সফোনিসবা প্রেস্টন- আফসা পারভিন
ইসা দেশা ও উইলিয়াম ক্যাম্পবেল প্রেস্টন-এর ২য় সন্তান ছিলেন সফোনিসবা প্রেস্টন। উইলিয়াম প্রেস্টন ছিলেন একজন আইনজীবী, সাংবাদিক ও কংগ্রেসম্যান। সফোনিসবার দাদা জন ব্রেকেনরিডজ ছিলেন কেনটুসকির সিনেটর এবং জেফারসনের অধীনে এ্যাটর্নি জেনারেল।
উইলিয়াম প্রেস্টন উদারপন্থী ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন নারীদের শিা গ্রহণ করার অধিকার রয়েছে। তিনি তার মেয়ে সফোনিসবাকে পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী শিা গ্রহণ করার ওপর জোর দেন। তিনি বলতেন "মানুষের নাম তার বুদ্ধিবৃত্তিক ভাল কাজের জন্য কয়েক প্রজন্ম ধরে যুক্ত থাকে, এমনকি শতাব্দীও ছাড়িয়ে যায়। তুমি অবশ্যই এমন কাজ করবে যাতে পরবর্তী প্রজন্ম তোমার নাম মনে রাখে। ১৮৮৮ সালে সফোনিসবা ওয়েলেসলি থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এ সময় তিনি অনিশ্চয়তায় ভুগছিলেন তিনি কি করবেন। তিনি সিদ্ধানত্ম নেন ওয়াশিংটন ডিসির উচ্চ বিদ্যালয়ে গণিত পড়াবেন। সে সময় তার বাবা কংগ্রেসের সদস্য ছিলেন। এরপর তিনি সারা ইউরোপ ভ্রমণ করেন। ১৮৯২ সালে তার মা মারা গেলে তিনি মেক্সিংটনে ফিরে আসেন। ১৮৯৪ সালে তার বাবা নির্বাচনে হেরে গেলে সফেনিসবা তার বাবা ল' অফিসে বসার সিদ্ধানত্ম নেন। তার বাবা ও ভাই এ সিদ্ধানত্ম পছন্দ না করলেও আইন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার অনুমতি দেন। ১৮৯৪ সালে তিনি প্রথম মহিলা যিনি কেনটুসকি থেকে বার এট ল পরীায় পাস করেন। এ সময় তার পুরনো সহপাঠী এস্টেল কুক সফেনিসবাকে ওক পার্ক ইলিনয়সে এসে তার সঙ্গে থাকার জন্য এবং শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিলা বিষয়ক ডিন মেরিয়ন টেলবট-এর সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করার জন্য পরামর্শ দেন। ১৯০১ সালে মেরিয়ন টেলবটের সহায়তায় সফোনিসবা শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম মহিলা হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর তিনি ল স্কুল থেকে আইন বিষয়ে গ্র্যাজুয়েট হন। ১৯০৬ সালে তিনি তার ল স্কুলের বন্ধু এডিথ এবোথকে সঙ্গে নিয়ে আমেরিকার আদমশুমারি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে ল্য করেন কারখানাগুলোতে মহিলাদের কর্মসংস্থানের অবস্থা। তারা কোর্টের রেকর্ড নিয়ে আরও গবেষণা করেন। গবেষণার ভিত্তিতে বিভিন্ন পারিবারিক সমস্যা ল্য করেন বিশেষ করে কিশোর অপরাধ। এই পর্যবেণটি ছিল মূলত মায়েদের কাজ এবং বাবার সহায়তা বিষয়ক। তিনি পর্যবেণ করে ব্যাখ্যা করেন যেসব মায়েরা বাইরে কাজ করে এবং বাবার কোন দায়িত্ববোধ থাকেনা, সেসব পিতা-মাতার সনত্মানেরা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। মহিলারা অতিরিক্ত দায়ভার বহন করে বাইরে উপার্জন করতে গিয়ে ও বাড়ির কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন দুর্ভোগের শিকার হয়।১৯০৬ সালে তিনি রাজনৈতিক অর্থনীতি জার্নালে দু'টি প্রবন্ধ লেখেন। যাতে তিনি জোর করে মহিলাদের দিয়ে কাজ করানোর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ১৯১১ সালে এডিথ এবোটকে সঙ্গে নিয়ে তিনি আরেকটি প্রবন্ধ লিখলেন। যার নাম দিলেন ইধপশ ড়ভ ঃযব ুধৎফং যাতে তিনি বিভিন্ন তথ্যচিত্র। মানচিত্র বর্ণনা, সাাতকার, বাড়ি ঘরের চিত্র, পেশার পরিসংখ্যান, জীবনের বিভিন্ন দিক তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে বিশেস্নষণ করে দরিদ্র এলাকার জনগণের সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন।
তিনি দরিদ্র অভিবাসীদের জীবনযাত্রা, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত পাথর্ক্যের জন্য যে ধরনের অসুবিধায় ভোগে তা নিয়ে আলোচনা করলেন। তিনি ঐ প্রবন্ধে তার পাঠককে তাদের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে সরকারের সাথে আলোচনায় যেতে বললেন। তিনি আরও উলেস্নখ করলেন, যখন কোন সম্প্রদায় তাদের চাহিদা সম্পর্কে সচেতন হয়ে উচ্চকিত হয় তখন সরকারের উচিত সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনে আইন সংশোধন করা।
১৯০৭ সালে সফোনিসবা জেন এডামসের হুল হাউজে বাস করতে শুরম্ন করলেন। তিনি শিকাগো স্কুলে সমাজকর্মীদের পৌরনীতি ও মানবপ্রীতি ও দেশপ্রেম সম্পর্কে শিাদান করতে শুরম্ন করেন। ১৯০৮ সালে তিনি গবেষণা অধিদফতরের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯০৭ সালে তিনি মহিলাদের ট্রেড ইউনিয়ন লীগের সাথে যুক্ত হলেন এবং শিকাগোর সামজিক কাঠামো পরিবর্তনে ব্যাপক কাজ শুরম্ন করলেন। একই বছর তিনি অভিবাসী প্রোটেকটিভ লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। তার নিউ হোমস ফর ওল্ড নামক বইতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অভিবাসীদের সংস্কৃতিকে সমুন্নত রাখার কথা বললেন। ১৯০৯ সালে সফোনিসবা প্রেস্টন মেরিয়ন টেলবটের নতুন বিভাগ পারিবারিক ব্যবস্থাপনার সহযোগী অধ্যাপিকা নিযুক্ত হন। কোর্সের মধ্যে ছিল পারিবারিক অর্থনীতি, আধুনিক পরিবার ইত্যাদি।
সফোনিসবা আরও বেশি সমাজসেবার সাথে যুক্ত হলেন। সমাজের গঠন ও উন্নয়নে দিকনির্দেশনা প্রদানে কাজ শুরম্ন করলেন। তিনি অনেক বেশি সভা, কনফারেন্স, সাাতকার প্রচারকার্যে ব্যসত্ম হয়ে পড়লেন যে নিজের জন্য তার কোন সময় ছিল না।
জেন এডামসসহ আরও অনেককে নিয়ে ডড়সবহ্থং ঢ়বধপব ঢ়ধৎঃু গঠন করলেন। ১৯১৫ সালে হগ-এ অনুষ্ঠিত নারী আনত্মর্জাতিক কংগ্রেসে অংশগ্রহণ করে নারীদের সার্বিক মুক্তি ও উন্নয়নের জন্য ড়িসবহ্থং রহঃবৎহধঃরড়হধষ ষবধমঁব ভড়ৎ ঢ়বধপব ধহফ ভৎববফড়স প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৫ সালে তিনি অধ্যাপক হলেন। এর ফলে তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিকতা শুরম্ন করেন। পরবর্তীতে সোশ্যাল সার্ভিস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগ খোলা হয়। এই বিভাগে তিনি নারীদের জন্য কোর্স চালু করেন। এই কোর্সে তিনি ছাত্রীদের পরিবারে নারী, ব্যবসা ও পেশা বিষয়ে শিাদান করেন। পাশাপাশি তিনি বই লিখতে শুরম্নু করেন। তারু প্রকাশিত গ্রন্থ হচ্ছে ঋধসরষু বিষভধৎব ড়িৎশ রহ গবঃৎড়ঢ়ড়ষরঃধহ পড়সসঁহরঃু (১৯২৪), ঢ়ঁনষরপ বিষভধৎব ধফসরহরংঃৎধঃরড়হ (১৯২৭), ড়িসবহ রহ ঃযব ঃবিহঃরবঃয পবহঃঁৎু (১৯৩৩), ঞযব ভধসরষু ধহফ ঃযব ংঃধঃব (১৯৩৪) উলেস্নখযোগ্য। পরবতর্ীতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন নিযুক্ত হন। এছাড়াও তিনি গ্র্যাজুয়েট স্কুলে ংড়পরধষ ংবৎারপব ধফসরহরংঃৎধঃরড়হ বিষয়ে শিাদান করেন।
সফোনিসবা সরকারের কাজকর্ম জনগণের বোঝার অধিকার রয়েছে বলে বিশ্বাস করতেন। সে ল্যে তিনি ১৯২৭ সালে ঝড়পরধষ ংবৎারপব ৎবারব িচালু করেন যাতে সরকার সমাজের জন্য যে কাজকর্ম করছে তা যেন লৰ রাখা যায়। তার এসকল সমাজসেবার জন্য প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রম্নজভেল্ট কতর্ৃক চিহ্নিত হন। নজরে আসেন। তা হচ্ছে শহরের স্বাস্থ্য পরিদর্শক নিযুক্ত, জুডেনাইল কোর্ট সিস্টেম চালু করা, শিশু শ্রম আইন করার জন্য ব্যাপক প্রচার কার্য করা। এছাড়াও তিনি পরিবার, অভিবাসী, কৃষ্ণাঙ্গ মহিলাদের কাজের মজুরি ইত্যাদি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেন।
অবশেষে ১৯৩৩ সালে তিনি মনটিভিউতে অনুষ্ঠিত ঢ়ধহ অসবৎরপধহ ঈড়হমৎবংং এর ডেলিগেট হিসেবে প্রেসিডেন্ট রম্নজভেল্ট কতর্ৃক আমন্ত্রিত হলেন। প্রথম মহিলা হিসেবে শুধু সম্মানিত হননি। পুরস্কৃতও হলেন। ১৯৩৪ সালে অসবৎরপধহ অংংড়পরধঃরড়হ ড়ভ ংপযড়ড়ষং ড়ভ ংড়পরধষ ড়িৎশ এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
৩০ এপ্রিল ১৯৪৮ সালে এই কৃতী নারী সফোনিসবা প্রেস্টন আলসারে মারা যান। ি
No comments