আইনজীবীদের বাদ দিলেন সাকা চৌধুরী, দুই আবেদন খারিজ
মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী তাঁর আইনজীবীদের বাদ দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর পক্ষে সরকারি খরচে আইনজীবী নিয়োগ করা হচ্ছে।
বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ গতকাল বুধবার সাকা চৌধুরী তাঁর আইনজীবীদের ওকালতনামা বাতিলের আবেদন জানান। ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে বলেন, আসামির পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩-এর ১২ ধারা অনুসারে তাঁর পক্ষে সরকারি খরচে আইনজীবী নিয়োগ করা হবে।১২ ধারা অনুসারে, কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে আইনজীবী না থাকলে ট্রাইব্যুনাল চাইলে মামলার যেকোনো পর্যায়ে সরকারি খরচে তাঁর পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারবেন।
সংসদের চলতি অধিবেশনে যোগ দেওয়ার অনুমতি চেয়ে সাকা চৌধুরীর করা একটি আবেদন সকালে কার্যক্রমের শুরুতে খারিজ করেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর তাঁর পক্ষে করা আরও দুটি আবেদনের শুনানি হয়। এর একটির শুনানিতে তাঁর আইনজীবী ফখরুল ইসলাম বলেন, ইস্ট পাকিস্তান অ্যাসেম্বলি মেম্বারস প্রিভিলেজেস অ্যাক্ট, ১৯৬৫-এর ৭(১) ধারা অনুসারে, অধিবেশন চলাকালীন সাত দিন আগে ও পরে কোনো সংসদ সদস্যের দেওয়ানি, ফৌজদারি, রাজস্ব বা কোনো নির্বাচনী আদালতের কার্যক্রমে ব্যক্তিগত উপস্থিতির প্রয়োজন নেই। আসামি বর্তমান সংসদ সদস্য এবং এ বিধান অনুসারে তিনি ওই বিশেষ সুবিধার অধিকারী। ফখরুল ইসলাম সংসদ অধিবেশন শেষ হওয়ার সাত দিন পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবির আরজি জানান।
এ সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, ১৯৬৫ সালের ওই আইন আদৌ জীবিত আছে কি না, তা নিশ্চিত নয়। কারণ, বাংলাদেশ কোডের ৩৮টি খণ্ডের কোথাও আইনটি পাওয়া যায়নি।
অপর আবেদনের শুনানিতে ফখরুল ইসলাম বলেন, আসামির পক্ষে চারজনের বেশি আইনজীবীর ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত থাকার অনুমতি দিতে হবে।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি জেয়াদ-আল-মালুম দুটি আবেদনেরই বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, বারবার একই ধরনের আবেদন করে ট্রাইব্যুনালের সময় নষ্ট করা হচ্ছে।
শুনানি শেষে দুটি আবেদনই ট্রাইব্যুনাল খারিজ করেন।
পরে সাকা চৌধুরীর প্রধান আইনজীবী আহসানুল হক বলেন, মক্কেলের (সাকা চৌধুরী) নির্দেশে তাঁরা আর এ মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করবেন না। ট্রাইব্যুনাল বলেন, কার্যপ্রণালি বিধিমালার বিধি ৪৫বি অনুসারে, আসামির পক্ষে আইনজীবীরা মামলা পরিচালনা করতে দায়বদ্ধ, যতক্ষণ না ট্রাইব্যুনাল আইনজীবীদের ওকালতনামা বাতিল করছেন। আহসানুল হক বলেন, তাঁর মক্কেল ওকালতনামা বাতিলের আবেদন জমা দেবেন। আবেদনটি প্রস্তুতের জন্য তিনি সময় চান।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের ১৭তম সাক্ষী এক নারী ‘ক্যামেরা ট্রায়ালে’ জবানবন্দি দেন। এ সময় এজলাসে বিচারক, রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের নির্দিষ্টসংখ্যক আইনজীবী ও আসামি ছাড়া আর কেউ উপস্থিত ছিলেন না।
মধ্যাহ্ন বিরতির পর আসামির কাঠগড়ায় সাকা চৌধুরী থাকলেও এজলাসে তাঁর পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। ট্রাইব্যুনালের প্রশ্নের জবাবে সাকা চৌধুরী বলেন, পার্লামেন্ট মেম্বারস প্রিভিলেজেস অ্যাক্ট অনুসারে, সংসদ অধিবেশন শেষ হওয়ার সাত দিন পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে হাজির না থাকা তাঁর অধিকার। সাংসদ হিসেবে তিনি এ সময় পর্যন্ত বিচারকাজে অংশ নেবেন না, কোনো আইনজীবীও রাখবেন না।
এ সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, আইনজীবীদের ওকালতনামা বাতিল চেয়ে আসামি যে আবেদন করেছেন, তা মঞ্জুর করা হলো। এখন মামলা চলবে ট্রাইব্যুনালস আইনের ১২ ধারা অনুসারে। আসামির পক্ষে সরকারি খরচে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হবে, তিনি বৃহস্পতিবার (আজ) রাষ্ট্রপক্ষের ১৭তম সাক্ষীকে জেরা করবেন।
No comments