বুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষ্যা দূষণ-শিল্পবর্জ্য শোধন হোক
বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা পারের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্জ্য আর ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশ্রিত বিষাক্ত পানিতে দূষিত হচ্ছে নদী দুটির পানি। অথচ প্রতিটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বর্জ্য শোধনের জন্য ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেনলান্ট(আইটিপি) বসানো বাধ্যতামূলক।
কিন্তু নজরদারি ব্যবস্থার অপ্রতুলতা, সরকারের যথার্থ প্রণোদনা সৃষ্টিকারী পদক্ষেপের অভাব এবং একশ্রেণীর কারখানা মালিক ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে প্রতিটি কারখানায় আইটিপি স্থাপন এখনও সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এ কারণে ঢাকার প্রাণখ্যাত বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যার পানি প্রায় ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। দূষিত পানির কারণে নদী দুটিতে মাছসহ জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। গত বৃহস্পতিবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত এ সম্পর্কিত এক রিপোর্টে দেখা যায়, পরিবেশ অধিদফতর এ ব্যাপারে মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে যেসব কারখানা আইটিপি বসায়নি তাদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করলেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। কেন পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি এবং কারখানাগুলো বাধ্যতামূলক হওয়া সত্ত্বেও আইটিপি স্থাপনে আগ্রহী হচ্ছে না? এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী বলেছেন, আইটিপির দাম বেশি হওয়ার কারণেই এমনটা হচ্ছে। তাহলে কী করে কারখানা মালিকদের আইটিপি বসাতে আগ্রহী করা যাবে? আইটিপি স্থাপন করা কারখানা স্থাপনের সঙ্গে বাধ্যতামূলক করে সে অর্থ কারখানার মোট ব্যয়ের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া উচিত। দাম বেশি হওয়ার কারণে পুরনো কারখানাগুলোতে আইটিপি স্থাপনের জন্য সরকার জরুরি ভিত্তিতে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা নিতে পারে। তাহলে আইটিপির দাম বেশি এ অজুহাতে আর কোনো কারখানা মালিকের বর্জ্য শোধনের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ছাড়া কারখানা চালানোর কথা মাথায় আসবে না। নদী ও চারপাশের পরিবেশ রক্ষার জন্য সরকার, নির্দিষ্ট সংস্থা, পরিবেশবিদ ও কারখানা মালিকদের একটি যৌথ তদারকি ব্যবস্থা এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠা করে ভালো ফল লাভ সম্ভব হতে পারে। আমরা বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীসহ দেশের সব নদী ও পানিপ্রবাহকে দূষণমুক্ত দেখতে চাই। এ জন্য শিল্পগুলোকে বিষাক্ত বর্জ্য পানিতে ফেলার আগেই পরিশোধনের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার এ ব্যাপারে বাস্তবানুগ ও প্রণোদনা সৃষ্টিকারী পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করি।
No comments