তারপর কি সৌদি আরব! by র্যাচেল ব্রুনসন
তিউনিসিয়া, মিসর, ইয়েমেনে শেষ হওয়ার পর এখন হত্যাকাণ্ড চলছে লিবিয়ায়। তারপর কি সৌদি আরবের পালা? যদিও সৌদি আরবে বিপ্লবের চিন্তা করা সত্যিই কঠিন। এর মধ্যে আগামী ১১ মার্চ বিক্ষোভ দিবস পালনের জন্য ফেইসবুকের মাধ্যমে আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিখ্যাত কয়েকজন সৌদি ব্যক্তি সে দেশে সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে প্রবীণ বাদশাহ আবদুল্লাহ সম্ভাব্য বিক্ষোভ নিরসনের লক্ষ্যে সে দেশের নাগরিকদের জন্য আর্থিক কিছু সুবিধার কথাও ঘোষণা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা-নীতির স্বার্থসংশ্লিষ্ট এবং শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত সৌদি শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন কী হতে পারে? মধ্যপ্রাচ্যে এমন বিপ্লব একের পর এক ঘটে চলেছে। এই বিপ্লবের বিষয়টি সেখানে মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যাপারই নয়। ১৯৫০ সালে মিসরে গামাল আবদেল নাসের ক্ষমতাসীন হলেন। সে সময় জাতীয়তাবাদী ঢেউ খেলেছিল গোটা আরবে। জর্ডান ও সিরিয়ায় গণ-আন্দোলন তৈরি হয়েছিল। সৌদি আরবও বাদ যায়নি তখন। সর্বত্রই নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছিল নাগরিকরা।
সৌদি রাজপরিবারে তখন বড় একটা ঝাঁকুনি লেগেছিল। তাদেরই পরিবারের এক সদস্য তখন বিদ্রোহীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বসেন। আর তিনি পরবর্তীকালে মিসরে বসবাস করেন। তালাল বিন আবদুল আজিজ আল সউদ ছিলেন রাজপরিবারের প্রতিষ্ঠাতার সন্তান। এখন আবার সৌদি অভিজাত পরিবারে তিনি স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। ফলে সৌদি আরবে মোটামুটিভাবে তাঁদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা মিটিয়ে নিতে পেরেছেন এমন চিন্তা করা যায়। প্রিন্স তালাল সম্প্রতি বিবিসির কাছে প্রশ্ন রেখেছেন, আরব বিশ্বে এখন যা ঘটছে, সৌদিতে কি তার ছায়া পড়বে? নাকি এর চেয়েও কোনো কঠিন দৃশ্য সৌদি আরবের মানুষকে দেখতে হবে?
রাজ্যের পশ্চিম, পূর্ব ও দক্ষিণে মিসর, জর্ডান, বাহরাইন এবং ইয়েমেনের এই ঘটনা স্বাভাবিক কারণেই সৌদি আরবের জন্য আতঙ্কের বিষয়। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোটভুক্ত হয়। স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে সোভিয়েত বলয়ের কারণেও তাদের শঙ্কায় কাটাতে হয়েছে। অন্যদিকে সৌদি পররাষ্ট্রনীতিও ইরানের প্রভাবের বাইরে থাকার অবস্থানকে সমর্থন করে। যে কারণে আফগানিস্তান, ইরাক, ফিলিস্তিন এবং ইয়েমেনেও তাদের অবস্থান ইরানবিরোধী।
সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহ যুক্তরাষ্ট্র ও মরক্কো সফর শেষে প্রথম উল্লেখযোগ্য কাজ হিসেবে মনে করেন বাহরাইনের বাদশাহ হামাদ বিন ইসা আল খলিফার সঙ্গে দেখা করা। তিনি সেখানকার উত্তপ্ত অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করেন। সুনি্ন-শাসিত বাহরাইন সৌদি আরবের তেলসমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আর তারা সৌদি আরব থেকে দীর্ঘদিন সহযোগিতা পেয়ে আসছে। সৌদি বাদশাহর এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে বোঝা যায়, তিনি আরব বিশ্বের সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত আছেন। গোটা অঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারেও তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে হবে তা হচ্ছে_মিসরের প্রেসিডেন্টের বিদায়ের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রেরও সমর্থন ছিল। যুক্তরাষ্ট্রকে মিসরের প্রশাসন নিকট অতীতে গুরুত্বসহ বিবেচনা করেনি। কিংবা ওবামার কথামতো তাদের চলতে দেখা যায়নি বলেও শ্রুত আছে। আর সে কারণেই যদি এই অঘটন ঘটে থাকে, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ওই অঞ্চলের দেশগুলোতে সৌদি আরবের প্রভাব আছে। কিন্তু এর পরও তারা এমন কিছু করবে না, যাতে বিপ্লবে অংশগ্রহণকারীরা তাদের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পেতে পারে বলে মনে করে। মিসর, লিবিয়া, বাহরাইনসহ অন্যসব দেশে যে বিদ্রোহ ঘটেছে এর পেছনে কাজ করেছে সেখানকার শাসকদের দুর্নীতি। তাঁদের দেশের ভেতরে তাঁরা নিজেরাই বিরোধিতা তৈরির সুযোগ করে দিয়েছেন, যা বিদেশেও সংগঠিত হয়েছে। বিদ্রোহীরা দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে সরকারের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়েছে এবং এই কাজে তারা আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করেছে। তাদের নেতারা স্বাধীন সশস্ত্র বাহিনীর জন্য মোটেও সহযোগী ছিল না। তাদের অর্থনৈতিক ভিত ছিল দুর্বল। শিক্ষা-সুবিধা ছিল একান্তই অনুল্লেখ্য।
সৌদি আরবে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মিসরের চেয়ে অনেক ভালো। মিসরের জিডিপি হচ্ছে ছয় হাজার মার্কিন ডলার। তিউনিসিয়ার জিডিপি প্রায় ৯ হাজার মার্কিন ডলার। আর সৌদি আরবের জিডিপি ২৪ হাজার ডলারের কাছাকাছি। গত এক দশকের মধ্যে এই বৃদ্ধির পরিমাণ ৯ হাজার ডলার। সৌদি নাগরিকদের জন্য ব্যয় করার মতো পর্যাপ্ত সম্পদও রয়েছে সরকারের হাতে। তেলের মূল্যবৃদ্ধিও অব্যাহত আছে। গত বুধবার বাদশাহ সে দেশের মানুষের জন্য ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ের একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, যাতে করে সেখানকার বেকার সমস্যার নিরসন, আবাসন সুবিধা, বিদেশে শিক্ষাবৃত্তি ও নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা যায়।
সৌদি আরবের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মানসিকতাও ইতিবাচক। তারা মনে করে, সৌদি আরব এমন একটি দেশ_যে প্রতিবেশী কোনো দেশকে আক্রমণ করে না, প্রভাব বিস্তারের প্রতিও বিশেষ দৃষ্টি দেয় না। তেলের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রেও সব সময় গ্রহণযোগ্য নীতিকে মেনে চলে। ইরানের ব্যাপারে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র প্রায় একই মানসিকতা পোষণ করে। ওয়াশিংটন চায় না, সৌদি রাজতন্ত্রের পরিবর্তন হোক। ওবামা প্রশাসন সেখানে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সৌদি কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করতে চায়।
লেখক : 'থিকার দ্যান অয়েল : আমেরিকাস আনইজি পার্টনারশিপ উইথ সৌদি আরাবিয়া'র কলামিস্ট।
ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর : মোস্তফা হোসেইন
যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা-নীতির স্বার্থসংশ্লিষ্ট এবং শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত সৌদি শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন কী হতে পারে? মধ্যপ্রাচ্যে এমন বিপ্লব একের পর এক ঘটে চলেছে। এই বিপ্লবের বিষয়টি সেখানে মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যাপারই নয়। ১৯৫০ সালে মিসরে গামাল আবদেল নাসের ক্ষমতাসীন হলেন। সে সময় জাতীয়তাবাদী ঢেউ খেলেছিল গোটা আরবে। জর্ডান ও সিরিয়ায় গণ-আন্দোলন তৈরি হয়েছিল। সৌদি আরবও বাদ যায়নি তখন। সর্বত্রই নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছিল নাগরিকরা।
সৌদি রাজপরিবারে তখন বড় একটা ঝাঁকুনি লেগেছিল। তাদেরই পরিবারের এক সদস্য তখন বিদ্রোহীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বসেন। আর তিনি পরবর্তীকালে মিসরে বসবাস করেন। তালাল বিন আবদুল আজিজ আল সউদ ছিলেন রাজপরিবারের প্রতিষ্ঠাতার সন্তান। এখন আবার সৌদি অভিজাত পরিবারে তিনি স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। ফলে সৌদি আরবে মোটামুটিভাবে তাঁদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা মিটিয়ে নিতে পেরেছেন এমন চিন্তা করা যায়। প্রিন্স তালাল সম্প্রতি বিবিসির কাছে প্রশ্ন রেখেছেন, আরব বিশ্বে এখন যা ঘটছে, সৌদিতে কি তার ছায়া পড়বে? নাকি এর চেয়েও কোনো কঠিন দৃশ্য সৌদি আরবের মানুষকে দেখতে হবে?
রাজ্যের পশ্চিম, পূর্ব ও দক্ষিণে মিসর, জর্ডান, বাহরাইন এবং ইয়েমেনের এই ঘটনা স্বাভাবিক কারণেই সৌদি আরবের জন্য আতঙ্কের বিষয়। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোটভুক্ত হয়। স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে সোভিয়েত বলয়ের কারণেও তাদের শঙ্কায় কাটাতে হয়েছে। অন্যদিকে সৌদি পররাষ্ট্রনীতিও ইরানের প্রভাবের বাইরে থাকার অবস্থানকে সমর্থন করে। যে কারণে আফগানিস্তান, ইরাক, ফিলিস্তিন এবং ইয়েমেনেও তাদের অবস্থান ইরানবিরোধী।
সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহ যুক্তরাষ্ট্র ও মরক্কো সফর শেষে প্রথম উল্লেখযোগ্য কাজ হিসেবে মনে করেন বাহরাইনের বাদশাহ হামাদ বিন ইসা আল খলিফার সঙ্গে দেখা করা। তিনি সেখানকার উত্তপ্ত অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করেন। সুনি্ন-শাসিত বাহরাইন সৌদি আরবের তেলসমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আর তারা সৌদি আরব থেকে দীর্ঘদিন সহযোগিতা পেয়ে আসছে। সৌদি বাদশাহর এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে বোঝা যায়, তিনি আরব বিশ্বের সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত আছেন। গোটা অঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারেও তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে হবে তা হচ্ছে_মিসরের প্রেসিডেন্টের বিদায়ের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রেরও সমর্থন ছিল। যুক্তরাষ্ট্রকে মিসরের প্রশাসন নিকট অতীতে গুরুত্বসহ বিবেচনা করেনি। কিংবা ওবামার কথামতো তাদের চলতে দেখা যায়নি বলেও শ্রুত আছে। আর সে কারণেই যদি এই অঘটন ঘটে থাকে, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ওই অঞ্চলের দেশগুলোতে সৌদি আরবের প্রভাব আছে। কিন্তু এর পরও তারা এমন কিছু করবে না, যাতে বিপ্লবে অংশগ্রহণকারীরা তাদের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পেতে পারে বলে মনে করে। মিসর, লিবিয়া, বাহরাইনসহ অন্যসব দেশে যে বিদ্রোহ ঘটেছে এর পেছনে কাজ করেছে সেখানকার শাসকদের দুর্নীতি। তাঁদের দেশের ভেতরে তাঁরা নিজেরাই বিরোধিতা তৈরির সুযোগ করে দিয়েছেন, যা বিদেশেও সংগঠিত হয়েছে। বিদ্রোহীরা দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে সরকারের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়েছে এবং এই কাজে তারা আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করেছে। তাদের নেতারা স্বাধীন সশস্ত্র বাহিনীর জন্য মোটেও সহযোগী ছিল না। তাদের অর্থনৈতিক ভিত ছিল দুর্বল। শিক্ষা-সুবিধা ছিল একান্তই অনুল্লেখ্য।
সৌদি আরবে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মিসরের চেয়ে অনেক ভালো। মিসরের জিডিপি হচ্ছে ছয় হাজার মার্কিন ডলার। তিউনিসিয়ার জিডিপি প্রায় ৯ হাজার মার্কিন ডলার। আর সৌদি আরবের জিডিপি ২৪ হাজার ডলারের কাছাকাছি। গত এক দশকের মধ্যে এই বৃদ্ধির পরিমাণ ৯ হাজার ডলার। সৌদি নাগরিকদের জন্য ব্যয় করার মতো পর্যাপ্ত সম্পদও রয়েছে সরকারের হাতে। তেলের মূল্যবৃদ্ধিও অব্যাহত আছে। গত বুধবার বাদশাহ সে দেশের মানুষের জন্য ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ের একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, যাতে করে সেখানকার বেকার সমস্যার নিরসন, আবাসন সুবিধা, বিদেশে শিক্ষাবৃত্তি ও নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা যায়।
সৌদি আরবের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মানসিকতাও ইতিবাচক। তারা মনে করে, সৌদি আরব এমন একটি দেশ_যে প্রতিবেশী কোনো দেশকে আক্রমণ করে না, প্রভাব বিস্তারের প্রতিও বিশেষ দৃষ্টি দেয় না। তেলের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রেও সব সময় গ্রহণযোগ্য নীতিকে মেনে চলে। ইরানের ব্যাপারে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র প্রায় একই মানসিকতা পোষণ করে। ওয়াশিংটন চায় না, সৌদি রাজতন্ত্রের পরিবর্তন হোক। ওবামা প্রশাসন সেখানে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সৌদি কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করতে চায়।
লেখক : 'থিকার দ্যান অয়েল : আমেরিকাস আনইজি পার্টনারশিপ উইথ সৌদি আরাবিয়া'র কলামিস্ট।
ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর : মোস্তফা হোসেইন
No comments