চরাচর-বাইক্কা বিলের পাখিশুমারি by বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
পরিবেশ ও প্রকৃতির অনন্য এক বন্ধু পাখি। শুধু পাখি দেখার জন্যই নয়, প্রকৃতির মাঝে পাখির প্রজাতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য পাখিশুমারির গবেষকরা তুলে আনেন পাখির সংখ্যা, জাত-প্রজাতিসহ নানা তথ্য-উপাত্ত।
পাখির আলোকচিত্র ও ভিডিও ফুটেজ ক্যামেরাবন্দি করে গবেষণা এবং বিশ্লেষণের পর গবেষকরা জানিয়ে দেন এসব পাখির বর্তমান অবস্থার খুঁটিনাটি দিক। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও পাখি নিয়ে গবেষণাকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়েটল্যান্ডস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের জাতীয় সমন্বয়কারী ইনাম আল হক। তাঁর নেতৃত্বেই প্রতিবছর বাংলাদেশে জলচর পাখিশুমারি হয়ে থাকে। বাংলাদেশের পাখিশুমারি বিষয়ে তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, বিশ্বব্যাপী পাখি নিয়ে গবেষণা করছে ওয়েটল্যান্ডস ইন্টারন্যাশনাল সংস্থা। এ সংস্থার এশিয়া অঞ্চলের সংগঠনের নাম এশিয়ান ওয়াটার বার্ড সেনসাস। এ সংস্থা প্রতিবছর শীতকালে এশিয়ার দেশগুলোতে একযোগে জলচর পাখিশুমারি করে থাকে। এ সংস্থার বাংলাদেশের জাতীয় সমন্বয়ক বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব। এ ক্লাবের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ২০ বছর ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জলাশয়, হাওর-বাঁওড় ও উপকূলীয় এলাকায় আমরা এ পাখিশুমারি করে আসছি। আমাদের এ শুমারির ফলাফল আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রকাশনায় তুলে ধরা হয়। সম্প্রতি আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ পাখি এলাকা হিসেবে তালিকাভুক্ত শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরে এশিয়ান ওয়াটার বার্ড সেনসাসের আওতায় গত ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি এ পাখিশুমারি অনুষ্ঠিত হয়। ওই শুমারিতে এ বছর ৪০টি প্রজাতির পাঁচ হাজার ৯৮৭টি পাখির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে বাইক্কা বিলে বিচরণকারী পাখির সংখ্যা ছিল ৩৪ প্রজাতির ৯ হাজার ৪০৫টি। ২০১০ সালে তা বেড়ে ৩৮ প্রজাতির ১২ হাজার ২৫০টিতে পরিণত হয়। ইনাম আল হক আরো জানান, বাইক্কা বিলে এবার পাখির সংখ্যা কিছুটা কম হলেও এ বিলসহ আশপাশের বিলগুলোতে ৪০ প্রজাতির প্রায় ১০ হাজার পাখি বিচরণ করছে। এ বছর বাইক্কা বিলে সবচেয়ে বেশি বিচরণকারী পাখির মধ্যে রয়েছে ১ হাজার ৬০টি পাতারি হাঁস, ৯০০টি গেওয়ালা বাটান, ৮২৬টি বেগুনি কালিম এবং মেটে মাথা টিটি ২৫১টি। এ ছাড়াও রয়েছে গিরিয়া হাঁস, সাপ পাখি, খুনতে হাঁস, সরালি, লেঞ্জা, কালামাথা ঠেঙ্গি, দাগিলাল পা ও অসপ্রে। ১২টি পালাসিকুড়া ঈগলের দেখা মিলেছে এ শুমারিতে। বাইক্কা বিলসহ আশপাশের বিলগুলোতে জলচর ও স্থলচর পাখির মোট ৮০টি প্রজাতির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সৈকত পাখির সংখ্যা বেড়েছে। লেঞ্জা ও সরালি পাখির সংখ্যা কমলেও বাংলাদেশে অতি বিরল কালা বগলার দেখা মিলেছে। তা ছাড়া বাইক্কা বিলে কুটুম পাখির দেখা পাওয়া গেছে, যা আগে কখনো এ বিলে দেখা যায়নি।
বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
No comments