মুক্তিযোদ্ধার বাঁচার লড়াই-দেশমাতৃকার জন্য যাঁরা যুদ্ধে নেমেছিলেন তাঁদের অনেকেই আজ লড়ছেন দুবেলা দুমুঠো খাবারের জন্য। তাঁদের জীবনচিত্র নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন-এখন রিকশা চালাতেও কষ্ট হয় এনামুলের by এনায়েত হোসেন মিঠু
একাত্তরে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার-আলবদরদের বর্বর নির্যাতন দেখে প্রতিরোধের প্রত্যয় নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন ১৮ বছরের টগবগে তরুণ এনামুল হক। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণও তাঁকে যুদ্ধে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে অংশ নেন তিনি।
মিরসরাই উপজেলার ১২ নম্বর খৈয়াছরা ইউনিয়নের পশ্চিম আমবাড়িয়া গ্রামে বাড়ি এনামুল হকের। বাড়ি বলতে একটা কুঁড়েঘর। ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের ছোট্ট ঘরে রান্না-থাকা-খাওয়া সবই চলে। স্ত্রী জুজিয়া বেগম এক রকম বিনা চিকিৎসায়ই মারা গেছেন গত জুন মাসে। বর্তমানে তিন মেয়ে ও তিন ছেলের সংসার তাঁর। ১৯৭৫ সাল নাগাদ সবাই তাঁকে 'মুক্তিযোদ্ধা কেরানি' বলে ডাকত। পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় তাঁর সেই নামও। তখন থেকে গ্রামের সবাই তাঁকে 'রিকশাওয়ালা কেরানি' বলে ডাকে।
অসীম সাহসিকতার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনা এই মানুষটি জীবনযুদ্ধে অসহনীয় যন্ত্রণা আর অভাবের মুখোমুখি হয়েছেন। এক সময় দিনের সূর্য উঁকি দেওয়ার আগেই এনামুল হকের রিকশার বেলের ক্রিং ক্রিং শব্দে গ্রামের মানুষের ঘুম ভাঙত। অসুস্থ শরীর নিয়ে এখন আর নিয়মিত রিকশা চালাতে পারেন না। অভাবের তাড়নায় মাঝে মধ্যে অবশ্য রিকশা নিয়ে বেরোতে হয় তাঁকে। তারপর আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
গত ৪ ডিসেম্বর কথা হয় এনামুল হকের সঙ্গে। এত কষ্টে জীবনযাপন করেও কোনো আক্ষেপ নেই তাঁর। তিনি এখনো গর্ব করেন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। তাঁর সোজা কথা, 'দেশের স্বাধীনতার প্রয়োজনে যুদ্ধে গেছি, এখন চাই নিজামী-সাঈদীসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার।'
এনামুল হক জানান, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বর্তমানে মাসে দুই হাজার টাকা করে ভাতা পান।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা করে এনামুল জানান, আমবাড়িয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সফিউল আলম তাঁকে মুক্তিযুদ্ধে যেতে উদ্বুদ্ধ করেন। এরপর ট্রেনিং নিতে আওয়ামী লীগ নেতা জিতেন্দ্র প্রসাদনাথ মন্টুর সঙ্গে ভারতের হরিণা ক্যাম্পে যান। ভারতের হরিণা ক্যাম্প ও লোহার বন ক্যাম্পে ট্রেনিং শেষে দেশে ফিরে প্রথমে সিলেটের রানিবাড়িতে একজন ক্যাপ্টেনের নেতৃত্বে যুদ্ধে যোগ দেন। এক সপ্তাহ পর চট্টগ্রাম ১ নম্বর সেক্টরে ক্যাপ্টেন এনামুল হকের নেতৃত্বে যুদ্ধে যোগ দেন।
এনামুল হক বলেন, 'তালবাইয়া (তালবাড়িয়া) লোহার হোল (পুল) এলাকায় রাজাকার আজহারুল ছোবহান গ্রামের মেয়ে ছেলেরগোরে ধইরা লই যাই পাঞ্জাবিরগোই (পাকিস্তানি) হাতে তুলি দিত। নির্যাতন করি পরে খুন কইত্তো। এসব নির্যাতন সহ্য কইত্তাম ন হারি মুক্তিযুদ্ধে গেছি। সিলেটের রানি বাইত (বাড়ি) যুদ্ধ করার সময় দেখছি হিয়্যানে মাইয়্যাহোলা (মহিলা) রাজাকার আছিল। রানি বাইর এক্যান রাজাকার ক্যাম্পে আন্ডা অপারেশন চালাইছি।' তিনি আরো বলেন, 'মিরশ্বরী (মিরসরাই) আই ৫ নম্বর ওচমানপুরে কমান্ডার আহছান উল্লার নেতৃত্বে যুদ্ধ করি। ১৫ দিন হর হাঞ্জবিরা হঠাৎ করি হামলা কইল্যে নৌকা করি সন্দীপের চরে অবস্থান করি। এরপর আবার মিরশ্বরীর মঘাদিয়া আই যুদ্ধ শুরু করি। ডিসেম্বর মাসে কুমিরা যুদ্ধে হাঞ্জবিরগো লগে বোত গোলাগুলি অয়। অনেক মুক্তিযোদ্ধা সে যুদ্ধে মরি যায়।'
এনামুল হক জানান, তাঁর পাকস্থলীতে রোগ ধরা পড়েছে। চিকিৎসা করার মতো টাকা নেই। ভাতা বাবদ পাওয়া টাকায় কোনোমতে সংসারের খাবার জোগাড় হয়। সব সময় তাও হয় না। তবে অভাব নিয়ে তাঁর কোনো আক্ষেপ নেই। তবে তিনি বিস্মিত হন স্বাধীন দেশে রাজাকার ও তাদের দোসরদের আস্ফালন দেখে।
অসীম সাহসিকতার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনা এই মানুষটি জীবনযুদ্ধে অসহনীয় যন্ত্রণা আর অভাবের মুখোমুখি হয়েছেন। এক সময় দিনের সূর্য উঁকি দেওয়ার আগেই এনামুল হকের রিকশার বেলের ক্রিং ক্রিং শব্দে গ্রামের মানুষের ঘুম ভাঙত। অসুস্থ শরীর নিয়ে এখন আর নিয়মিত রিকশা চালাতে পারেন না। অভাবের তাড়নায় মাঝে মধ্যে অবশ্য রিকশা নিয়ে বেরোতে হয় তাঁকে। তারপর আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
গত ৪ ডিসেম্বর কথা হয় এনামুল হকের সঙ্গে। এত কষ্টে জীবনযাপন করেও কোনো আক্ষেপ নেই তাঁর। তিনি এখনো গর্ব করেন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। তাঁর সোজা কথা, 'দেশের স্বাধীনতার প্রয়োজনে যুদ্ধে গেছি, এখন চাই নিজামী-সাঈদীসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার।'
এনামুল হক জানান, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বর্তমানে মাসে দুই হাজার টাকা করে ভাতা পান।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা করে এনামুল জানান, আমবাড়িয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সফিউল আলম তাঁকে মুক্তিযুদ্ধে যেতে উদ্বুদ্ধ করেন। এরপর ট্রেনিং নিতে আওয়ামী লীগ নেতা জিতেন্দ্র প্রসাদনাথ মন্টুর সঙ্গে ভারতের হরিণা ক্যাম্পে যান। ভারতের হরিণা ক্যাম্প ও লোহার বন ক্যাম্পে ট্রেনিং শেষে দেশে ফিরে প্রথমে সিলেটের রানিবাড়িতে একজন ক্যাপ্টেনের নেতৃত্বে যুদ্ধে যোগ দেন। এক সপ্তাহ পর চট্টগ্রাম ১ নম্বর সেক্টরে ক্যাপ্টেন এনামুল হকের নেতৃত্বে যুদ্ধে যোগ দেন।
এনামুল হক বলেন, 'তালবাইয়া (তালবাড়িয়া) লোহার হোল (পুল) এলাকায় রাজাকার আজহারুল ছোবহান গ্রামের মেয়ে ছেলেরগোরে ধইরা লই যাই পাঞ্জাবিরগোই (পাকিস্তানি) হাতে তুলি দিত। নির্যাতন করি পরে খুন কইত্তো। এসব নির্যাতন সহ্য কইত্তাম ন হারি মুক্তিযুদ্ধে গেছি। সিলেটের রানি বাইত (বাড়ি) যুদ্ধ করার সময় দেখছি হিয়্যানে মাইয়্যাহোলা (মহিলা) রাজাকার আছিল। রানি বাইর এক্যান রাজাকার ক্যাম্পে আন্ডা অপারেশন চালাইছি।' তিনি আরো বলেন, 'মিরশ্বরী (মিরসরাই) আই ৫ নম্বর ওচমানপুরে কমান্ডার আহছান উল্লার নেতৃত্বে যুদ্ধ করি। ১৫ দিন হর হাঞ্জবিরা হঠাৎ করি হামলা কইল্যে নৌকা করি সন্দীপের চরে অবস্থান করি। এরপর আবার মিরশ্বরীর মঘাদিয়া আই যুদ্ধ শুরু করি। ডিসেম্বর মাসে কুমিরা যুদ্ধে হাঞ্জবিরগো লগে বোত গোলাগুলি অয়। অনেক মুক্তিযোদ্ধা সে যুদ্ধে মরি যায়।'
এনামুল হক জানান, তাঁর পাকস্থলীতে রোগ ধরা পড়েছে। চিকিৎসা করার মতো টাকা নেই। ভাতা বাবদ পাওয়া টাকায় কোনোমতে সংসারের খাবার জোগাড় হয়। সব সময় তাও হয় না। তবে অভাব নিয়ে তাঁর কোনো আক্ষেপ নেই। তবে তিনি বিস্মিত হন স্বাধীন দেশে রাজাকার ও তাদের দোসরদের আস্ফালন দেখে।
No comments