একক ধান, যমজ চাল by জাহিদুল ইসলাম
‘কত ধানে কত চাল?’ চিরাচরিত এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো এমন—‘যত ধান তত চাল’। কিন্তু দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কয়েকজন কৃষক এই উত্তর যেন বদলে দিচ্ছেন। তাঁরা এমন একটি জাতের ধানের চাষ করছেন, যার একটি ধানের ভেতর থেকে দুই থেকে তিনটি চাল পাওয়া যাচ্ছে!
বিরামপুর উপজেলা সদরের কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. অছিমুদ্দিনের হাত ধরে এলাকায় এ ধানের চাষ শুরু। এরপর কৃষকেরা আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসতে থাকেন। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের এলাকায়।
শুরুর কথা: বিরামপুর উপজেলা পরিষদের সামনে ছোট খাবারের হোটেল চালান অছিমুদ্দিন। পাশাপাশি করেন কৃষিকাজ। ২০০৯ সালের কথা। অছিমুদ্দিন বেড়াতে যান জয়পুরহাটের জামালগঞ্জ বাজার এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে। দিন-তারিখ মনে নেই। এক বিকেলে আত্মীয়ের বাড়ির পাশের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন তিনি। তাঁর পাশেই বসে চা খেতে খেতে গল্প করছিলেন স্থানীয় দুই কৃষক। তাঁদের গল্পের বিষয় তাঁর মনোযোগ কাড়ে। বুঝলেন, অচেনা জাতের ধান খুঁজে পাওয়ার বিষয় নিয়ে গল্প করছেন তাঁরা। সেই জাতের একটি ধান থেকে নাকি দুই থেকে তিনটি চাল পাওয়া যায়! একরাশ বিস্ময় নিয়ে তাঁদের গল্পের মধ্যে যেন ডুবে গেলেন অছিমুদ্দিন। শুনলেন, একজন অন্যজনকে বলছেন, ‘এবার আমার আমন খেতে লম্বাজাতীয় কিছু ধানগাছ হয়েছে। দেখতে আগাছার মতো। পরে দেখি, সেগুলোতেও ধানের শিষ বের হয়েছে। তাই রেখে দিলাম। ধান পাকার পর দেখি, একটি ধানের ভেতর থেকে দুই থেকে তিনটি চাল বের হচ্ছে।’
গল্প শুনতে শুনতেই মনস্থির করে ফেলেন অছিমুদ্দিন। যে করে হোক, এই ধান সংগ্রহ করে নিজে চাষ করবেন। তাঁর আত্মীয়কে ধরে সেই কৃষকের কাছে নিজের ইচ্ছার কথা জানালেন। ওই কৃষক অচেনা জাতের ছয় থেকে সাতটি ধান দিলেন অছিমুদ্দিনকে। অছিমুদ্দিন অনেক কষ্ট করেও সেই কৃষকের নাম মনে করতে পারলেন না। তবে তাঁর উদারতার কথা ভোলেননি।
অছিমুদ্দিনের শুরু: নিজ বাড়িতে ফিরে বিরামপুর মহাবিদ্যালয়ের মাঠের পাশের একখণ্ড বীজতলায় আমন ধানের পাশাপাশি অচেনা সেই জাতের ধান কটি বুনলেন। কয়েক দিনের মধ্যে চারাও বের হলো। বীজতলা থেকে ওই চারা জমিতে রোপণ করলেন অছিমুদ্দিন। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে চারা। একটা পর্যায়ে দেখা গেল, আমনের অন্য জাতগুলোর তুলনায় অচেনা এই জাতের ধানের গাছগুলো বেশ খানিকটা লম্বা। অছিমুদ্দিন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকেন ধানের জন্য। এরপর থোকা থোকা ধান বের হলো। ধীরে ধীরে পাকাও শুরু হলো। অছিমুদ্দিনের যখন তর সয় না, তখন একদিন ধানের শিষ থেকেই কয়েকটি ধান নিয়ে খোসা ছড়ান। দেখেন, কোনোটির মধ্যে দুটি আবার কোনোটির মধ্যে তিনটি চাল। সেবার ওই কয়েকটি চারা থেকে কেজি খানেক ধান পান তিনি। এ খবর আশপাশে ছড়িয়ে যায়। উৎসাহী কৃষকেরা আসতে থাকে অছিমুদ্দিনের কাছে। পরের বছর চাষ বাড়ান তিনি। তিন শতকে ৩০ কেজির মতো ধান পান তিনি।
ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে: প্রতিবেশী কৃষক অফিজ উদ্দিন, বিরামপুরের খানপুর ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন, জোতবানী ইউনিয়নের কচুয়া মির্জাপুর গ্রামের আবদুর রাজ্জাকসহ অনেকেই অছিমুদ্দিনের কাছ থেকে সেই ধান সংগ্রহ করেন।
অছিমুদ্দিন জানালেন, বিভিন্ন এলাকার অন্তত ২০ জন কৃষক তাঁর কাছ থেকে এই ধান নিয়ে যান। চাষ করেন। ‘যা ধান হয়, তা উৎসাহী অন্য কৃষকেরা চাষ করবে বলে নিয়ে যান। তাই বাজারে এ ধান বিক্রি শুরু হয়নি। আমার ইচ্ছা, কৃষকদের হাত ধরে আশপাশের জেলাগুলোতেও এ ধানের চাষ ছড়িয়ে পড়ুক।’ কৃষকের আগ্রহ আর নিজের ইচ্ছা সম্পর্কে এভাবে বলেন অছিমুদ্দিন।
তবে ধান কাটার আগেই খেত থেকে কিছু কিছু করে ধান চুরি হয়। তাই এবার এ জাতের ধান চাষই করেননি তিনি।
চাষ ও খরচ: কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এই জাতের ধানের চাষাবাদপদ্ধতি ও খরচ অন্য জাতের ধানের মতোই। বাড়তি কোনো পরিশ্রম নেই।
অছিমুদ্দিন জানালেন, অন্য জাতের ধানের চাষ করে বিঘাপ্রতি ১৪ থেকে ১৮ মণ ধান উৎপাদন করা সম্ভব। কিন্ত এই ধান বিঘাপ্রতি পাওয়া যায় আট থেকে দশ মণ।
‘অছিমুদ্দিনের কাছ থেকে অচেনা সেই জাতের ধান এনে ১৫ শতক জমিতে চাষ করেছিলাম। চার মণের মতো ধান পেয়েছি। খরচ হয়েছে অন্য জাতের ধানের মতোই। কিন্তু ফলন কম।’ বলছিলেন রতনপুরের কৃষক তোফাজ্জল। এই জাতের ধান নিয়ে গবেষণা করা হলে ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে আশাবাদী তোফাজ্জল।
কৃষক রাজ্জাক ও অফিজ উদ্দিন ২৭ শতক জমিতে এ জাতের ধানের আবাদ করেন। অফিজ উদ্দিন বলেন, ‘এ ধানের চাল পোলাওয়ের চালের মতো। ফলন কম হলেও সমস্যা নেই। গবেষণা করে যদি এর মধ্যে পোলাওয়ের চালের গন্ধ দেওয়া যায়, তা ভালো দামে বিক্রি করা যাবে। তখন এই ধান চাষ করেও কৃষকদের লোকসানের আশঙ্কা থাকবে না। আর গাছ লম্বা বলে খড় অনেক বেশি পাওয়া যায়।’
কয়েকজন কৃষক জানালেন, এ ধানগাছের উচ্চতা প্রায় পাঁচ ফুট। তাই বর্ষাকালে কিছুটা নিচু জমিতেও চাষ করা সম্ভব। বড় ধরনের বন্যা ছাড়া এ গাছ ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। গাছের গোড়া সাধারণ ধানগাছের চেয়ে মোটা। তাই খেতে দীর্ঘদিন পানি জমে থাকলেও গোড়া পচে যাওয়ার ভয় থাকে না।
অছিমুদ্দিনের জামাই আতাবুল ২০১০ সালে ১০ কাঠা জমিতে এ ধানের চাষ করেন। কিন্তু বর্ষা শুরু হলে খেত ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা ভর করে তাঁর মাথায়। ‘বর্ষার পানি খেতে জমতে শুরু করলে ক্ষতি হবে বলে ভয় পেয়েছিলাম। তবে পানি বাড়তে থাকলে গাছও বড় হতে থাকে। ধানগাছ লম্বা বলে পানি গাছের ডগা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। গাছের গোড়াও পচেনি।’ বলছিলেন আতাবুল। ‘এত দিন আমরা বইন্যারে ভয় পাতাম। এই জাতের ধান বইন্যারে ভয় পায় না।’ মন্তব্য আতাবুলের।
চাল ও ভাত: কৃষক রাজ্জাক জানালেন, এ ধান দেখতে সাধারণ অন্য ধানের চেয়ে কিছুটা মোটা। তবে চাল সরু, একটু বাঁকাও। দেখতে কিছুটা কাটারিভোগ চালের মতো।
এই চালের ভাত খেয়েছেন এমন কয়েকজন জানালেন, চাল সরু বলে ভাতও সুন্দর ঝর ঝরে হয়। খেতেও ভালো লাগে।
অছিমুদ্দিনের মেয়ে পেয়ারা জানালেন, একেবারে সাধারণ চালের মতোই রান্না করতে হয়। এমনি রান্নার সময় পানির কম-বেশিও সেভাবে করতে হয় না।
চাহিদা: বিরামপুরে সাধারণ জাতের ধান ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। সেখানে কয়েকজন কৃষকের কাছে থাকা অচেনা এই জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা মণ দরে। তাও উৎসাহী কৃষকেরা এ ধান কিনছেন।
স্থানীয় লোকজন জানালেন, অছিমুদ্দিনের হাত ধরে বিরামপুরে আসা এ জাতের ধান চাষে অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন। অনেক কৃষক এবার ইরি-বোরো মৌসুমেও এ ধান চাষ করবেন।
খেত থেকে ধান চুরি হওয়ায় গতবার অছিমুদ্দিন ধানের চাষ করেননি। তাই বলে হাল ছাড়েননি। আগামী মৌসুমে এ ধানের চাষ করার পরিকল্পনা করছেন তিনি। তাঁর স্বপ্ন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে এই ধান। গবেষণার মাধ্যে এ ধান আরও উন্নত হয়ে দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়াবে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে দেশ।
বিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহ আলম প্রথম আলোকে জানান, দুই বছর ধরে এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষক এই জাতের ধান আবাদ করছেন। ফলন কিছুটা কম। বিঘাপ্রতি আট থেকে দশ মণ। আমন ও বোরো—দুই মৌসুমেই এ ধান আবাদ করা যায়। ধানের এই জাতটি নিয়ে গবেষণা করা দরকার।
শুরুর কথা: বিরামপুর উপজেলা পরিষদের সামনে ছোট খাবারের হোটেল চালান অছিমুদ্দিন। পাশাপাশি করেন কৃষিকাজ। ২০০৯ সালের কথা। অছিমুদ্দিন বেড়াতে যান জয়পুরহাটের জামালগঞ্জ বাজার এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে। দিন-তারিখ মনে নেই। এক বিকেলে আত্মীয়ের বাড়ির পাশের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন তিনি। তাঁর পাশেই বসে চা খেতে খেতে গল্প করছিলেন স্থানীয় দুই কৃষক। তাঁদের গল্পের বিষয় তাঁর মনোযোগ কাড়ে। বুঝলেন, অচেনা জাতের ধান খুঁজে পাওয়ার বিষয় নিয়ে গল্প করছেন তাঁরা। সেই জাতের একটি ধান থেকে নাকি দুই থেকে তিনটি চাল পাওয়া যায়! একরাশ বিস্ময় নিয়ে তাঁদের গল্পের মধ্যে যেন ডুবে গেলেন অছিমুদ্দিন। শুনলেন, একজন অন্যজনকে বলছেন, ‘এবার আমার আমন খেতে লম্বাজাতীয় কিছু ধানগাছ হয়েছে। দেখতে আগাছার মতো। পরে দেখি, সেগুলোতেও ধানের শিষ বের হয়েছে। তাই রেখে দিলাম। ধান পাকার পর দেখি, একটি ধানের ভেতর থেকে দুই থেকে তিনটি চাল বের হচ্ছে।’
গল্প শুনতে শুনতেই মনস্থির করে ফেলেন অছিমুদ্দিন। যে করে হোক, এই ধান সংগ্রহ করে নিজে চাষ করবেন। তাঁর আত্মীয়কে ধরে সেই কৃষকের কাছে নিজের ইচ্ছার কথা জানালেন। ওই কৃষক অচেনা জাতের ছয় থেকে সাতটি ধান দিলেন অছিমুদ্দিনকে। অছিমুদ্দিন অনেক কষ্ট করেও সেই কৃষকের নাম মনে করতে পারলেন না। তবে তাঁর উদারতার কথা ভোলেননি।
অছিমুদ্দিনের শুরু: নিজ বাড়িতে ফিরে বিরামপুর মহাবিদ্যালয়ের মাঠের পাশের একখণ্ড বীজতলায় আমন ধানের পাশাপাশি অচেনা সেই জাতের ধান কটি বুনলেন। কয়েক দিনের মধ্যে চারাও বের হলো। বীজতলা থেকে ওই চারা জমিতে রোপণ করলেন অছিমুদ্দিন। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে চারা। একটা পর্যায়ে দেখা গেল, আমনের অন্য জাতগুলোর তুলনায় অচেনা এই জাতের ধানের গাছগুলো বেশ খানিকটা লম্বা। অছিমুদ্দিন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকেন ধানের জন্য। এরপর থোকা থোকা ধান বের হলো। ধীরে ধীরে পাকাও শুরু হলো। অছিমুদ্দিনের যখন তর সয় না, তখন একদিন ধানের শিষ থেকেই কয়েকটি ধান নিয়ে খোসা ছড়ান। দেখেন, কোনোটির মধ্যে দুটি আবার কোনোটির মধ্যে তিনটি চাল। সেবার ওই কয়েকটি চারা থেকে কেজি খানেক ধান পান তিনি। এ খবর আশপাশে ছড়িয়ে যায়। উৎসাহী কৃষকেরা আসতে থাকে অছিমুদ্দিনের কাছে। পরের বছর চাষ বাড়ান তিনি। তিন শতকে ৩০ কেজির মতো ধান পান তিনি।
ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে: প্রতিবেশী কৃষক অফিজ উদ্দিন, বিরামপুরের খানপুর ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন, জোতবানী ইউনিয়নের কচুয়া মির্জাপুর গ্রামের আবদুর রাজ্জাকসহ অনেকেই অছিমুদ্দিনের কাছ থেকে সেই ধান সংগ্রহ করেন।
অছিমুদ্দিন জানালেন, বিভিন্ন এলাকার অন্তত ২০ জন কৃষক তাঁর কাছ থেকে এই ধান নিয়ে যান। চাষ করেন। ‘যা ধান হয়, তা উৎসাহী অন্য কৃষকেরা চাষ করবে বলে নিয়ে যান। তাই বাজারে এ ধান বিক্রি শুরু হয়নি। আমার ইচ্ছা, কৃষকদের হাত ধরে আশপাশের জেলাগুলোতেও এ ধানের চাষ ছড়িয়ে পড়ুক।’ কৃষকের আগ্রহ আর নিজের ইচ্ছা সম্পর্কে এভাবে বলেন অছিমুদ্দিন।
তবে ধান কাটার আগেই খেত থেকে কিছু কিছু করে ধান চুরি হয়। তাই এবার এ জাতের ধান চাষই করেননি তিনি।
চাষ ও খরচ: কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এই জাতের ধানের চাষাবাদপদ্ধতি ও খরচ অন্য জাতের ধানের মতোই। বাড়তি কোনো পরিশ্রম নেই।
অছিমুদ্দিন জানালেন, অন্য জাতের ধানের চাষ করে বিঘাপ্রতি ১৪ থেকে ১৮ মণ ধান উৎপাদন করা সম্ভব। কিন্ত এই ধান বিঘাপ্রতি পাওয়া যায় আট থেকে দশ মণ।
‘অছিমুদ্দিনের কাছ থেকে অচেনা সেই জাতের ধান এনে ১৫ শতক জমিতে চাষ করেছিলাম। চার মণের মতো ধান পেয়েছি। খরচ হয়েছে অন্য জাতের ধানের মতোই। কিন্তু ফলন কম।’ বলছিলেন রতনপুরের কৃষক তোফাজ্জল। এই জাতের ধান নিয়ে গবেষণা করা হলে ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে আশাবাদী তোফাজ্জল।
কৃষক রাজ্জাক ও অফিজ উদ্দিন ২৭ শতক জমিতে এ জাতের ধানের আবাদ করেন। অফিজ উদ্দিন বলেন, ‘এ ধানের চাল পোলাওয়ের চালের মতো। ফলন কম হলেও সমস্যা নেই। গবেষণা করে যদি এর মধ্যে পোলাওয়ের চালের গন্ধ দেওয়া যায়, তা ভালো দামে বিক্রি করা যাবে। তখন এই ধান চাষ করেও কৃষকদের লোকসানের আশঙ্কা থাকবে না। আর গাছ লম্বা বলে খড় অনেক বেশি পাওয়া যায়।’
কয়েকজন কৃষক জানালেন, এ ধানগাছের উচ্চতা প্রায় পাঁচ ফুট। তাই বর্ষাকালে কিছুটা নিচু জমিতেও চাষ করা সম্ভব। বড় ধরনের বন্যা ছাড়া এ গাছ ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। গাছের গোড়া সাধারণ ধানগাছের চেয়ে মোটা। তাই খেতে দীর্ঘদিন পানি জমে থাকলেও গোড়া পচে যাওয়ার ভয় থাকে না।
অছিমুদ্দিনের জামাই আতাবুল ২০১০ সালে ১০ কাঠা জমিতে এ ধানের চাষ করেন। কিন্তু বর্ষা শুরু হলে খেত ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা ভর করে তাঁর মাথায়। ‘বর্ষার পানি খেতে জমতে শুরু করলে ক্ষতি হবে বলে ভয় পেয়েছিলাম। তবে পানি বাড়তে থাকলে গাছও বড় হতে থাকে। ধানগাছ লম্বা বলে পানি গাছের ডগা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। গাছের গোড়াও পচেনি।’ বলছিলেন আতাবুল। ‘এত দিন আমরা বইন্যারে ভয় পাতাম। এই জাতের ধান বইন্যারে ভয় পায় না।’ মন্তব্য আতাবুলের।
চাল ও ভাত: কৃষক রাজ্জাক জানালেন, এ ধান দেখতে সাধারণ অন্য ধানের চেয়ে কিছুটা মোটা। তবে চাল সরু, একটু বাঁকাও। দেখতে কিছুটা কাটারিভোগ চালের মতো।
এই চালের ভাত খেয়েছেন এমন কয়েকজন জানালেন, চাল সরু বলে ভাতও সুন্দর ঝর ঝরে হয়। খেতেও ভালো লাগে।
অছিমুদ্দিনের মেয়ে পেয়ারা জানালেন, একেবারে সাধারণ চালের মতোই রান্না করতে হয়। এমনি রান্নার সময় পানির কম-বেশিও সেভাবে করতে হয় না।
চাহিদা: বিরামপুরে সাধারণ জাতের ধান ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। সেখানে কয়েকজন কৃষকের কাছে থাকা অচেনা এই জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা মণ দরে। তাও উৎসাহী কৃষকেরা এ ধান কিনছেন।
স্থানীয় লোকজন জানালেন, অছিমুদ্দিনের হাত ধরে বিরামপুরে আসা এ জাতের ধান চাষে অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন। অনেক কৃষক এবার ইরি-বোরো মৌসুমেও এ ধান চাষ করবেন।
খেত থেকে ধান চুরি হওয়ায় গতবার অছিমুদ্দিন ধানের চাষ করেননি। তাই বলে হাল ছাড়েননি। আগামী মৌসুমে এ ধানের চাষ করার পরিকল্পনা করছেন তিনি। তাঁর স্বপ্ন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে এই ধান। গবেষণার মাধ্যে এ ধান আরও উন্নত হয়ে দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়াবে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে দেশ।
বিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহ আলম প্রথম আলোকে জানান, দুই বছর ধরে এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষক এই জাতের ধান আবাদ করছেন। ফলন কিছুটা কম। বিঘাপ্রতি আট থেকে দশ মণ। আমন ও বোরো—দুই মৌসুমেই এ ধান আবাদ করা যায়। ধানের এই জাতটি নিয়ে গবেষণা করা দরকার।
No comments