দুর্নীতি দমনের জন্য প্রয়োজন কাঠামোগত সংস্কার- প্রকাশনা উসবে অর্থমন্ত্রী মুহিত
দেশের স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কেবল কাঠামোগত সংস্কার দিয়ে দুর্নীতি দমন হবে না। পদ্ধতিগত সংস্কারের পাশাপাশি দুর্নীতিবাজদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, দুর্নীতি দমন বা প্রশমনের জন্য প্রতিষ্ঠান বড় বিষয় নয়; বড় বিষয় হচ্ছে কাঠামোগত সংস্কার। যেখানে দুনর্রীতি পরিহার করা বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ডক্টর আকবর আলী খান বলেছেন, দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি যত শক্তিশালী হোক দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে। সাবেক উপদেষ্টা ডক্টর আজিজুল ইসলাম বলেন, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাঠামোগত সংস্কার করা প্রয়োজন।শনিবার বিশিষ্ট ব্যাংকার মামুন রশীদের 'এগিয়ে যাওয়ার অর্থনীতি' শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে দেশের স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদগণ এসব কথা বলেন। রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে অনুষ্ঠিত এ উৎসবে সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী, লেখক মামুন রশীদ অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক নাসিরউদ্দিন চৌধুরী এবং প্রকাশক মাসুম রহমান বক্তব্য রাখেন।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, দেড় বছর ধরে বিশ্ব অর্থনীতি একটি মন্দার ভেতর দিয়ে অতিবাহিত করছে। এখন অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্য অর্থনীতির চিনত্মাচেতনা ও ধারণাগুলোর গুণগত পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতির সনাতনী চিনত্মাধারার পরিবর্তন দরকার। আমরা এক ধরনের অন্ধকারের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছি। ব্যক্তি খাত, জলবায়ু, অবকাঠামো প্রভৃতি খাতের উন্নয়ন প্রভৃতি বিষয়কে সত্যিকার ব্যবস্থাপনা ও চিনত্মাধারার মধ্যে আনতে হবে।
অনুষ্ঠানে পুঁজিবাজারের ভবিষ্যত এবং দুনর্ীতি দমনে কাঠামোগত সংস্কারে দ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, সুদের হার প্রভৃতি সম্পর্কে ডক্টর আজিজুল ইসলামের দেয়া কিছু কিছু বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে ডক্টর আকবর আলী খান বলেন, পুঁজিবাজারের ভবিষ্যত কি হবে এ নিয়ে কথা বলার সময় এখনও আসেনি। কেবল কাঠামোগত সংস্কার দিয়ে দুনর্ীতি দমন করা যাবে না। এর পাশাপাশি দুনর্ীতিবাজদের কঠোর শাসত্মি দিতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বেশি সুদ দিয়েও ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া যায় না। তাই উচ্চসুদ হলেই যে আমরা তাকে খারাপ বলব তা নয়। আইন করে সুদ কমাতে গেলে ঘুষ বাড়তে পারে। আবার সুদ কমলেও ঋণের প্রবাহ কমে যেতে পারে। অর্থমন্ত্রী সঞ্চয়পত্রের সুদ কমিয়ে আনার ঘোষণা দেয়ার পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে আমার কাছে উৎকণ্ঠা জানিয়েছেন।
ডক্টর খান আরও বলেন, দুনর্ীতি দমনের জন্য পদ্ধতিগত সংস্কার করতে হবে এতে সন্দেহ নেই। যেমন এক সময় আমদানি বাণিজ্যের লাইসেন্স পেতে ঘুষ লেনদেন হতো। এ পদ্ধতি তুলে দেয়ার পর এ খাতে স্বাভাবিকভাবেই ঘুষ বন্ধ হয়ে গেছে। তাই পদ্ধতিগত পরিবর্তনের সঙ্গে দোষী ব্যক্তিরা যত শক্তিশালীই হোক তাদের শাসত্মি দিতে হবে। অর্থমন্ত্রীর কাছে একটি নিবেদন রেখে ডক্টর আকবর আলী খান বলেন, এটা একুশের মাস। বাংলা ভাষা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পরিভাষার সমস্যা রয়েছে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি বাংলা ভাষার জন্য একটি ওয়েবসাইট চালু এবং একটি পরিভাষা কমিশন গঠন করার নিবেদন করেন সরকারের কাছে। তিনি বলেন, এ কমিশন হলে ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে পরিভাষার সমাধান হবে। অন্যথায় বর্তমান পদ্ধতিতে এগুলে ১০০ বছরেও পরিভাষার সমস্যা মিটবে কিনা সন্দেহ আছে।
সাবেক উপদেষ্টা ডক্টর আজিজুল ইসলাম স্বাস্থ্য খাতের সমালোচনা করে আরও বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা সংরণের জন্য বেসরকারী খাতের স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়ানো উচিত। তিনি বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য খাতে ভাল ডাক্তার, ভাল যন্ত্রপাতি থাকলেও নার্সিংসেবার মান নিম্ন। তিনি ব্যাংকিং খাতের অদতার কথা উলেস্নখ করে বলেন, আমাদের ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদ এবং আমানতের সুদের মধ্যে অনেক ব্যবধান রয়েছে। ব্যাংকের সংখ্যাও অনেক বেশি। অনেক ব্যাংক হওয়ায় তাদের ব্যবসা কম হয়। ফলে তাদের মুনাফা বাড়ানোই ল্য থাকে। পোশাক শিল্পের ওপর সকলের নজর দেয়া প্রয়োজন।
No comments