অতিমাত্রার লবণাক্ততায় কৃষিতে বিরূপ প্রভাব- উপকূলে দেড় হাজার কিমি বাঁধ সংস্কারে অনিশ্চয়তা by এম জসীম উদ্দীন
প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় ঘূর্ণিঝড় সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণাঞ্চলের বেশির ভাগ বাঁধ গত পাঁচ বছরেও মেরামত হয়নি। ভাঙা বাঁধ দিয়ে জমিতে লোনা পানি ঢুকছে। এতে জমিতে লবণাক্ততার মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে এ অঞ্চলের কৃষির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।
এ ছাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হলে এসব বাঁধ বিলীন হয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা।
পাউবো বরিশালের আঞ্চলিক প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের সিডরে বরিশালের ছয় জেলার প্রায় ১৮০ কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণ এবং এক হাজার ৪০০ কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সিডরের পর এসব বাঁধ ও ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো মেরামতের জন্য ৪২৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প-প্রস্তাব পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বিশ্বব্যাংক ওই প্রকল্পের অর্থ কাটছাঁট করে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে ১১২ কোটি টাকা সহায়তা দিতে সমঞ্চত হয়। কিন্তু এই অর্থ চাহিদার তুলনায় নিতান্ত কম হওয়ায় তা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের এক-তৃতীয়াংশও মেরামত সম্ভব নয় বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান। সীমিত এই অর্থ দিয়ে তিন বছর মেয়াদে এসব বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হলেও গত মে মাসে মাঝপথে দাতা সংস্থা সেই অর্থ সহায়তা স্থগিত করে। এতে প্রকল্পের কাজ থেমে যাওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত বাকি বাঁধ মেরামত নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, অতিমাত্রার লবণাক্ততার কারণে (১২ দশমিক ১ থেকে ১৬ ডিএস/এমের ওপরে) গত পাঁচ বছরে বরগুনায় ১৭ হাজার ৪৪০ হেক্টর, পটুয়াখালীতে ৩৬ হাজার ৩৯০, ভোলায় ১২ হাজার ৭৭০ ও ঝালকাঠি জেলায় প্রায় এক হাজার হেক্টর আবাদি জমি কমে গেছে। এতে দক্ষিণের শস্যভান্ডারখ্যাত এই চার জেলায় ফসল উৎপাদনের অনুপযোগী জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজার ৬০০ হেক্টর। ফলে তিন লাখ ৩৮ হাজার মেট্রিক টন (হেক্টরপ্রতি পাঁচ মেট্রিক টন হিসাবে) ফসল উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। পানিতে লবণাক্ততার সহনীয় মাত্রা হচ্ছে শূন্য দশমিক ৭৫ ডিএস/এম। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোর ৩৫ শতাংশে দুই মাত্রার কম, ছয় শতাংশ নদীর পানিতে দুই থেকে পাঁচ মাত্রার মধ্যে এবং ৫৯ শতাংশ নদীর পানিতে পাঁচ মাত্রার বেশি লবণ থাকে।
মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা লিয়াকত আলী বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে সাম্প্রতিক সময়ে পানির লবণাক্ততা পরিমাপ করে যে তথ্য আমরা পেয়েছি, তা খুবই ভয়াবহ। ব্রহ্মপুত্র, গড়াই ও মধুমতী নদীর পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় এসব লবণাক্ত পানি চলে যাচ্ছে যশোর, মাগুরা ও নড়াইলসংলগ্ন নদীগুলোয়। ওই অঞ্চলের কৃষকেরা না জেনে এ পানি সেচকাজে ব্যবহার করায় ওই সব এলাকার মাটিতেও লবণক্ততার প্রকোপ দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।’
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা যে হারে বাড়ছে, তাতে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে যাচ্ছে।’
বরগুনা সদর উপজেলার ছোট বালিয়াতলী গ্রামের কৃষক আনছার মিয়া বলেন, ‘গত বছর ৮০ শতক জমিতে আমন ধান আবাদ করতে ১৭ হাজার ৩০০ টাকা খরচা হয়। ধান পাইছি মাত্র নয় মণ। নুনের কারণে ধান অয় না। ভাঙা বাঁধ দিয়া জোয়ারে পানি ঢুইক্কা বাড়িঘর তলাইয়্যা যায়।’
পাউবোর বরগুনা কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল হোসেন বলেন, ‘২০১১ সালের জানুয়ারিতে জেলার ক্ষতিগ্রস্ত ২২টি পোল্ডারের মধ্যে ১২টির আওতায় বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়। প্রথম ধাপে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয়টি পোল্ডারের সেসব বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাকি ছয়টি পোল্ডারের দরপত্র আহ্বান করা হলেও দাতা সংস্থা সেই দরপত্র-প্রক্রিয়া স্থগিত করে দিয়েছে।’
বরগুনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দীন আহমেঞ্চদ বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো অর্থাভাবে সংস্কার করা যাচ্ছে না। বড় ধরনের ঝড়-জলোচ্ছ্বাস হলে তা মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে এসব বাঁধ মোটেই উপযোগী নয়।’
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক খান সিরাজুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, বাঁধের অভাবে লবণাক্ততা বেড়ে বিভাগের চার জেলায় বিপুল আয়তনের জমি বছরের সাত মাস পতিত থাকে। এ জন্য এই অঞ্চলের ৫৪৩টি সেচ-খাল খনন করে মিঠা পানির আধার বাড়ানোর পাশাপাশি দুই হাজার ২৪৩ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত করা দরকার।
পাউবো বরিশালের আঞ্চলিক প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের সিডরে বরিশালের ছয় জেলার প্রায় ১৮০ কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণ এবং এক হাজার ৪০০ কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সিডরের পর এসব বাঁধ ও ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো মেরামতের জন্য ৪২৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প-প্রস্তাব পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বিশ্বব্যাংক ওই প্রকল্পের অর্থ কাটছাঁট করে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে ১১২ কোটি টাকা সহায়তা দিতে সমঞ্চত হয়। কিন্তু এই অর্থ চাহিদার তুলনায় নিতান্ত কম হওয়ায় তা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের এক-তৃতীয়াংশও মেরামত সম্ভব নয় বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান। সীমিত এই অর্থ দিয়ে তিন বছর মেয়াদে এসব বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হলেও গত মে মাসে মাঝপথে দাতা সংস্থা সেই অর্থ সহায়তা স্থগিত করে। এতে প্রকল্পের কাজ থেমে যাওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত বাকি বাঁধ মেরামত নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, অতিমাত্রার লবণাক্ততার কারণে (১২ দশমিক ১ থেকে ১৬ ডিএস/এমের ওপরে) গত পাঁচ বছরে বরগুনায় ১৭ হাজার ৪৪০ হেক্টর, পটুয়াখালীতে ৩৬ হাজার ৩৯০, ভোলায় ১২ হাজার ৭৭০ ও ঝালকাঠি জেলায় প্রায় এক হাজার হেক্টর আবাদি জমি কমে গেছে। এতে দক্ষিণের শস্যভান্ডারখ্যাত এই চার জেলায় ফসল উৎপাদনের অনুপযোগী জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজার ৬০০ হেক্টর। ফলে তিন লাখ ৩৮ হাজার মেট্রিক টন (হেক্টরপ্রতি পাঁচ মেট্রিক টন হিসাবে) ফসল উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। পানিতে লবণাক্ততার সহনীয় মাত্রা হচ্ছে শূন্য দশমিক ৭৫ ডিএস/এম। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোর ৩৫ শতাংশে দুই মাত্রার কম, ছয় শতাংশ নদীর পানিতে দুই থেকে পাঁচ মাত্রার মধ্যে এবং ৫৯ শতাংশ নদীর পানিতে পাঁচ মাত্রার বেশি লবণ থাকে।
মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা লিয়াকত আলী বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে সাম্প্রতিক সময়ে পানির লবণাক্ততা পরিমাপ করে যে তথ্য আমরা পেয়েছি, তা খুবই ভয়াবহ। ব্রহ্মপুত্র, গড়াই ও মধুমতী নদীর পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় এসব লবণাক্ত পানি চলে যাচ্ছে যশোর, মাগুরা ও নড়াইলসংলগ্ন নদীগুলোয়। ওই অঞ্চলের কৃষকেরা না জেনে এ পানি সেচকাজে ব্যবহার করায় ওই সব এলাকার মাটিতেও লবণক্ততার প্রকোপ দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।’
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা যে হারে বাড়ছে, তাতে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে যাচ্ছে।’
বরগুনা সদর উপজেলার ছোট বালিয়াতলী গ্রামের কৃষক আনছার মিয়া বলেন, ‘গত বছর ৮০ শতক জমিতে আমন ধান আবাদ করতে ১৭ হাজার ৩০০ টাকা খরচা হয়। ধান পাইছি মাত্র নয় মণ। নুনের কারণে ধান অয় না। ভাঙা বাঁধ দিয়া জোয়ারে পানি ঢুইক্কা বাড়িঘর তলাইয়্যা যায়।’
পাউবোর বরগুনা কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল হোসেন বলেন, ‘২০১১ সালের জানুয়ারিতে জেলার ক্ষতিগ্রস্ত ২২টি পোল্ডারের মধ্যে ১২টির আওতায় বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়। প্রথম ধাপে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয়টি পোল্ডারের সেসব বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাকি ছয়টি পোল্ডারের দরপত্র আহ্বান করা হলেও দাতা সংস্থা সেই দরপত্র-প্রক্রিয়া স্থগিত করে দিয়েছে।’
বরগুনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দীন আহমেঞ্চদ বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো অর্থাভাবে সংস্কার করা যাচ্ছে না। বড় ধরনের ঝড়-জলোচ্ছ্বাস হলে তা মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে এসব বাঁধ মোটেই উপযোগী নয়।’
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক খান সিরাজুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, বাঁধের অভাবে লবণাক্ততা বেড়ে বিভাগের চার জেলায় বিপুল আয়তনের জমি বছরের সাত মাস পতিত থাকে। এ জন্য এই অঞ্চলের ৫৪৩টি সেচ-খাল খনন করে মিঠা পানির আধার বাড়ানোর পাশাপাশি দুই হাজার ২৪৩ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত করা দরকার।
No comments