সমাজ নয় সমাজপতির সম্পত্তি-মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বাইস্টা গ্রামে তথাকথিত

সমাজপতিরা যেভাবে একটি পরিবারকে 'একঘরে' করে রেখেছে, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। কোনো একটি পরিবারের বিরুদ্ধে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থী। এভাবে কাউকে 'শাস্তি' প্রদান নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ারই নামান্তর।


উপরন্তু যে কারণে পরিবারটির সঙ্গে ওই গ্রামের অন্যদের কথাবার্তা, চলাফেরা 'নিষিদ্ধ' ঘোষণা করা হয়েছে, তা কোনো মাপকাঠিতেই 'অপরাধ' বিবেচিত হতে পারে না। কে কার সঙ্গে হৃদয় বিনিময় বা ছাদ ভাগাভাগি করবে, সেটা একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। স্বঘোষিত সমাজপতিদের অধিকার নেই সেখানে নাক গলানোর। অর্থ ও গোষ্ঠী আধিপত্যবাদী কয়েক ব্যক্তি সামাজিক অনুশাসনের সীমানাই বা কিসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করেন, সে প্রশ্নও রয়েছে। ঘিওরের এ ঘটনায় সমাজপতিরা চরম নিষ্ঠুরতারও পরিচয় দিয়েছে। আলোচ্য পরিবারটির একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি শারীরিক প্রতিবন্ধী। একটি চায়ের দোকান চালিয়ে কোনো রকমে জীবিক নির্বাহ করেন। সেই দোকানটির বিক্রিও যেভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তা বিবেকবান যে কাউকে ক্ষুব্ধ করবে। আমাদের প্রত্যাশা, স্থানীয় প্রশাসন অবিলম্বে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। প্রশাসন এ সত্যও নিশ্চয় উপলব্ধি করবে_ 'সমাজপতিরা' কেবল অমানবিকতাই প্রদর্শন করেনি, আইনের শাসনকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। সমাজপতির মুখোশের আড়ালে তারা আসলে সমাজবিরোধী। একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর যে মৌলিক প্রয়োজন থেকে মানুষ আবহমানকাল থেকে সমাজবদ্ধভাবে বাস করে আসছে, এরা তার মূলেই কুঠারাঘাত করেছে। তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে সমাজ কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয় যে, যেমন খুশি বিধান চালু করা যাবে। আমরা বিশ্বাস করি, গুটিকয়েক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে ওই গ্রামের শুভবুদ্ধি মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষ অসহায় পরিবারটির পাশে এসে দাঁড়াবে। একই সঙ্গে পরিবারটির পুনর্বাসনের ব্যাপারেও উদ্যোগী হওয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর এগিয়ে আসা উচিত। কারণ একটি পরিবার যদি অন্যায়ের তর্জনী উপেক্ষা করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে, তাহলে আরও অনেক নিপীড়িত পাল্টা তর্জনী তোলার সাহস অর্জন করবে। সেই তোড়ে অবিমৃষ্যকারী সমাজপতিরা ভেসে যেতে বাধ্য

No comments

Powered by Blogger.