অক্সফোর্ডে বাংলার নৌকা ভাসালেন আজিজ by ইকবাল হোসাইন চৌধুরী
ঘটনা ঠিক বিশ্বাসযোগ্য নয়। বিমানে চেপে বাংলাদেশ থেকে নৌকা গেল বিলেতে। সেই নৌকা নিয়ে হলো নৌকাবাইচ। বাংলাদেশের সেই নৌকাবাইচ এখন অক্সফোর্ড নগরের জনপ্রিয় এক বার্ষিক অনুষ্ঠান! এই নৌকাবাইচের তারিফ করেছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ স্বয়ং!
৮ ডিসেম্বর, ২০১২। লন্ডনের ভিক্টোরিয়া থেকে বাসে চেপে গেলাম অক্সফোর্ড। কারণ, ওখানেই থাকেন ঘটনার নায়ক আজিজ উর রহমান। বিখ্যাত আজিজ রেস্টুরেন্টে বসে আজিজ উর রহমান নিজেই শোনালেন এই বাইচবৃত্তান্ত, ‘২০০৭ সালের ঘটনা। অক্সফোর্ড নগরের হাজার বছর পূর্তি উপলক্ষে উৎসব হবে। পরিকল্পনাসভায় আমাকে বলা হলো নতুন কী করা যায় আইডিয়া দিতে। আমি বললাম, নৌকাবাইচের আয়োজন করব। কিন্তু সেটি হবে পুরোপুরি বাংলাদেশি ধাঁচে।’
অক্সফোর্ডের নৌকাবাইচ সব সময়ই জনপ্রিয়। অভিজাত মহলে এর কদরও বেশি। কিন্তু বাংলাদেশি নৌকাবাইচ, সেটা আবার কেমন? জানতে আগ্রহী হলেন নগরকর্তারা। চ্যালেঞ্জটা লুফে নিলেন আজিজ উর রহমান।
দ্রুত যোগাযোগ করলেন নারায়ণগঞ্জে। বাংলাদেশের কারিগরদের সঙ্গে কথা হলো। তাঁরা জানালেন, সময়মতো তৈরি হয়ে যাবে নৌকা। জাহাজে চেপে সেই নৌকা যাবে অক্সফোর্ড। কিন্তু বিধি বাম। নির্ধারিত সময়ে শেষ হলো না নৌকা তৈরির কাজ। উৎসবের আর মাত্র কটা দিন বাকি। জাহাজে নেওয়ার সময় নেই। এখন উপায়?
শেষ চেষ্টা হিসেবে আছে উড়োজাহাজ। সেখানেও রাজ্যের বিপত্তি। কোনো এয়ারলাইনস এত বিশাল নৌকা পরিবহনে রাজি নয়। অনেক পীড়াপীড়ির পর শেষে রাজি হলো থাই এয়ারওয়েজ। কিন্তু প্রায় ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের দুটো নৌকা বিমানে তোলার উপায় কী?
শেষমেশ তিন ভাগে ভাগ করে বিমানে ওঠানো হলো দুটি নৌকা। মে মাসের এক সন্ধ্যায় হিথরো বিমানবন্দরে গিয়ে নামল বোয়িং ৭৪৭। হিথরো থেকে নৌকা উঠল আবার লরিতে। লরি অক্সফোর্ড গিয়ে যখন পৌঁছাল তখন উৎসবের মাত্র ৩৬ ঘণ্টা বাকি। নৌকার তিনটি অংশ জোড়া দেওয়া বাকি। আজিজ উর রহমানের নেতৃত্বে শুরু হয়ে গেল তোড়জোড়। মাঝি আর বাইচের দরকারি অনুষঙ্গ ঢোল বাদনের লোকও জোগাড় হয়ে গেল প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্য থেকে।
উৎসবের দিন। লোকে লোকারণ্য টেমস নদীর দুই পাড়। বিপুল করতালি আর উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে পানিতে ভাসল বাংলার নৌকা। দুটো নৌকাই লাল, সবুজ আর হলুদ রঙে রঙিন। মাঝিদের গায়ে ঝলমলে রঙিন পোশাক। কণ্ঠে গান। নৌকা এগোচ্ছে ঢোলের তালে তালে।
সব মিলিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ টেমসপাড়ের দর্শক। সেই মুগ্ধতার সুবাদেই বাংলাদেশের নৌকাবাইচ জায়গা করে নিল অক্সফোর্ড নগরের ইতিহাসের পাতায়। তৈরি হলো অক্সফোর্ড বাংলাদেশি বোট ক্লাব। ফারমুর রিজারভোয়া অক্সফোর্ডের কাছেই দারুণ সুন্দর এক জলাধারের নাম। যেখানে পুরোটা বছর ধরে চলে নৌকাবাইচ অনুশীলন আর প্রতিযোগিতা। প্রতিবছর এই ফারমুর রিজারভোয়ায় আয়োজিত হয় বার্ষিক নৌকাবাইচ। সেই নৌকাবাইচ হয়ে ওঠে যুক্তরাজ্য তো বটেই গোটা ইউরোপের বাংলাদেশিদের মিলনমেলা।
মা-বাবার সঙ্গে ছোটবেলায় বিলেতে পাড়ি জমিয়েছিলেন আজিজ উর রহমান। সেটা ১৯৬৯ সাল। সিলেটে ১৯৫৮ সালে জন্ম আজিজ উর রহমানের। বাংলাদেশের সেই আজিজ উর রহমান এখন অক্সফোর্ডের এক খ্যাতিমান ব্যক্তির নাম। ব্রিটেনের বাংলাদেশি খানাপিনা জনপ্রিয় করার পেছনে আছে তাঁর বিশাল ভূমিকা। ২০০৮ সালে পেয়েছেন অক্সফোর্ড ব্রুকস ইউনিভার্সিটি থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ইন বিজনেস ডিগ্রি। তিনি অক্সফোর্ডশায়ার বিজনেস এন্টারপ্রাইজের পরিচালক ও বাংলাদেশ-ব্রিটিশ চেম্বার অব কমার্সের মহাপরিচালক। এ ছাড়া জড়িয়ে আছেন বাংলাদেশের নানা দাতব্য আর সেবামূলক কাজে।
আজিজ উর রহমানের নৌকাবাইচের পঞ্চম বর্ষপূর্তিতে তাঁকে সাধুবাদ জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছিলেন স্বয়ং রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সেই প্রশংসাবার্তার কিছু অংশ, ‘আমি নৌকাবাইচের ইতিহাস জানতে ভীষণ আগ্রহী। সেবামূলক কাজে আপনার ব্যাপক অংশগ্রহণও চোখে পড়ার মতো। আপনার অনুষ্ঠানের জন্য শুভকামনা।’
আমিই বাংলাদেশ নিয়ে পরামর্শ ও তথ্য যোগাযোগ: ab@prothom-alo.info
অক্সফোর্ডের নৌকাবাইচ সব সময়ই জনপ্রিয়। অভিজাত মহলে এর কদরও বেশি। কিন্তু বাংলাদেশি নৌকাবাইচ, সেটা আবার কেমন? জানতে আগ্রহী হলেন নগরকর্তারা। চ্যালেঞ্জটা লুফে নিলেন আজিজ উর রহমান।
দ্রুত যোগাযোগ করলেন নারায়ণগঞ্জে। বাংলাদেশের কারিগরদের সঙ্গে কথা হলো। তাঁরা জানালেন, সময়মতো তৈরি হয়ে যাবে নৌকা। জাহাজে চেপে সেই নৌকা যাবে অক্সফোর্ড। কিন্তু বিধি বাম। নির্ধারিত সময়ে শেষ হলো না নৌকা তৈরির কাজ। উৎসবের আর মাত্র কটা দিন বাকি। জাহাজে নেওয়ার সময় নেই। এখন উপায়?
শেষ চেষ্টা হিসেবে আছে উড়োজাহাজ। সেখানেও রাজ্যের বিপত্তি। কোনো এয়ারলাইনস এত বিশাল নৌকা পরিবহনে রাজি নয়। অনেক পীড়াপীড়ির পর শেষে রাজি হলো থাই এয়ারওয়েজ। কিন্তু প্রায় ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের দুটো নৌকা বিমানে তোলার উপায় কী?
শেষমেশ তিন ভাগে ভাগ করে বিমানে ওঠানো হলো দুটি নৌকা। মে মাসের এক সন্ধ্যায় হিথরো বিমানবন্দরে গিয়ে নামল বোয়িং ৭৪৭। হিথরো থেকে নৌকা উঠল আবার লরিতে। লরি অক্সফোর্ড গিয়ে যখন পৌঁছাল তখন উৎসবের মাত্র ৩৬ ঘণ্টা বাকি। নৌকার তিনটি অংশ জোড়া দেওয়া বাকি। আজিজ উর রহমানের নেতৃত্বে শুরু হয়ে গেল তোড়জোড়। মাঝি আর বাইচের দরকারি অনুষঙ্গ ঢোল বাদনের লোকও জোগাড় হয়ে গেল প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্য থেকে।
উৎসবের দিন। লোকে লোকারণ্য টেমস নদীর দুই পাড়। বিপুল করতালি আর উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে পানিতে ভাসল বাংলার নৌকা। দুটো নৌকাই লাল, সবুজ আর হলুদ রঙে রঙিন। মাঝিদের গায়ে ঝলমলে রঙিন পোশাক। কণ্ঠে গান। নৌকা এগোচ্ছে ঢোলের তালে তালে।
সব মিলিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ টেমসপাড়ের দর্শক। সেই মুগ্ধতার সুবাদেই বাংলাদেশের নৌকাবাইচ জায়গা করে নিল অক্সফোর্ড নগরের ইতিহাসের পাতায়। তৈরি হলো অক্সফোর্ড বাংলাদেশি বোট ক্লাব। ফারমুর রিজারভোয়া অক্সফোর্ডের কাছেই দারুণ সুন্দর এক জলাধারের নাম। যেখানে পুরোটা বছর ধরে চলে নৌকাবাইচ অনুশীলন আর প্রতিযোগিতা। প্রতিবছর এই ফারমুর রিজারভোয়ায় আয়োজিত হয় বার্ষিক নৌকাবাইচ। সেই নৌকাবাইচ হয়ে ওঠে যুক্তরাজ্য তো বটেই গোটা ইউরোপের বাংলাদেশিদের মিলনমেলা।
মা-বাবার সঙ্গে ছোটবেলায় বিলেতে পাড়ি জমিয়েছিলেন আজিজ উর রহমান। সেটা ১৯৬৯ সাল। সিলেটে ১৯৫৮ সালে জন্ম আজিজ উর রহমানের। বাংলাদেশের সেই আজিজ উর রহমান এখন অক্সফোর্ডের এক খ্যাতিমান ব্যক্তির নাম। ব্রিটেনের বাংলাদেশি খানাপিনা জনপ্রিয় করার পেছনে আছে তাঁর বিশাল ভূমিকা। ২০০৮ সালে পেয়েছেন অক্সফোর্ড ব্রুকস ইউনিভার্সিটি থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ইন বিজনেস ডিগ্রি। তিনি অক্সফোর্ডশায়ার বিজনেস এন্টারপ্রাইজের পরিচালক ও বাংলাদেশ-ব্রিটিশ চেম্বার অব কমার্সের মহাপরিচালক। এ ছাড়া জড়িয়ে আছেন বাংলাদেশের নানা দাতব্য আর সেবামূলক কাজে।
আজিজ উর রহমানের নৌকাবাইচের পঞ্চম বর্ষপূর্তিতে তাঁকে সাধুবাদ জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছিলেন স্বয়ং রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সেই প্রশংসাবার্তার কিছু অংশ, ‘আমি নৌকাবাইচের ইতিহাস জানতে ভীষণ আগ্রহী। সেবামূলক কাজে আপনার ব্যাপক অংশগ্রহণও চোখে পড়ার মতো। আপনার অনুষ্ঠানের জন্য শুভকামনা।’
আমিই বাংলাদেশ নিয়ে পরামর্শ ও তথ্য যোগাযোগ: ab@prothom-alo.info
No comments