সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা কেন?

নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় রোববার যশোরের অভয়নগরে হিন্দু অধ্যুষিত মালোপাড়ায় বাড়িঘর ভাংচুর, অগি্নসংযোগ, বোমাবাজি ও লুটপাটের ঘটনা শুভবুদ্ধিসম্পন্ন প্রতিটি মানুষকেই ক্ষুব্ধ করবে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দেখা যায়, আক্রান্ত পরিবারগুলোর নারী-শিশুসহ শত শত মানুষ প্রাণ বাঁচাতে শীতের রাতে সাঁতরে ও নৌকায় ভৈরব নদ পেরিয়ে মন্দিরে আশ্রয় নেয়। একই দিন দিনাজপুর সদর উপজেলার একটি হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামেও সংখ্যালঘুদের শতাধিক বাড়িঘর,ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভোট দেওয়ার কারণে হামলা, অগি্নসংযোগ ও লুটপাট চালায় জামায়াত-শিবির। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ ধরনের ঘটনা বাংলদেশে নতুন নয়। নির্বাচন হোক আর রাজনৈতিক আন্দোলনই হোক একটি চিহ্নিত মহল সংখ্যালঘুদের এভাবেই টার্গেটে পরিণত করছে। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে-পরে হিন্দুদের ওপর হামলা, হতাহত করা, নারীদের প্রকাশ্যে সম্ভ্রমহানির ঘটনা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে অনেক আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে। জঙ্গিরা, জামায়াত-শিবির এবং বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের অনেককেই তখন এসব নির্যাতন, দস্যুতার ঘটনার সঙ্গে জড়িত দেখা যায়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে এর বিচার করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা পরিণতি পর্যন্ত পেঁৗছায়নি। সেবারের ঘটনাগুলোর সঠিক বিচার ও দোষীদের কঠোর শাস্তি হলে এ প্রবণতা হ্রাস পেত। সম্প্রতি প্রায়ই হিন্দু উপাসনালয়গুলোর ওপর হামলা, অগি্নসংযোগ বা মূর্তি ভেঙে দেওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পেলেও অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা প্রায় ক্ষেত্রেই হচ্ছে না। এবার আন্দোলন এবং ভোট বর্জনে যেহেতু সহিংসতার প্রধান হোতাই হচ্ছে জামায়াত-শিবির, তাই সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার হতে পারে, তেমন তথ্য প্রশাসনের কাছেও থাকার কথা। কিন্তু প্রশাসন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লিপ সার্ভিস দেওয়ার বাইরে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে। এতে স্বার্থান্বেষী মহল এবং বিরোধী দল ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ও চিহ্নিত অপরাধীরা সংখ্যালঘু নির্যাতনের রাস্তা নিতে উৎসাহী হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায়, বিশেষ করে সাঈদীর ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা চালানোর সময়ও মৌলবাদীদের বিশেষ টার্গেট ছিল সংখ্যালঘুরাই। এসব কারণে কেউ কেউ জানমাল ও সম্মান বাঁচানোর জন্য মাতৃভূমি ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছে জানা যায়। তাই সরকারের উচিত, কালবিলম্ব না করে সংখ্যালঘু নির্যাতন, হামলা, সম্ভ্রমহানি, অগি্নসংযোগের মতো ঘটনাগুলো দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসা। শুধু ভোট দেওয়ার অপরাধে নির্বাচন বয়কটকারীরা দিনাজপুরের একটি গ্রাম ও যশোরের অভয়নগরে সংখ্যালঘু পল্লী যেভাবে বিরানভূমিতে পরিণত করেছে, তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। এ ঘটনায় দায়ীদের ক্ষমা হতে পারে না। আর কালবিলম্ব না করে এদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

No comments

Powered by Blogger.