ঝড়ে বিধ্বস্ত শহর পুনর্গঠনে নকশা
প্রচণ্ড ঝড়ে লন্ডভন্ড পুরো শহর। ঝড় শেষ হওয়ার পর বিধ্বস্ত এলাকা পুনর্গঠনে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করে দিলেন। কিন্তু ভেবে দেখবেন না, একই রকমের ভয়াবহ ঝড় আসতে পারে ফি বছরই? আবার লন্ডভন্ড করে দিতে পারে সবকিছু?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ক্ষেত্রে সতর্কভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথ বাতলে দিতে রয়েছে ভৌগোলিক নকশা বা জিওডিজাইন। সংশ্লিষ্ট এলাকার ভূমির ব্যবহারসহ প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিকল্পিত শহর পুনর্গঠন করলে আবার ধ্বংসযজ্ঞের হাত থেকে বাঁচা যেতে পারে।জিওডিজাইনের ধারণাটি একেবারে নতুন নয়। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, নিউ জার্সিসহ অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সুপার স্ট্রম খ্যাত স্যান্ডির ধ্বংসযজ্ঞের পর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। এ বিষয়ে সম্ভাব্য উপায়গুলোর মধ্যে রয়েছে, স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের কাছে এবং নিউইয়র্ক হারবারের মুখে বিশাল প্রতিবন্ধকতা গড়ে তোলা, যাতে উপকূলে পানির উচ্চতা ধরে রাখা যায়।
এসব পরিকল্পনার মূলে রয়েছে জিওডিজাইন। জিওডিজাইন হচ্ছে, শহর পরিকল্পনা, ভূমির ব্যবহার ও প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবস্থাপনা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে জলবায়ুর ক্ষতি সাধন করে প্রাকৃতিক বাসভূমির ব্যবহার এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো এতে আমলে নেওয়া হয়। মূলত এসব কারণেই সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন ক্রমবর্ধমানভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়।
জিওডিজাইনের জন্য ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থার (জিআইএস) মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। সাধারণত মানচিত্র, বিমান থেকে ধারণকৃত চিত্র, স্যাটেলাইট ও বিভিন্ন জরিপ থেকে এসব তথ্য-উপাত্ত গ্রহণ ও ধারণ করে তা বিশ্লেষণ করা হয়। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ ও নাসার যৌথ কর্মসূচি ল্যান্ডস্যাটকে এই কাজে লাগানো হয়।
গবেষকেরা জানান, এই তথ্য-উপাত্ত (সংশ্লিষ্ট এলাকার আবহাওয়া, জনসংখ্যাসংক্রান্ত অবস্থা, ভূমির ব্যবহার ইত্যাদি) বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ ঝড়ের প্রচণ্ডতা ও প্রভাবের বিষয়ে ধারণা পাওয়া সম্ভব। ফলে কীভাবে ও কোথায় ভবন নির্মাণ করলে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা করা যায়, সেই উপায়ও বের করা যায়।
জিওডিজাইন ব্যবহার করে দুর্যোগ মোকাবিলায় আগেই সফলতা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: ১৯৩০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেট প্লেইন এলাকায় ডাস্ট বোল খ্যাত ঝড়ের কারণে জমি অনুর্বর হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষ সেখানে সংরক্ষিত এলাকায় ঘাস লাগিয়ে দিয়ে মাটির উপরিভাগ সংরক্ষণ এবং আর্দ্রতা ধরে রাখার ব্যবস্থা নেয়। এ ছাড়া তারা কানাডা থেকে টেক্সাস পর্যন্ত এলাকাজুড়ে লাখ লাখ গাছ লাগিয়ে দেয়, যাতে আকস্মিক দমকা বাতাস থেকে জমিকে সুরক্ষা করা সম্ভব হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটার কলেজ অব ডিজাইনের ডিন টম ফিশার বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় স্যান্ডির এই বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে যে আগামী সাত বছর বা এ রকম সময়ের মধ্যে আরও বড় ঝড় আসতে পারে জেনেও আমরা কি ধ্বংস হয়ে যাওয়া ভবনের জায়গাতেই আরেকটি ভবন বানাব? আমাদের যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত নেই, আমি তা মনে করি না। আসলে সেগুলো ঠাহর করা এবং সুনির্দিষ্ট স্থানে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রেই আমাদের অক্ষমতা রয়েছে।’ সায়েন্টিফিক আমেরিকান।
No comments