আরও ৭৬ মৃতদেহ উদ্ধার, মেঘনাতীরে স্বজনহারাদের বিলাপ-লাশ আর লাশ by শরিফুল হাসান ও তানভীর হাসান
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার মেঘনায় লঞ্চডুবির ঘটনায় গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১১২টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ডুবে যাওয়া লঞ্চটি টেনে তীরে আনা হয়েছে। লঞ্চের ভেতর থেকে ৭৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এমভি শরীয়তপুর-১ নামের লঞ্চটি গত সোমবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর
ঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। পথে কাচিকাটা লঞ্চঘাট থেকে আরও শতাধিক যাত্রী ওঠে। রাত আড়াইটার দিকে গজারিয়ায় চর রমজান বেগ এলাকায় পৌঁছালে একটি মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চটি ডুবে যায়। মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত ৩৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়।
বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান শামসুদ্দোহা খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত ১১২টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। যতক্ষণ লাশ পাওয়া যাবে, ততক্ষণ উদ্ধার তৎপরতা চলবে। কারও স্বজন নিখোঁজ থাকলে তা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে জানানোর অনুরোধ করেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটায় ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এর আগে দুর্ঘটনার পর পর আরেক উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। হামজা নির্ধারিত সময়ে ঘটনাস্থলে না পৌঁছানোয় গত মঙ্গলবার রাত আটটার পর লঞ্চটি উদ্ধারের কাজ স্থগিত করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা থেকে রুস্তম ও হামজা মিলে লঞ্চটি উদ্ধারের কাজ শুরু করে। পাশাপাশি ডুবুরি দল লঞ্চের ভেতর থেকে লাশ বের করে আনতে থাকে। নৌবাহিনী, বিআইডব্লিউটিএ, কোস্টগার্ড, স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসন ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা উদ্ধারকাজে সহায়তা করেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ডুবে যাওয়া লঞ্চটি হামজা ও রুস্তমের সঙ্গে বেঁধে নিয়ে আস্তে আস্তে তীরের দিকে টানা হয়। বিকেল চারটার দিকে লঞ্চটি তীরে টেনে তোলা সম্ভব হয়।
৭৬ লাশ: তীরে আনার পর লঞ্চের ভেতর থেকে একের পর এক লাশ বের করা হয়। শুধু গতকালই উদ্ধার করা লাশের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৬টি। এর মধ্যে ১৪-১৫টি লাশ উদ্ধার করা হয় লঞ্চের ভেতরের কেবিন থেকে। লঞ্চটির দ্বিতীয় তলা থেকে সবচেয়ে বেশি লাশ উদ্ধার করা হয়। লঞ্চ টেনে তোলার পর দ্বিতীয় তলায় লাশের স্তূপ দেখা যায়। কয়েকটি লাশের শরীরের কোনো কোনো অংশ লঞ্চের জানালা দিয়ে বের হয়ে থাকতে দেখা যায়।
উদ্ধারের পর লাশগুলো দুর্ঘটনাস্থল থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে চর কিশোরগঞ্জে সারি করে রাখা হয়। সেখানে স্বজনেরা শনাক্ত করার পর লাশ দেওয়া হয়।
এখনো নিখোঁজ: নিখোঁজ স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধারণা করছেন, এখনো শতাধিক যাত্রী নিখোঁজ রয়েছে। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চর লাউলানি এলাকার মালেক জানান, তাঁর ভাতিজা আলমগীর গাজী (৩৫), শাহজালাল (২২) ও প্রতিবেশী জয়নাল (২৩) নিখোঁজ রয়েছে। স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, আকলিমা (২২), সোহেল (২৪), রিফাত (১০ মাস), আনোয়ার হোসেন (৩৫), তাসলিমা (২৫), সানেহা (৪), নাসু বেগম (২৮), নিলয় (২) ও সাইফুল (৩২) এখনো নিখোঁজ।
নড়িয়ার চর ভবানী এলাকার আবদুল হান্নান ফকির জানান, দুই দিন ধরে মেঘনার তীরে থেকেও ভাতিজা রিকু ফকিরের (২০) সন্ধান পাননি।
স্বজনদের আহাজারি: দুর্ঘটনাস্থল চর রমজান বেগ থেকে লাশ উদ্ধারের পর রাখা হচ্ছে কয়েক কিলোমিটার দূরে চর কিশোরগঞ্জে। লাশের খোঁজে একবার মেঘনার তীরে, আরেকবার চর কিশোরগঞ্জে স্বজনেরা ছোটাছুটি করছেন। এতে দুর্ভোগেও পড়তে হচ্ছে তাঁদের। ঘটনাস্থলে গতকালও সারা দিন স্বজনের খোঁজে হাজারো মানুষ মেঘনার তীরে অপেক্ষায় থাকেন। বিশেষ করে, লঞ্চের ভেতর থেকে লাশ বের করে আনার সময় সেখানে হূদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
ছোট ভাই শামীমের লাশ পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বড় ভাই হাবিবুর রহমান। বিলাপ করে বলেন, ‘ভাই রে, তোরে কইছিলাম, আজ ঢাকায় যাইছ না। আমার কথা শুনলি না।’
এত প্রাণহানির কারণ: লঞ্চটি ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছিল। লঞ্চের পাটাতনে মরিচ, ধনে ও পেঁয়াজের বেশ কিছু বস্তা দেখা গেছে। আর দুর্ঘটনা ঘটে রাত দুইটার দিকে। গভীর রাত হওয়ায় যাত্রীরা বেশির ভাগই ঘুমিয়ে ছিল। তারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই লঞ্চটি ডুবে যায়।
নৌপরিবহন অধিদপ্তর গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বাইতুল আমিন বলেন, মালবাহী জাহাজের ধাক্কার কারণেই লঞ্চটি ডুবে গেছে। লঞ্চটির গায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তদন্তকারী এই কর্মকর্তার মতে, লঞ্চে দুই শর মতো যাত্রী ছিল।
মানবতাবোধ: দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশের গ্রামের মানুষের মানবতাবোধ সবার নজর কেড়েছে। স্বজনদের লাশের জন্য অপেক্ষায় থাকা মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা। সম্মিলিত উদ্যোগে খাবার রান্না করে অপেক্ষমাণ স্বজনদের খাওয়াচ্ছেন তাঁরা। রাতে থাকার জন্য বড় আকারে প্যান্ডেল তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য: বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান শামসুদ্দোহা খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, বিআইডব্লিউটিএ, কোস্টগার্ড, মুন্সিগঞ্জ জেলা ও পুলিশ প্রশাসন সমন্বিতভাবে কাজ করেছে বলে দ্রুততম সময়ে উদ্ধারকাজ করতে পেরেছি।’ তিনি বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, লঞ্চটিকে ধাক্কা দেওয়া মালবাহী জাহাজ শনাক্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক আজিজুল আলম জানান, লাশগুলো শনাক্ত করার পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। আশপাশের বিভিন্ন জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তারা কোনো লাশ পেলে মুন্সিগঞ্জ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করবে।
বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান শামসুদ্দোহা খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত ১১২টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। যতক্ষণ লাশ পাওয়া যাবে, ততক্ষণ উদ্ধার তৎপরতা চলবে। কারও স্বজন নিখোঁজ থাকলে তা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে জানানোর অনুরোধ করেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটায় ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এর আগে দুর্ঘটনার পর পর আরেক উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। হামজা নির্ধারিত সময়ে ঘটনাস্থলে না পৌঁছানোয় গত মঙ্গলবার রাত আটটার পর লঞ্চটি উদ্ধারের কাজ স্থগিত করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা থেকে রুস্তম ও হামজা মিলে লঞ্চটি উদ্ধারের কাজ শুরু করে। পাশাপাশি ডুবুরি দল লঞ্চের ভেতর থেকে লাশ বের করে আনতে থাকে। নৌবাহিনী, বিআইডব্লিউটিএ, কোস্টগার্ড, স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসন ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা উদ্ধারকাজে সহায়তা করেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ডুবে যাওয়া লঞ্চটি হামজা ও রুস্তমের সঙ্গে বেঁধে নিয়ে আস্তে আস্তে তীরের দিকে টানা হয়। বিকেল চারটার দিকে লঞ্চটি তীরে টেনে তোলা সম্ভব হয়।
৭৬ লাশ: তীরে আনার পর লঞ্চের ভেতর থেকে একের পর এক লাশ বের করা হয়। শুধু গতকালই উদ্ধার করা লাশের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৬টি। এর মধ্যে ১৪-১৫টি লাশ উদ্ধার করা হয় লঞ্চের ভেতরের কেবিন থেকে। লঞ্চটির দ্বিতীয় তলা থেকে সবচেয়ে বেশি লাশ উদ্ধার করা হয়। লঞ্চ টেনে তোলার পর দ্বিতীয় তলায় লাশের স্তূপ দেখা যায়। কয়েকটি লাশের শরীরের কোনো কোনো অংশ লঞ্চের জানালা দিয়ে বের হয়ে থাকতে দেখা যায়।
উদ্ধারের পর লাশগুলো দুর্ঘটনাস্থল থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে চর কিশোরগঞ্জে সারি করে রাখা হয়। সেখানে স্বজনেরা শনাক্ত করার পর লাশ দেওয়া হয়।
এখনো নিখোঁজ: নিখোঁজ স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধারণা করছেন, এখনো শতাধিক যাত্রী নিখোঁজ রয়েছে। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চর লাউলানি এলাকার মালেক জানান, তাঁর ভাতিজা আলমগীর গাজী (৩৫), শাহজালাল (২২) ও প্রতিবেশী জয়নাল (২৩) নিখোঁজ রয়েছে। স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, আকলিমা (২২), সোহেল (২৪), রিফাত (১০ মাস), আনোয়ার হোসেন (৩৫), তাসলিমা (২৫), সানেহা (৪), নাসু বেগম (২৮), নিলয় (২) ও সাইফুল (৩২) এখনো নিখোঁজ।
নড়িয়ার চর ভবানী এলাকার আবদুল হান্নান ফকির জানান, দুই দিন ধরে মেঘনার তীরে থেকেও ভাতিজা রিকু ফকিরের (২০) সন্ধান পাননি।
স্বজনদের আহাজারি: দুর্ঘটনাস্থল চর রমজান বেগ থেকে লাশ উদ্ধারের পর রাখা হচ্ছে কয়েক কিলোমিটার দূরে চর কিশোরগঞ্জে। লাশের খোঁজে একবার মেঘনার তীরে, আরেকবার চর কিশোরগঞ্জে স্বজনেরা ছোটাছুটি করছেন। এতে দুর্ভোগেও পড়তে হচ্ছে তাঁদের। ঘটনাস্থলে গতকালও সারা দিন স্বজনের খোঁজে হাজারো মানুষ মেঘনার তীরে অপেক্ষায় থাকেন। বিশেষ করে, লঞ্চের ভেতর থেকে লাশ বের করে আনার সময় সেখানে হূদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
ছোট ভাই শামীমের লাশ পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বড় ভাই হাবিবুর রহমান। বিলাপ করে বলেন, ‘ভাই রে, তোরে কইছিলাম, আজ ঢাকায় যাইছ না। আমার কথা শুনলি না।’
এত প্রাণহানির কারণ: লঞ্চটি ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছিল। লঞ্চের পাটাতনে মরিচ, ধনে ও পেঁয়াজের বেশ কিছু বস্তা দেখা গেছে। আর দুর্ঘটনা ঘটে রাত দুইটার দিকে। গভীর রাত হওয়ায় যাত্রীরা বেশির ভাগই ঘুমিয়ে ছিল। তারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই লঞ্চটি ডুবে যায়।
নৌপরিবহন অধিদপ্তর গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বাইতুল আমিন বলেন, মালবাহী জাহাজের ধাক্কার কারণেই লঞ্চটি ডুবে গেছে। লঞ্চটির গায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তদন্তকারী এই কর্মকর্তার মতে, লঞ্চে দুই শর মতো যাত্রী ছিল।
মানবতাবোধ: দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশের গ্রামের মানুষের মানবতাবোধ সবার নজর কেড়েছে। স্বজনদের লাশের জন্য অপেক্ষায় থাকা মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা। সম্মিলিত উদ্যোগে খাবার রান্না করে অপেক্ষমাণ স্বজনদের খাওয়াচ্ছেন তাঁরা। রাতে থাকার জন্য বড় আকারে প্যান্ডেল তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য: বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান শামসুদ্দোহা খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, বিআইডব্লিউটিএ, কোস্টগার্ড, মুন্সিগঞ্জ জেলা ও পুলিশ প্রশাসন সমন্বিতভাবে কাজ করেছে বলে দ্রুততম সময়ে উদ্ধারকাজ করতে পেরেছি।’ তিনি বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, লঞ্চটিকে ধাক্কা দেওয়া মালবাহী জাহাজ শনাক্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক আজিজুল আলম জানান, লাশগুলো শনাক্ত করার পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। আশপাশের বিভিন্ন জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তারা কোনো লাশ পেলে মুন্সিগঞ্জ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করবে।
No comments