ভয়ঙ্কর মেগাপিরানহা
কালো পিরানহাই হোক আর বিলুপ্ত দানব পিরানহা বা মেগাপিরানহাই হোক, শরীরের আকার অনুপাতে জ্যান্ত আর বিলুপ্ত সব ধরনের মাংসাশী মাছের মধ্যে এদের কামড়ের জোরই সব থেকে বেশি।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের এক গবেষণায় এই তথ্য উন্মোচিত হয়েছে। এ সংক্রান্ত এক গবেষণাপত্র সম্প্রতি ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টস‘ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাপত্রের নাম ‘মেগা-বাইটস এক্সট্রিম জ ফোর্সেস অব লিভিং এ্যান্ড এক্সটিংক্ট পিরানহাস’। এতে পিরানহার চোয়ালের গঠনপ্রকৃতি বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে এবং দেখানো হয়েছে যে, এ চোয়ালের কারণে তারা অনেক বড় আকারের শিকারকে আক্রমণ করে বসতে ও শরীর থেকে বড় বড় অংশ খুবলে নিতে পারে।গবেষকদের অন্যতম হলেন জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক গুইল্লার মো ওরটি। তার গবেষণায় সাধারণতভাবে মাছের বিবর্তনের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে। তবে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে আমাজন অঞ্চলের মাছের ওপর। উদ্দেশ্য হচ্ছেÑডিএনএ পরম্পরা তথ্যের ভিত্তিতে বিবর্তনগত সম্পর্ক উন্মোচন করা। ড. ওরটি ও অন্যরা ২০১০ সালে এই মাছের তথ্য সংগ্রহের জন্য আমাজন এলাকার জিংগু ও ইরিরি নদী দু’টিতে অনুসন্ধান চালান।
পিরানহার আগ্রাসী চরিত্র, অপেক্ষাকৃত ছোট আকৃতি ও অন্যান্য কারণে তাদেরকে শিকারী মেরুদ-ী প্রাণীদের একটি উপযুক্ত গ্রুপে স্থান দেয়া হয় এবং তারপর কামড় দেয়ার চরম ক্ষমতার বিবর্তন পরীক্ষা করে দেখা হয়। শরীরের আকার ছোট হওয়া সত্ত্বেও তাদের আহার্যবস্তুর ওপর গবেষণা থেকে জানা যায় যে, পিরানহা তাদের নিজেদের তুলনায় কয়েকগুণ বড় শিকারের শরীরে কামড় বসিয়ে এক এক টুকরো মাংস বা হাড়যুক্ত ফিন খুবলে নিতে পারে।
গবেষণাপত্রে আমাজন অঞ্চলের মাংসাসী পিরানহার সবচেয়ে বড় প্রজাতির ব্ল্যাক পিরানহার বুনো প্রজাতির কামড়ের শক্তির প্রথম পরিমাপ করে দেখানো হয়েছে যেÑএর চোয়াল এতই শক্ত যে, নিজের শরীরের ওজন যা তার চেয়ে ৩০ গুণ ওজনেরও বেশি শক্তিতে এই প্রাণীটি কামড় বসাতে পারে। এত জোরে কামড় বসানো সম্ভব হয় মূলত এ কারণে যে ব্ল্যাক পিরানহার চোয়ালের বড় পেশীর উপস্থিতি এবং চোয়াল বন্ধ করার অতি বিকশিত লিভারের মাধ্যমে সেই পেশীর সংকোচন শক্তিকে দক্ষতার সঙ্গে স্থানান্তরিত করতে পারার কারণে। কামড়ের শক্তি পরিমাপ করে বিজ্ঞানী দল বলেছেন, এ এক বিরল ও বিপজ্জনক ব্যাপার এবং করাটাও যথেষ্ট কঠিন। চোয়ালের পেশী হলো শরীরের মোট ভরের প্রায় ২ শতাংশ।
আরও দেখা গেছে যে, ব্ল্যাক পিরানহার কামড়ের শক্তি নিজ শরীরের ওজনের ৩০ গুণের চেয়ে তো বেশি এমনকি সমান সাইজের একটি আমেরিকান এলিগেটরের কামড়ের শক্তির চেয়েও তিনগুণ বেশি। তাই অবাক হবার কিছু নেই যে প্রাচীন যুগের মেগাপিরানহার কামড়ের শক্তি এত প্রচ- ছিল যে তার কাছে টাইরানোসরাস রেক্সের কামড়ও ম্লান হয়ে যাবে।
মেগাপিরানহার অস্তিত্ব অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এরা বাস করত আজ থেকে ১ কোটি বছর আগে। এদের জ্ঞাতিভাই আধুনিক পিরানহার কামড়ের জোর শরীরের ওজনের ৩০ গুণ। এই হিসাবের ভিত্তিতে বলা যায় মেগাপিয়ানহা প্যারানেনসির ওজন ছিল প্রায় ২২ পাউন্ড এবং তাদের কামড়ের জোর ছিল ৫শ’ থেকে হাজার পাউন্ড। এরা কামড় মেরে শক্ত খোলস ও হাড়গোর ভেঙ্গে ফেলতে পারত। স্টিফানি ক্রফটস নামে আরেক জীববিজ্ঞানীর ভাষায়, মেগাপিরানহা সম্ভবত ছিল হাড়গোর বিচূর্ণকারী শিকারী প্রাণী; যারা যে কোন কিছু কামড়ে নিয়ে যেতে পারত। এদের দাঁত যে ধরনের অস্ত্র ছিল তার সঙ্গে আরও প্রায় ৫ কোটি বছর আগে পৃথিবীর বুকে দাবড়ে বেড়ানো টাইরানোসরাস রেক্স ও অন্যান্য ডাইনোসরের এমনকি ৪০ কোটি বছর আগে সমুদ্রবাসী চারটন ওজনের ডাঙ্কেলোস্টিমাস টেরেলির দাঁতের তুলনা করা যেতে পারে। আজকের তিমিখেকো হাঙ্গরদের দাঁতের চেয়েও মেগাপিরানহার দাঁত অনেক বেশি তীক্ষè ও শক্তিশালী।
সূত্র: এনিমেল সায়েন্স
No comments