কমনওয়েলথ যুক্তরাজ্য ও কানাডা হতাশ

বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অর্ধেক আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া এবং অবশিষ্ট আসনে কম ভোটার উপস্থিতিতে হতাশা ব্যক্ত করেছে যুক্তরাজ্য। নির্বাচনের একদিন পর দেওয়া এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ দফতরের জ্যেষ্ঠ প্রতিমন্ত্রী ব্যারনেস সাইদা ওয়ার্সি এ হতাশার পাশাপাশি ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং সহিংসতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে কাজ করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন বেয়ার্ড বাংলাদেশে অর্ধেকের বেশি আসন বিনা ভোটে পূরণ করায় হতাশা ব্যক্ত করে নতুন জাতীয় নির্বাচনকে সত্যিকার অর্থে অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য করার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে একমতে পেঁৗছার আহ্বান জানান। এদিকে সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ায় হতাশাপ্রকাশ করেছে কমনওয়েলথ।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর পৃথকভাবে পশ্চিমা বিশ্বের প্রথম প্রতিক্রিয়া দেয় যুক্তরাজ্য ও কানাডা। যদিও প্রতিবেশী ভারত এরই মধ্যে গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে 'সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ' বিষয় হিসেবে অভিহিত করেছে। এ নিয়ে পশ্চিমা দুনিয়ার সঙ্গে ভারতের অবস্থানে খানিকটা পার্থক্য লক্ষণীয়।
নির্বাচনের ফলের বিষয়ে মন্তব্য করে ব্যারনেস ওয়ার্সি বলেন, এই নির্বাচনকে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার নির্বাচন হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। অপরাপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতোই যুক্তরাজ্য বিশ্বাস করে, সত্যিকার অর্থে পরিপকস্ফ ও কার্যকর গণতন্ত্র হলো শান্তিপূর্ণ, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন, যেখানে ভোটারদের সত্যিকার ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে। ফলে অর্ধেকের বেশি আসনের জনগণের ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে তাদের ইচ্ছা প্রকাশের সুযোগ না পাওয়ায় এবং বেশিরভাগ আসনে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়া হতাশাজনক।
ব্রিটিশ এ জ্যেষ্ঠ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, 'গত কয়েক সপ্তাহে রাজনৈতিক দলগুলো যে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছে এবং বেআইনি সহিংসতা চালিয়েছে, বিশেষ করে স্কুল ও কলেজসহ সরকারি ভবনে অগি্নসংযোগের ঘটনার আমরা নিন্দা জানাই। অনেক মানুষের প্রাণহানি, রাজনৈতিক হয়রানি এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা জোরদার করতে একযোগে কাজ করা বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব। ভবিষ্যতে ভয়ভীতি ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান করার বিষয়ে আগ্রহ ব্যক্ত করা এবং সামর্থ্য বৃদ্ধি করা রাজনৈতিক দলগুলোর জরুরি অগ্রাধিকার হওয়া প্রয়োজন।'
কানাডার উদ্বেগ :কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন বেয়ার্ড গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, 'গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো পরিপূর্ণ অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে সমঝোতায় পেঁৗছতে না পারায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে উদ্বেগে যোগ দিয়েছে কানাডা। স্পন্দনশীল গণতন্ত্রে মৌলিক বিষয় হলো প্রত্যেকের পছন্দ খুঁজে পাওয়া।'
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, 'অর্ধেকের বেশি আসনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই নির্বাচিত হওয়া খুবই হতাশাজনক। কানাডা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে, নির্বাচনের সময় সহিংসতা ও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। ২০১৩ সালে রাজনৈতিক সহিংসতায় শত শত বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন। আমরা এই সহিংসতা, বিশেষ করে সমাজের সবচেয়ে দুর্বল জনগোষ্ঠী তথা শিশু, নারী, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর কাণ্ডজ্ঞানহীন হামলার ঘটনায় কঠোরতম ভাষায় নিন্দা জানাই। সহিংসতা অগ্রহণযোগ্য। কানাডা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি প্রকাশ্যে এর নিন্দা জানানোর আহ্বান জানায়।'
কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, 'রাজনৈতিক অস্থিরতা অর্থনীতিকে অস্থির করে তোলে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিকে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমাদের আশঙ্কা হচ্ছে যে, এই ক্ষতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও উন্নয়নের পথকে বাধাগ্রস্ত করবে।'
জন বেয়ার্ড বলেন, কানাডা নতুন করে একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর আগ্রহকে স্বাগত জানায় এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচন যাতে সত্যিকার অর্থে অংশগ্রহণমূলক হয় এবং তার ফল সব বাংলাদেশির কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয় সে লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে একমতে পেঁৗছার আহ্বান জানায়।
হতাশ কমনওয়েলথ
বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে কমনওয়েলথ। একই সঙ্গে সমস্যা সমাধানে দ্রুত একটি অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় এগোনোর পথ খুঁজে বের করতে সংলাপের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে সংস্থাটি।
কমনওয়েলথ মহাসচিব কমলেশ শর্মা সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সংসদীয় নির্বাচন-সম্পর্কিত পরিস্থিতি কমনওয়েলথ অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করে আসছে। সহিংস ঘটনাবলিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেই সহিংসতা গ্রহণযোগ্য নয়।
লন্ডনে কমনওয়েলথ সদর দফতর থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, কমনওয়েলথ সনদ অনুযায়ী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রত্যেক ব্যক্তির অংশগ্রহণের অধিকারসহ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি সমুন্নত রাখার বিষয়টিতে সরকার, রাজনৈতিক দলগুলো ও সুশীল সমাজের দায়িত্ব রয়েছে। সে কারণে দ্রুত অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সামনে এগোনোর পথ খোঁজার জন্য আলোচনার ধারায় অগ্রসর হওয়া বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে জনগণের মতামত পুরোপুরি প্রতিফলিত হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.