রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়-শুভ উদ্যোগ, শিগগির বাস্তবায়িত হোক
বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব কবির জন্মের দেড়শ' বছর পূর্তি উৎসবে জোরেশোরে উচ্চারিত হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত, বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে তার চিরস্থায়ী অবস্থান।
শুধু তা-ই নয়, জীবনের বড় একটি সময় তিনি বাংলাদেশেই অবস্থান করেছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য কোনো স্থাপনাই আজ অবধি তার নামাঙ্কিত হয়নি। রাজধানীর একটি সড়কও রবীন্দ্রনাথের নাম ধারণ করতে পারেনি। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবাহী শিলাইদহ, কুষ্টিয়া, খুলনা, শাহজাদপুর, পতিসরের স্থাপনাগুলোই শুধু তার স্মৃতি ধারণ করে আছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব যে জনপ্রিয় হবে, তা বলা বাহুল্য। কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরুতে অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে। এখন প্রক্রিয়া শুরু হলো। শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হবে। কিন্তু এর বাড়তি দুটি ক্যাম্পাস থাকবে শিলাইদহ ও পতিসরে। বাড়তি দুটি ক্যাম্পাসের যৌক্তিকতা ও বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। রবীন্দ্রনাথের নামে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হতে হলে কি তার স্মৃতিবাহী সব স্থানেই এর শাখা স্থাপনের যৌক্তিকতা আছে? অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এ ধরনের ছড়ানো-ছিটানো ক্যাম্পাসে ভালো ফলের চেয়ে খারাপই বেশি হয়। স্থাপনা নির্মাণের ব্যয় বাড়ে, ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের বোঝাও বাড়ে। কিন্তু ফল বিশেষ মেলে না। পাঠদানের জন্য বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপকদের আকর্ষণ করার জন্যও এটি ভালো পদ্ধতি নয়। আমাদের দেশে বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপকরা সাধারণত রাজধানী বা বড় শহরে অবস্থান করতেই ভালোবাসেন। রাজধানীর বাইরে যে কোনো স্থানে তাদের আকৃষ্ট করানো কঠিন। এ অবস্থায় ভিন্ন তিনটি ক্যাম্পাসের প্রতি তাদের আকৃষ্ট করা আরও কঠিন হবে; বরং রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়টি শাহজাদপুরেই পূর্ণাঙ্গরূপে প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত। শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞদের আবাসনসহ আকৃষ্ট করার পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও তাতে থাকা উচিত। রবীন্দ্রনাথ নিজে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছেন, তার নিজস্ব শিক্ষাদর্শন ও পাঠদান পদ্ধতিও আছে। সেগুলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুসৃত হতে পারে। শিল্পকলা, সঙ্গীত, নাট্যকলা, চলচ্চিত্রের মতো বিষয়গুলোতে বিশেষ পাঠদানের জন্য সেখানে আলাদা ইনস্টিটিউটও গড়ে তোলা যেতে পারে। পাশাপাশি বিজ্ঞান শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার জন্যও এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ ব্যবস্থা থাকতে পারে। আমাদের দেশে নামকাওয়াস্তে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। সেগুলোর প্রতি শিক্ষক-শিক্ষার্থী কারও আকর্ষণ তৈরি হয় না। কেননা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পাঠের বিষয় ও মানগত দিক থেকে আকর্ষণ সৃষ্টি করতে পারছে না। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় যদি সুসজ্জিত, আবাসিক একটি শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে আর এর শিক্ষণ পদ্ধতি ও পাঠের মান যদি উন্নত হয়, তবে তা হবে গর্বের বিষয়। শাহজাদপুর কেন_ দূর কোনো অজগ্রামে স্থাপিত হলেও সেখানে শিক্ষার্থীরা ছুটবেন নিজের গরজে। তেমনটাই প্রত্যাশিত।
No comments