ভারতীয় ভিসা-সহজ প্রক্রিয়াই সময়ের দাবি
বাংলাদেশ ও ভারতের পারস্পরিক সম্পর্ক সুপ্রতিবেশীসুলভ। তবে এ শুধু প্রতিবেশীর সম্পর্ক নয়_ দেশ দুটি একই ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির উত্তরাধিকার বহন করে চলেছে। একই ভৌগোলিক সম্পদের যৌথ উত্তরাধিকারও দেশ দুটি গর্বের সঙ্গে ধারণ করে।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক অতীতে নানা কারণে তিক্ত হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে, পারস্পরিক সম্পর্কে অবিশ্বাস, সন্দেহ ও সংশয়ও তৈরি হয়েছে। বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কোন্নয়নের ইস্যুটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। আশার কথা, মহাজোট সরকারের চার বছরে এসে দু'দেশের সম্পর্ক এখন অনেকটাই উষ্ণ ও আন্তরিক। দু'দেশের সরকারের মধ্যে আলাপ-আলোচনার পরিবেশ যেমন তৈরি হয়েছে, তেমনি সাংস্কৃতিক-সামাজিক নানা ক্ষেত্রে লেনদেনের প্রেক্ষাপটও রচিত হয়েছে। যেসব বিষয়ে মতৈক্য ও লেনদেনের সমস্যা রয়েছে সেসব ইস্যুতে ক্রমে সমঝোতা হবে বলে আশা করা যায়। সকলেই স্বীকার করেন, প্রতিবেশীদের মধ্যে সুষ্ঠু সম্পর্ক বজায় রাখতে আলাপ-আলোচনার পরিবেশটা অক্ষুণ্ন রাখা দরকার। তবে সবচেয়ে জরুরি জনগণের মধ্যে যোগাযোগ। দু'দেশের মানুষের মধ্যে আন্তরিক লেনদেন ও উষ্ণ যোগাযোগ থাকলে সেটি রাষ্ট্রীয় সম্পর্কে প্রভাব ফেলে। কিন্তু সাধারণ মানুষের গমনাগমনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কাজে তো বটেই, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য, ভ্রমণ ইত্যাকার নানা প্রয়োজনে বাংলাদেশের মানুষরা ভারতের বিভিন্ন স্থানে যায়। ভারতের মানুষরাও বাংলাদেশে আসে। অভিযোগ রয়েছে, ভারতে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভিসা সংগ্রহ করতে গিয়ে বাংলাদেশিদের দীর্ঘসূত্রতার শিকার হতে হয়। অনেক সময় হয়রানির অভিযোগও ওঠে। ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনাবশ্যক কড়াকড়ি দু'দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অতিপ্রয়োজনে ভিসা সংগ্রহ করতে গিয়ে যারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন তাদের মধ্যে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হচ্ছে। দু'দেশের সরকারের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্কের কোনো প্রভাব তারা ভিসার ক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছেন না। এর মাধ্যমে প্রকারান্তরে জনগণের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। ভিসা প্রক্রিয়া শিথিল ও সহজিকরণের দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু নানা অজুহাতে কড়াকড়িটাই বলবৎ আছে। আশার কথা, এ বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধের বাংলাদেশ সফরের সময় ২৮ জানুয়ারি এ বিষয়ে চুক্তি হতে পারে। সেটি খুবই আশাপ্রদ ব্যাপার। ভিসা প্রক্রিয়া, তথা জনগণের মধ্যে যোগাযোগ ও বোঝাপড়া শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, ভারতীয় স্বার্থেও জরুরি। সার্বিকভাবে এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্যই জনগণকে কাছাকাছি নিয়ে আসতে হবে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আরেকটি সমস্যা সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে। সীমান্তে হত্যাকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর মতে, পশ্চিমবঙ্গেও এ নিয়ে উদ্বেগ ও অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অনেক কথা ও আলোচনা হয়েছে, নানা প্রতিশ্রুতিও এসেছে। কিন্তু বাস্তবে বিশেষ ফল মেলেনি। দু'দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড একটি প্রশ্ন হিসেবে রয়ে গেছে। আমরা আশা করি, ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। দু'দেশ পরস্পরের স্বার্থে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পেঁৗছালে সেটি সীমান্তবর্তী মানুষের জন্য স্বস্তির কারণ হবে।
No comments