খালাফ হত্যা মামলায় ৫ আসামির ফাঁসি by মবিনুল ইসলাম
সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা খালাফ আল আলী হত্যা মামলায় ৫ আসামির ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। রোববার দুপুর সোয়া ১২টায় ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মোতাহার হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার সময় সৌদি রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ বিন নাসের আল বুশাইরি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমরা এ রায়ের দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চাই।”
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, সাইফুল ইসলাম ওরফে মামুন, মো. আল আমীন, আকবর আলী লালু ওরফে রনি, রফিকুল ইসলাম খোকন ও সেলিম চৌধুরী ওরফে সেলিম আহম্মেদ।
এর মধ্যে আসামি সেলিম চৌধুরী ওরফে সেলিম আহম্মেদ মামলার শুরু থেকেই পলাতক। অপর আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
আসামি সাইফুল ইসলাম ওরফে রনির বাড়ি বাগেরহাট জেলার শরণখোলার মধ্য খমতাকাটা গ্রামে। তিনি মৃত আব্দুল মোতালেব হাওলাদারের ছেলে। আসামি আল আমিনের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার হাজিখালী গ্রামে। তার পিতার নাম ফারুক ঘরামী।
আসামি আকবর আলী লালু ওরফে রনির বাড়ি শরিয়তপুর জেলার ডামুড্যা থানাধীন গোয়ালকোয়া গ্রামে। তার পিতার নাম আব্দুল জলিল। রফিকুল ইসলাম খোকনের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার কোতয়ালী থানাধীন নাটকঘর বাইলেনে। তার পিতার নাম আব্দুস সালাম।
পলাতক আসামি সেলিম চৌধুরী ওরফে সেলিম আহম্মেদের বাড়ি ভোলা জেলার শশীভূষণ থানাধীন উত্তর চরমঙ্গলে। তার পিতার নাম সিদ্দিক আহমেদ চৌধুরী।
গত ৩১ অক্টোবর মামলার চার্জগঠনের পর মাত্র দুই মাসেই এ বিচারকাজ শেষ করলো ট্রাইব্যুনাল। ৬ ডিসেম্বর চার্জশিটভুক্ত ৩৩ সাক্ষির সাক্ষ্য শেষ হয়।
রায় ঘোষণার পর আসামিরা নীরবে চোখের পানি ফেললেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। রায় শুনে স্তব্ধ হয়ে যান তারা। প্রিজনভ্যানে তোলার সময় নির্বাক ছিলেন তারা। এসময় আত্মীয় স্বজনরা চিৎকার করে কান্নাকাটি করতে থাকলে তারা তাদের সান্ত্বনা দেন।
আসামিদের প্রিজন ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়ার সময় আসামি সাইফুল ইসলাম ওরফে মামুনের মা. আসামি আল আমিনের পিতা ফারুক, আকবর আলী লালু ওরফে রনির স্ত্রী নুরজাহান আদালত প্রাঙ্গণে চিৎকার করে কান্নাকাটি করছিলেন।
এ সময় রনির স্ত্রীর কোলে তার ৫ মাসের শিশুপুত্র আলিফ ঘুমাচ্ছিল। তারা আসামিদের নির্দোষ দাবি করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে মর্মে কান্নাকাটি করছিলেন।
তারা বলেন, “আসামিরা কথিত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন। তারা ন্যায়বিচার পাননি। সরকারের চাপেই ট্রাইব্যুনাল আসামিদের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন।”
আসামিদের আইনজীবী হাবিব উল্লাহ জানান, এ মামলার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী নেই। আসামিরাই যে খালাফকে হত্যা করেছে, তা রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পারেনি। শুধু রাষ্ট্রীয় চাপেই আসামিদের এ দণ্ড দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের এ আদেশে ক্ষুব্ধ তারা। এ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করবেন বলেও জানান।
তবে রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সংশ্লিষ্ট আদালতের স্পেশাল পিপি এসএম রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “ডাকাতি করতে গিয়ে হত্যা মামলার কোনো প্রত্যক্ষ সাক্ষী থাকে না। পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য প্রমাণ দ্বারাই আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল এ রায় দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ৪ জুন রাজধানীর দক্ষিণখান থানাধীন গাওয়াইর এলাকা থেকে সাইফুল ইসলাম মামুন, আকবর আলী লালু ওরফে রনি, আল আমীনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশের ডাকাতি, দস্যুতা ও ছিনতাই প্রতিরোধ টিম।
এসময় তাদের কাছ থেকে কালো রঙের একটি বিদেশি .২২ বোরের রিভলবার উদ্ধার করা হয়।
অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে গত ৪ জুন তাদের বিরুদ্ধে একটি অস্ত্র মামলা দায়ের করা হয়।
এ মামলার রিমান্ডে থাকাকালীন তারা স্বীকার করেন, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর খিলক্ষেত থানাধীন সেবা ক্লিনিকে মালিক আবুল হোসেনের বাসায় আসামি সাইফুল ইসলাম মামুন, লালু, আল আমীন ও রফিকুল ইসলাম খোকন ডাকাতি করতে গিয়ে অন্যান্য মালের সঙ্গে রিভলবারটিও ডাকাতি করে নিয়ে আসেন।
আসামি সাইফুল ইসলাম মামুন ও আল আমীন আদালতে স্বীকার করেন, গত ৫ মার্চ দিবাগত রাতে ছিনতাই করতে গিয়ে বাধা দেওয়ায় তারা সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা খালাফ আল আলীকে এ অস্ত্রটি দিয়েই গুলি করে হত্যা করেন।
আসামি সাইফুল ইসলাম ওরফে মামুন, মো. আল আমীন, আকবর আলী লালু ওরফে রনি ও রফিকুল ইসলাম খোকনকে এ মামলায় গত ২৪ জুলাই গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে চার্জশিট দেয়। চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, মূলত নেশার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে বিদেশি নাগরিক খালাফকে রাস্তায় দেখে ডলার পাওয়ার আশায় তাকে ঘিরে ধরে। এ সময় ছিনতাইকারীদের সঙ্গে খালাফের ধস্তাধস্তি হয়। এরই এক পর্যায়ে আসামি সাইফুল ইসলাম মামুন .২২ বোরের রিভলবার দিয়ে গুলি করেন।
হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি ভাষানটেক থানার মানিকদী বাজারসংলগ্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
প্রসঙ্গত, গত ৫ মার্চ রাত ১টার দিকে গুলশানের কূটনীতিক এলাকার ১২০ নম্বর সডকের ১৯/বি নম্বর বাসার সামনে গুলিবিদ্ধ হন খালাফ আল আলী (৪৫)। ৬ মার্চ ভোরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তার মৃত্যু হয়।
গত ৭ মার্চ গুলশান থানার এসআই মোশারফ হোসেন এ মামলাটি দায়ের করেন।
No comments