নতুন নেতৃত্ব-আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চীনের ভূমিকা জোরালো হবে by সুভাষ সাহা
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেস শেষে ১৫ নভেম্বর পার্টির দায়িত্ব নিলেন নতুন প্রজন্মের নেতারা। প্রত্যাশিতভাবেই শি জিনপিং দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। মার্চে তিনি বিদায়ী প্রেসিডেন্ট হু জিনতাওয়ের স্থলাভিষিক্ত হবেন। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন পলিটব্যুরোর স্থায়ী কমিটির সদস্য লি কেকিয়াং।
চীনা বিপ্লবের পর এই প্রথম মাও সে তুং বা দেং শিয়াও পিংয়ের সরাসরি কোনো অনুসারী দল সে দেশের নেতৃত্বে রইলেন না। ফলে এই নতুন নেতৃত্ব, বিশেষ করে জিনপিং-কেকিয়াং জুটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ও দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির অধিকারী কমিউনিস্ট চীনকে এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টিকে কোন ধরনের ভবিষ্যৎ উপহার দেন_ তা নিয়ে নানা ধরনের মত, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ থাকা স্বাভাবিক। চীনের সঙ্গে বহির্বিশ্বের সম্পর্কের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ পরিবর্তন সুদূরপ্রসারী প্রভাব রাখবে কি-না, আমাদের প্রতিবেশী আরেক জায়ান্ট ভারতের সঙ্গেই বা চীনের সম্পর্কে কোনো নতুন মাত্রা যোগ হবে কি-না, এসব নিয়ে থিঙ্কট্যাঙ্কগুলোর অনেক গবেষণাকর্ম দেখা যাবে। আর আমাদের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকবে বাংলাদেশ চীনের নতুন নেতৃত্বের কাছে অধিক গুরুত্ব আশা করতে পারে কি-না সেই বিষয়টি। কারণ বাংলাদেশের উন্নয়নে চীনের বহুমুখী সহায়তা কাঙ্ক্ষিত এবং অতিপ্রয়োজনীয়ও।
শি দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই ১৯ মিনিটের ভাষণে সংস্কার কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। পার্টির ক্ষেত্রে এ সংস্কার কর্মসূচির অর্থ কী হবে বা সরকার ও গোটা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এর কী ধরনের প্রভাব হবে, তা কিন্তু এখনও অজানা। তবে জনগণের সঙ্গে পার্টি ও সরকারের দূরত্ব ঘোচানোর ক্ষেত্রে তার জনমুখী চরিত্রিক বৈশিষ্ট্য কাজে আসবে। শি আগাগোড়া একজন সোজাসাপ্টা মানুষ এবং সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করেন। তার কারও সঙ্গেই কাজ করতে কোনো বাধা নেই। অর্থাৎ এক ধরনের নমনীয়তা রয়েছে তার মধ্যে। অন্যের মতামত শোনার ব্যাপারেও তার সমান আগ্রহ। বলা যায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে চীনা নেতৃত্বের যে ধরনের গতিশীল ও নমনীয় অথচ দৃঢ়ভাবে নীতি-কর্মসূচি বাস্তবায়নের উপযোগী নেতৃত্ব গুণাবলি প্রয়োজন তার প্রায় সবক'টিই শির মধ্যে রয়েছে। এ কারণে এবং বিশ্ব পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চীনের ভূমিকা জোরালো হবে। সিঙ্গাপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বো ঝিয়াউ শি জিনপিংকে একজন ভিন্ন মেজাজের নেতা উল্লেখ করেছেন।
চীনের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এক কথায় নজিরবিহীন। অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করার পর দেশটি তার ৫০ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যের অভিশাপ মুক্ত করেছে। তবে সামাজিক কল্যাণে তাদের ব্যয় (জিডিপির মাত্র ৬ শতাংশ) এখনও সার্বিক জিডিপি গড়ের হিসাবে অনেক কম। নতুন নেতৃত্বকে জনকল্যাণের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। সংস্কারের অভাবে চীনে আজ দুর্নীতির রাহুগ্রাস। কমিউনিস্ট পার্টিও এর বাইরে নয়। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট হু তো বলেই ফেলেছেন যে, দুর্নীতি রোধ না করতে পারলে দল ও দেশ দুটোই ভেঙে পড়তে পারে। পার্টি ও রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে দুর্নীতি দূর করা এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টির কাজটিও নতুন নেতৃত্বের ওপর ন্যস্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত সংস্কার সাধন সম্ভব হলে দুর্নীতি, সম্পদের অপচয় ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার ফেরে পড়ে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া যেমন কমবে তেমনি উৎপাদিকা শক্তিও বাঁধনকর্ষণমুক্ত হয়ে পূর্ণমাত্রায় উন্নতিশীল সৃজনে সক্ষম হবে। আর দলের মধ্যে গণতন্ত্র চর্চা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার দ্বার পর্যায়ক্রমে আরও অবারিত করার মাধ্যমে চীনা কমিউনিস্ট পার্টিও নিজেকে সময়ের উপযোগী করতে পারে। তবে শহর এবং গ্রামের মধ্যে উন্নয়ন ও আয় বৈষম্য কমানো, ধনী-দরিদ্রের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়া আয় বৈষম্য হ্রাস করা এবং ক্রমাগত কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কাজটি কীভাবে সম্পন্ন হবে তা দেখার বিষয়। কারণ এ ক্ষেত্রে সাফল্যের ওপর চীনের ভবিষ্যৎ সামাজিক স্থিতিশীলতার প্রশ্নটি ঝুলে আছে।
আন্তর্জাতিক পরিসরে যুক্তরাষ্ট্রের চীনকে ঘিরে ধরার নীতি মোকাবেলা করতে হবে চীনের নতুন নেতৃত্বকে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রশ্নে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক ক্রমশ উত্তেজনাকর হয়ে উঠছে। বিশেষ করে কয়েকটি দ্বীপের মালিকানা নিয়ে চীনের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে অব্যাহত বিরোধ, একটি দ্বীপের ওপর অধিকারকে কেন্দ্র করে চীন-জাপান সম্পর্কের অবনতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের নীতিকৌশল ও সামরিক শক্তি সমাবেশের ক্ষেত্রে এশিয়াকে প্রধান বিবেচ্য করায় চীন বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্কোন্নয়ন চীনের নেতৃত্বের চোখ কপালে তুলেছে। তাই এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজের অধিকার সংরক্ষণের জন্য, বিশেষ করে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে ভূ-রাজনৈতিক কারণেই বৈরী শক্তিমুক্ত রাখা চীনের অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকবে। তাছাড়া চীনের বহির্বাণিজ্য রুটকে নিরাপদ রাখতে ও জ্বালানি সরবরাহ লাইন সচল রাখতে ভারত মহাসাগরেও তার বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর অবারিত চলাচল নিশ্চিত থাকা প্রয়োজন। সে কারণে চীনের নতুন নেতৃত্ব ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হবে বলে আশা করা যায়। চীন-ভারত বাণিজ্য ১০ হাজার কোটি ডলার ছাড়ানোর লক্ষ্য ইতিমধ্যে ঘোষিত হয়েছে। চীনের বর্তমান নেতৃত্বের সময়েই ভারত চীনের অন্যতম বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হবে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্কও অব্যাহত থাকবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ভারতকে তার কৌশলগত স্বাধীন অবস্থান ত্যাগ করতে প্রতিনিয়ত চাপ দিয়ে চলেছে তাতে ভারতীয় নেতৃত্ব কাবু হবে বলে মনে হয় না।
অন্যদিকে অর্থনৈতিক সংকটে ডুবে থাকা যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের ঘুরে দাঁড়ানো সময়সাপেক্ষ হবে। এ সময়কালে চীন তাদের ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। নতুন নেতৃত্ব যদি সত্যি সত্যি ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বকে শক্তিশালী ও আস্থার পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে তাহলে আমরা আগামী এক দশকেই এক নতুন বিশ্বকে দেখতে পাব। চীনের এই নতুন গতিশীল নীতি অবস্থানের কারণে আমরা অনেক বেশি উপকৃত হতে পারি। ভারত-চীন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আমাদের স্থিতিশীলতাকে যেমন নিশ্চিত করবে, তেমনি আমাদের বিনিয়োগ ও রফতানি বাণিজ্যেও নতুন গতি সৃষ্টি করবে। যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে যেটুকু ক্ষতি আমাদের হবে সেটুকু পুষিয়েও আমরা অনেক বেশি উপকৃত হতে পারব ভারত-চীন নবতর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বদৌলতে। তবে আমাদের পশ্চিমাদের সঙ্গে দহরম-মহরমও চলবে। এতে লাভ ছাড়া ক্ষতি তেমন হবে না। সেজন্য চীনের নতুন নেতৃত্বের কাছে বাংলাদেশেরও প্রত্যাশা কম নয়।
সুভাষ সাহা : সাংবাদিক
শি দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই ১৯ মিনিটের ভাষণে সংস্কার কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। পার্টির ক্ষেত্রে এ সংস্কার কর্মসূচির অর্থ কী হবে বা সরকার ও গোটা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এর কী ধরনের প্রভাব হবে, তা কিন্তু এখনও অজানা। তবে জনগণের সঙ্গে পার্টি ও সরকারের দূরত্ব ঘোচানোর ক্ষেত্রে তার জনমুখী চরিত্রিক বৈশিষ্ট্য কাজে আসবে। শি আগাগোড়া একজন সোজাসাপ্টা মানুষ এবং সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করেন। তার কারও সঙ্গেই কাজ করতে কোনো বাধা নেই। অর্থাৎ এক ধরনের নমনীয়তা রয়েছে তার মধ্যে। অন্যের মতামত শোনার ব্যাপারেও তার সমান আগ্রহ। বলা যায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে চীনা নেতৃত্বের যে ধরনের গতিশীল ও নমনীয় অথচ দৃঢ়ভাবে নীতি-কর্মসূচি বাস্তবায়নের উপযোগী নেতৃত্ব গুণাবলি প্রয়োজন তার প্রায় সবক'টিই শির মধ্যে রয়েছে। এ কারণে এবং বিশ্ব পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চীনের ভূমিকা জোরালো হবে। সিঙ্গাপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বো ঝিয়াউ শি জিনপিংকে একজন ভিন্ন মেজাজের নেতা উল্লেখ করেছেন।
চীনের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এক কথায় নজিরবিহীন। অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করার পর দেশটি তার ৫০ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যের অভিশাপ মুক্ত করেছে। তবে সামাজিক কল্যাণে তাদের ব্যয় (জিডিপির মাত্র ৬ শতাংশ) এখনও সার্বিক জিডিপি গড়ের হিসাবে অনেক কম। নতুন নেতৃত্বকে জনকল্যাণের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। সংস্কারের অভাবে চীনে আজ দুর্নীতির রাহুগ্রাস। কমিউনিস্ট পার্টিও এর বাইরে নয়। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট হু তো বলেই ফেলেছেন যে, দুর্নীতি রোধ না করতে পারলে দল ও দেশ দুটোই ভেঙে পড়তে পারে। পার্টি ও রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে দুর্নীতি দূর করা এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টির কাজটিও নতুন নেতৃত্বের ওপর ন্যস্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত সংস্কার সাধন সম্ভব হলে দুর্নীতি, সম্পদের অপচয় ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার ফেরে পড়ে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া যেমন কমবে তেমনি উৎপাদিকা শক্তিও বাঁধনকর্ষণমুক্ত হয়ে পূর্ণমাত্রায় উন্নতিশীল সৃজনে সক্ষম হবে। আর দলের মধ্যে গণতন্ত্র চর্চা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার দ্বার পর্যায়ক্রমে আরও অবারিত করার মাধ্যমে চীনা কমিউনিস্ট পার্টিও নিজেকে সময়ের উপযোগী করতে পারে। তবে শহর এবং গ্রামের মধ্যে উন্নয়ন ও আয় বৈষম্য কমানো, ধনী-দরিদ্রের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়া আয় বৈষম্য হ্রাস করা এবং ক্রমাগত কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কাজটি কীভাবে সম্পন্ন হবে তা দেখার বিষয়। কারণ এ ক্ষেত্রে সাফল্যের ওপর চীনের ভবিষ্যৎ সামাজিক স্থিতিশীলতার প্রশ্নটি ঝুলে আছে।
আন্তর্জাতিক পরিসরে যুক্তরাষ্ট্রের চীনকে ঘিরে ধরার নীতি মোকাবেলা করতে হবে চীনের নতুন নেতৃত্বকে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রশ্নে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক ক্রমশ উত্তেজনাকর হয়ে উঠছে। বিশেষ করে কয়েকটি দ্বীপের মালিকানা নিয়ে চীনের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে অব্যাহত বিরোধ, একটি দ্বীপের ওপর অধিকারকে কেন্দ্র করে চীন-জাপান সম্পর্কের অবনতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের নীতিকৌশল ও সামরিক শক্তি সমাবেশের ক্ষেত্রে এশিয়াকে প্রধান বিবেচ্য করায় চীন বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্কোন্নয়ন চীনের নেতৃত্বের চোখ কপালে তুলেছে। তাই এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজের অধিকার সংরক্ষণের জন্য, বিশেষ করে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে ভূ-রাজনৈতিক কারণেই বৈরী শক্তিমুক্ত রাখা চীনের অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকবে। তাছাড়া চীনের বহির্বাণিজ্য রুটকে নিরাপদ রাখতে ও জ্বালানি সরবরাহ লাইন সচল রাখতে ভারত মহাসাগরেও তার বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর অবারিত চলাচল নিশ্চিত থাকা প্রয়োজন। সে কারণে চীনের নতুন নেতৃত্ব ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হবে বলে আশা করা যায়। চীন-ভারত বাণিজ্য ১০ হাজার কোটি ডলার ছাড়ানোর লক্ষ্য ইতিমধ্যে ঘোষিত হয়েছে। চীনের বর্তমান নেতৃত্বের সময়েই ভারত চীনের অন্যতম বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হবে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্কও অব্যাহত থাকবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ভারতকে তার কৌশলগত স্বাধীন অবস্থান ত্যাগ করতে প্রতিনিয়ত চাপ দিয়ে চলেছে তাতে ভারতীয় নেতৃত্ব কাবু হবে বলে মনে হয় না।
অন্যদিকে অর্থনৈতিক সংকটে ডুবে থাকা যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের ঘুরে দাঁড়ানো সময়সাপেক্ষ হবে। এ সময়কালে চীন তাদের ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। নতুন নেতৃত্ব যদি সত্যি সত্যি ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বকে শক্তিশালী ও আস্থার পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে তাহলে আমরা আগামী এক দশকেই এক নতুন বিশ্বকে দেখতে পাব। চীনের এই নতুন গতিশীল নীতি অবস্থানের কারণে আমরা অনেক বেশি উপকৃত হতে পারি। ভারত-চীন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আমাদের স্থিতিশীলতাকে যেমন নিশ্চিত করবে, তেমনি আমাদের বিনিয়োগ ও রফতানি বাণিজ্যেও নতুন গতি সৃষ্টি করবে। যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে যেটুকু ক্ষতি আমাদের হবে সেটুকু পুষিয়েও আমরা অনেক বেশি উপকৃত হতে পারব ভারত-চীন নবতর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বদৌলতে। তবে আমাদের পশ্চিমাদের সঙ্গে দহরম-মহরমও চলবে। এতে লাভ ছাড়া ক্ষতি তেমন হবে না। সেজন্য চীনের নতুন নেতৃত্বের কাছে বাংলাদেশেরও প্রত্যাশা কম নয়।
সুভাষ সাহা : সাংবাদিক
No comments