স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রকাশ করা শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা ৯ বছর আগের- হালনাগাদ করবে সরকার by শংকর কুমার দে
জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট
সাহারা খাতুনের প্রকাশিত সন্ত্রাসীদের তালিকাটি বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট
সরকারের তৈরি করা। এ তালিকাটিই প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার কোন শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা তৈরি করেনি। জোট
সরকারের তৈরি করা শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকাটি হালনাগাদ করে নতুন তালিকা তৈরি
করবে বর্তমান সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে জোট সরকারের তৈরি শীর্ষ
সন্ত্রাসীর তালিকা তুলে দিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার ব্যাপারে
তদনত্মের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অপরদিকে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরি,
নৃশংস খুন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির ব্যাপারে সরকারের পৰ থেকে পদৰেপ
গ্রহণ করা হচ্ছে। এ খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
৯ বছর আগে ২০০১ সালের ডিসেম্বর মাসে জোট সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) আলতাফ হোসেন চৌধুরী ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করার পর বলেছিলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আরও তালিকা প্রকাশ করা হবে। তখন ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকা প্রকাশ করা হলেও পরবর্তীতে চাপের মুখে আর ১৯ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন জাতীয় সংসদে যে ৪২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকা প্রকাশ করেছেন তা জোট সরকারের প্রকাশ করা পুরস্কার ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চাপের মুখে প্রকাশ না করা ১৯ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকাটি। জোট সরকারের ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসী ও অঘোষিত ১৯ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকাটি একত্রিত করে ৪২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকাটি প্রকাশ করা হয়েছে। জোট সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তৈরি করা শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকাটি বিগত ৯ বছরের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশ করার কারণেই ব্যাপক সমালোচনা ও তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ৯ বছর আগের শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করার কারণেই মৃত ব্যক্তির নাম সন্ত্রাসীর তালিকায় স্থান পেয়েছে। আবার ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীর নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।
জাতীয় সংসদে এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন যেই ৪২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকা প্রকাশ করেছেন তার মধ্যে ৩০ নম্বরের তালিকাভুক্ত নামটি হচ্ছে বড় মগবাজারের তৌহিদুজ্জামান খান ওরফে টিক্কা। ২০০১ সালে জোট সরকারের তৈরি করা ৪২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকার মধ্যেও ৩০ নম্বরেই ছিল তার নামটি। কিন্তু জোট সরকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকা প্রকাশ করার পর চাপের মুখে আর কারও নামের তালিকা প্রকাশ না করায় টিক্কার নামটি পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকাভুক্ত হওয়ার ঘটনাটি প্রকাশ হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঠিকই জানত সে শীর্ষ সন্ত্রাসী। তখন শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামের তালিকা প্রকাশ করার কিছুদিনের মধ্যেই ডিবি পুলিশের হাতে নিহত হয় টিক্কা। যেহেতু তার নামটি পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসীর প্রকাশিত তালিকায় ছিল না, সেই কারণে ডিবি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে টিক্কা নিহত হওয়ার পর মিডিয়ায় তেমন প্রচার পায়নি। জোট সরকারের তৈরি করা ৪২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকাটি বর্তমান সরকার প্রকাশ করার পর দেখা গেল যে, শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় নাম থাকা টিক্কা ৯ বছর আগেই মারা গেছে। অর্থাৎ ৯ বছর আগের তৈরি জোট সরকারের শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকাটি আর কখনও হালনাগাদ করা হয়নি। আর এ কারণেই টিক্কা নিহত হলেও তার স্থান পূরণ করে এতদিনে রাশেদ, মুকুল প্রমুখ শীর্ষ সন্ত্রাসীর স্থান দখল করলেও তাদের নাম প্রকাশ করা শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় নেই।
উদাহরণ আরও আছে। জোট সরকারের ৪২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর মধ্যে ৩৮ নম্বরের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সায়েদাবাদের মুন্না ওরফে মনু মিয়াও। জোট সরকারের সময়েই প্রায় অর্ধযুগ আগে প্রতিপৰের হাতে রামপুরা এলাকায় খুন হয়েছে সায়েদাবাদের মুন্না। মুন্না খুন হলেও তার নাম শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়নি। আর এ কারণেই শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশের পর তার নামটিও অনত্মর্ভুক্ত থেকে গেছে। পুরনো ঢাকার ডাকাত শহীদ, মিরপুরের শাহাদাত, পুলিশ হত্যাকারী জিসান, ইমন, সুইডেন ইসলাম, খোরশেদ জোট সরকারের সময়েই শীর্ষ সন্ত্রাসীর হিসেবে পরিচিতি পায়। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের পৰে কাজ করেছে তারা। তারা ছিল মূলত হাওয়া ভবনের সমর্থিত সন্ত্রাসী। জোট সরকার যখন শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামের তালিকা প্রকাশ করে তখন চাপ সৃষ্টি করে তাদের নাম শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। জোট সরকারের শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকাটি প্রকাশ করার কারণেই তাদের নামও শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা থেকে বাদ পড়ে গেছে। মহাখালী বাস টার্মিনালের পরিবহন শ্রমিকনেতা ছাদিকুর রহমান হিরম্নর বিরম্নদ্ধে কোন থানায় কোন মামলা কিংবা জিডি না থাকা সত্ত্বেও শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকায় তার নাম অনত্মর্ভুক্ত হয়ে আছে। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে পরিবহন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হিরম্নর নাম ৪২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকায় আছে তা প্রকাশের আগে কেউ জানতই না। দীর্ঘ ৯ বছরের পুরনো শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে, শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকাভুক্ত ছাদিকুর রহমান হিরম্ন বর্তমানে বাইপাস সার্জারি করা পাঁচওয়াক্ত নামাজী তজবি হাতে ধর্মপরায়ণ এক ব্যক্তি। বিগত ৯ বছর আগে ২০০১ সালের জোট সরকারের সময়ে তৈরি করা ৪২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকাটি প্রকাশ করার কারণেই মৃত ব্যক্তি হয়ে গেছে শীর্ষ সন্ত্রাসী, আর শীর্ষ সন্ত্রাসী যে নয় সে শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকাভুক্ত হয়ে গেছে। আর এ কারণেই পুলিশ সদর দফতর, ডিএমপি পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়, র্যাব কোন কর্তৃপৰই বলতে পারছে না ৪২ জনের শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকাটি কারা করেছে, তার দায়-দায়িত্ব স্বীকার করছে না।
জোট সরকার বিগত ৯ বছর আগে ২০০১ সালের ডিসেম্বরে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকা প্রকাশ করে পুরস্কার ঘোষণা করেছে ৪২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় তাদের নামও অনত্মর্ভুক্ত আছে। জোট সরকারের সময়ে পুরস্কার ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর কতজন মারা গেছে, কয়জন জেলে আছে, কতজন পলাতক আছে তাও ঘোষিত ৪২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় প্রকাশ পেয়েছে। গ্রেফতার, পলাতক ও নিহতের ব্যাপারে কোথাও কোথাও কিছুটা সংশোধন করা আছে যা, তাও আবার পুরনো। বর্তমান সরকার শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা তৈরি না করেই আগের সরকারের তালিকা প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বাসত্মব চিত্র সম্পর্কে সরকারকে অন্ধকারে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এ কারণেই নৃশংস খুন ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে শুরম্ন করেছে। মঙ্গলবার রাতে ঢাকা কলেজে সিট দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু'গ্রম্নপে সংঘর্ষ, অস্ত্র গোলাবারম্নদ উদ্ধার ও গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে। বুধবারও রাজধানীর শাহ্আলী থানা এলাকায় একজন খুন হয়েছে। এদিন রাজধানীর বাইরে খুলনায় সংঘটিত হয়েছে জোড়া খুন। আগের দিন জোড়া খুন সংঘটিত হয়েছে মতিঝিলের বাস কাউন্টারে। একই দিনে যাত্রাবাড়ীতে এক আইনজীবীকে খুন করে রেললাইনের ধারে ফেলে দেয়া হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর কোথাও না কোথাও খুন হচ্ছে। খুনের সঙ্গে পালস্না দিয়ে বেড়ে গেছে ছিনতাইও। ছিনতাইয়ের ঘটনা যে বেড়ে গেছে তা পুলিশ কর্তৃপৰও স্বীকার করে নিয়েছে। খুন, ছিনতাই বৃদ্ধির সঙ্গে পালস্না দিয়ে অন্যান্য অপরাধও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে চলে যাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, জোট সরকারের তৈরি করা ৪২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকাটিই কিছুটা সংশোধন আকারে জাতীয় সংসদে প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাতে দোষের কিছুই নেই। জাতীয় নির্বাচনের ভোটার লিস্টেও মৃত ব্যক্তি ভোটার হয়, আবার প্রকৃত ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়। পরবর্তীতে এটা সংশোধন করা হয়। বর্তমান সরকার কোন শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা তৈরি করেনি। ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকাটিও হালনাগাদ করা হবে।
গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর যে তালিকা তৈরি করেছেন সে ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। সন্ত্রাসীর তালিকা থেকে মৃত ব্যক্তিকে বাদ দেয়া হবে, প্রকৃত সন্ত্রাসীকে তালিকাভুক্ত করা হবে এবং সন্ত্রাসী নয় অথচ সন্ত্রাসীর তালিকায় নাম উঠে থাকলে তা বাদ দেয়া হবে। খুন-ছিনতাইয়ের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার চেয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে দাবি করে গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে অপরাধী গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধারাভিযান জোরদার করা হচ্ছে।
৯ বছর আগে ২০০১ সালের ডিসেম্বর মাসে জোট সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) আলতাফ হোসেন চৌধুরী ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করার পর বলেছিলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আরও তালিকা প্রকাশ করা হবে। তখন ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকা প্রকাশ করা হলেও পরবর্তীতে চাপের মুখে আর ১৯ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন জাতীয় সংসদে যে ৪২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকা প্রকাশ করেছেন তা জোট সরকারের প্রকাশ করা পুরস্কার ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চাপের মুখে প্রকাশ না করা ১৯ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকাটি। জোট সরকারের ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসী ও অঘোষিত ১৯ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকাটি একত্রিত করে ৪২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকাটি প্রকাশ করা হয়েছে। জোট সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তৈরি করা শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকাটি বিগত ৯ বছরের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশ করার কারণেই ব্যাপক সমালোচনা ও তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ৯ বছর আগের শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করার কারণেই মৃত ব্যক্তির নাম সন্ত্রাসীর তালিকায় স্থান পেয়েছে। আবার ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীর নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।
জাতীয় সংসদে এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন যেই ৪২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকা প্রকাশ করেছেন তার মধ্যে ৩০ নম্বরের তালিকাভুক্ত নামটি হচ্ছে বড় মগবাজারের তৌহিদুজ্জামান খান ওরফে টিক্কা। ২০০১ সালে জোট সরকারের তৈরি করা ৪২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকার মধ্যেও ৩০ নম্বরেই ছিল তার নামটি। কিন্তু জোট সরকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকা প্রকাশ করার পর চাপের মুখে আর কারও নামের তালিকা প্রকাশ না করায় টিক্কার নামটি পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকাভুক্ত হওয়ার ঘটনাটি প্রকাশ হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঠিকই জানত সে শীর্ষ সন্ত্রাসী। তখন শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামের তালিকা প্রকাশ করার কিছুদিনের মধ্যেই ডিবি পুলিশের হাতে নিহত হয় টিক্কা। যেহেতু তার নামটি পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসীর প্রকাশিত তালিকায় ছিল না, সেই কারণে ডিবি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে টিক্কা নিহত হওয়ার পর মিডিয়ায় তেমন প্রচার পায়নি। জোট সরকারের তৈরি করা ৪২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকাটি বর্তমান সরকার প্রকাশ করার পর দেখা গেল যে, শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় নাম থাকা টিক্কা ৯ বছর আগেই মারা গেছে। অর্থাৎ ৯ বছর আগের তৈরি জোট সরকারের শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকাটি আর কখনও হালনাগাদ করা হয়নি। আর এ কারণেই টিক্কা নিহত হলেও তার স্থান পূরণ করে এতদিনে রাশেদ, মুকুল প্রমুখ শীর্ষ সন্ত্রাসীর স্থান দখল করলেও তাদের নাম প্রকাশ করা শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় নেই।
উদাহরণ আরও আছে। জোট সরকারের ৪২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর মধ্যে ৩৮ নম্বরের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সায়েদাবাদের মুন্না ওরফে মনু মিয়াও। জোট সরকারের সময়েই প্রায় অর্ধযুগ আগে প্রতিপৰের হাতে রামপুরা এলাকায় খুন হয়েছে সায়েদাবাদের মুন্না। মুন্না খুন হলেও তার নাম শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়নি। আর এ কারণেই শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশের পর তার নামটিও অনত্মর্ভুক্ত থেকে গেছে। পুরনো ঢাকার ডাকাত শহীদ, মিরপুরের শাহাদাত, পুলিশ হত্যাকারী জিসান, ইমন, সুইডেন ইসলাম, খোরশেদ জোট সরকারের সময়েই শীর্ষ সন্ত্রাসীর হিসেবে পরিচিতি পায়। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের পৰে কাজ করেছে তারা। তারা ছিল মূলত হাওয়া ভবনের সমর্থিত সন্ত্রাসী। জোট সরকার যখন শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামের তালিকা প্রকাশ করে তখন চাপ সৃষ্টি করে তাদের নাম শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। জোট সরকারের শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকাটি প্রকাশ করার কারণেই তাদের নামও শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা থেকে বাদ পড়ে গেছে। মহাখালী বাস টার্মিনালের পরিবহন শ্রমিকনেতা ছাদিকুর রহমান হিরম্নর বিরম্নদ্ধে কোন থানায় কোন মামলা কিংবা জিডি না থাকা সত্ত্বেও শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকায় তার নাম অনত্মর্ভুক্ত হয়ে আছে। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে পরিবহন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হিরম্নর নাম ৪২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকায় আছে তা প্রকাশের আগে কেউ জানতই না। দীর্ঘ ৯ বছরের পুরনো শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে, শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকাভুক্ত ছাদিকুর রহমান হিরম্ন বর্তমানে বাইপাস সার্জারি করা পাঁচওয়াক্ত নামাজী তজবি হাতে ধর্মপরায়ণ এক ব্যক্তি। বিগত ৯ বছর আগে ২০০১ সালের জোট সরকারের সময়ে তৈরি করা ৪২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকাটি প্রকাশ করার কারণেই মৃত ব্যক্তি হয়ে গেছে শীর্ষ সন্ত্রাসী, আর শীর্ষ সন্ত্রাসী যে নয় সে শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকাভুক্ত হয়ে গেছে। আর এ কারণেই পুলিশ সদর দফতর, ডিএমপি পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়, র্যাব কোন কর্তৃপৰই বলতে পারছে না ৪২ জনের শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকাটি কারা করেছে, তার দায়-দায়িত্ব স্বীকার করছে না।
জোট সরকার বিগত ৯ বছর আগে ২০০১ সালের ডিসেম্বরে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকা প্রকাশ করে পুরস্কার ঘোষণা করেছে ৪২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় তাদের নামও অনত্মর্ভুক্ত আছে। জোট সরকারের সময়ে পুরস্কার ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর কতজন মারা গেছে, কয়জন জেলে আছে, কতজন পলাতক আছে তাও ঘোষিত ৪২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় প্রকাশ পেয়েছে। গ্রেফতার, পলাতক ও নিহতের ব্যাপারে কোথাও কোথাও কিছুটা সংশোধন করা আছে যা, তাও আবার পুরনো। বর্তমান সরকার শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা তৈরি না করেই আগের সরকারের তালিকা প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বাসত্মব চিত্র সম্পর্কে সরকারকে অন্ধকারে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এ কারণেই নৃশংস খুন ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে শুরম্ন করেছে। মঙ্গলবার রাতে ঢাকা কলেজে সিট দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু'গ্রম্নপে সংঘর্ষ, অস্ত্র গোলাবারম্নদ উদ্ধার ও গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে। বুধবারও রাজধানীর শাহ্আলী থানা এলাকায় একজন খুন হয়েছে। এদিন রাজধানীর বাইরে খুলনায় সংঘটিত হয়েছে জোড়া খুন। আগের দিন জোড়া খুন সংঘটিত হয়েছে মতিঝিলের বাস কাউন্টারে। একই দিনে যাত্রাবাড়ীতে এক আইনজীবীকে খুন করে রেললাইনের ধারে ফেলে দেয়া হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর কোথাও না কোথাও খুন হচ্ছে। খুনের সঙ্গে পালস্না দিয়ে বেড়ে গেছে ছিনতাইও। ছিনতাইয়ের ঘটনা যে বেড়ে গেছে তা পুলিশ কর্তৃপৰও স্বীকার করে নিয়েছে। খুন, ছিনতাই বৃদ্ধির সঙ্গে পালস্না দিয়ে অন্যান্য অপরাধও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে চলে যাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, জোট সরকারের তৈরি করা ৪২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকাটিই কিছুটা সংশোধন আকারে জাতীয় সংসদে প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাতে দোষের কিছুই নেই। জাতীয় নির্বাচনের ভোটার লিস্টেও মৃত ব্যক্তি ভোটার হয়, আবার প্রকৃত ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়। পরবর্তীতে এটা সংশোধন করা হয়। বর্তমান সরকার কোন শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা তৈরি করেনি। ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকাটিও হালনাগাদ করা হবে।
গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর যে তালিকা তৈরি করেছেন সে ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। সন্ত্রাসীর তালিকা থেকে মৃত ব্যক্তিকে বাদ দেয়া হবে, প্রকৃত সন্ত্রাসীকে তালিকাভুক্ত করা হবে এবং সন্ত্রাসী নয় অথচ সন্ত্রাসীর তালিকায় নাম উঠে থাকলে তা বাদ দেয়া হবে। খুন-ছিনতাইয়ের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার চেয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে দাবি করে গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে অপরাধী গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধারাভিযান জোরদার করা হচ্ছে।
No comments