পলাশী যুদ্ধের কালপঞ্জি

৯ এপ্রিল, ১৭৫৬ : নবাব আলীবর্দী খানের মৃত্যু। বাংলার মসনদে নবাব সিরাজউদ্দৌলার আরোহণ। সিরাজউদ্দৌলার বয়স তখন মাত্র ২৩ বছর।
এপ্রিল, ১৭৫৬, শেষ সপ্তাহ : ইউরোপে সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধের অজুহাতে বাংলায় ইংরেজ ও ফরাসিদের দুর্গ নির্মাণ। নবাবের আদেশে ফরাসি দুর্গ নির্মাণ বন্ধ হলেও ইংরেজদের দুর্গ নির্মাণ অব্যাহত।
১৬ মে, ১৭৫৬ : বিদ্রোহী শওকত জঙ্গকে দমনের উদ্দেশ্যে পূর্ণিয়ায় নবাব সিরাজউদ্দৌলার সামরিক অভিযান।
২০ মে, ১৭৫৬ : নবাব সিরাজউদ্দৌলা রাজমহল পৌঁছেন। গভর্নর ড্রেকের চিঠি পান। চিঠিতে দুর্গ নির্মাণ বন্ধের কোনো কথা নেই।
১৬ জুন, ১৭৫৬ : ক্রুদ্ধ নবাব সিরাজউদ্দৌলা পূর্ণিয়া না গিয়ে মুর্শিদাবাদে ফিরে এলেন। কলকাতায় ইংরেজদের দমনের উদ্দেশ্যে সসৈন্যে যাত্রা। পথে কাশিমবাজার কুঠি দখল।
২০ জুন, ১৭৫৬ : কলকাতার দুর্গ নবাব সিরাজউদ্দৌলার দখলে। গভর্নর ড্রেক ও অন্য ইংরেজদের পলায়ন। গভর্নর হলওয়েলের আত্মসমর্পণ।
কলকাতার পতনের পর ড্রেক ও অন্য ইংরেজদের টিকে থাকতে সহায়তা দেন প্রভাবশালী হিন্দু উমীচাঁদ, জগৎশেঠ, রায়দুর্লভ, মানিকচাঁদ, নবকিষেণ প্রমুখরা।
১৬ অক্টোবর, ১৭৫৬ : পূর্ণিয়ার নবাবগঞ্জে বিদ্রোহী শওকত জঙ্গের সাথে নবাব সিরাজউদ্দৌলার যুদ্ধ। যুদ্ধে শওকত জঙ্গ পরাজিত ও নিহত।
১৫ ডিসেম্বর, ১৭৫৬ : মাদ্রাজ থেকে রবার্ট ক্লাইভ ও অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের অধীনে একদল সৈন্যের ফালতা আগমন ও ড্রেকের সাথে যোগদান।
২৭ ডিসেম্বর, ১৭৫৬ : ইংরেজ সৈন্য ও নৌবহরের কলকাতা অভিমুখে যাত্রা।
২ জানুয়ারি, ১৭৫৭ : মানিকচাঁদের বেঈমানি। ইংরেজদের কলকাতা পুনর্দখল।
৩ জানুয়ারি, ১৭৫৭ : দখলদার ইংরেজ বাহিনীর আসার সংবাদ পেয়ে নবাব সিরাজউদ্দৌলার কলকাতা অভিমুখে যুদ্ধযাত্রা।
১০ জানুয়ারি, ১৭৫৭ : রবার্ট ক্লাইভ হুগলি শহর দখল করে লুটতরাজ শুরু করে। আশপাশের গ্রাম জনপদ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়।
১৯ জানুয়ারি, ১৭৫৭ : নবাব সিরাজউদ্দৌলার হুগলি আগমন। ইংরেজদের কলকাতা ত্যাগ।
৩ ফেব্রুয়ারি, ১৭৫৭ : নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলকাতার শহরতলী আমির চাঁদের বাগানে শিবির স্থাপন করেন।
৫ ফেব্রুয়ারি, ১৭৫৭ : নবাব সিরাজউদ্দৌলার শিবির আক্রমণ করে ক্লাইভ ও ওয়াটসন শেষ রাতে। সিরাজবাহিনী পাল্টা আক্রমণ চালালে ক্লাইভ পিছু হটেন।
৯ ফেব্রুয়ারি, ১৭৫৭ : নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাথে ইংরেজদের আলীনগরের সন্ধি।
২৩ মার্চ, ১৭৫৭ : ক্লাইভের ফরাসি ঘাঁটি ও বাণিজ্য কেন্দ্র চন্দননগর দখল।
২৩ জুন, ১৭৫৭ : ভাগীররথী নদীর তীরে পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলার বাহিনীর সাথে রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে ইংরেজ বাহিনীর যুদ্ধ।
রণাঙ্গনের চিত্র
নবাব সিরাজউদ্দৌলার পক্ষ :
০১. সৈন্যসংখ্যা ৫০ হাজার। এর মধ্যে পদাতিক ৩৫ হাজার, অশ্বারোহী ১৫ হাজার
০২. মোট কামান ৫৩টি
০৩. ফরাসি সৈনিক সিনফ্রেঁর অধীনে কিছু কামান ও সৈন্য।
রবার্ট ক্লাইভের পক্ষ :
০১. সৈন্যসংখ্যা তিন হাজার
সিপাহি- দুই হাজার ২০০
ইউরোপীয়-৮০০
যুদ্ধে বিশ্বাসঘাতক সেনাপতি মীরজাফর ও রায়দুর্লভের চক্রান্তে এক বিশাল সৈন্যবাহিনী যুদ্ধ থেকে বিরত থাকে। মীরমদন ও মোহনলাল তাদের অধীন স্বল্পসংখ্যক সৈন্য নিয়ে প্রাণপণ যুদ্ধ করেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি।
২৬ জুন, ১৭৫৭ : নবাব হিসেবে মীরজাফর আলী খানের অভিষেক।
২৯ জুন, ১৭৫৭ : মীরজাফরের সিংহাসনে আরোহণ।
৩০ জুন ১৭৫৭ : রাজমহলে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে গ্রেফতার।
২ জুলাই, ১৭৫৭ : শৃঙ্খলিত অবস্থায় নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে মুর্শিদাবাদে আনয়ন। রাতে মীরজাফরের পুত্র মীরনের আদেশে ঘাতক মোহাম্মদী বেগের ছুরিকাঘাতে নবাব সিরাজউদ্দৌলা শাহাদত বরণ করেন।
গ্রন্থনা : আলম মাসুদ

No comments

Powered by Blogger.