ডেসটিনির চেয়ারম্যান এমডি সাবেক সেনাপ্রধানসহ অভিযুক্ত ৫৬

৩১টি ব্যাংকের ৭২২টি হিসাব থেকে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা স্থানান্তর করে আত্মসাৎ করেছেন ডেসটিনির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা। ডেসটিনির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা দুটি মামলার অভিযোগ তদন্ত করে ওই তথ্য পাওয়া গেছে। দেড় বছরের বেশি সময় তদন্ত শেষে গতকাল সোমবার কমিশনে ১ হাজার ৩০০ পৃষ্ঠার দুটি প্রতিবেদন পেশ করেছে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদন দুটি যাচাই করে অনুমোদন দেওয়ার পর আদালতে চার্জশিট পেশ করা হবে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশি লাভের প্রলোভন দেখিয়ে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসার নামে ডেসটিনি আত্মসাৎ করেছে ৪ হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা। চার্জশিটে আসামির তালিকায় ৫৬ জনের নাম অন্তর্ভুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১২ সালের ৩১ জুলাই দায়ের করা দুটি মামলায় ৩ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২২ জনকে আসামি করা হয়েছিল। দীর্ঘ তদন্তে আত্মসাৎ করা অর্থ ও আসামির সংখ্যা বেড়েছে। দুদক জানায়, ডেসটিনির সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ওই ৩১টি ব্যাংকে ৭২২টি হিসাব খোলা হয়েছিল। সারাদেশের গ্রাহকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অর্থ ওই সব হিসাবে জমা রাখা হতো। হিসাবগুলো বর্তমানে জব্দ অবস্থায় আছে।
দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু সমকালকে বলেন, প্রতিবেদন দুটি ভালো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে অনুমোদন দেওয়া হবে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতারণা করে জনগণের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অর্থে প্রতিষ্ঠিত ডেসটিনি নামক প্রতিষ্ঠানটিকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ২(ফ), ৪(২) ও (৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। প্রতিবেদনে বিদেশে অর্থ পাচারের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্তকালে ৩১টি ব্যাংকের ৭২২টি হিসাবে জমাকৃত অর্থ পাচার করে আত্মসাতের ঘটনাটি প্রাধান্য পায়। ওই ব্যাংকের হিসাব-সংক্রান্ত কাগজপত্র সংগ্রহ করে তদন্ত সম্পন্ন করতে অনেক সময় লেগে যায়। তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, একটি হিসাব থেকে কবে, কার নামে, কত টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে_ এই লেয়ারিং প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা হয়েছে।
সোমবার বিকেল
সাড়ে ৪টায় তদন্ত প্রতিবেদন দুটি প্রথমে জমা দেওয়া হয় বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগের পরিচালক মো. মনিরুজ্জামানের কাছে। পরে প্রতিবেদন দুটি কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর কাছে হস্তান্তর করা হয়। আজ তিনি প্রতিবেদনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন। এরপর দেখবেন কমিশনার ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ ও চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান। এরপর কমিশনের নিয়মিত বৈঠকে চার্জশিট পেশের অনুমোদন দেওয়া হবে। ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মূলধন ৫০ কোটি টাকা থেকে বেআইনিভাবে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকায় বৃদ্ধি এবং শাখা অফিস খোলার ক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলার দায়ে সমবায় অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। অধিক লাভের প্রলোভন দেখিয়ে সংগ্রহ করা ৩ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা পাচার/স্থানান্তর/রূপান্তর করে আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক সেনাপ্রধান ও ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট লে. জেনারেল (অব.) হারুন-উর রশীদ ও গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ২২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ৩১ জুলাই ওই দুটি মামলা করা হয়। আসামির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে তদন্ত প্রতিবেদনে আরও ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
ডেসটিনির কর্মকর্তারা বিরোধপূর্ণ জমি ক্রয়ের নামে জমির ভুয়া মালিকের সঙ্গে যোগসাজশে অর্থ আত্মসাৎ করেন। যোগসাজশে মূল্য বেশি উল্লেখ করে বেস্ট এভিয়েশন লিমিটেড, হাইটেক ফুড প্রোডাক্টস, নেহাজ জুট মিলস ও পিউকী প্রিন্টার্স ক্রয় করা হয়। তদন্ত পর্যায়ে মোট ৬৩১ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ২৩টি টিম ওই সব সম্পদ জব্দ করেছে। এর মধ্যে ২০টি টিম ঢাকার স্থাবর সম্পদ ও তিনটি টিম ১১৬টি গাড়ি জব্দ করেছে। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে বাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি, গাড়ি ও শিল্প প্রতিষ্ঠান। ডেসটিনির অভিযোগ তদন্ত টিমের সদস্যরা হলেন উপপরিচালক বেনজীর আহম্মদ, মাহমুদ হাসান, এসএম আখতার হামিদ ভঁূইয়া, মোজাহার আলী সরদার ও সহকারী পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম।

No comments

Powered by Blogger.