জামায়াত-শিবিরের ১৯০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র by রেজোয়ান বিশ্বাস ও কৌশিক দে

গত ৫ নভেম্বর পুলিশের ওপর হামলা, গাড়িতে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রাজধানীর মতিঝিল থানা ও খুলনা সদর থানায় দ্রুত বিচার আইনে দায়ের করা মামলায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ মোট ১৯০ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।


এর মধ্যে মতিঝিল থানার মামলায় মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ ৬০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। খুলনার মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ ১৩১ জনের বিরুদ্ধে।
মতিঝিল থানায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শেখ মফিজুর রহমান গত ১২ নভেম্বর এই অভিযোগপত্র ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দাখিল করেন। অন্যদিকে খুলনার মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক সোহেল রানা গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুখ্য মহানগর হাকিম শেখ আবদুল আহাদের আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
মতিঝিল থানার ওসি হায়াত-উজ্জামান মোল্যা কালের কণ্ঠকে বলেন, গত ৫ নভেম্বর মতিঝিল থানা এলাকায় পরিকল্পিতভাবে তাণ্ডব চালায় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। এতে ৫০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগানোর পাশাপাশি ভাঙচুর করা হয় আরো অনেক যানবাহন। এসব ঘটনায় মতিঝিল থানায় দায়ের করা তিনটি মামলায় জামায়াত-শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়। তদন্ত চলাকালে মোট ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে দ্রুত বিচার আইনের একটি মামলায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ এজাহারভুক্ত ৬০ জনের বিরুদ্ধে গত সোমবার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। জামায়াত-শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতাসহ পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে অভিযোগপত্রে।
অভিযোগপত্রভুক্ত অন্য আসামিদের মধ্যে আরো রয়েছেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মজিবুর রহমান, প্রচার সম্পাদক তসলিম আলম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ইজ্জত উল্লাহ, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুস জব্বার, ঢাকা মহানগর জামায়াতের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর জামায়াতের সভাপতি হামিদুর রহমান, ঢাকা মহানগর জামায়াত সেক্রেটারি নুর ইসলাম বুলবুল, ঢাকার সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর (৩৬ নম্বর) খন্দকার আব্দুর রব, ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম, শফিকুল ইসলাম ওরফে মাসুদ, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, শিবিরের বর্তমান সভাপতি দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এ টি এম মাসুম, মতিঝিল থানা জামায়াতের সভাপতি কামাল হোসেন, মতিঝিল থানা সেক্রেটারি আলমগীর হোসেন ওরফে রাজু, মতিঝিল থানা শিবির সভাপতি মতিউর রহমান, সাবেক সভাপতি সোহাগ, জামায়াতের আরামবাগ ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি শফিক মাইনুল প্রমুখ।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বিঘি্নত করতে জামায়াত-শিবির পরিকল্পিত হামলা চালাচ্ছে। গত ৫ নভেম্বর মতিঝিলে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলছে। গত মঙ্গলবার কারওয়ান বাজারে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের গাড়িবহর শিবিরের হামলার মুখে পড়ে। একই দিন শিবিরকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায় মগবাজার এলাকায়। মিরপুরেও তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এসব ঘটনায় গত ১১ দিনে রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, রমনা, মিরপুর শেরে বাংলানগর ও তেজগাঁও এলাকা থেকে মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ জামায়াত-শিবিরের প্রায় দেড় শ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরো হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, গত মঙ্গলবার ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার এলাকায় জামায়াত-শিবিরের হামলার ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে আইনমন্ত্রীর গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলায় এজাহারভুক্ত ২০ জনসহ জামায়াত-শিবিরের ৩০০-৪০০ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডে এনে ওই ঘটনায় জড়িতদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। হামলায় ইন্ধনদাতাদের মধ্যে জামায়াত ও শিবিরের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নীরব, বিএনপির সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আনোয়ার হোসেনের নাম পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ওই ঘটনায় তেজগাঁও এলাকার বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সরাসরি জড়িত থাকার তথ্য পাওয়ায় সেগুলোর যাচাই-বাছাই চলছে।
খুলনায় ১৩১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
খুলনার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল রানা জানান, গত ৫ নভেম্বর নগরীর পাওয়ার হাউস মোড়ে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা এবং গাড়ি ভাঙচুর করে। ওই ঘটনায় রাতেই খুলনা সদর থানায় এসআই ফখরুল আলম বাদী হয়ে দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা করেন। তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় দ্রুত বিচার আইনের ৪ ও ৫ ধারা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। তবে আদালত এখনো কোনো আদেশ দেননি।
তদন্ত কর্মকর্তা জানান, আসামিদের মধ্যে মিয়া গোলাম পরওয়ার ছাড়াও উল্লেখযোগ্যরা হলেন মহানগর আমির মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, নায়েবে আমির আবদুল মতিন ও মাস্টার শফিকুল আলম, নগর জামায়াতের সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাইদুর রহমান, সেক্রেটারি আজিজুল ইসলাম ফারাজী, সাবেক সেক্রেটারি গাজী মোর্শেদ মামুন, সাংগঠনিক সম্পাদক মিরাজ হোসাইন প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.