ভোটার হালনাগাদে ইসির তথ্য গোপন by কাজী হাফিজ
সদ্যসমাপ্ত ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ কার্যক্রমের তথ্য প্রকাশে লুকোচুরির আশ্রয় নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। দেশব্যাপী তালিকা হালনাগাদ শেষে নির্বাচন কমিশন যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে ঠিকানা বদলের বিষয়টি প্রকাশ করা হয়নি।
অথচ বড় শহরগুলোর ক্ষেত্রেই ভোটারদের ঠিকানা বদলের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। পক্ষান্তরে যেখানে ঠিকানা বদলের সম্ভাবনা কম, সেই গ্রামাঞ্চলসহ সারা দেশের গড় হিসাবটি কেবল প্রকাশ করা হয়েছে।
দেশের কোন এলাকার মানুষের ঠিকানা বদল হয় সবচেয়ে বেশি- নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা এ প্রশ্নের জবাবে একবাক্যে বলেছেন রাজধানী ঢাকা মহানগরীর কথা। তাঁরা বলেন, ঢাকা মহানগরীর বেশির ভাগ মানুষকেই এক বছর আগের ঠিকানায় পাওয়া কষ্টকর। কারণ এখানকার বেশির ভাগ অধিবাসীই বহিরাগত এবং ভাড়া বাসায় থাকেন। বস্তিতে ঠিকানা বদলের সংখ্যা আরো বেশি। সে কারণে জটিলতা এড়াতে আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদ না করে নতুন তালিকা করা হতো।
এবারের ভোটার তালিকা হালনাগাদে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত তথ্যে যে চিত্র উঠে এসেছে তাতে বাস্তবতায় গরমিল রয়েছে। কমিশনের তথ্যে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরীর তিন বছর আগের বিদ্যমান তালিকার ৪৮ লাখ ৩৭ হাজার ৬৮৩ জন ভোটারের মধ্যে স্থানান্তর হয়েছেন ৯ হাজার ৫৩৬ জন।
অন্যদিকে সারা দেশের বিদ্যমান আট কোটি ৫৭ লাখ ৪৭ হাজার ৩৬৩ জন ভোটারের মধ্যে স্থানান্তর হয়েছেন চার লাখ ৪০ হাজার ৭০৪ জন। সে হিসাবে সারা দেশে গড়ে যেখানে দশমিক ৫১ শতাংশ ভোটারের ঠিকানা বদল হয়েছে, সেখানে রাজধানীতে হয়েছে মাত্র দশমিক ১৯ শতাংশ ভোটারের।
নির্বাচন কমিশন ঢাকা মহানগরীর ভোটার স্থানান্তরের এই অবস্থার তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি। এ বিষয়ে তথ্য জানাতে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প এবং নির্বাচন কর্মকর্তাদের অজুহাতের অন্ত নেই। তবে কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ সেলের প্রধান সিরাজুল ইসলাম ঢাকার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহ আলমের বরাতে এ মহানগরীতে ভোটার স্থানান্তরের মোট সংখ্যাটি কালের কণ্ঠকে জানান। পরে কমিশন সচিবালয়ের জনসংযোগ শাখার পরিচালক আসাদুজ্জামানও তথ্যটি নিশ্চিত করেন।
ওই দুই কর্মকর্তা জানান, ঢাকা মহানগরীতে মৃত ভোটারের নাম কর্তন হয়েছে দুই হাজার ৪৫০টি। এ সংখ্যাও বিস্ময়ের। কারণ সারা দেশে বিদ্যমান ভোটার তালিকা থেকে যেখানে ছয় লাখ ৭৩ হাজার ৮৯৬ জন বা দশমিক ৭৮ শতাংশ মৃত ভোটারের নাম কর্তন করা হয়েছে, সেখানে ঢাকা মহানগরীতে হয়েছে শূন্য দশমিক ০৫ শতাংশ। অর্থাৎ হালনাগাদ ভোটার তালিকা থেকে এ তথ্যও উঠে এসেছে যে, ঢাকা মহানগরীতে মৃত্যুর হার দেশের গড় মৃত্যুহারের চেয়ে অনেক কম।
কিন্তু এ বিস্ময়কর তথ্য কি সঠিক? এ প্রশ্নেও নির্বাচন কর্মকর্তারা 'হ্যাঁ' বলতে পারছেন না। তাঁরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদের তথ্য সংগ্রহের সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার স্থানান্তরের ফরম বিতরণের নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু এই কাজের জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। আর ঠিকানা যাঁরা বদল করেছেন, তাঁরাও অনেকে সচেতনতার অভাবে নিজে থেকে আবেদন করেননি।
ঢাকা সেনাসিবাসের শহীদ মইনুল সড়কের ৬ নম্বরে সেনা কর্মকর্তাদের বসবাসের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ হয়েছে। সেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বাড়ির কোনো অস্তিত্বই নেই। তার পরও তিনি এখনো ওই ঠিকানার ভোটার। সদ্য সম্পন্ন হালনাগাদ এ তালিকায় তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরাও একই ঠিকানায় ভোটার রয়ে গেছেন বলে ঢাকার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহ আলম নিশ্চিত করেছেন।
চট্টগ্রাম মহানগরীতেও ভোটার স্থানান্তরের সংখ্যা অনেক কম বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরহাদ আহম্মদ খান। তিনি জানান, এ মহানগরীতে মাত্র ৯২৭ জন ভোটার স্থানান্তর হয়েছেন। মহানগরীর চান্দগাঁও থানা এলাকায় মাত্র দুজন এবং চন্দনাইশে মাত্র চারজন ভোটার স্থানান্তর হয়েছেন।
নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, হালনাগাদ তালিকায় ভোটারদের বর্তমান ঠিকানা সঠিক না হলে এতে নানামুখী সমস্যা হতে পারে। ভোটারদের ঠিকানাসংবলিত তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্রেও ব্যবহার করা হয়। ঠিকানা সঠিক না হলে ওই পরিচয়পত্রের গ্রহণযোগ্যতাও প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। নির্বাচনের সময় অনেক ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত করতেও সমস্যা হবে।
আগামী ২ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারা দেশের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর দাবি-আপত্তি গ্রহণের জন্য নির্ধারিত সময় শেষে ৩১ জানুয়ারি এই তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।
দেশের কোন এলাকার মানুষের ঠিকানা বদল হয় সবচেয়ে বেশি- নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা এ প্রশ্নের জবাবে একবাক্যে বলেছেন রাজধানী ঢাকা মহানগরীর কথা। তাঁরা বলেন, ঢাকা মহানগরীর বেশির ভাগ মানুষকেই এক বছর আগের ঠিকানায় পাওয়া কষ্টকর। কারণ এখানকার বেশির ভাগ অধিবাসীই বহিরাগত এবং ভাড়া বাসায় থাকেন। বস্তিতে ঠিকানা বদলের সংখ্যা আরো বেশি। সে কারণে জটিলতা এড়াতে আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদ না করে নতুন তালিকা করা হতো।
এবারের ভোটার তালিকা হালনাগাদে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত তথ্যে যে চিত্র উঠে এসেছে তাতে বাস্তবতায় গরমিল রয়েছে। কমিশনের তথ্যে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরীর তিন বছর আগের বিদ্যমান তালিকার ৪৮ লাখ ৩৭ হাজার ৬৮৩ জন ভোটারের মধ্যে স্থানান্তর হয়েছেন ৯ হাজার ৫৩৬ জন।
অন্যদিকে সারা দেশের বিদ্যমান আট কোটি ৫৭ লাখ ৪৭ হাজার ৩৬৩ জন ভোটারের মধ্যে স্থানান্তর হয়েছেন চার লাখ ৪০ হাজার ৭০৪ জন। সে হিসাবে সারা দেশে গড়ে যেখানে দশমিক ৫১ শতাংশ ভোটারের ঠিকানা বদল হয়েছে, সেখানে রাজধানীতে হয়েছে মাত্র দশমিক ১৯ শতাংশ ভোটারের।
নির্বাচন কমিশন ঢাকা মহানগরীর ভোটার স্থানান্তরের এই অবস্থার তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি। এ বিষয়ে তথ্য জানাতে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প এবং নির্বাচন কর্মকর্তাদের অজুহাতের অন্ত নেই। তবে কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ সেলের প্রধান সিরাজুল ইসলাম ঢাকার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহ আলমের বরাতে এ মহানগরীতে ভোটার স্থানান্তরের মোট সংখ্যাটি কালের কণ্ঠকে জানান। পরে কমিশন সচিবালয়ের জনসংযোগ শাখার পরিচালক আসাদুজ্জামানও তথ্যটি নিশ্চিত করেন।
ওই দুই কর্মকর্তা জানান, ঢাকা মহানগরীতে মৃত ভোটারের নাম কর্তন হয়েছে দুই হাজার ৪৫০টি। এ সংখ্যাও বিস্ময়ের। কারণ সারা দেশে বিদ্যমান ভোটার তালিকা থেকে যেখানে ছয় লাখ ৭৩ হাজার ৮৯৬ জন বা দশমিক ৭৮ শতাংশ মৃত ভোটারের নাম কর্তন করা হয়েছে, সেখানে ঢাকা মহানগরীতে হয়েছে শূন্য দশমিক ০৫ শতাংশ। অর্থাৎ হালনাগাদ ভোটার তালিকা থেকে এ তথ্যও উঠে এসেছে যে, ঢাকা মহানগরীতে মৃত্যুর হার দেশের গড় মৃত্যুহারের চেয়ে অনেক কম।
কিন্তু এ বিস্ময়কর তথ্য কি সঠিক? এ প্রশ্নেও নির্বাচন কর্মকর্তারা 'হ্যাঁ' বলতে পারছেন না। তাঁরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদের তথ্য সংগ্রহের সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার স্থানান্তরের ফরম বিতরণের নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু এই কাজের জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। আর ঠিকানা যাঁরা বদল করেছেন, তাঁরাও অনেকে সচেতনতার অভাবে নিজে থেকে আবেদন করেননি।
ঢাকা সেনাসিবাসের শহীদ মইনুল সড়কের ৬ নম্বরে সেনা কর্মকর্তাদের বসবাসের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ হয়েছে। সেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বাড়ির কোনো অস্তিত্বই নেই। তার পরও তিনি এখনো ওই ঠিকানার ভোটার। সদ্য সম্পন্ন হালনাগাদ এ তালিকায় তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরাও একই ঠিকানায় ভোটার রয়ে গেছেন বলে ঢাকার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহ আলম নিশ্চিত করেছেন।
চট্টগ্রাম মহানগরীতেও ভোটার স্থানান্তরের সংখ্যা অনেক কম বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরহাদ আহম্মদ খান। তিনি জানান, এ মহানগরীতে মাত্র ৯২৭ জন ভোটার স্থানান্তর হয়েছেন। মহানগরীর চান্দগাঁও থানা এলাকায় মাত্র দুজন এবং চন্দনাইশে মাত্র চারজন ভোটার স্থানান্তর হয়েছেন।
নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, হালনাগাদ তালিকায় ভোটারদের বর্তমান ঠিকানা সঠিক না হলে এতে নানামুখী সমস্যা হতে পারে। ভোটারদের ঠিকানাসংবলিত তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্রেও ব্যবহার করা হয়। ঠিকানা সঠিক না হলে ওই পরিচয়পত্রের গ্রহণযোগ্যতাও প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। নির্বাচনের সময় অনেক ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত করতেও সমস্যা হবে।
আগামী ২ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারা দেশের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর দাবি-আপত্তি গ্রহণের জন্য নির্ধারিত সময় শেষে ৩১ জানুয়ারি এই তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।
No comments