গ্রেইল মিশন সমাপ্তির কারণ
চন্দ্রপৃষ্ঠে আছড়ে পড়ে বিধ্বস্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে নাসার গ্রেইল মিশন শেষ হয়েছে গত ১৭ ডিসেম্বর। জোড়া নভোযানের এই মিশন পাঠানো হয়েছিল ১ বছরেরও আগে।
প্রথম নভোযানটি ২০১১-এর ৩১ ডিসেম্বর চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে। দ্বিতীয়টি প্রবেশ করে ১ জানুয়ারি ২০১২তে। এদের সমাপ্তিটা পরিকল্পিতভাবেই ঘটানো হয়েছে। দুর্ঘটনাক্রমে আছড়ে পড়েছে মনে করার কোন কারণ নেই। গ্রেইল নামটা গ্রাভিটি রিকভারি এ্যান্ড ইন্টেরিয়র ল্যাবরেটরির সংক্ষেপ। এটা চাঁদের আমেরিকার এক বৈজ্ঞানিক মিশন। মূল উদ্দেশ্য ছিল চাঁদের অভ্যন্তরীণ কাঠামোটা নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে এর মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্রের অতি উন্নত চিত্র গ্রহণ। অন্যান্য কাজের মধ্যে ছিল চাঁদের ভূত্বকের ৩ লিথোস্ফিযারের কাঠামো নির্ণয়, চাঁদের তাপের অসম বিবর্তন বোঝা এবং চাঁদের ভেতরের কেন্দ্রভাগের আকারের সীমা-পরিসীমা ঠিক করা। দুটো নভোযানই নিখুঁতভাবে তাদের কাজ সম্পন্ন করায় চন্দ্রপৃষ্ঠে এদের আছড়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।২০১১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর একটি একক উৎক্ষেপণ বাহন ডেলটা-২ রকেটের সাহায্যে নভোযান দুটিকে চাঁদের পথে পারি জমানোর জন্য ছাড়া হয়। দুটোই ছোট আকারের নভোযান। একেকটির ওজন মাত্র ১৩২ পাউন্ড। একটির নাম এব (গ্রেইল-এ) এবং অন্যটির নাম ফ্লো ( গ্রেইলবি)। উৎক্ষেপণের ৯ মিনিট পর এব রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয় এবং ফ্লো বিচ্ছিন্ন হয় তার আরও ৮ মিনিট পর। এরা পরস্পর থেকে ২৫ ঘণ্টা ব্যবধানে চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে। চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫০ মাইল উর্ধে থেকে এরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ ও পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। ৯০ দিন অর্থাৎ তিন মাস ধরে তারা ড্যাটা সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যেতে থাকে। অতঃপর বাকি সময়টা ধরে চলে ড্যাটা বিশ্লেষণ ও পৃথিবীতে প্রেরণ। কার্যোদ্ধারের পর মিশনের সমাপ্তি টানা হয় চাঁদের বুকে পতন ঘটিয়ে। সেই লক্ষ্যে গ্রাউন্ড কন্ট্রোলের কমান্ডে গত ১৪ ডিসেম্বর নভোযান দুটি রকেট জ্বালিয়ে চাঁদের নতুন কক্ষপথে প্রবেশ করে; যা অবধারিতভাবে তাদের পতনের দিকে নিয়ে যায়। অবশেষে ১৭ ডিসেম্বর বেলা আড়াইটার দিকে ও দু’টি চাঁদের উত্তর মেরুর কাছে একটি পাহাড়ের পাশে সজারে পড়ে বিধ্বস্ত হয়। এ সময়কার কোন ছবি পাওয়ার উপায় নেই। কারণ ঐ এলাকাটা ছিল ছায়াচ্ছন্ন।
এব ও ফ্লোর মতো মানুষের তৈরি আরও অনেক বস্তু চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রবল আকর্ষণে এভাবে চাঁদের বুকেই আছড়ে পড়ে ধ্বংস হয়েছে। কখনও পরিকল্পিতভাবে, কখনও দুর্ঘটনাক্রমে সেটা ঘটেছে। আবার কখনবা ইচ্ছাকৃতভাবেই সেগুলোকে চাঁদের বুকে রেখে যাওয়া হয়েছে। কয়েক দশকের চন্দ্রাভিযানের মধ্য দিয়ে এভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত ও পরিত্যক্ত বস্তুর এক দীর্ঘ তালিকা গড়ে উঠেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: রেঞ্জার-৪। উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল ২৩ এপ্রিল ১৯৬২। এ্যাপোলো ১৫ মিশনের আগে মারা যাওয়া নভোচারীদের স্মৃতিস্মরণে সাড়ে তিন ইঞ্চি লম্বা এ্যালুমিনিয়ামের ফিগার। এটি এ্যাপোলো ১৫-এর নভোচারীরা রেখে আসে। তাছাড়া কয়েক বছরে ্এ্যাপোলো ক্রুরা চন্দ্রপৃষ্ঠে বহু জিনিস রেখে গেছে। তার মধ্যে রয়েছে একটা টিভি ক্যামেরা, ইয়ার প্লাগ, একটা হাতুড়ি, সূত্র সংগ্রহের পাত্র, সাঁড়াশি ইত্যাদি। বাকি জ্বালানিতে পৃথিবীতে ফিরে যাওয়ার জন্য ভার কমানোর প্রয়োজনেই নভোচারীদের এই জিনিসগুলো রেখে যেতে হয়। এগুলো ছাড়াও চাঁদের বুকে ১৯৬৬ সালে বিধ্বস্ত সোভিয়েত নভোযান লুনা ১০ এবং ১৯৭৭ সালে বিধ্বস্ত মার্কিন কৃত্রিম উপগ্রহ এক্সপ্লোরার-৪৯-এর ধ্বংসাবশেষও আছে।
প্রকৃতি ও বিজ্ঞান ডেস্ক
No comments