নির্বাচন ও গণতন্ত্রের বাপ

আজকাল উপলক্ষের অভাব হয় না। নানা উপলক্ষে নানা রকম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে। জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী তো আছেই। অনেকে জীবদ্দশাতেই প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর আয়োজনটাও দেখে যেতে চান। সেদিন রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কাব্যের এক ক্ষণজন্মা কবির ২৭ বা ২৮তম জন্মবার্ষিকীর মস্ত বড় প্রেস রিলিজ প্রকাশিত হলো একটি বা একাধিক জাতীয় দৈনিকে। আরেক কবি ও নাট্যকার যিনি জীবদ্দশায় জন্মদিন উদ্যাপন করেননি, তাঁর মৃত্যুর ১১ দিন পর, কুলখানির এক সপ্তাহ পর, জন্মদিন উদ্যাপনের প্রকাণ্ড খবর। জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী ছাড়াও আরও কত রকম বার্ষিকী। কারও জেলে যাওয়ার বার্ষিকী। কারও কারামুক্তির বার্ষিকী। উপনিবেশ-পরবর্তী বাংলার মাটিতে প্রথম যে সাধারণ নির্বাচনটি হয়, এবার তার ৬০তম বার্ষিকী।
সেই ঐতিহাসিক নির্বাচনটি হয়েছিল ১৯৫৪ সালে। ৬০ বছর পর এবার আরেকটি ঐতিহাসিক নির্বাচন হলো সোনার বাংলায়। প্রথম নির্বাচনটির কথা আমার অল্পস্বল্প মনে আছে। ঈদ নয়, দুর্গাপূজা নয়—সে এক অন্য রকম উৎসব। আমরা যারা ছোট ছিলাম, ভোট দেওয়ার সৌভাগ্য হয়নি, ভোটাভুটির সেই উৎসব উপভোগ করেছি। ৬০ বছর পর গতকাল টিভির পর্দায় উপভোগ করলাম জাতির জীবনের সর্বশেষ ভোটাভুটি। উপভোগই করেছি, ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারিনি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও বিরোধীদলীয় নেতার মতো।’৫৪-এর নির্বাচন ছিল পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর প্রথম সাধারণ নির্বাচন। পাকিস্তানি শাসকেরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়েছিলেন। তাঁরা জানতেন, তুর্কি অটোম্যান সুলতানেরা বিনা নির্বাচনেই শত শত বছর ক্ষমতায় ছিলেন। মোগল সম্রাটেরা কোনো নির্বাচন ছাড়াই আড়াই শ বছর প্রকাণ্ড ভারতবর্ষ শাসন করেছেন। মুসলিম লীগের নেতারা সবেমাত্র দেশ স্বাধীন করে ক্ষমতা হাতে পেয়েছেন। এত তড়িঘড়ি নির্বাচনের প্রয়োজনটা কী? সে এক মস্ত ঝামেলার ব্যাপার। অর্থের অপচয়। তাঁরা নির্বাচন ছাড়াই, কোনো শাসনতন্ত্র ছাড়াই সিকি শতাব্দী ক্ষমতায় থাকার মনোবাসনা করেন। তা ছাড়া বুদ্ধিমান লীগের নেতারা জানতেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অর্ধেকের বেশি আসনে নির্বাচিত হওয়া সম্ভব নয়।
নির্বাচনে গেলে পূর্ব বাংলার বেইমানেরা কোন দলকে ভোট দিয়ে বসে, তার ঠিক নেই। সুতরাং নো নির্বাচন। কিন্তু বাঙালি নেতাদের চাপের মুখে ও জনমত পরীক্ষা করতে নির্বাচনটা তাঁরা দেন। তাঁরা জানতেন না ওই নির্বাচনেই বাংলার ও পাকিস্তানের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যাবে। ওই নির্বাচনে বাংলার মাটিতে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের কবর হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় সরকার তা থেকে শিক্ষা না নেওয়ায় সত্তরের নির্বাচনের পর ষোলোকলা পূর্ণ হয়। পূর্ব পাকিস্তান সমাধিস্থ হয়। অভ্যুদয় ঘটে সেখানে বাংলাদেশের। ভৌগোলিক সুবিধার কারণে ’৫৪-এর নির্বাচনের সময় আমি তিন নেতা ফজলুল হক, ভাসানী ও সোহরাওয়ার্দীকে কাছে থেকে দেখেছি। তখন বর্তমান আরিচাঘাটের কাছে শিবালয় ছিল একটি ছোটখাটো বন্দরবিশেষ। সেকালের পদ্মা নদী ছিল প্রমত্তা। শিবালয়ঘাটে সিরাজগঞ্জ ও গোয়ালন্দ থেকে বড় বড় স্টিমার আসত। সেখান থেকে যেত চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা। দক্ষিণ বাংলা থেকে ঢাকায় যাতায়াত করতে বড় বড় নেতাকে অবশ্যই শিবালয় হয়ে যেতে হতো। যে স্টিমারে শীর্ষ নেতারা থাকতেন, সেটি ঘাটে ভিড়লে মানুষের ভিড় জমে যেত। আমার বাবার সঙ্গে গিয়ে তাঁদের কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। ঢাকা-ফরিদপুর এলাকার আরও দুই নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ও ইউসুফ আলী চৌধুরীকেও (মোহন মিয়া) তখনই দেখি। বিশেষ করে,
ওই সময় কয়েক দিন মোহন মিয়া আমাদের বাড়িতেও এসেছেন। তিনি ও আমার বাবা উভয়ই হক সাহেবের কৃষক-শ্রমিক পার্টি করতেন। আমাদের এলাকার প্রার্থীও ছিলেন কেএসপির আবদুল লতিফ বিশ্বাস। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন লীগের রাজা মিয়া। লতিফ বিশ্বাসই বিজয়ী হন। মন্ত্রীও হয়েছিলেন হক মন্ত্রিসভায়। নির্বাচনের আগে মাস খানেক আমাদের বাংলাঘরে লোকজনের আনাগোনা। নির্বাচনে তখন টাকাপয়সার ছড়াছড়ি ছিল না। কেউ দোকান থেকে এক টাকা দিয়ে এক দিস্তা সাদা কাগজ কিনে রঙিন কালিতে লিখত: ‘নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন’। কারুকর্মে যাদের কিঞ্চিৎ দক্ষতা ছিল, তারা বাঁশের বাখারি দিয়ে নৌকা বানিয়ে তা রঙিন কাগজে মুড়ে রাস্তার পাশের গাছের ডালে লটকে রাখত। মাইক ছিল না, মুখে চোঙা দিয়ে চলত প্রচারকাজ: ভাই সব, আপনারা... জয়যুক্ত করুন। ওই নির্বাচনের একটি দৃশ্য আমার মনে আছে। আমাদের পাশের গ্রামের এক যক্ষ্মার রোগীকে তক্তায় শুইয়ে ভোটকেন্দ্রে নেওয়া হয়। মুরব্বিদের কাছে শুনেছি, কোনো কেন্দ্রে নাকি এক ভোটার ভোট দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই মারা যান। এক বৃদ্ধকে তাঁর ছেলেরা পাঁজাকোলা করে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যায়। ভোট এক অমূল্য সম্পদ। ভোট দেওয়ার অধিকার থেকে কেউ আগে বঞ্চিত হতে চাইতেন না। ’৫৪-এর নির্বাচনে লীগের ভরাডুবির পর কেন্দ্রীয় সরকার নির্বাচনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। লীগের নেতারা জানতেন, নির্বাচন হলে তার পরিণাম কী হতে পারে।
তবু জনগণের দাবির মুখে সরকার ঘোষণা করে ১৯৫৯ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগ ও ন্যাপ একটি চার দফা নির্বাচনী চুক্তি করে। তাতে সরকার ও সেনাবাহিনী আরও শঙ্কিত হয়। অক্টোবর ’৫৮-তে জারি হয় সামরিক শাসন। লৌহমানব জেনারেল আইয়ুব খানের আবির্ভাব ঘটে। যেমন-তেমন গণতন্ত্র আইয়ুব খানের পছন্দ ছিল না। চালু করেন তাঁর মনের মতো মৌলিক গণতন্ত্র। মৌলিক গণতন্ত্রের ভোটাভুটিতে কোনো প্রাণ ছিল না। ষাটের দশকে রাষ্ট্রপতি, জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন হয়েছে। সর্বজনীন ভোট নয়। পূর্ব পাকিস্তানের ৪০ হাজার মৌলিক গণতন্ত্রী ভোট দিতেন। আইয়ুব ও ফাতেমা জিন্নাহ রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হয়েছিলেন। আমরা ফাতেমা জিন্নাহকে সমর্থন দিই। কিন্তু তিনি পরাজিত হন। কারণ, আইয়ুবকে বিজয়ী হতেই হবে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ২৩ বছর পর সারা দেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচন হয় ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসনের মধ্যে ১৯৭০ সালে। বস্তুত সেটি ছিল পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে ম্যান্ডেটের নির্বাচন। বঙ্গবন্ধু আমাদের মহানায়ক। আওয়ামী লীগের বাইরের অন্য দলমতের মানুষেরও তিনি নেতা। বাঁশ ও কাপড়ের তৈরি বড় বড় নৌকায় ভরে গিয়েছিল ঢাকা নগর।
বাঙালির ভাগ্য নির্ধারণের নির্বাচন। উদ্দীপনার অন্ত নেই। কাঙ্ক্ষিত ফলাফলই পাওয়া যায়। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরীক্ষা হয়ে যায়। জীবনে প্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগ শুধু নয়, নির্বাচনী প্রচারণায় কিছু কাজও করি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচন হয় মার্চ, ১৯৭৩ সালে। ব্যক্তিগত আগ্রহ-অনাগ্রহের ব্যাপার নয়, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হয় ওই নির্বাচনে। মাস খানেক ঘুম হারাম। বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগে অন্যান্য নেতার সঙ্গে সারা দেশ ঘুরেছি। হেলিকপ্টারে তাঁর সঙ্গে সফর করার সময় ওই কয়েক সপ্তাহে বঙ্গবন্ধুকে খুব কাছে থেকে দেখেছি। স্টেটসম্যান, আনন্দবাজার পত্রিকা, হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড, যুগান্তর, পিটিআই প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন ভারতীয় সাংবাদিকও আমাদের সঙ্গে থাকতেন। খুব বড় হেলিকপ্টার। কোনো অসুবিধা হতো না। যেখানেই যেতাম, আমাদের খাওয়াদাওয়ার খোঁজ না নিয়ে বঙ্গবন্ধু খেতে বসতেন না। ভোটের দুই দিন আগে তাঁর সঙ্গে শেষ নির্বাচনী প্রচারণায় যাই মুন্সিগঞ্জ ও মানিকগঞ্জে। সংক্ষিপ্ত সভা শেষে স্থানীয় নেতা হাবু মিয়া ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু হাস্যরস করছিলেন। তিনি তাঁদের লক্ষ করে আমাদের দেখিয়ে বললেন, ‘ওদের খাঁটি ছানার মিষ্টিমণ্ডা কিছু খাওয়াও।
তা না হলে কিসের মধ্যে কী লেখে।’ হেলিকপ্টারে ওঠার সময় এসডিও (মহকুমা প্রশাসক) হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড-এর তুষার পণ্ডিত ও আমার হাতে কয়েক হাঁড়ি মিষ্টি তুলে দিলেন। নির্বাচনটি ভালোই হয়েছিল। কিন্তু ওই নির্বাচনেই বাঙালি প্রথম পরিচিত হলো দুটি শব্দের সঙ্গে: ব্যালট বাক্স ছিনতাই। ছাত্রজীবনে আমরা তিনটি অভিধান অনবরত ঘাঁটতাম—এ টি দেবের বাঙ্গালা অভিধান, রাজশেখর বসুর চলন্তিকা এবং কাজী আবদুল অদুদের ব্যবহারিক শব্দকোষ। এগুলোয় ছিনতাই শব্দটি ছিল না। কারচুপি শব্দটিও ছিল কি না, বলতে পারব না। কিন্তু বঙ্গীয় নির্বাচনের সঙ্গে ছিনতাই ও কারচুপি শব্দ দুটি একেবারে অবিচ্ছেদ্য হয়ে গেল। প্রথম বাংলাদেশি নির্বাচনটি কলঙ্কমুক্ত হতে পারল না। বঙ্গবন্ধু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ডেপুটি বঙ্গবন্ধু হতে চাইলেন অনেকে। পাঁচ প্রার্থীর ক্যাডারদের হাতে চায়নিজ রাইফেলের নল দূর থেকে তাক করা দেখে দ্বিতীয় কেউ মনোনয়নপত্র জমা না দিয়ে পোঁ দৌড়। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন দেখা গেল আরও পাঁচজনের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। অর্থাৎ ১০ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। একদিন যে বাংলার মাটিতে দেড় শতাধিক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন, সে পথ দেখিয়ে দেয় প্রথম নির্বাচনটিই। কয়েকজন বিজয়ী প্রার্থীকেও পরাজয়ের গ্লানি ভোগ করতে বাধ্য করা হয়।
তাঁদের মধ্যে ছিলেন ন্যাপের আলীম আল রাজী, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, জাসদের মেজর এম এ জলিল, মস্কো ন্যাপের অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ প্রমুখ। বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনারদের নিয়তিও প্রথম নির্বাচনেই নির্ধারিত হয়ে যায়। সত্তরের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন বিচারপতি আবদুস সাত্তার। তিনি স্বাধীনভাবে কাজ করেছেন। স্বাধীন দেশের প্রথম প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি এম ইদ্রিস রাত ১২টার পর থেকে বিপন্ন বোধ করতে থাকেন। রাত চারটায় বোধ করেন অসহায়। পরদিন ভোরে করেন আত্মসমর্পণ। সেই আত্মসমর্পণ অব্যাহত আছে। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনের আগে-পরে প্রায় মাস দুই আমি দেশে ছিলাম না। প্যারিসে এএফপি অফিসে বসে খোঁজ নিতাম। সেটি ছিল একটি পরিকল্পিত বোঝাপড়ার নির্বাচন। শাসকেরা চাইছিলেন, সব দলের প্রধান নেতারাই ‘নির্বাচিত’ হয়ে সংসদে আসুন। সংসদে প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগই ছিল। নেতা ছিলেন আসাদুজ্জামান খান। অতি ভালো মানুষ। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচনটিও ছিল পাতানো। স্বৈরশাসক এরশাদকে বৈধতা দেওয়ার নির্বাচন। সে নির্বাচনের অমর কীর্তি জামায়াতে ইসলামীকে জাতীয় রাজনীতিতে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। বিএনপি ওই নির্বাচন বর্জন করে। জাতীয় পার্টিকে পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল ১৫৩, আওয়ামী লীগকে ৭৬, জামায়াতে ইসলামী ১০, সিপিবি ৫, এনএসি ৫, মুসলিম লীগ ৪ প্রভৃতি।
ওই নির্বাচনকে বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘চর দখলের নির্বাচন’। শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘ভোট ডাকাতির নির্বাচন’। মৃদু হেসেছিলেন জামায়াতের নেতারা। তখন চর্মচক্ষুতেই দেখতে পেয়েছি, জামায়াতিরা জোহরের নামাজের আগে যদি বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বসেন তো আসরের নামাজের পরে বসেন আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে। পল্লিবন্ধু তাঁরই ধাক্কায় পড়ে যাওয়া সাত্তার সাহেবের মতো নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হতে চাইলেন। ’৮৬-তেই হলো রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ওই নির্বাচন বর্জন করে। কিন্তু নির্বাচনে অংশ নিতে নেতার অভাব হলো না। এরশাদ সাহেব তাঁর সাবেক জুনিয়রকে ডেকে বললেন, ‘তুই দাঁড়িয়ে যা!’ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হন ফ্রিডম পার্টির নেতা একালের ‘খালেদ বিন ওয়ালিদ’ সৈয়দ ফারুক রহমান। আমাদের টাকায় পরিচালিত বাংলাদেশ টেলিভিশনে ভাষণদানকালে সৈয়দ সাহেব যেসব অঙ্গীকার করেছেন, তা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ আব্বাসীয় খলিফাদের রাজত্বের মতো হয়ে যেত। বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য, কর্নেল সাহেব জেনারেল সাহেবের চেয়ে কম ভোট পেয়ে পরাজিত হন। বাংলার অসচেতন জনগণের মদদ থাকলে ’৮৬-তে সৈয়দ ফারুক রহমানই হতেন দেশের চতুর্থ রাষ্ট্রপতি। ’৭৫-এর সাধ ’৮৬-তে পূরণ হতো। বাংলার মাটির নির্বাচনী স্মৃতিকথা লিখে শেষ করা যাবে না। কারণ, এ মাটিতে গণতন্ত্র না থাকলেও গণতন্ত্রের বাপ আছে।
সৈয়দ আবুল মকসুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।

No comments

Powered by Blogger.