জনমত-সমকাল জরিপে কিছু পর্যবেক্ষণ by মো. তামজীদুর ইসলাম
গত ৫ জানুয়ারি সরকারের চার বছরপূর্তি উপলক্ষে দেশব্যাপী একটি জরিপের রিপোর্ট সমকাল প্রকাশ করে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট সামনে রেখে এ জরিপে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কাজ করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত এবং একই সঙ্গে গর্বিত।
শুরুতে এ জরিপের পদ্ধতিগত দিকগুলো কিছুটা আলোচনা করা যাক। ১৫ কোটির অধিক মানুষের দেশে মোটামুটি ধারণা পেতে হলে আমরা প্রথমেই ধরে নিতে পারি স্যাম্পল সাইজ বড় ধরনের হবে। প্রথম ধাপে দেশকে ৭টি বিভাগে ভাগ করা হয়। পৃথিবীর সব দেশের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতি আঞ্চলিক মতপার্থক্য থাকায় সিদ্ধান্ত হয় ৬৪টি জেলাতেই জরিপ সম্পন্ন করার। সর্বশেষ ৪০০টি উপজেলা জরিপ করা সম্ভব হয়।
পুরো দেশের ওপর জরিপে মতামতটা যথাযথ প্রতিনিধিত্বমূলক করার জন্য বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকের সমন্বয় প্রয়োজন। জরিপের দ্বিতীয় ধাপে জনসংখ্যাকে ৫টি ডেমোগ্রাফিক ভেরিয়েবলের ওপর ভাগ করা হয়। অবস্থান (শহর-গ্রাম), লিঙ্গ (নারী-পুরুষ), বয়স, পেশা এবং আয়ের ভিত্তিতে সবধরনের মানুষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয় জরিপটি যথাযথ প্রতিনিধিত্বমূলক করার জন্য। তথ্য সংগ্রহের জন্য অপটিক্যাল মেশিন রিডেবল (ওএমআর) প্রশ্নপত্র, সর্বাধুনিক স্ক্যানিং প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষণ এবং নিজস্ব যোগ্য তথ্য সংগ্রাহকের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ জরিপের ফলকে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। রাজনৈতিক দল-জোটের মূল্যায়নের জন্য সঠিক ক্ষেত্র বা দিক প্রশ্নে সনি্নবেশ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এ জন্য কয়েকটি যথাযথ ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়। যেমন : রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, সামাজিক, আন্তর্জাতিক এবং এ ক্ষেত্রগুলোর ভিত্তিতে প্রশ্ন তৈরি করা হয় যা যে কোনো দল বা গোষ্ঠীর পর্যালোচনা করার পক্ষে যথোপযোগী বলে বিশ্বাস করি। যেসব সাম্প্রতিক বিষয়ের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সাফল্য-ব্যর্থতা নিহিত সেগুলো প্রশ্নপত্রের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
শুরুতেই বলেছি ৫টি ডেমোগ্রাফিক ভেরিয়েবল ক্ষেত্রের ভিত্তিতে পুরো জনগোষ্ঠীকে ভাগ করা হয়। এখানে এই ক্ষেত্রগুলোর ভিত্তিতে কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
ক্ষেত্র-১ (অবস্থান) : শহর, গ্রাম নির্বিশেষে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গ্রাম ও শহরের মতামতের মধ্যে অভিন্নতা রয়েছে। তথাপি কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়।
সরকারের সাফল্য এবং ব্যর্থতার প্রশ্নে গ্রামের ১৩% এবং শহরের ১০% মানুষ মনে করছে কৃষি সরকারের প্রধান সাফল্য। অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগকে শহরের ২৪% এবং গ্রামের ২১% প্রধান সাফল্য হিসেবে মনে করছে। ব্যর্থতার প্রশ্নেও শহরে এবং গ্রামের কিছুটা ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। দুর্নীতি সরকারের প্রধান ব্যর্থতা, এই প্রশ্নে শহরের ২৮% এবং গ্রামের ২৪% সহমত প্রকাশ করে। এর অর্থ হচ্ছে শহরের মানুষের দুর্নীতিতে শিকার হওয়ার আশঙ্কা বেশি রয়েছে।
বিদ্যুৎ পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে_ এই প্রশ্নে ২২% শহরের লোক এবং ১৯% গ্রামের লোক দ্বিমত পোষণ করেছে। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, যদিও শহরে বিদ্যুতের সরবরাহ তুলনামূলকভাবে বেশি; কিন্তু চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক কি-না এ প্রশ্নে শহরের লোক বেশি দ্বিমত পোষণ করেছে (শহর ৩৬% এবং গ্রাম ২৯%)। এই প্রশ্নের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্য আরও প্রশ্নে শহরের ৫০% এবং গ্রামের ৩০% লোক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে মনে করে।
দ্রব্যমূল্য চার বছর আগের তুলনায় এখন সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে কি-না, এ প্রশ্নে শহরের মানুষ বেশি দ্বিমত পোষণ করেছে (শহর ৬২% এবং গ্রাম ৫১%)। এই প্রশ্নের সঙ্গে সম্পৃক্ত আরেকটি প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়েছিল, অর্থনৈতিকভাবে চার বছরের তুলনায় তারা ভালো আছে কি-না। সেখানে গ্রামের মাত্র ১২% এবং শহরের ১০% মনে করে তারা অর্থনৈতিকভাবে ভালো আছে। এ থেকে কিছুটা ধারণা যায় মানুষের আয়-ব্যয়ের মধ্যে ব্যবধান বেড়েই চলেছে এবং শহরে এর প্রবণতা বেশি।
প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলের নেত্রীর মূল্যায়নে গ্রাম ও শহরের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না। শহরের ৯% এবং গ্রামের ১৪% লোক বলেছে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা খুব ভালো করছেন। একইভাবে খালেদা জিয়ার মূল্যায়নে শহরের ৭% এবং গ্রামের ৯% লোক মনে করছে যে তিনি খুব ভালো করছেন।
ক্ষেত্র- ২ (লিঙ্গ) : নারী, পুরুষ
সরকারের সাফল্য এবং ব্যর্থতা : শিক্ষা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সরকারের প্রধান সাফল্য তথাপি নারীদের মধ্যে ২৯% এবং পুরুষের ২৪% লোক এর পক্ষে মত দিয়েছেন। ব্যর্থতার প্রশ্নে ২৯% নারী এবং ২৬% পুরুষ মনে করছে, দুর্নীতিই সরকারের প্রধান ব্যর্থতা।
দুই নেত্রীর মূল্যায়নে প্রধানমন্ত্রী খুব ভালো অথবা ভালো করছেন_ এমন বলেছেন ৫৫% নারী এবং ৫২% পুরুষ। অন্যদিকে একই প্রশ্নে খালেদা জিয়াকে ৩৮% পুরুষ এবং ৩৬% নারী একই মন্তব্য করেছেন। সে ক্ষেত্রে বলা যায়, প্রধানমন্ত্রী নারীদের মধ্যে এবং বিরোধীদলীয় নেতা পুরুষদের মধ্যে কিছুটা হলেও বেশি জনপ্রিয়।
আগামী এক বছরে সরকারের প্রধান মনোযোগ কী হবে সেই প্রশ্নে নারী-পুরুষের মধ্যে দৃশ্যমান ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। দ্রব্যমূল্য কমানো সরকারের প্রধান মনোযোগ হওয়া উচিত বলেছেন ১৯% পুরুষ এবং ২৯% নারী। অন্যদিকে রাজনৈতিক সমঝোতার পক্ষে রায় দিয়েছেন ৪৭% পুরুষ এবং ৩৬% নারী।
ক্ষেত্র-৩ (শিক্ষা) : শিক্ষাগত যোগ্যতার ভেদে মোটামুটি সব প্রশ্নেই অভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে সরকার কেন ব্যর্থ এই প্রশ্নে দলীয় লোক ও প্রভাবশালীরা জড়িত_ পক্ষে মত প্রদানে ক্রমবর্ধমান প্রবণতা পরিলক্ষিত হয় শিক্ষাগত যোগ্যতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে (নিরক্ষর ৪১%, স্নাতকোত্তর ৭১%)।
ক্ষেত্র-৪ (পেশা) : পেশাভেদে মোটামুটি সব প্রশ্নেই অভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। শুধু ৪ বছর আগের তুলনায় অর্থনৈতিকভাবে ভালো আছেন কি-না এ প্রশ্নে বেশির ভাগ ব্যবসায়ী (৪১%) বিপক্ষে মত দিয়েছেন।
ক্ষেত্র-৫ (বয়স) :
সরকারের সাফল্য এবং ব্যর্থতার প্রশ্নে বয়সভেদে কিছুটা ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। ১৫-২৫ এই বয়সী সবচেয়ে বেশি ২৮% মত দিয়েছেন শিক্ষা সরকারের প্রধান সাফল্য হিসেবে। অন্যদিকে ৪৬-৬০ বছর বয়সী ২৪% লোক মনে করছে যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ সরকারের প্রধান সাফল্য। সরকারের ব্যর্থতার প্রশ্নে ৩৬-৪৫ বছর বয়সী ২৮% মনে করছে দুর্নীতি সরকারের প্রধান ব্যর্থতা।
প্রধানমন্ত্রীর মূল্যায়নের প্রশ্নে ৬০-ঊর্ধ্ব লোকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬২% বলেছে তিনি খুব ভালো অথবা ভালো করছেন। অন্যদিকে বিরোধীদলীয় নেতার মূল্যায়নে ৩৬-৪৫ বছর বয়সী ৩৮% একই উত্তর দিয়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, যদিও অবস্থান, লিঙ্গ, শিক্ষা, পেশা, বয়স ইত্যাদিভেদে মানুষের মতামতে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় তথাপি পুরো দেশের জনমতের ফলের সঙ্গে তা খুবই সামঞ্জস্যপূর্ণ। সরকারের ও বিরোধী দলের মূল্যায়নে অনেক সাফল্যই ম্লান হয়ে গেছে ব্যর্থতার গ্গ্নানিতে। চোখ বন্ধ করে আমরা যদি মনে করি আমাদের কেউ দেখেনি তাহলে মনে হয় জনমতকে উপেক্ষা করা হবে, যা কি-না যে কোনো দলের জন্যই শুভ ফল বয়ে আনবে না। আগামী দিনে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এই শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবে বলে আমরা বিশ্বাস করতে চাই।
মো. তামজীদুর ইসলাম
প্রভাষক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
md.tamzidul@yahoo.com
পুরো দেশের ওপর জরিপে মতামতটা যথাযথ প্রতিনিধিত্বমূলক করার জন্য বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকের সমন্বয় প্রয়োজন। জরিপের দ্বিতীয় ধাপে জনসংখ্যাকে ৫টি ডেমোগ্রাফিক ভেরিয়েবলের ওপর ভাগ করা হয়। অবস্থান (শহর-গ্রাম), লিঙ্গ (নারী-পুরুষ), বয়স, পেশা এবং আয়ের ভিত্তিতে সবধরনের মানুষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয় জরিপটি যথাযথ প্রতিনিধিত্বমূলক করার জন্য। তথ্য সংগ্রহের জন্য অপটিক্যাল মেশিন রিডেবল (ওএমআর) প্রশ্নপত্র, সর্বাধুনিক স্ক্যানিং প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষণ এবং নিজস্ব যোগ্য তথ্য সংগ্রাহকের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ জরিপের ফলকে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। রাজনৈতিক দল-জোটের মূল্যায়নের জন্য সঠিক ক্ষেত্র বা দিক প্রশ্নে সনি্নবেশ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এ জন্য কয়েকটি যথাযথ ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়। যেমন : রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, সামাজিক, আন্তর্জাতিক এবং এ ক্ষেত্রগুলোর ভিত্তিতে প্রশ্ন তৈরি করা হয় যা যে কোনো দল বা গোষ্ঠীর পর্যালোচনা করার পক্ষে যথোপযোগী বলে বিশ্বাস করি। যেসব সাম্প্রতিক বিষয়ের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সাফল্য-ব্যর্থতা নিহিত সেগুলো প্রশ্নপত্রের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
শুরুতেই বলেছি ৫টি ডেমোগ্রাফিক ভেরিয়েবল ক্ষেত্রের ভিত্তিতে পুরো জনগোষ্ঠীকে ভাগ করা হয়। এখানে এই ক্ষেত্রগুলোর ভিত্তিতে কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
ক্ষেত্র-১ (অবস্থান) : শহর, গ্রাম নির্বিশেষে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গ্রাম ও শহরের মতামতের মধ্যে অভিন্নতা রয়েছে। তথাপি কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়।
সরকারের সাফল্য এবং ব্যর্থতার প্রশ্নে গ্রামের ১৩% এবং শহরের ১০% মানুষ মনে করছে কৃষি সরকারের প্রধান সাফল্য। অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগকে শহরের ২৪% এবং গ্রামের ২১% প্রধান সাফল্য হিসেবে মনে করছে। ব্যর্থতার প্রশ্নেও শহরে এবং গ্রামের কিছুটা ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। দুর্নীতি সরকারের প্রধান ব্যর্থতা, এই প্রশ্নে শহরের ২৮% এবং গ্রামের ২৪% সহমত প্রকাশ করে। এর অর্থ হচ্ছে শহরের মানুষের দুর্নীতিতে শিকার হওয়ার আশঙ্কা বেশি রয়েছে।
বিদ্যুৎ পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে_ এই প্রশ্নে ২২% শহরের লোক এবং ১৯% গ্রামের লোক দ্বিমত পোষণ করেছে। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, যদিও শহরে বিদ্যুতের সরবরাহ তুলনামূলকভাবে বেশি; কিন্তু চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক কি-না এ প্রশ্নে শহরের লোক বেশি দ্বিমত পোষণ করেছে (শহর ৩৬% এবং গ্রাম ২৯%)। এই প্রশ্নের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্য আরও প্রশ্নে শহরের ৫০% এবং গ্রামের ৩০% লোক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে মনে করে।
দ্রব্যমূল্য চার বছর আগের তুলনায় এখন সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে কি-না, এ প্রশ্নে শহরের মানুষ বেশি দ্বিমত পোষণ করেছে (শহর ৬২% এবং গ্রাম ৫১%)। এই প্রশ্নের সঙ্গে সম্পৃক্ত আরেকটি প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়েছিল, অর্থনৈতিকভাবে চার বছরের তুলনায় তারা ভালো আছে কি-না। সেখানে গ্রামের মাত্র ১২% এবং শহরের ১০% মনে করে তারা অর্থনৈতিকভাবে ভালো আছে। এ থেকে কিছুটা ধারণা যায় মানুষের আয়-ব্যয়ের মধ্যে ব্যবধান বেড়েই চলেছে এবং শহরে এর প্রবণতা বেশি।
প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলের নেত্রীর মূল্যায়নে গ্রাম ও শহরের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না। শহরের ৯% এবং গ্রামের ১৪% লোক বলেছে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা খুব ভালো করছেন। একইভাবে খালেদা জিয়ার মূল্যায়নে শহরের ৭% এবং গ্রামের ৯% লোক মনে করছে যে তিনি খুব ভালো করছেন।
ক্ষেত্র- ২ (লিঙ্গ) : নারী, পুরুষ
সরকারের সাফল্য এবং ব্যর্থতা : শিক্ষা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সরকারের প্রধান সাফল্য তথাপি নারীদের মধ্যে ২৯% এবং পুরুষের ২৪% লোক এর পক্ষে মত দিয়েছেন। ব্যর্থতার প্রশ্নে ২৯% নারী এবং ২৬% পুরুষ মনে করছে, দুর্নীতিই সরকারের প্রধান ব্যর্থতা।
দুই নেত্রীর মূল্যায়নে প্রধানমন্ত্রী খুব ভালো অথবা ভালো করছেন_ এমন বলেছেন ৫৫% নারী এবং ৫২% পুরুষ। অন্যদিকে একই প্রশ্নে খালেদা জিয়াকে ৩৮% পুরুষ এবং ৩৬% নারী একই মন্তব্য করেছেন। সে ক্ষেত্রে বলা যায়, প্রধানমন্ত্রী নারীদের মধ্যে এবং বিরোধীদলীয় নেতা পুরুষদের মধ্যে কিছুটা হলেও বেশি জনপ্রিয়।
আগামী এক বছরে সরকারের প্রধান মনোযোগ কী হবে সেই প্রশ্নে নারী-পুরুষের মধ্যে দৃশ্যমান ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। দ্রব্যমূল্য কমানো সরকারের প্রধান মনোযোগ হওয়া উচিত বলেছেন ১৯% পুরুষ এবং ২৯% নারী। অন্যদিকে রাজনৈতিক সমঝোতার পক্ষে রায় দিয়েছেন ৪৭% পুরুষ এবং ৩৬% নারী।
ক্ষেত্র-৩ (শিক্ষা) : শিক্ষাগত যোগ্যতার ভেদে মোটামুটি সব প্রশ্নেই অভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে সরকার কেন ব্যর্থ এই প্রশ্নে দলীয় লোক ও প্রভাবশালীরা জড়িত_ পক্ষে মত প্রদানে ক্রমবর্ধমান প্রবণতা পরিলক্ষিত হয় শিক্ষাগত যোগ্যতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে (নিরক্ষর ৪১%, স্নাতকোত্তর ৭১%)।
ক্ষেত্র-৪ (পেশা) : পেশাভেদে মোটামুটি সব প্রশ্নেই অভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। শুধু ৪ বছর আগের তুলনায় অর্থনৈতিকভাবে ভালো আছেন কি-না এ প্রশ্নে বেশির ভাগ ব্যবসায়ী (৪১%) বিপক্ষে মত দিয়েছেন।
ক্ষেত্র-৫ (বয়স) :
সরকারের সাফল্য এবং ব্যর্থতার প্রশ্নে বয়সভেদে কিছুটা ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। ১৫-২৫ এই বয়সী সবচেয়ে বেশি ২৮% মত দিয়েছেন শিক্ষা সরকারের প্রধান সাফল্য হিসেবে। অন্যদিকে ৪৬-৬০ বছর বয়সী ২৪% লোক মনে করছে যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ সরকারের প্রধান সাফল্য। সরকারের ব্যর্থতার প্রশ্নে ৩৬-৪৫ বছর বয়সী ২৮% মনে করছে দুর্নীতি সরকারের প্রধান ব্যর্থতা।
প্রধানমন্ত্রীর মূল্যায়নের প্রশ্নে ৬০-ঊর্ধ্ব লোকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬২% বলেছে তিনি খুব ভালো অথবা ভালো করছেন। অন্যদিকে বিরোধীদলীয় নেতার মূল্যায়নে ৩৬-৪৫ বছর বয়সী ৩৮% একই উত্তর দিয়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, যদিও অবস্থান, লিঙ্গ, শিক্ষা, পেশা, বয়স ইত্যাদিভেদে মানুষের মতামতে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় তথাপি পুরো দেশের জনমতের ফলের সঙ্গে তা খুবই সামঞ্জস্যপূর্ণ। সরকারের ও বিরোধী দলের মূল্যায়নে অনেক সাফল্যই ম্লান হয়ে গেছে ব্যর্থতার গ্গ্নানিতে। চোখ বন্ধ করে আমরা যদি মনে করি আমাদের কেউ দেখেনি তাহলে মনে হয় জনমতকে উপেক্ষা করা হবে, যা কি-না যে কোনো দলের জন্যই শুভ ফল বয়ে আনবে না। আগামী দিনে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এই শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবে বলে আমরা বিশ্বাস করতে চাই।
মো. তামজীদুর ইসলাম
প্রভাষক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
md.tamzidul@yahoo.com
No comments