দেশ বাঁচাতে হাত মেলান

পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। কীভাবে এ নির্বাচন হয়েছে, দেশ-বিদেশের সবাই তা টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে জেনেছেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না। তারপরও একতরফা এ নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। কিছু কেন্দ্র ভোটারবিহীন ছিল। নির্বাচনী উৎসব কার্যত দেশের কোথাও ছিল না; কিন্তু বহু কেন্দ্রে দেখা গেছে জাল ভোটের মহোৎসব। নির্বাচন কমিশন এবং তাদের পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ এর মোকাবেলায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। গণতন্ত্রকামী মানুষের জন্য এ ধরনের নির্বাচন কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত ছিল না। তারা ব্যথিত হয়েছেন। অনেকে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কারও কাছে এ নির্বাচন 'প্রহসন ও ভোটারবিহীন', কেউবা বলছেন 'কলঙ্কিত'। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং তাদের ১৮ দলীয় জোট নির্বাচন বর্জন শুধু নয়, প্রতিহতের ডাক দিয়েছিল। নির্বাচনের আগে এবং নির্বাচনের দিনে তারা বিভিন্ন স্থানে সহিংস কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে। বিশেষভাবে জামায়াতে ইসলামীর নাশকতামূলক তৎপরতা ছিল লক্ষণীয়। এটাও মনে রাখতে হবে যে, এই নির্বাচন একটি নতুন সংসদ জন্ম দেবে, একটি নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করবে। কিন্তু নির্বাচনের পর দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে, এমন আশা পোষণকারী লোক খুব বেশি পাওয়া যাবে না। বিরোধীদের হরতাল-অবরোধ চলছে এবং তারা আরও কঠোর অবস্থানে যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। জনমনে স্বভাবতই প্রশ্ন_ কী হবে দেশের? তাদের জীবন-জীবিকা চরম হুমকির মুখে। দুঃসময় কবে কাটবে, কেউ বলতে পারে না। অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে।
সরকার সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার নামে নির্বাচন সম্পন্ন করায় ছিল অনড়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার নির্বাচন-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সন্ত্রাস ও নাশকতার পরাজয় ঘটেছে। জনগণ স্বাধীনতাবিরোধীদের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র প্রত্যাখ্যান করেছে। অশুভশক্তির হাত থেকে দেশ রক্ষা পেয়েছে। তার এ রাজনৈতিক অবস্থান অনেকে সমর্থন করবেন, অনেকে ভিন্নমত পোষণ করবেন। কিন্তু এখন একটি বিষয়ে সবাই কমবেশি একমত হবেন যে, যে দশম জাতীয় সংসদ গঠিত হতে চলেছে তা বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে তেমনভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। নতুন যে সরকার গঠিত হবে, তার সাংবিধানিক ভিত্তি খুঁজলে অবশ্যই মিলবে, কিন্তু নৈতিক ভিত্তি থাকবে খুবই দুর্বল। সঙ্গত কারণেই দশম সংসদ নির্বাচনের দিন পার হতে না হতেই একাদশ সংসদের নির্বাচনের প্রসঙ্গ উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বিরোধীদের সঙ্গে আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনার কথা বলেছেন। এ আলোচনা প্রধানত বিএনপির সঙ্গেই হতে হবে এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে তাদের অংশগ্রহণ অপরিহার্য, সেটা নিয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। খালেদা জিয়া সংসদে বিরোধী দলের নেতা থাকুন আর না-ই থাকুন, এটাই বাস্তবতা। বিরোধীদের অবশ্যই সন্ত্রাস-নাশকতা পরিহার করতে হবে_ এ বিষয়ে এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি ঐকমত্য লক্ষণীয়। জামায়াতে ইসলামীর হিংসাশ্রয়ী কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে দমন করার প্রতিও রয়েছে সাধারণভাবে সর্বমহলের সমর্থন। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক শক্তি বিএনপিকে অবশ্যই এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতায় পেঁৗছাতে সচেষ্ট হতে হবে। এই দুই পক্ষ পারস্পরিক আস্থার প্রকট অভাব কাটিয়ে উঠতে না পারলে দেশের সামনে আরও কঠিন সময় অপেক্ষা করছে বলেই আমরা মনে করি। ইতিমধ্যেই দেশ অনেক খেসারত দিয়েছে। বাংলাদেশ আজ সত্যিই বিপন্ন। প্রধান রাজনৈতিক শক্তিবর্গসহ সংশ্লিষ্ট সবার শুভবুদ্ধির জয় হোক, এটাই প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.