জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সচেতনতা সৃষ্টি ॥ সাইকেলে বিশ্ব ভ্রমণে বের হচ্ছেন দুই বাংলাদেশী তরুণ
জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সচেতনতা তৈরি করতে দুই বাংলাদেশী তরুণ বাইসাইকেলযোগে এবার বিশ্ব ভ্রমণে বের হচ্ছেন। তাঁরা প্রথমে এশিয়ার দেশগুলো, বিশেষ করে জলবায়ুর পরিবর্তনের শিকার দেশগুলোতে যাবেন।
এর পর তাঁরা উন্নত বিশ্ব বিশেষ করে যেসব দেশ এ পরিবর্তনের জন্য দায়ী সেসব দেশ ভ্রমণ করবেন। ইতোমধ্যে তাঁরা বাংলাদেশে ৬৪ জেলায় ৩শ’ উপজেলায় সাইকেলযোগে ভ্রমণ করেছেন। তাঁরা নিজ উদ্যোগে দেশের আনাচে কানাচে বিভিন্ন স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়বহতার বিষয়ে জনগণকে সচেতন করেছেন। তাঁরা সবাইকে একটি করে হলেও গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ করেন। তাঁদের এ সাহসী কাজের প্রশংসা করে প্রত্যয়ণপত্র দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আফম রুহুল হক, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ডা. হাছান মাহমুদ, শ্রম ও কর্মস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নজান সুফিয়ান, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি জাহিদ আহসান রাসেল, জাতীয় সংসদের হুইপ আসম ফিরোজ, ইসলাফিল আলম ও জিয়াউর রহমান। এ ছাড়া ৬৪ জেলার প্রশাসক ও তাঁদের এ সাহসী কাজের প্রত্যয়ণপত্র দিয়েছেন।সাহসী এ তরুণদের একজন আজাদ হোসেন। অন্যজন জহিরুল ইসলাম। আজাদের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলা কালিগঞ্জ থানার গণপতি গ্রামে। আর জহিরুলের বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার তিলছড়া গ্রামে। দুজনই স্নাতক প্রথম বর্ষে ছাত্র। দুজনের বাড়ি আলাদা জেলায় হলেও হঠাৎই তাদের মধ্যে পরিচয়। ২০১১ সালে তাঁরা ঢাকায় বেড়াতে আসেন। পাশাপাপি ফ্লাটের আত্মীয়ের বাসা থেকে তাঁদের পরিচয়। আজাদ জলবায়ুর ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে অনেক আগে থেকে কাজ করছেন। এ কথা বন্ধুকে বলতে তিনি তাঁর সঙ্গে যোগ দেন। সিদ্ধান্ত হয় দুই বন্ধু সাইকেলে করে সারাদেশ ঘুরে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতার কথা তুলে ধরবেন। পাশাপাশি গাছ লাগানোর প্রয়োজনীয়তার কথাও বলবেন।
তাঁরা দুজন জনকণ্ঠ অফিসে এসে বাইসাইকেল যোগে দেশভ্রমণের এ ইচ্ছার কথা জানান। গত বছর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে তাঁরা সাইকেলযোগে দেশভ্রমণ শুরু করেন। তাঁদের এ ভ্রমণ শেষ হয় গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর। এ সময়ের মধ্যে তাঁরা দুজন ৬৪ জেলার ৩শ’ উপজেলা ভ্রমণ করেছে। কখনও অসুস্থ হয়ে পড়েন। ক্ষণিকের জন্য বিশ্রাম নিয়ে আবার চলা শুরু করেন। তাঁরা জানান, সাইকেল চালাতে চালাতে তাঁদের পা দুটো ফুলে গেছে, তবুও থেমে থাকেননি। যেখানেই গেছেন অসংখ্য মানুষের সাহায্য সহযোগিতা ও আন্তরিকতা পেয়েছেন। জেলা প্রশাসন থেকেও তাঁদের এ কাজের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এখন তাঁরা প্রতিজ্ঞা করেছেন জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সচেতনতা গড়ে তুলতে বিশ্ব ভ্রমণে বের হবেন বাইসাইকেলযোগেই। সেসব দেশের মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতার বিষয়টি তুলে ধরবেন। এ জন্য তাঁরা প্রথমে ভারত ভ্রমণ করবেন। এরপর অন্যদেশে যাবেন। ভারতে ভ্রমণ ভিসা সম্পন্ন হওয়ার পথে। তাঁরা জানান সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ তাঁরা বিশ্ব ভ্রমণে বের হবেন।
জনকণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা বলেন, প্রথমে তাঁরা বের হবেন জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার দেশগুলোতে। বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলোতে যাবেন। তারপরে যাবেন যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী সেসব দেশে। সেসব দেশে তরুণদের বোঝানোর চেষ্টা করবেন তাদের দেশের বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের নির্গত কার্বনের কারণে বিশ্বে উষ্ণায়ন বাড়ছে। ফলে এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশসহ অনুন্নত দেশগুলোর ওপর। এর ফলে খরা, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অসহায় গরিব পরিবারের নারী ও শিশুরা। উন্নত দেশের তরুণরা যাতে কার্বন নির্গমনের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ গড়ে তোলে সে বিষয়টিও তরুণ সমাজের মাঝে তুলে ধরবেন তাঁরা।
No comments