সহজিয়া কড়চা- বিজয়ী বিজিত কভু, বিজিত বিজয়ী by সৈয়দ আবুল মকসুদ
২০১২ সালে বাংলাদেশের অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে যদি বলা হয়: আগামী মৌসুম থেকে রাজশাহীর আমের নাম বদল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গোপালভোগের নামকরণ হবে পিচফল, ল্যাংড়ার নতুন নাম হবে বৈচি, ফজলির নাম হবে ফলসা এবং হিমসাগরের নাম হবে কাউফল।
রাত না পোহাতেই মির্জা আলমগীর সাংবাদিকদের বলবেন, তত্ত্বাবধায়ক-ব্যবস্থা পুনর্বহালের আগে আমের নাম পরিবর্তন আমরা সমর্থন করি না। আমরা সরকার গঠন করলে আমের আগের নামই পুনর্বহাল করব। জিয়ার কবরে গিয়েও মোনাজাতের পরে আম নিয়ে আলোচনা হবে।
সেগুনবাগিচা এলাকার কোনো আলোচনা সভার প্রধান অতিথির ভাষণে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলবেন, আমের নাম বদল হইল তো কী হইল। আমের নাম বদল করা যাইব না, এমন কোনো বিধিবিধান সংবিধানে লিপিবদ্ধ নাই। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলবেন, আমি আমের এলাকার মানুষ। আমের নাম পরিবর্তন আমি সমর্থন করি না। তা ছাড়া বর্তমান নামগুলো তো ভালোই ছিল, কবিতার শব্দের মতো। রাশেদ খান মেনন বলবেন, আমরা এ সিদ্ধান্তের সমর্থনও করছি না, বিরোধিতাও করছি না। আমের নামবদলে শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না। তবে সব দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে করলেই ভালো। হাসানুল হক ইনু বলবেন, রাজশাহী বাংলা ভাইয়ের এলাকা। খালেদা জিয়া জঙ্গিবাদীদের সংস্রব ত্যাগ করেন নাই। রাজশাহীর আম নিয়া বিএনপির রাজনীতি করার আগে তাদের বলতে হবে তারা জঙ্গিবাদীদের সঙ্গে থাকবেন, না রাজনীতি থেকে মাইনাস হবেন।
আমের নামবদলের কথা উচ্চারিত হওয়ামাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কয়েকটি সংগঠনের জন্ম নেবে। সংগঠন মানে কম্পিউটার থেকে বের করা কয়েকটি লেটারহেড প্যাডের কাগজ। কোনোটির নাম বঙ্গবন্ধু আম পরিষদ, কোনোটি শহীদ জিয়া আম ফাউন্ডেশন, কোনোটি আমের নাম পরিবর্তন প্রতিরোধ কমিটি, কোনোটি সোনার বাংলা আম ফোরাম। যাদের টাকার অভাব নাই তাঁরা ভাড়া নেবেন সিরডাপ, প্রেসক্লাব বা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তন। যাঁরা শুধু মাইকের ভাড়াটা জোগাড় করতে পারবেন এবং সালু কাপড়ে একটি ব্যানার লেখাতে সক্ষম তাঁদের জন্য রয়েছে রাজপথ। বড় একটা আমের ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে যাবেন। যাঁদের কোনো কিছুই করার সামর্থ্য নাই তাঁরা দশ-বারো জন রাস্তায় নেমে অমুকের গদিতে একসঙ্গে আগুন জ্বালার স্লোগান দেবেন। বলবেন, আমের নাম পুনর্বহাল করো, নইলে গদি ছাড়ো।
অর্থাৎ এক আমের নামের সঙ্গে নিরপেক্ষ নির্বাচন, তত্ত্বাবধায়ক-ব্যবস্থা, গদি প্রভৃতি একাকার হয়ে যাবে। পত্রপত্রিকার উপসম্পাদকীয় পাতাগুলো সয়লাব হয়ে যাবে আমের জন্মবৃত্তান্ত থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যাবতীয় তথ্যে। আম গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কে কোথায় ডায়াবেটিস ও হার্টের সমস্যা নিয়ে অবসর জীবন যাপন করছেন তাঁদের খুঁজে বের করে নেওয়া হবে সাক্ষাৎকার। কেউ বলবেন, বঙ্গবন্ধুর সময়ই প্রথম আম নিয়ে গবেষণা হয়। আর একজন বলবেন, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াই রাজশাহীর আমবাগান প্রথম পরিদর্শন করেন। রাত ১২টায় এসব নিয়ে চলবে তুমুল বিতর্ক পক্ষকাল।
এই তর্কবিতর্ক ও লেখালেখি আর মানববন্ধনের মধ্যেই এক জনদরদি দেশহিতৈষী একটা রিট ঠুকে দেবেন। এই করতে করতেই আরেক আমের মৌসুম যে শুধু আসবে তা-ই নয়, আগামী নির্বাচনের সময়ও এসে যাবে। সে নির্বাচন নির্বাচিত দলীয় সরকারের অধীনে হবে, না অনির্বাচিত সমঝোতার নির্দলীয় সরকারের অধীনে হবে, তা এখন বলা সম্ভব নয়।
১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটারের প্রায় ষোলো কোটি মানুষের দেশ। অন্তহীন সমস্যা। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সমস্যা। ভয়াবহ দারিদ্র্য। পঞ্চাশ ভাগ মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করে। এত রকম সমস্যা, যা দূর করা শুধু সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়, সব শ্রেণীর মানুষের সম্মিলিত উদ্যোগ দরকার। সবচেয়ে বেশি দরকার বাস্তববাদী হওয়া। কিন্তু বড় বড় বিষয় বাদ দিয়ে অতি তুচ্ছ বিষয় নিয়ে এক একটি ইস্যু তৈরি হচ্ছে। তা নিয়ে নিষ্প্রয়োজন বিতণ্ডা হচ্ছে।
লন্ডনে বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের সময় যে ‘ছোট মন্ত্রিসভা’র কথা বলেছেন, তা আমি মনে করি তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত, তাঁর সরকারের সিদ্ধান্ত নয়। তিনি বলেছেন, সেই ছোট মন্ত্রিসভায় বিএনপিও থাকতে পারে। সম্ভবত তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, একটি বহুদলীয় মন্ত্রিসভা হবে। তাঁর ওই অভিমতের পক্ষে-বিপক্ষে আরও অভিমত দেওয়া যায়। তা নিয়ে বিতর্ক করা যায়। কিন্তু প্রকৃত সমস্যাটির সমাধানে সেসব কার্যকর ভূমিকা রাখবে তা মনে হয় না। বাংলাদেশের রাজনীতির যে অবস্থা তাতে সাংবিধানিক ব্যবস্থার সঙ্গে সমঝোতামূলক ব্যবস্থা যোগ না হলে সংকট দূর হবে না। এ মুহূর্তের সমস্যা বলতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার বিষয়টি।
প্রধানমন্ত্রীর ওই প্রস্তাব তৎক্ষণাৎ বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া নাকচ করে দিয়েছেন। দলের মুখপাত্ররাও তাঁর কথারই প্রতিধ্বনি করছেন। ওই প্রস্তাব নাকচ না করে খালেদা জিয়ার পক্ষে সম্মত হওয়া কি সম্ভব ছিল? সম্মত হলে সব সমস্যার এক সেকেন্ডেই সমাধান হয়ে যেত। কিন্তু বাংলাদেশ যদি অত সোজা জায়গা হতো, তা হলে সত্যি সত্যি এই সুফলা দেশটি হতো সোনার বাংলা। বিরোধী দল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনড় রয়েছে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় তাদের সেই দাবি অগ্রাহ্য করার মতো নয়। কিন্তু রাজনীতিতে কোনো ব্যাপারে অনড় অবস্থান সমর্থনযোগ্য নয়।
রাষ্ট্রের সাংবিধানিক বিষয়ের জটিলতা সংসদে আলোচনার মাধ্যমে ফয়সালা করাই রীতি। জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলো সংসদের বাইরেও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা করতে পারে। আমাদের দেশে এই দুটি পথই বন্ধ। খোলা তৃতীয় পথ—রাজপথ। আমাদের রাষ্ট্র যাঁরা পরিচালনা করবেন তাঁদের কাছে ঘরের চেয়ে রাজপথই প্রিয়।
আগামী নির্বাচনের প্রশ্নে সরকারি দলের মুখপাত্র ও নেতারা সভা-সমাবেশে যে বক্তব্য দিচ্ছেন, তাও সমর্থন করা সম্ভব নয়। তাঁরা অব্যাহতভাবে বলছেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে।’ ‘শেখ হাসিনার সরকারই নির্বাচন করবে, বিরোধী দলকে সেই নির্বাচনে আসতে হবে।’ ‘বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতাসীন সরকারই নির্বাচন করবে।’ ইত্যাদি।
মহাজোটের দ্বিতীয় বৃহত্তর শরিক জাতীয় পার্টির প্রধান বলেছেন, ‘কোন দল নির্বাচনে এল, না এল তার জন্য নির্বাচন বন্ধ থাকবে না। নির্বাচন ঠিক সময়ে হবেই। আমরা সব আসনে প্রার্থী দেব।’ এ বক্তব্যে দোষের কিছু নেই, তবে সমঝোতার জায়গাটি থাকল না। পরিবেশ ও বনমন্ত্রী এগিয়ে গেছেন আর এক ধাপ। তিনি বললেন, ‘কোন গোলাপি নির্বাচনে আসল আর কোন গোলাপি আসল না, তার জন্য নির্বাচন ঠেকে থাকবে না।’ তিনি কাকে ইঙ্গিত করেছেন তা বালক-বালিকাদেরও না বোঝার কথা নয়।
বর্তমান মহাজোট সরকারই ক্ষমতায় থাকবে এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করবে বর্তমান সাজানো প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে—সে তো সোনায় সোহাগা। আমরা যারা নির্বাচনে দাঁড়াব না, শুধু ভোটটা দেব, তাদের উদ্বেগ অহেতুক নয়—সংগত কারণে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন এখনো কাজ দিয়ে কোনো আস্থা সৃষ্টি করতে পারেনি। বরং তাদের কিছু কাজ ও উচ্চারণ আশঙ্কা ও সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। যেমন: ‘দলীয় সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার পথনকশা [নীলনকশা নয়] বা রোডম্যাপ তৈরি করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশনের মতে, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী জাতি মেনে নিয়েছে। সুতরাং সংশোধিত সংবিধানের আলোকেই সংসদ নির্বাচন হবে। রোববার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এ কথা বলা হয়েছে।’ [প্রথম আলো, ০৬.০৮.২০১২]
পঞ্চদশ সংশোধনী মহাজোটের সংসদ সদস্য ও সমর্থকেরা মেনে নিয়েছেন, তা সবাই জানে। কিন্তু ‘জাতি মেনে নিয়েছে’—এ কথা জাতি লিখিত চিঠিতে বা কানে কানে নির্বাচন কমিশনারদের গিয়ে বলে এসেছে, তা বিশ্বাস করা কঠিন। জাতির যদি মানুষের মতো কথা বলার শক্তি থাকত, তা হলে সে হয় চিৎকার করত অথবা বাক্রুদ্ধ হয়ে যেত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কংকাল’ গল্পের নায়িকার ভাষায় বলতে গেলে, বর্তমান সংবিধানের যে অবস্থা তাতে জাতির যদি ‘চেতনা থাকিত তবে সে পুনর্বার অচেতন হইয়া যাইত’।
পনেরোতম সংশোধনীর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নেই। সরকারের শেষ তিন মাস একটি ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’ থাকবে। অর্থাৎ বর্তমান সরকারই থাকবে। আনঅফিশিয়ালি মৌখিক প্রস্তাবে প্রলোভন দেওয়া হচ্ছে, বিএনপিকে সেই সময়ের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দেওয়া যেতে পারে। মৎস্য ও পশুসম্পদ কিংবা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী অথবা প্রতিমন্ত্রীর পদ মওদুদ আহমদকে দেওয়া হতে পারে, যদি তাঁর দল আগ্রহী হয়। আগ্রহী না হলে থাক।
শুধু বর্তমান সরকারই থাকবে, তা-ই নয়, আরও একটি চমৎকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যা বিশ্বের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে আর কোথাও নেই। বর্তমান সংসদ এবং সংসদ সদস্যরা বহাল তবিয়তে থাকবেন। প্রশাসনের কার পুত্রের বা কন্যার এমন বুকের পাটা ও কোমরে জোর আছে, যিনি মাননীয় সংসদের হুকুমের বাইরে স্বাধীনভাবে ও জনস্বার্থে কিছু করেন। সুতরাং দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুব গোছগাছ করেই হচ্ছে।
নবম সংসদের মহাজোটের সদস্যদের কাছে জাতি একটি ব্যাপারে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ ও ঋণী থাকত। একটি বিধান তাঁরা অনায়াসে করতে পারতেন, তা হলো এই সংসদের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়িয়ে দেওয়া এবং বর্তমান সরকারই পরবর্তী পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকবে। অকাট্য যুক্তিও ছিল। তা হলো একটি নির্বাচনে যে ব্যয় হয় তা দিয়ে পদ্মা সেতু বানানো যাবে। নির্বাচন করে অনর্থক অর্থ নষ্ট করা স্বাধীনতার চেতনার পরিপন্থী।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ‘রূপরেখা’ বা ‘ছোট মন্ত্রিসভা’ গঠন নিয়ে আলোচনায় বসতে বিএনপি জোটকে আহ্বান জানাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতারা দুই-তিন দিন ধরে। সেই সরকারের রূপরেখা কেমন হবে, তা নিয়ে কি আওয়ামী লীগ নির্বাহী পরিষদে আলোচনা করেছে? নিজেরা রূপরেখা তৈরি না করে রূপরেখা নিয়ে অন্যকে ডাকাডাকি করাটা কোনো অর্থ বহন করে কি না? আলোচনায় বসলেই তো আওয়ামী লীগের নেতারা আঙুল সংবিধানের দিকে তাক করে বলবেন: ওটা আগে পড়েন এবং মানেন কি না বলেন। অবশ্য আলোচনায় বসার আগে একটি শর্তও যোগ করা হয়েছে: পনেরোই আগস্ট জন্মদিন পালন বন্ধ রাখুন।
জাতীয় স্বার্থে বিশেষ পরিস্থিতিতে সংবিধানের বাইরে গিয়েও সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যথেষ্ট নয়, যদি প্রধান পক্ষগুলোর মধ্যে মতৈক্য না থাকে। বহু দেশে দেখা গেছে, নির্বাচনের পরেও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়নি। আফ্রিকার কোনো কোনো দেশে তেমনটি হয়েছে। অনেক সরকার নানা অজুহাতে ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। সে জন্যই দরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সেই সরকার শুধু নির্বাচনটিই করবে। অন্যদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করে দেবে। নিজেরা থাকবেন নির্বাচন থেকে দূরে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন রোববার ঢাকায় এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে। তিনি বলেছেন, অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের অভাবে বিশ্বে গণজাগরণ সৃষ্টি হচ্ছে। একেক দেশে একেক গণজাগরণের একেক নাম। কোথাও ‘আরব বসন্ত’। কোথাও ‘ভেলভেট রেভল্যুশন’। কোথাও ‘গোলাপ বিপ্লব’। কোথাও ‘টিউলিপ রেভল্যুশন’। ওগুলোর কোনোটিই বিপ্লব ছিল না—গণবিদ্রোহ। গণতন্ত্র থাকলে গণবিদ্রোহ হয় না। থাইল্যান্ডের দৃষ্টান্ত নেতাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।
অনৈতিক ও অবৈধ পথে কোনো প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করার মধ্যে গৌরব নেই। সঠিক ও সোজা পথে থেকে পরাজিত হওয়ার মধ্যেও অগৌরব নেই। বাঙালি জাতীয়তাবাদী আওয়ামী লীগের নেতারা বাংলা কবিতা থেকে উদ্ধৃতি দেওয়া পছন্দ করেন। তাঁদের দুটি চরণ স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। আশা করি, দোষ নেবেন না।
একচ্ছত্র জয় নেই, নেই কোনো জয়ী।
বিজয়ী বিজিত কভু, বিজিত বিজয়ী।
সৈয়দ আবুল মকসুুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।
সেগুনবাগিচা এলাকার কোনো আলোচনা সভার প্রধান অতিথির ভাষণে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলবেন, আমের নাম বদল হইল তো কী হইল। আমের নাম বদল করা যাইব না, এমন কোনো বিধিবিধান সংবিধানে লিপিবদ্ধ নাই। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলবেন, আমি আমের এলাকার মানুষ। আমের নাম পরিবর্তন আমি সমর্থন করি না। তা ছাড়া বর্তমান নামগুলো তো ভালোই ছিল, কবিতার শব্দের মতো। রাশেদ খান মেনন বলবেন, আমরা এ সিদ্ধান্তের সমর্থনও করছি না, বিরোধিতাও করছি না। আমের নামবদলে শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না। তবে সব দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে করলেই ভালো। হাসানুল হক ইনু বলবেন, রাজশাহী বাংলা ভাইয়ের এলাকা। খালেদা জিয়া জঙ্গিবাদীদের সংস্রব ত্যাগ করেন নাই। রাজশাহীর আম নিয়া বিএনপির রাজনীতি করার আগে তাদের বলতে হবে তারা জঙ্গিবাদীদের সঙ্গে থাকবেন, না রাজনীতি থেকে মাইনাস হবেন।
আমের নামবদলের কথা উচ্চারিত হওয়ামাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কয়েকটি সংগঠনের জন্ম নেবে। সংগঠন মানে কম্পিউটার থেকে বের করা কয়েকটি লেটারহেড প্যাডের কাগজ। কোনোটির নাম বঙ্গবন্ধু আম পরিষদ, কোনোটি শহীদ জিয়া আম ফাউন্ডেশন, কোনোটি আমের নাম পরিবর্তন প্রতিরোধ কমিটি, কোনোটি সোনার বাংলা আম ফোরাম। যাদের টাকার অভাব নাই তাঁরা ভাড়া নেবেন সিরডাপ, প্রেসক্লাব বা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তন। যাঁরা শুধু মাইকের ভাড়াটা জোগাড় করতে পারবেন এবং সালু কাপড়ে একটি ব্যানার লেখাতে সক্ষম তাঁদের জন্য রয়েছে রাজপথ। বড় একটা আমের ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে যাবেন। যাঁদের কোনো কিছুই করার সামর্থ্য নাই তাঁরা দশ-বারো জন রাস্তায় নেমে অমুকের গদিতে একসঙ্গে আগুন জ্বালার স্লোগান দেবেন। বলবেন, আমের নাম পুনর্বহাল করো, নইলে গদি ছাড়ো।
অর্থাৎ এক আমের নামের সঙ্গে নিরপেক্ষ নির্বাচন, তত্ত্বাবধায়ক-ব্যবস্থা, গদি প্রভৃতি একাকার হয়ে যাবে। পত্রপত্রিকার উপসম্পাদকীয় পাতাগুলো সয়লাব হয়ে যাবে আমের জন্মবৃত্তান্ত থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যাবতীয় তথ্যে। আম গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কে কোথায় ডায়াবেটিস ও হার্টের সমস্যা নিয়ে অবসর জীবন যাপন করছেন তাঁদের খুঁজে বের করে নেওয়া হবে সাক্ষাৎকার। কেউ বলবেন, বঙ্গবন্ধুর সময়ই প্রথম আম নিয়ে গবেষণা হয়। আর একজন বলবেন, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াই রাজশাহীর আমবাগান প্রথম পরিদর্শন করেন। রাত ১২টায় এসব নিয়ে চলবে তুমুল বিতর্ক পক্ষকাল।
এই তর্কবিতর্ক ও লেখালেখি আর মানববন্ধনের মধ্যেই এক জনদরদি দেশহিতৈষী একটা রিট ঠুকে দেবেন। এই করতে করতেই আরেক আমের মৌসুম যে শুধু আসবে তা-ই নয়, আগামী নির্বাচনের সময়ও এসে যাবে। সে নির্বাচন নির্বাচিত দলীয় সরকারের অধীনে হবে, না অনির্বাচিত সমঝোতার নির্দলীয় সরকারের অধীনে হবে, তা এখন বলা সম্ভব নয়।
১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটারের প্রায় ষোলো কোটি মানুষের দেশ। অন্তহীন সমস্যা। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সমস্যা। ভয়াবহ দারিদ্র্য। পঞ্চাশ ভাগ মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করে। এত রকম সমস্যা, যা দূর করা শুধু সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়, সব শ্রেণীর মানুষের সম্মিলিত উদ্যোগ দরকার। সবচেয়ে বেশি দরকার বাস্তববাদী হওয়া। কিন্তু বড় বড় বিষয় বাদ দিয়ে অতি তুচ্ছ বিষয় নিয়ে এক একটি ইস্যু তৈরি হচ্ছে। তা নিয়ে নিষ্প্রয়োজন বিতণ্ডা হচ্ছে।
লন্ডনে বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের সময় যে ‘ছোট মন্ত্রিসভা’র কথা বলেছেন, তা আমি মনে করি তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত, তাঁর সরকারের সিদ্ধান্ত নয়। তিনি বলেছেন, সেই ছোট মন্ত্রিসভায় বিএনপিও থাকতে পারে। সম্ভবত তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, একটি বহুদলীয় মন্ত্রিসভা হবে। তাঁর ওই অভিমতের পক্ষে-বিপক্ষে আরও অভিমত দেওয়া যায়। তা নিয়ে বিতর্ক করা যায়। কিন্তু প্রকৃত সমস্যাটির সমাধানে সেসব কার্যকর ভূমিকা রাখবে তা মনে হয় না। বাংলাদেশের রাজনীতির যে অবস্থা তাতে সাংবিধানিক ব্যবস্থার সঙ্গে সমঝোতামূলক ব্যবস্থা যোগ না হলে সংকট দূর হবে না। এ মুহূর্তের সমস্যা বলতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার বিষয়টি।
প্রধানমন্ত্রীর ওই প্রস্তাব তৎক্ষণাৎ বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া নাকচ করে দিয়েছেন। দলের মুখপাত্ররাও তাঁর কথারই প্রতিধ্বনি করছেন। ওই প্রস্তাব নাকচ না করে খালেদা জিয়ার পক্ষে সম্মত হওয়া কি সম্ভব ছিল? সম্মত হলে সব সমস্যার এক সেকেন্ডেই সমাধান হয়ে যেত। কিন্তু বাংলাদেশ যদি অত সোজা জায়গা হতো, তা হলে সত্যি সত্যি এই সুফলা দেশটি হতো সোনার বাংলা। বিরোধী দল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনড় রয়েছে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় তাদের সেই দাবি অগ্রাহ্য করার মতো নয়। কিন্তু রাজনীতিতে কোনো ব্যাপারে অনড় অবস্থান সমর্থনযোগ্য নয়।
রাষ্ট্রের সাংবিধানিক বিষয়ের জটিলতা সংসদে আলোচনার মাধ্যমে ফয়সালা করাই রীতি। জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলো সংসদের বাইরেও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা করতে পারে। আমাদের দেশে এই দুটি পথই বন্ধ। খোলা তৃতীয় পথ—রাজপথ। আমাদের রাষ্ট্র যাঁরা পরিচালনা করবেন তাঁদের কাছে ঘরের চেয়ে রাজপথই প্রিয়।
আগামী নির্বাচনের প্রশ্নে সরকারি দলের মুখপাত্র ও নেতারা সভা-সমাবেশে যে বক্তব্য দিচ্ছেন, তাও সমর্থন করা সম্ভব নয়। তাঁরা অব্যাহতভাবে বলছেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে।’ ‘শেখ হাসিনার সরকারই নির্বাচন করবে, বিরোধী দলকে সেই নির্বাচনে আসতে হবে।’ ‘বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতাসীন সরকারই নির্বাচন করবে।’ ইত্যাদি।
মহাজোটের দ্বিতীয় বৃহত্তর শরিক জাতীয় পার্টির প্রধান বলেছেন, ‘কোন দল নির্বাচনে এল, না এল তার জন্য নির্বাচন বন্ধ থাকবে না। নির্বাচন ঠিক সময়ে হবেই। আমরা সব আসনে প্রার্থী দেব।’ এ বক্তব্যে দোষের কিছু নেই, তবে সমঝোতার জায়গাটি থাকল না। পরিবেশ ও বনমন্ত্রী এগিয়ে গেছেন আর এক ধাপ। তিনি বললেন, ‘কোন গোলাপি নির্বাচনে আসল আর কোন গোলাপি আসল না, তার জন্য নির্বাচন ঠেকে থাকবে না।’ তিনি কাকে ইঙ্গিত করেছেন তা বালক-বালিকাদেরও না বোঝার কথা নয়।
বর্তমান মহাজোট সরকারই ক্ষমতায় থাকবে এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করবে বর্তমান সাজানো প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে—সে তো সোনায় সোহাগা। আমরা যারা নির্বাচনে দাঁড়াব না, শুধু ভোটটা দেব, তাদের উদ্বেগ অহেতুক নয়—সংগত কারণে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন এখনো কাজ দিয়ে কোনো আস্থা সৃষ্টি করতে পারেনি। বরং তাদের কিছু কাজ ও উচ্চারণ আশঙ্কা ও সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। যেমন: ‘দলীয় সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার পথনকশা [নীলনকশা নয়] বা রোডম্যাপ তৈরি করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশনের মতে, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী জাতি মেনে নিয়েছে। সুতরাং সংশোধিত সংবিধানের আলোকেই সংসদ নির্বাচন হবে। রোববার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এ কথা বলা হয়েছে।’ [প্রথম আলো, ০৬.০৮.২০১২]
পঞ্চদশ সংশোধনী মহাজোটের সংসদ সদস্য ও সমর্থকেরা মেনে নিয়েছেন, তা সবাই জানে। কিন্তু ‘জাতি মেনে নিয়েছে’—এ কথা জাতি লিখিত চিঠিতে বা কানে কানে নির্বাচন কমিশনারদের গিয়ে বলে এসেছে, তা বিশ্বাস করা কঠিন। জাতির যদি মানুষের মতো কথা বলার শক্তি থাকত, তা হলে সে হয় চিৎকার করত অথবা বাক্রুদ্ধ হয়ে যেত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কংকাল’ গল্পের নায়িকার ভাষায় বলতে গেলে, বর্তমান সংবিধানের যে অবস্থা তাতে জাতির যদি ‘চেতনা থাকিত তবে সে পুনর্বার অচেতন হইয়া যাইত’।
পনেরোতম সংশোধনীর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নেই। সরকারের শেষ তিন মাস একটি ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’ থাকবে। অর্থাৎ বর্তমান সরকারই থাকবে। আনঅফিশিয়ালি মৌখিক প্রস্তাবে প্রলোভন দেওয়া হচ্ছে, বিএনপিকে সেই সময়ের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দেওয়া যেতে পারে। মৎস্য ও পশুসম্পদ কিংবা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী অথবা প্রতিমন্ত্রীর পদ মওদুদ আহমদকে দেওয়া হতে পারে, যদি তাঁর দল আগ্রহী হয়। আগ্রহী না হলে থাক।
শুধু বর্তমান সরকারই থাকবে, তা-ই নয়, আরও একটি চমৎকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যা বিশ্বের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে আর কোথাও নেই। বর্তমান সংসদ এবং সংসদ সদস্যরা বহাল তবিয়তে থাকবেন। প্রশাসনের কার পুত্রের বা কন্যার এমন বুকের পাটা ও কোমরে জোর আছে, যিনি মাননীয় সংসদের হুকুমের বাইরে স্বাধীনভাবে ও জনস্বার্থে কিছু করেন। সুতরাং দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুব গোছগাছ করেই হচ্ছে।
নবম সংসদের মহাজোটের সদস্যদের কাছে জাতি একটি ব্যাপারে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ ও ঋণী থাকত। একটি বিধান তাঁরা অনায়াসে করতে পারতেন, তা হলো এই সংসদের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়িয়ে দেওয়া এবং বর্তমান সরকারই পরবর্তী পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকবে। অকাট্য যুক্তিও ছিল। তা হলো একটি নির্বাচনে যে ব্যয় হয় তা দিয়ে পদ্মা সেতু বানানো যাবে। নির্বাচন করে অনর্থক অর্থ নষ্ট করা স্বাধীনতার চেতনার পরিপন্থী।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ‘রূপরেখা’ বা ‘ছোট মন্ত্রিসভা’ গঠন নিয়ে আলোচনায় বসতে বিএনপি জোটকে আহ্বান জানাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতারা দুই-তিন দিন ধরে। সেই সরকারের রূপরেখা কেমন হবে, তা নিয়ে কি আওয়ামী লীগ নির্বাহী পরিষদে আলোচনা করেছে? নিজেরা রূপরেখা তৈরি না করে রূপরেখা নিয়ে অন্যকে ডাকাডাকি করাটা কোনো অর্থ বহন করে কি না? আলোচনায় বসলেই তো আওয়ামী লীগের নেতারা আঙুল সংবিধানের দিকে তাক করে বলবেন: ওটা আগে পড়েন এবং মানেন কি না বলেন। অবশ্য আলোচনায় বসার আগে একটি শর্তও যোগ করা হয়েছে: পনেরোই আগস্ট জন্মদিন পালন বন্ধ রাখুন।
জাতীয় স্বার্থে বিশেষ পরিস্থিতিতে সংবিধানের বাইরে গিয়েও সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যথেষ্ট নয়, যদি প্রধান পক্ষগুলোর মধ্যে মতৈক্য না থাকে। বহু দেশে দেখা গেছে, নির্বাচনের পরেও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়নি। আফ্রিকার কোনো কোনো দেশে তেমনটি হয়েছে। অনেক সরকার নানা অজুহাতে ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। সে জন্যই দরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সেই সরকার শুধু নির্বাচনটিই করবে। অন্যদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করে দেবে। নিজেরা থাকবেন নির্বাচন থেকে দূরে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন রোববার ঢাকায় এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে। তিনি বলেছেন, অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের অভাবে বিশ্বে গণজাগরণ সৃষ্টি হচ্ছে। একেক দেশে একেক গণজাগরণের একেক নাম। কোথাও ‘আরব বসন্ত’। কোথাও ‘ভেলভেট রেভল্যুশন’। কোথাও ‘গোলাপ বিপ্লব’। কোথাও ‘টিউলিপ রেভল্যুশন’। ওগুলোর কোনোটিই বিপ্লব ছিল না—গণবিদ্রোহ। গণতন্ত্র থাকলে গণবিদ্রোহ হয় না। থাইল্যান্ডের দৃষ্টান্ত নেতাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।
অনৈতিক ও অবৈধ পথে কোনো প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করার মধ্যে গৌরব নেই। সঠিক ও সোজা পথে থেকে পরাজিত হওয়ার মধ্যেও অগৌরব নেই। বাঙালি জাতীয়তাবাদী আওয়ামী লীগের নেতারা বাংলা কবিতা থেকে উদ্ধৃতি দেওয়া পছন্দ করেন। তাঁদের দুটি চরণ স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। আশা করি, দোষ নেবেন না।
একচ্ছত্র জয় নেই, নেই কোনো জয়ী।
বিজয়ী বিজিত কভু, বিজিত বিজয়ী।
সৈয়দ আবুল মকসুুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।
No comments