অর্থনৈতিক মুক্তিযুদ্ধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে ॥ by ড. আতিউর
বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, দেশের কৃষকরা ডলার উপার্জন করছেন। তবে এর জন্য তাদের বিদেশে যেতে হচ্ছে না। দেশে বসেই তারা সোনার ফসল উৎপাদন করেই এটি অর্জন করছেন।
কৃষকদের উৎপাদনের ফলে বিদেশ থেকে তেমন খাদ্য আমদানি করতে হচ্ছে না। তাদের পরিশ্রমের ফলেই বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, দেশে মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়নি। এখনও বিদ্যমান। আর এ যুদ্ধ হচ্ছে অর্থনৈতিক মুক্তিযুদ্ধ। এতে শুধু সরকার নয়, সরকারের সঙ্গে দেশের সর্বসত্মরের মানুষের এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বাবলম্বী হওয়া যাবে না।সোমবার ট্রাস্ট ব্যাংকের উদ্যোগে মানিকগঞ্জের গড়পাড়া স্কুল মাঠে বায়োগ্যাস পস্নান্টের অর্থায়ন কর্মসূচীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক জি এম সালেহউদ্দিন সভাপতিত্ব করেন। এ সময় ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম শাহ আলম সারোয়ার, এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আফতাবুল ইসলাম, এন্টারপ্রানাইজ ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন লিমিটেডের (ইডিসিএল) চেয়ারম্যান রউফ চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ড. আতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের গ্রামীণ পারিবারিক পরিবেশে চারটি গরম্ন এবং একটি বায়ো ডাইজেস্টার সমন্বয়ে ছোট আকারের ডেইরী ফার্ম অত্যনত্ম কার্যকরী। এটি বাসত্মবায়ন হলে বাণিজ্যিকভাবে অনেক লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে এ ধরনের ৪০ লাখ ুদ্র ডেইরী ফার্মেও সম্ভাবনা রয়েছে। যা বাসত্মবায়ন করা সম্ভব হলে প্রায় ৪.৮ বিলিয়ন কিউবিক মিটার বায়োগ্যাস, ২৪০ মিলিয়ন টন প্রকৃতিক সার, ৫ মিলিয়ন টন ভার্মি কম্পোস্ট, ১৭ বিলিয়ন লিটার দুধ, প্রতি ১৪ মাসে ১৬ মিলিয়ন বাছুর, ১ মিলিয়ন টন মাংস এবং ২৬ মিলিয়ন বর্গমিটার চামড়া এবং ৩ ল টন হাড় উৎপাদন করা সম্ভব। এতে অর্থ উপাজন করাসহ সুস্বাস্থ্যের জন্যেও অনেক উপকারে আসবে।
বায়োগ্যাস পস্নান্টের কথা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হলে দুধ-সার-বায়োগ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব হলে সরাসরি শ্রম প্রদান, রণাবেণ, পরিবহনসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে দেশে পরিবেশ সম্মত বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদু্যৎ ও জ্বালানি ঘাটতি মোকাবেলার পাশাপাশি প্রকৃতিক ভারসাম্য রার ল্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কীম ঘোষণা করেছে। আর সব কিছুই করা হচ্ছে কৃষির অগ্রগতি ও কৃষকের উন্নয়নের জন্য। কৃষি ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে গ্রামে গ্রামে। কৃষকের ঋণ প্রাপ্তির েেত্র কোন কালপেণ করা হয় তা হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোরহসত্মে দমন করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, বেসরকারী ব্যাংকগুলো গ্রাম পর্যায়ে কৃষকদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতে খুব একটা এগিয়ে আসছে না। ফলে এ ডিজিটালাইডজ যুগেও দেশের বৃহত্তর কৃষক সমাজ ব্যাংকিং সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে শেষে গবর্নর ট্রাস্ট ব্যাংকের উদ্যোগে বায়োগ্যাস পস্নান্টের জন্য ৮ জন উদ্যোক্তার মধ্যে মোট ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার চেক প্রদান করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই এন্ড স্পেশাল প্রগ্রামস বিভাগের অধীনে ২০০ কোটি টাকা পুনঃঅর্থায়নের আওতায় ব্যাংকগুলো বিভিন্ন খাতে উদ্যোক্তাদের মাঝে ঋণ বিতরণ করছে। এ ৰেত্রে ব্যাংকগুলো ৰুদ্র উদ্যোক্তাদের ১০ শতাংশ হারে ঋণ দিচ্ছে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৫ শতাংশ হিসেবে অর্থ আদায় করবে। তিন বছর মেয়াদী ৩ লাখ টাকায় মাসে ৯ হাজার ৬৮০ টাকা করে কিসত্মি পরিশোধ করতে হবে। তিন বছরে সুদসহ মোট ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা প্রদান করতে হবে ৰুদ্র উদ্যোক্তাদের।
বায়োগ্যাস পস্নান্টে ৩ লাখ টাকা ঋণ পেয়েছেন গড়পাড়ার বাসিন্দা মো. মিনহাজ উদ্দিন। বায়োগ্যাস পস্নান্টে ঋণ পেয়ে তিনি অনেক উপকৃত হবেন বলে জানান। এ পস্ন্যান থেকে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি রান্না-বান্না, পুষ্টিকর খাদ্য এবং সারও উৎপাদন করতে পারবেন তিনি।
জানা গেছে, ৩.২ ঘনমিটার আয়াতনের একটি বায়োগ্যাস পস্নান্টে ৮৭ লিটার পানি ও ৮৭ লিটার গোবর মিশেয়ে এ পস্নানটি চালু করা হলে দৈনিক গড়ে ১১৫ ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব। একই সঙ্গে ২ থেকে ৩ টি হ্যাজাক লাইট জ্বালানো যাবে। এর পাশাপাশি পরিবেশ বান্ধব সারও পাওয়া যাবে।
No comments