের চাঁদার ওপর নির্ভরশীল নয়। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে যে তাদের অর্থ আসে তা ইতোমধ্যে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এবং এ নিয়ে দু'-একটি গবেষণাও হয়েছে।
হাসান আল বান্না মিসরে যেমন দলীয় সদস্যদের কল্যাণে বিভিন্ন আয়বর্ধক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন, জামায়াতও তেমনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাতের একটা বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ছাত্রশিবিরের কর্মী ও অনুসারীদের এখানে চাকরির ব্যবস্থা আছে। ব্যাংক-বীমা, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের বিনিয়োগ রয়েছে। তারা শুধু দলীয় লোকদের চাকরিই প্রদান করে না, জামায়াতের আইনজীবী বৃদ্ধির জন্য দলীয়ভাবে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশেও প্রেরণ করে। ছাত্রশিবিরের প্রাথমিক সদস্য থেকে শীর্ষ নেতৃত্ব পর্যন্ত স্তরগুলোর মধ্যে একটি বিশেষ স্তর আছে যারা নিয়মিত ব্যায়াম করে এবং আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশী অস্ত্র দ্বারা ভিন্নমতের মানুষকে হত্যা, বিকলাঙ্গ বা পঙ্গু করতে প্রশিণ নেয়। বিরোধীদের ওপর এদের নির্যাতনের ধরন প্রায় একই। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসব প্রশিণের ক্ষেত্রে এরা সাধারণত বিএনসিসিকে ব্যবহার করে। প্রতিপরে সাথে সংঘর্ষে এদের কর্মীরা আহত হলে তাদেরকে সরকারী হাসপাতালে ভর্তির পরিবর্তে নিজস্ব কিনিকে ভর্তি করে। দলের মধ্যে নিজস্ব গোয়েন্দা বাহিনী রয়েছে, যারা দলের অভ্যন্তরীণ সদস্যদের খোঁজখবর নেয় এবং অন্য দলের কর্মতৎপরতা সম্পর্কেও খবর রাখে। এমনকি অন্য দলের মধ্যেও নিজেদের কর্মীদেরকে ঢুকিয়ে দেয়, যারা নিয়মিত ঐ দলের তথ্য শিবিরের কাছে পৌঁছে দেয়। ১৯৯২ সালের ১৭ মার্চ শিবির কর্তৃক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলে ধ্বংসযজ্ঞকালে বিভিন্ন সময়ে জাসদের মিছিলে থাকা ৩/৪ জন কর্মী ছাত্রশিবিরের পক্ষে হামলায় অংশ নেয়। ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক নোমানী হত্যার পর তারা শিবিরেরই এক কর্মীকে আসামী করে। উদ্দেশ্য ছিল ছাত্রলীগের অভ্যনত্মরীণ খবর তাদের কাছে পৌঁছে দেয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় চাকরি লাভ করা। কেন্দ্রীয়ভাবেই তাদেরকে এক ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয় বলে জানা যায়। সম্প্রতি ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কিছু আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দলীয় সদস্যদেরকে কোরান স্পর্শ করে শপথ পড়ানো হয় যে, তারা দলের গোপনীয়তা বাইরে প্রকাশ করবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর প্রত্যেক তলায় তাদের একটি করে কমিটি আছে। আবার সমগ্র হল মিলে আছে আর একটি কমিটি। হল কমিটির নির্দেশনায় বিভিন্ন তলার কমিটি পরিচালিত হয়। প্রত্যেকটি কমিটিতে কমপক্ষে একজন সশস্ত্র প্রশিণপ্রাপ্ত কর্মী আছে। হলে অবস্থানরত দলীয় ও নির্দলীয় ছাত্রদের কাছ থেকে তারা 'ইয়ানত' (চাঁদা) আদায় করে। ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে এই ইয়ানত প্রদান সকলের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও দেশের প্রতিটি পেশাজীবীদের মধ্যে তাদের অনুসারী আছে। এমনকি সেনা, নৌ, বিমান ও পুলিশ বাহিনীসহ সমস্ত সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীর মধ্যেও তাদের অনুসারী রয়েছে। নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত তাদের অনুসারী বিদ্যমান। সামরিকভাবে প্রশিতি অনুসারীর একটি নির্দিষ্ট সংখ্যায় পৌঁছালে তারা সশস্ত্র বিপস্নবের ডাক দিতে পারে। তাদের অনেক কর্মীর মুখ ফস্কে এমন সব কথা বেরিয়ে যায় যে, কেন্দ্রীয় নির্দেশ পেলেই তারা গোটা দেশ দখল করে নিতে পারে। ধর্মীয় আবরণে ও ইসলামের নামে বাংলাদেশে যেসব সংগঠন রয়েছে তার প্রত্যেকটির সাথে জামায়াত-শিবির কোন না কোনভাবে সম্পৃক্ত। জামায়াতের জনৈক অনুসারী প্রসঙ্গক্রমে বলেন, 'সময়ে সমস্ত ইসলামী শক্তি একত্রিত হবে ও ইসলামী বিপ্লব সংঘটিত হবে।' তিনি ইসলামী বিপ্লব বলতে ইরানের মতো সশস্ত্র বিপ্লবের কথাই বুঝিয়েছেন। বাংলাদেশে জেএমবির হত্যাযজ্ঞ ও কর্মকান্ডের সময়ে জামায়াতের নীরবতা ও প্রকারান্তরে সহযোগিতায় উপর্যুক্ত বক্তব্যের যথার্থতা পাওয়া যায়। জেএমবি, হরকাত-উল জেহাদ ও হিযবুত তাহ্রীরসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল বিভিন্ন ব্যানারে আসলে জামায়াতের কর্মসূচী নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে বলে শোনা যায়। এমনকি পাকিস্তানের 'লস্কর-ই-তৈয়্যেবা' ও 'জঈশ-ই-মোহাম্মদ'-এর সাথে তাদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে কোন কোন সূত্র মনে করে। এসব সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বের রাজনৈতিক দর্শন পর্যালোচনা করলে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, কেউই বিদ্যমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বা জনগণের সরকারে বিশ্বাস করে না। এমনকি বাংলাদেশের এসব সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রায় সবাই ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে এই দল তার অনুসারীদের মধ্যে ধর্মোন্মাদনা সৃষ্টি করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ইসলামিয়া কলেজে স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের সাপ্তাহিক সভা হয়। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক বক্তব্য রাখেন। দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দও কথা বলেন। বিভিন্ন সময় প্রকাশিত ও প্রচারিত তাদের পুস্তিকা ও প্রচারপত্র বা দেয়াল লিখন পর্যালোচনা করলে এই দলের কয়েকটি মূলমন্ত্র দৃশ্যমান হয়। (ক্রমশ)
পাকিস্তান ও বাংলাদেশে জামায়াত ইসলামী মাওলানা মওদুদীর অনুসারী। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি মুসলিম দেশে জামায়াত-শিবিরের অনুরূপ সংগঠন রয়েছে। মিসর ও সৌদি আরবে ইখওয়ান আল মুসলিমীন, ইরানের ফেদায়ান ইসলাম ও ইন্দোনেশিয়ার নাহ্জাতুল ওলামা দল এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই দলগুলোর মূল স্লোগান 'আল্লাহ্র আইন কায়েম করা।' তাঁদের বক্তব্য হলো, বর্তমানে মুসলমানরা যেভাবে ধর্মীয় অনুশাসন ও আচার পালন করে তা সঠিক নয়। তাঁরা মানুষের তৈরি আইনের প্রতি আস্থাশীল নন। কোরানের আইনের বাইরে তাঁরা কোন আইনে বিশ্বাস করেন না। কোন দেশের শাসক ইসলাম ধর্মের অনুসারী হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের দলভুক্ত না হলে তাঁরা তাঁকে 'কাফের' বলে গণ্য করেন। মহানবী (সা.)-এর মৃত্যুর পর প্রত্যাদেশ (ওহী) আসা বন্ধ হয়ে যায়। সেই হিসেবে মহানবীর জীবদ্দশায় যেসব আয়াত নাজিল হয়েছে কোরানভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েমের জন্য, এর ওপরই নির্ভর করতে হবে। মহানবী (সা.) যে মদিনার পত্তন করেছিলেন, পরে খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগে এই রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন ঘটে। এমনকি নতুন নতুন শুল্ক আরোপ করা হয়। এমনকি শুল্ক আদায়ের পরিমাণও কোন কোন ক্ষেত্রে কম-বেশি হয়েছে। তাহলে এক্ষেত্রে প্রশ্ন করা যায় যে, খোলাফায়ে রাশেদীনের খলিফারা মহানবীর বিরম্নদ্ধে বা আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন কি-না। উমাইয়া ও আব্বাসীয় আমলে (৬৩২-৭৫০ খ্রি.) রাষ্ট্রের আয়তন বৃদ্ধির সাথে সাথে নতুন নতুন সঙ্কট তৈরি হয়। এসব সঙ্কট শাসকরা নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা দ্বারা নিরসন করেন। তাহলে এসব সমাধানকে অনৈসলামিক বলা যুক্তসঙ্গত হবে কি-না সেটিও প্রশ্নসাপে। এমনকি ইরানেও এখন ইসলামের নামে মানুষের শাসনই বহাল আছে। ইরানের মজলিশে (আইনসভা) যেসব আইন প্রতিনিয়ত তৈরি হয়, তা যে মানুষই রচনা করে তা জামায়াত-শিবির বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে তুলে ধরে না। এক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী বা ছাত্রশিবির ইসলামের মূল বাণী 'মানবকল্যাণের জন্য রাষ্ট্র' তা জনসাধারণের কাছে এড়িয়ে যায়। জামায়াত ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত দু'টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছে। তখন তারা একবারও বলেনি যে, ঐ মন্ত্রণালয়ের নিয়ম-কানুন অনৈসলামিক। এমনকি তাদের ওপর দায়িত্বপ্রাপ্ত শিল্প ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে এই সময় অনেক নতুন আইন সংসদে পাস হয়েছে। সেগুলোকেও তাঁরা ইসলামী আইন বলেননি। তাহলে আল্লাহর আইনের সেস্নাগান যে রাজনৈতিক ভাঁওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়, তা ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত পরিষ্কার হয়েছে।
জামায়াত তাদের রাজনৈতিক গুরু হিসেবে মওদুদীকে উপস্থাপন করলেও তারা মিসরের হাসান আল বান্নারও অনুসারী। তিনি 'ইখওয়ান আল মুসলিমীন' দলের প্রতিষ্ঠাতা। হাসান আল বান্নার জীবন অনেক বৈচিত্র্যময় ও ঘটনাবহুল। খুবই সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসে পরে একটি ধর্মীয় রাজনৈতিক সংগঠনের (ইখওয়ান) প্রধানে উত্তীর্ণ হন। তাঁর স্লোগানের সাথে জামায়াতের স্লোগানের যথেষ্ট মিল রয়েছে। ধর্মীয় সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিচ্যুতি মুসলমানদের পতনের কারণ হিসেবে তিনি উলেস্নখ করেন। এজন্য তিনি প্রথমে 'পাপ প্রতিরোধ সমিতি' গঠন করেন। তাঁর আহ্বানে নিম্নবিত্ত, ভূমিহীন কৃষক ও ধর্মীয় শিক্ষায় শিতি জনগোষ্ঠী বেশি সাড়া দেয়। সাধারণত সমাজের হতাশাগ্রস্ত মানুষই 'আল্লাহর নামে' পরিচালিত হাসান আল বান্নার ইখওয়ানের অনুসারী হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীও আল্লাহর নামের আড়ালে তাদের সকল অপকর্মকে ঢেকে দিতে চায়। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রোপটে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গরিব ঘরের সন্তান, স্কুল পালানো বখে যাওয়া বালক অথবা রোগাক্রান্ত শিশুর মা-বাবার মানতের কারণে তাদেরকে মাদ্রাসায় পাঠানো হয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ মাদ্রাসা আর্থিক দীনতার মধ্য দিয়ে চলে। এখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরাও সমাজের সচ্ছল ব্যক্তিদের সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। দৈনন্দিন পরনির্ভরতা ও এক ধরনের কঠোর জীবন-যাপনের মধ্যে থেকে ক্রমপরিবর্তনশীল সমাজ ও জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে তারা পিছনে পড়ে যায়। এসব ছাত্র এক সময় ধর্মীয় স্লোগানে মগ্ন হয়ে ছাত্রশিবিরের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধাদি লাভ করে তাদের অনুসারী হয়। হাসান আল বান্নার ইখওয়ানও এভাবেই গঠিত হয়েছিল। এমনকি সৌদী আরব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আব্দুল আজিজ ইবনে সৌদের 'ইখওয়ান'-এরও এভাবে উত্থান হয়েছিল।
ইখওয়ান দলের সাংগঠনিক কাঠামো ও জামায়াত-শিবিরের সাংগঠনিক কাঠামো একই ধরনের। দলের নিয়ম-কানুন অনেকটা ফ্যাসিস্ট। দলটি কয়েকটি সত্মরে বিভক্ত। প্রত্যেকটি স্তরের আবার অনেক সেল রয়েছে। প্রত্যেক সেলের একজন নেতা থাকেন। কোন বিষয়ে নেতার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। নেতার নির্দেশ অমান্য করলে তার শাস্তি অনিবার্য। নেতার প্রতি প্রত্যেক সদসস্যের শর্তহীন আনুগত্য। এক্ষেত্রে নিজস্ব মতপ্রকাশের কোন সুযোগ নেই। জামায়াত-শিবিরও একই নিয়মে পরিচালিত। তাদের সংগঠনের প্রতিটি ইউনিটের সাপ্তাহিক সভা হয়। সংশ্লিষ্ট ইউনিটের প্রত্যেক সদস্য তার কাজকর্মের সাপ্তাহিক রিপোর্ট প্রদান করে। শিবিরের দলীয় কিছু গোপনীয় কাগজপত্রে দেখা যায় যে, দলীয় সদস্যবৃন্দের বাইরে তাদের অমুসলিম 'বন্ধু' ও 'সমর্থক' রয়েছে। সঙ্কটকালে তারা বিভিন্ন সুবিধার বিনিময়ে এদেরকে গোয়েন্দা হিসেবে ব্যবহার করে (এমনকি সামপ্রতিককালে তবলীগ জামাতের মধ্যেও তারা অনুপ্রবেশ করছে। প্রত্যেক সেলের নেতা তার সদস্যদের ভাল-মন্দ খোঁজখবর নেয় এবং বিপদে এগিয়ে যায়। এভাবে নিজেদের মধ্যে সহমর্মিতা ও এক ধরনের চেন অব কমান্ড গড়ে ওঠে। দলে সদস্যভুক্তির পর নেতৃত্বের শীর্ষে উঠতে বিভিন্ন পর্যায়ে এক ধরনের পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে তাদের। এতে উত্তীর্ণ হলে পরবর্তী ধাপে যাবার সুযোগ সৃষ্টি হয়। প্রত্যেক স্তরের সদস্যদের কিছু আর্থিক সুবিধা আছে। শিবিরের কর্মীদেরকে মাঠ পর্যায়ে কাজ করার জন্য ত্রেভেদে বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল প্রদান করা হয়। এ ছাড়া পদের গুরুত্ব অনুযায়ী কিছু বেতনেরও ব্যবস্থা আছে। জামায়াতের ঢাকা মহানগর শাখার সেক্রেটারির জন্য দলীয়ভাবে ৩০ লাধিক টাকার গাড়ি বরাদ্দ আছে বলে জানা যায়। সদস্যদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ শুধু সদস্যদের চাঁদার ওপর নির্ভরশীল নয়। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে যে তাদের অর্থ আসে তা ইতোমধ্যে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এবং এ নিয়ে দু'-একটি গবেষণাও হয়েছে।
হাসান আল বান্না মিসরে যেমন দলীয় সদস্যদের কল্যাণে বিভিন্ন আয়বর্ধক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন, জামায়াতও তেমনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাতের একটা বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ছাত্রশিবিরের কর্মী ও অনুসারীদের এখানে চাকরির ব্যবস্থা আছে। ব্যাংক-বীমা, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের বিনিয়োগ রয়েছে। তারা শুধু দলীয় লোকদের চাকরিই প্রদান করে না, জামায়াতের আইনজীবী বৃদ্ধির জন্য দলীয়ভাবে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশেও প্রেরণ করে। ছাত্রশিবিরের প্রাথমিক সদস্য থেকে শীর্ষ নেতৃত্ব পর্যন্ত স্তরগুলোর মধ্যে একটি বিশেষ স্তর আছে যারা নিয়মিত ব্যায়াম করে এবং আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশী অস্ত্র দ্বারা ভিন্নমতের মানুষকে হত্যা, বিকলাঙ্গ বা পঙ্গু করতে প্রশিণ নেয়। বিরোধীদের ওপর এদের নির্যাতনের ধরন প্রায় একই। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসব প্রশিণের ক্ষেত্রে এরা সাধারণত বিএনসিসিকে ব্যবহার করে। প্রতিপরে সাথে সংঘর্ষে এদের কর্মীরা আহত হলে তাদেরকে সরকারী হাসপাতালে ভর্তির পরিবর্তে নিজস্ব কিনিকে ভর্তি করে। দলের মধ্যে নিজস্ব গোয়েন্দা বাহিনী রয়েছে, যারা দলের অভ্যন্তরীণ সদস্যদের খোঁজখবর নেয় এবং অন্য দলের কর্মতৎপরতা সম্পর্কেও খবর রাখে। এমনকি অন্য দলের মধ্যেও নিজেদের কর্মীদেরকে ঢুকিয়ে দেয়, যারা নিয়মিত ঐ দলের তথ্য শিবিরের কাছে পৌঁছে দেয়। ১৯৯২ সালের ১৭ মার্চ শিবির কর্তৃক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলে ধ্বংসযজ্ঞকালে বিভিন্ন সময়ে জাসদের মিছিলে থাকা ৩/৪ জন কর্মী ছাত্রশিবিরের পক্ষে হামলায় অংশ নেয়। ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক নোমানী হত্যার পর তারা শিবিরেরই এক কর্মীকে আসামী করে। উদ্দেশ্য ছিল ছাত্রলীগের অভ্যনত্মরীণ খবর তাদের কাছে পৌঁছে দেয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় চাকরি লাভ করা। কেন্দ্রীয়ভাবেই তাদেরকে এক ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয় বলে জানা যায়। সম্প্রতি ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কিছু আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দলীয় সদস্যদেরকে কোরান স্পর্শ করে শপথ পড়ানো হয় যে, তারা দলের গোপনীয়তা বাইরে প্রকাশ করবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর প্রত্যেক তলায় তাদের একটি করে কমিটি আছে। আবার সমগ্র হল মিলে আছে আর একটি কমিটি। হল কমিটির নির্দেশনায় বিভিন্ন তলার কমিটি পরিচালিত হয়। প্রত্যেকটি কমিটিতে কমপক্ষে একজন সশস্ত্র প্রশিণপ্রাপ্ত কর্মী আছে। হলে অবস্থানরত দলীয় ও নির্দলীয় ছাত্রদের কাছ থেকে তারা 'ইয়ানত' (চাঁদা) আদায় করে। ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে এই ইয়ানত প্রদান সকলের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও দেশের প্রতিটি পেশাজীবীদের মধ্যে তাদের অনুসারী আছে। এমনকি সেনা, নৌ, বিমান ও পুলিশ বাহিনীসহ সমস্ত সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীর মধ্যেও তাদের অনুসারী রয়েছে। নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত তাদের অনুসারী বিদ্যমান। সামরিকভাবে প্রশিতি অনুসারীর একটি নির্দিষ্ট সংখ্যায় পৌঁছালে তারা সশস্ত্র বিপস্নবের ডাক দিতে পারে। তাদের অনেক কর্মীর মুখ ফস্কে এমন সব কথা বেরিয়ে যায় যে, কেন্দ্রীয় নির্দেশ পেলেই তারা গোটা দেশ দখল করে নিতে পারে। ধর্মীয় আবরণে ও ইসলামের নামে বাংলাদেশে যেসব সংগঠন রয়েছে তার প্রত্যেকটির সাথে জামায়াত-শিবির কোন না কোনভাবে সম্পৃক্ত। জামায়াতের জনৈক অনুসারী প্রসঙ্গক্রমে বলেন, 'সময়ে সমস্ত ইসলামী শক্তি একত্রিত হবে ও ইসলামী বিপ্লব সংঘটিত হবে।' তিনি ইসলামী বিপ্লব বলতে ইরানের মতো সশস্ত্র বিপ্লবের কথাই বুঝিয়েছেন। বাংলাদেশে জেএমবির হত্যাযজ্ঞ ও কর্মকান্ডের সময়ে জামায়াতের নীরবতা ও প্রকারান্তরে সহযোগিতায় উপর্যুক্ত বক্তব্যের যথার্থতা পাওয়া যায়। জেএমবি, হরকাত-উল জেহাদ ও হিযবুত তাহ্রীরসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল বিভিন্ন ব্যানারে আসলে জামায়াতের কর্মসূচী নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে বলে শোনা যায়। এমনকি পাকিস্তানের 'লস্কর-ই-তৈয়্যেবা' ও 'জঈশ-ই-মোহাম্মদ'-এর সাথে তাদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে কোন কোন সূত্র মনে করে। এসব সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বের রাজনৈতিক দর্শন পর্যালোচনা করলে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, কেউই বিদ্যমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বা জনগণের সরকারে বিশ্বাস করে না। এমনকি বাংলাদেশের এসব সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রায় সবাই ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে এই দল তার অনুসারীদের মধ্যে ধর্মোন্মাদনা সৃষ্টি করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ইসলামিয়া কলেজে স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের সাপ্তাহিক সভা হয়। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক বক্তব্য রাখেন। দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দও কথা বলেন। বিভিন্ন সময় প্রকাশিত ও প্রচারিত তাদের পুস্তিকা ও প্রচারপত্র বা দেয়াল লিখন পর্যালোচনা করলে এই দলের কয়েকটি মূলমন্ত্র দৃশ্যমান হয়। (ক্রমশ)
No comments