খালি হাতে ফিরতে হলো কেরিকে

জন কেরি
মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত আলোচনার জন্য একটি কাঠামো দাঁড় করানোর প্রাণান্ত চেষ্টায় গত চার দিন নিবিড়ভাবে দৌড়ঝাঁপ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। তবে দৃশ্যমান কোনো সাফল্য ছাড়াই গতকাল সোমবার তিনি স্বদেশের উদ্দেশে মধ্যপ্রাচ্য ছেড়েছেন। অবশ্য, মধ্যপ্রাচ্য ত্যাগের আগে বলেছেন, ব্যর্থতা সত্ত্বেও কিছু অগ্রগতি হয়েছে।
টানা চার দিনের এই সফরে কেরি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলাদা বৈঠক করেন। পাশাপাশি অপ্রত্যাশিতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন মিত্র দেশ জর্ডান ও সৌদি আরব সফর করেন। সোমবার সকালে মার্কিন এই শীর্ষ কূটনীতিক সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত টনি ব্লেয়ারের সঙ্গে জেরুজালেমে সংবাদ ব্রিফিংয়ে অংশ নেন। এই ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এক বছর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর এই অঞ্চলে কেরি তাঁর ১০ দিনের সফর শেষ করেন। এর আগে তিনি ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা আইজ্যাক হেরজোগের সঙ্গে বৈঠক করেন। মার্কিন কর্মকর্তারা কেরির এই প্রচেষ্টার ব্যাপারে শুরু থেকেই অনেকটা গোপনীয়তা রক্ষা করে চলছেন। তবে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি নেতাদের মধ্যে বিদ্যমান দূরত্ব কমানোর জন্য কেরির প্রস্তাবনার ব্যাপারে তাঁরা সামান্য কিছু খবর প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র মূলত দ্বিরাষ্ট্রিক সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে বলা হচ্ছে। তবে এবারের আলোচনায় পশ্চিম তীর ও জর্ডানের মধ্যে সীমান্ত এলাকা জর্ডান উপত্যকার নিরাপত্তার পাশাপাশি জেরুজালেমের ভাগ্য নিয়েই বেশি আলোকপাত করা হয়েছে বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়েছে।  জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল উভয়ই তাদের ভবিষ্যৎ রাজধানী হিসেবে দাবি করে আসছে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন কোনো চুক্তি হলে, সে ক্ষেত্রে জর্ডান ও সৌদি আরবের ভূমিকাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
পশ্চিম তীরের সঙ্গে জর্ডানের সীমানা থাকার পাশাপাশি দেশটি ইসরায়েল দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমে মুসলমানদের পবিত্র স্থানগুলোর অভিভাবকও। ১৯৯৪ সালের ইসরায়েল-জর্ডান শান্তিচুক্তি অনুযায়ী তাদের এই কর্তৃত্ব স্বীকৃত। আর সৌদি আরব ২০০২ সালে একটি শান্তি পরিকল্পনায় নেতৃত্ব দেয়। কোনো ধরনের বসতি নির্মাণের ক্ষেত্রে এটিই আরবদের আশা-আকাঙ্ক্ষার ভিত্তি। কেরি রোববার রাতে সৌদি বাদশা আবদুল্লাহর সঙ্গে তাঁর বাসভবনে বৈঠকের পর বলেন, তিনি প্রভাবশালী আরব নেতাদের সমর্থন লাভ করেছেন। তিনি বলেন, ‘বাদশা কেবল উৎসাহীই ছিলেন না, তিনি আমাদের প্রচেষ্টাকে সমর্থন দিয়েছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন, আমরা সামনের দিনগুলোতে সফল হবো... এবং আমরা সফল হলে তা এই অঞ্চলের সবার জন্য বিরাট উপকার হবে।’ সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সউদ আল-ফয়সালও স্বীকার করেছেন, সেটা ছিল একটি ‘চমৎকার বৈঠক’। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া কেরি মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়াকে নিজের ব্যক্তিগত আগ্রহ হিসেবে নিয়েছেন। এই সফরে তিনি ইসরায়েল ও পশ্চিম তীরে যেসব আলোচনা করেছেন, তা জানাতে চলতি সপ্তাহেই তিনি আরব লিগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তবে কেরি জোর প্রচেষ্টা চালালেও এবারের সফরটি ছিল অনেকটা তিক্তকর। বিশেষ করে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন উভয় দেশের নেতারাই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তোলেন, প্রতিপক্ষ শান্তির অন্বেষায় আন্তরিক নয়। পাশাপাশি কেরিকে উভয় পক্ষের কাছ থেকে এই অভিযোগও শুনতে হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব অন্য পক্ষের জন্য অনুকূল নয়। এমন প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি আলোচনার যে উদ্দেশ্য নিয়ে কেরি মধ্যপ্রাচ্য সফরে এসেছিলেন, তা অধরাই থেকে গেছে। অবশ্য, মার্কিন কর্মকর্তারা আগেই বলেছিলেন, এ সফরে যুগান্তকারী অর্জন আসবে, এমনটি ভাবা ঠিক হবে না। এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.