ডিজিটাল বাংলাদেশ ২০১৪ by হাসান জাকির

ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। ইন্টারনেটে যেন নীরবে বিপ্লব ঘটে চলেছে। গত বছর তৃতীয় প্রজন্মের [থ্রিজি] ইন্টারনেট চালুর মাধ্যমে নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। চলতি বছর বেসরকারি সেলফোন অপারেটর কোম্পানির মাধ্যমে পুরো দেশ থ্রিজির আওতায় আসবে। সেলফোন অপারেটররা ব্যন্ডউইথের দামও সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসির মতে, দেশে সেলফোন গ্রাহকের সংখ্যা ১১ কোটি ছাড়িয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা তিন কোটি ৬৬ লাখ। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছর ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দ্বিগুণ হবে। ল্যাপটপ প্রকল্পে লুটপাটের পর নতুন করে এ বছর ল্যাপটপ প্রকল্পে হাত দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টেশিস। চতুর্থ প্রজন্মের প্রসেসর সমৃদ্ধ হয়ে আবারও আসছে বহুল আলোচিত ল্যাপটপ দোয়েল। তবে সাশ্রয়ী মূল্যের দোয়েল গ্রাহকের হৃদয় জয় করতে পারবে কিনা তা সময়ই বলে দেবে।
এদিকে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের গত বছর তেমন কোনো সাফল্য নেই বললেই চলে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের কথা বললেও আইসিটি মন্ত্রণালয় ছিল অবহেলিত। পদ্মা সেতু দুর্নীতির ঘটনায় তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেনকে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর আবুল হোসেনকে সরিয়ে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় সত্তরোর্ধ্ব বয়সী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদকে। তবে মন্ত্রী হিসেবে মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ ছিলেন অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। এদিকে ঘন ঘন বিদেশ সফর করে সমালোচিত হয়েছেন বর্তমান আইসিটি সচিব নজরুল ইসলাম খান। বর্তমান সরকারের পাঁচ বছরে একটিও হাইটেক পার্ক কিংবা সফটওয়্যার পার্ক চালু করতে না পারাকে চূড়ান্ত ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে নতুন বছরে ঘুরে দাঁড়াতে চায় আইসিটি মন্ত্রণালয়। সমকালের সঙ্গে আলাপকালে আইসিটি সচিব নজরুল ইসলাম খান নতুন বছরে বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা জানালেন। গত বছর জুড়েই হ্যাকারদের উৎপাত ছিল চোখে পড়ার মতো। সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদফতরসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের শিকার দেশীয় হ্যাকাররাই মূলত হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে এসব ওয়েবের নিরাপত্তা দুর্বলতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন। এ বছর দেশের গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা আরও জোরদারের চলতি বছর সাইবার সিকিউরিটিতে জোর দেওয়ার কথা জানালেন আইসিটি সচিব। তিনি বলেন, 'সাইবার জগতে ব্যবকারীদের তথ্যের সুরক্ষা দিতে 'সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট' প্রণয়ন করা হবে। সরকারি ২৫ হাজার ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এসএসএল [সিকিউরড সকেট লেয়ার] সার্টিফায়িড করা হবে। বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে মাল্টিমিডিয়া বই তৈরি, ভার্চুয়াল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, বছরের শেষ দিকে জনতা সফটওয়্যার পার্কের কার্যক্রম শুরু, যশোরসহ আরও কয়েকটি আইসিটি পার্ক চালু, ট্রান্স ইউরো সুপার হাইওয়েতে সংযুক্তি, সরকারি অফিসগুলোকে অটোমেশনের আওতায় আনা, কমপক্ষে ২ এমবিপিএস কানেক্টিভিটি, ময়মনসিংহে ব্যক্তি উদ্যোগে হাইটেক পার্ক, ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্রগুলোকে অটোমেশনের আওতায় আনা, এনজিও'র সহায়তায় 'বাড়ি বসে বড়লোক' শীর্ষক কর্মসূচি, 'ওয়ান ফ্যামিলি ওয়ান ইউমেন' শীর্ষক কর্মসূচি, ইউনিয়ন সার্ভিস অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন [ইউএসডি], আউটসোর্সিংয়ে ১০০ মিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যে 'লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং' কর্মসূচির নতুন পর্যায় চালু, বেসিসের সঙ্গে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এবং সব উপজেলায় ডিজিটাল ফেয়ার, দেশের বাইরে একাধিক মেলায় অংশগ্রহণ প্রভৃতি পরিকল্পনার কথা জানান আইসিটি সচিব। তবে এসব পরিকল্পনার কতটুকু বাস্তবায়ন সম্ভব হবে তা জানার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.