মাদ্রিদে তিন বাঙাল by মুনতাসীর মামুন
জুভেরা কাজ শুরম্নর পরই মারা গেলেন। এরপর নিয়োগ করা হলো এক ইতালীয় স্থপতি জিওভান বাতিসত্মা সাক্কিতিকে। জিওভান প্রাসাদের আয়তন কমিয়ে আনলেন। শুরম্ন হলো প্রাসাদ নির্মাণ। একযুগে চলে গেল।
রাজা ফিলিপ প্রাসাদে বাস না করেই মারা গেলেন। ১৭৬৪-এর দিকে অর্থাৎ ৩০ বছর পর প্রাসাদের দৰিণ অংশের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। তখন রাজা তৃতীয় চার্লস। তিনি প্রাসাদের দৰিণাংশে উঠলেন। সাক্কিতির পর আরও যাঁরা প্রাসাদ নির্মাণে অংশ নিয়েছিলেন তাঁরা হলেন ইতালির ডমিনিকো এবং জিওভান বাতিসত্মা টিপোলো, ফ্রানসেসকো সাবাতিনি, ফোররাডো জিয়াকুইনতো, ফেমিশ মেংগস এবং স্পেনীয় ভেনচুরা রডরিগেজ ও ফ্রানসিসকো বাইয়ো।উনিশ শতকের গোড়ার দিকে এসে প্রাসাদ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়। ভেতরে আমরা যাইনি বটে তবে, ভেতরে যে জাঁকজমকের কমতি নেই তা বলাই বাহুল্য। হাশেম ভাই মিনিট পনের খরচ করে তিনটে ছবি তুললেন। এই পনের মিনিট গেল স্থান নির্বাচন, কম্পোজিশন, আলোছায়ার খেলা ঠিক করতে। তবে, আমার মনে হয়, ভাবি থাকলে বোধহয় পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সব কাজ সম্পন্ন হতো।
পালাসিও থেকে বেরিয়ে আসি। উত্তর দিক ধরে হাঁটতে থাকি। প্রাসাদের কম্পোজিশনের দিকেও স্থপতিরা মন দিয়েছিলেন। প্রাসাদের উত্তরে আছে একটি চত্বর পস্নাজা ডি লা আমেরিয়া। দৰিণে একটি বাগান। সাবাতিনির নকশা অনুযায়ী নির্মিত দেখে নাম জার্দিন দ্য সাবাতিনি। তবে, প্রাসাদটিকে সম্পূর্ণতা দিয়েছে পস্নাজা দ্য অরিয়েন্টে। প্রাসাদের চারদিকে বাড়িঘরের কারণে আজ যে খোলামেলা ভাবটি দেখছি তা ছিল না। উনিশ শতকের প্রথমদিকে রাজা ছিলেন নেপোলিয়নের ভাই যোশেফ বোনাপোর্টি [১৮০৮-১৮১৩] প্রাসাদের পশ্চিমে তিনি একটি পস্নাজা নির্মাণের কাজ শুরম্ন করেন। অবশ্য শেষ করতে পারেননি। অনেক পরে বুঁরবো বংশের সপ্তম ফার্দিনান্দের কন্যা দ্বিতীয় ইসাবেলা চত্বরের নির্মাণ কাজ শেষ করেন একটি ভাস্কর্য দিয়ে। হ্যাপসবুর্গ বংশের চতুর্থ ফিলিপের ঘোড়ায় চড়া মূর্তি। ভেলাসকেথের ডিজাইন অনুযায়ী এটি নির্মাণ করেছিলেন পিয়েত্রো টাক্কা।
পস্নাজা অরিয়েন্টের সামনেও বাগান। বাগানের পাশে রাসত্মা ধরে এগুলেই টিয়েট্রো বিয়াল। ১৮৫০ সালে নির্মিত। এখানে নিয়মিত অপেরা হতো। এখনও হয়ত হয়।
'আমাদের বোধহয় কিছু টাকা ভাঙ্গানো দরকার', বললেন হাশেম ভাই।
'ঠিক বলেছেন, 'বলি আমি, 'মাসুম, আশপাশে কোন ব্যাংক আছে?'
'আছে নিশ্চয়।' তবে আমার মনে হয় ব্যাংকের বিষয়টা সে জানে না। এদিকে আমরা হাজির হয়েছি আইউনতামিয়েনত্মোর সামনে। আইউনতামিয়েনত্মো হচ্ছে টাউন হল। এর আশপাশে সরম্ন রাসত্মা। সেসব আবার মিলিছে বড় রাসত্মায়। মাসুম এ ধরনের দু'একটি রাসত্মা ধরে নিয়ে যায় পস্নাজা দ্য স্পেনার দিকে। উত্তরে ছিলাম, এবার দৰিণে এলাম।
স্পেনাও এক বড় চত্বর। এখানে বেশ কটি বড় রাসত্মা এসে মিলেছে যেমন ক্যালে দ্য লা প্রিন্সেসা, গ্রানভিয়া, ক্যালে দ্য বাইলেন। এর একদিকে ইউরোপের সর্বোচ্চ ইমারত 'টরে দ্য মাদ্রিদ।' স্থপতি ওতামেন্দির নকশায় ১৯৫০ সালের দিকে নির্মিত। পস্নাজার একদিকে পিরামিড আকৃতির একটি ইমারত। এরও স্থপতি ওতামেন্দি। এর সামনে সাঙ্কো পাঞ্জার ভাস্কর্য। ১৯২০-এর দিকে কউলাউত ভ্যালেরা নির্মাণ করেছিলেন। এর নাম 'মনুমেন্ট টু সারভেনটিজ।'
রাসত্মার দু'পাশে দোকানপাট। ফুটপাতে ব্যসত্ম মানুষের ভিড়। এর মাঝে আমরা ব্যাংক খুঁজতে থাকি। একটিতে ঢুকি। মাসুম কাউন্টারে গিয়ে জিজ্ঞেস করে ডলার ভাঙ্গানো যাবে কি না। উত্তর না। আরেকটি ব্যাংক খুঁজতে থাকি। এখানেও একই উত্তর। মাসুম এরপর গেটে দাঁড়ানো দারোয়ান, পথচারী দু'একজনকে জিজ্ঞেস করে আরেকটি ব্যাংকের খোঁজ পায়। সে বরাবর হাঁটতে থাকি। ব্যাংকের বাইরেটা মোটেই মনোহর নয়। ভেতরেও সংস্কার চলছে। একটি কাউন্টার এবং সেখানে একটি লাইন। আমি লাইনে দাঁড়াই। হাশেম ভাই আর মাসুম পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলতে থাকেন। লাইন খুব একটা নড়ে না। আধঘণ্টা পর সন্দেহ হলো। মনে হলো, এখানে বেকার ভাতা বা পেনশন দেয়া হয়। ইউরোপের কয়েকটি শহরে বিভিন্ন সময় ডাকঘর বা ব্যাংকে এ ধরনের লাইন দেখেছি। একটু পর্যবেৰণ করলে কোন লাইন কি ধরনের বোঝা যায়। যেমন টাকা ওঠানোর লাইনে সাধারণত যারা দাঁড়ায় তারা থাকে খানিকটা অস্থির। দ্রম্নত কাজ সারতে দায়। সে লাইনটিও এগোয় দ্রম্নত। আর বেকারভাতা লাইনের মানুষজন খানিকটা নিজর্ীব। কাউন্টারে তাদের কাগজপত্র দেখে ভাতা দেয়া হয়, তাই সময় লাগে। মাসুমকে বললাম, 'ব্যাপারটা সুবিধের মনে হচ্ছে না। সামনে গিয়ে একটু জিজ্ঞেস করো দেখি।'
মাসুম সামনে এগিয়ে যায়। খানিক পর ফিরে এসে জানায় আমার সন্দেহ ঠিক। আধঘণ্টা বেকার গেল। লাইন ছেড়ে বেরিয়ে আসি। তিনজন আবার ফুটপাত ধরে হাঁটতে থাকি। সূর্য বেশ উপরে। সবকিছু তেতে উঠছে। বলি, 'হাশেম ভাই, আরেকটি দেখি। ওইটাই লাস্ট।' আমার কথা শেষ না হতেই এক বাঙালী তরম্নণ হাশেম ভাইকে থামায়। তিনজনই বিস্মিত হয়ে দাঁড়াই।
'আপনি হাশেম ভাই, হাশেম খান সাহেব না, চাঁদপুরের।'
'হঁ্যা।'
'আরে, আমিও চাঁদপুরের। আপনাকেও দেখেছি মনে হয়,' আমার দিকে ফিরে বলে যুবক।
'আমিও চাঁদপুরের,' জানাই আমি।
'উনি মুনতাসীর মামুন,' হাশেম ভাই পরিচয় করিয়ে দেন।
'আরে তাই কন, সেই জন্যই তো চেনা চেনা লাগছে। তা চলেন।' বলে, মাসুমের দিকে তাকিয়ে বলে, 'আপনারেও তো চিনি।'
মাসুম ঘাড় নাড়ে। আমি বলি,
'কই?'
'চলেন, আমার ঐখানে। দুপুরে খাবেন।'
'তা আপনে তো কাজে যাচ্ছেন। সেইটার কি হইব?' আমি জিজ্ঞেস করি। যুবকের বোধহয় খেয়াল হয় যে সে কাজে যাচ্ছে। অপ্রতিভ হয়ে সে কী বলবে বুঝতে পারে না। হাশেম ভাই চাঁদপুরে তার ঠিকুজির খোঁজ নেন। দু'জনে ঠিকুজি মেলাতে থাকে। যুবকটি এরপর বলে, 'লন এক কাপ চা খাই।'
হাশেম ভাই তাকে বোঝাতে থাকেন যে, আমরা এখন ব্যাংকের খোঁজে আছি। চা'টা পরে খাওয়া যাবে না হয়। আছি তো আমরা কয়েকদিন। যুবকটি মাসুমকে বলে, 'একটা দিন ভাইদের নিয়া আসেন।' মাসুম ঘাড় নাড়ে। যুবকটি তৃপ্ত মনে কাজে রওনা হয়। আমরা বিলৰণ জানি, তার সঙ্গে আমাদের আর দেখা হবে না।
মিনিট দশেক হাঁটার পর একটি জাঁকালো ব্যাংক পাই। মনে হয়, এবার মুশকিল আসান হবে। ভেতরে ঢুকে দেখি, সত্যিই বেশ জাঁকালো। বিভিন্ন কাউন্টারে লাইন। অনেককে জিজ্ঞেস করে খালি এক কাউন্টারে এসে দাঁড়াই। এখানেই টাকা ভাঙ্গানো যাবে। সুবেশী মধ্য বয়েসী এক মহিলা এসে জিজ্ঞেস করেন, কী করতে পারেন তিনি আমাদের জন্য। মাসুম জানায়, আমরা ডলার ভাঙ্গাতে চাই। সে ব্যবস্থা কি আছে? মহিলা জানান, অবশ্যই আছে।
'মাসুম রেট কত, জিজ্ঞেস করো তো।' হাশেম ভাই বলেন মাসুমকে। মহিলাকে মাসুম প্রশ্নটি জানায়। কাগজপত্র দেখে যে উত্তর দেন তাতে আমরা চমকে উঠি। এত কম।
'হাশেম ভাই, স্টেশনে তো এর ডাবল রেট।' আর্তনাদ করে উঠি আমি।
'না হবে না,' বিষণ্ন কণ্ঠে জানান হাশেম ভাই, 'স্টেশনেই উত্তম।'
বিনা বাক্য ব্যয়ে ব্যাংক ছেড়ে বেরিয়ে আসি। সূর্যের তাপ আরও বেশি লাগছে। তার ওপর একটা ঘণ্টা বৃথা হাঁটাহাঁটি। একটা বাজে প্রায়, ৰিদেও লেগে গেছে।
'চলো মাসুম বাঙালী পাড়ায় যাই।' বলি আমি। মনির ভাই জানিয়ে ছিলেন একটি এলাকায় বাঙালী দোকানপাট বেশি, সেটিই বাঙালী পাড়া। আমরা তিনজন হাঁটতে থাকি। একটি রাসত্মার মোড়ে এসে পেঁৗছাই। সামনে পানশালা। মাসুম আমাদের নিয়ে সেখানে ঢোকে। মনে হলো, বোধহয় হালকা খাওয়ার জন্য মাসুম এখানে নিয়ে এসেছে। এক কোণে কাউন্টারের সামনে রাখা টুলে বসি। মাসুমকে বলি, 'বসো।' মাসুম দু'টি কমলার রসের অর্ডার দেয়।
'তুমি,' জিজ্ঞেস করেন হাশেম ভাই।
'আমি একটা কাজ সেরে আসি,' বলে মাসুম।
'ঠিক আছে, তুমি এলে খেতে যাব।' জানান হাশেম ভাই।
শীতল কমলার রস গলা বেয়ে নামতেই বুঝতে পারি কতটা তৃষ্ণার্ত ছিলাম। শুধু তাই নয়, গরম যে কতটা কানত্ম করে তুলেছে তাও হাড়ে হাড়ে টের পেলাম।
'হাশেম ভাই, পস্নানটা ঠিক করেন', বলি আমি, 'খিদেও লাগছে।'
'মাসুম আসুক', নিশ্চিনত্ম কণ্ঠে জবাব দেন হাশেম ভাই, 'আমরা খেয়ে দেয়ে বাঙালী পাড়াটা দেখে, স্টেশনে টাকা ভাঙ্গিয়ে ফিরে যাব।'
কমলার রস শেষ হয়ে যায়। মাসুম তখনও ফিরে আসেনি। ফিরতে ফিরতে তার আধঘণ্টা। হাশেম ভাই বলেন, 'চলো, হালকা কিছু খেয়ে নেয়া যাক।'
'আমার বাসাটা এখানে', কুণ্ঠিত কণ্ঠে জানায় মাসুম, 'মানে আমরা কয়েকজন মিলে থাকি। আমরা দুপুরে আপনাদের খাওয়ার বন্দোবসত্ম করেছি।'
'বলো কী!' হাশেম ভাই বিস্মিত হন। ইউরোপের সর্বত্র বাঙালী এভাবে দেশ থেকে ৰণিকে জন্য আসা বাঙালিদের আপ্যায়ন করে। কিন্তু আমি প্রমাদ গুণি। মাসুমের মেসে যদি যাই খেতে, তারা যেভাবে আপ্যায়ন করবে, বিশ্রাম নিতে বলবে, খবরাখবর জানতে চাইবে তাতে কমপৰে তিন চার ঘণ্টা লাগবে। আমাদের জন্য তা অনেক। এসব ৰেত্রে হাশেম ভাইয়ের জাপানী ভদ্রতা কোন কাজে আসবে না। হাশেম ভাই জাপানীদের মতো কখনও না বলতে পারেন না। বললাম, 'মাসুম, দুপুরের খাবারটা হবে না। তুমি তো জানো আমাদের সময় কম। তোমারও সময় কম। সন্ধ্যায় তোমার ডিউটি। এর মধ্যে তোমাকে নিয়ে আমাদের কয়েকটা জায়গা ঘুরতে হবে। সেটি কি সম্ভব?'
মাসুম খানিক চিনত্মা করে জানায়, না, সম্ভব নয়। 'তবে', দুর্বল গলায় জানায়, 'আগামীকালও তার ডিউটি সন্ধ্যায়। আগামীকালও আমরা ঘুরতে পারব।'
'তা হলে, আগামীকাল খেয়ে নেব।' দরাজ গলায় জানাই আমি। কারণ, আমার অভিজ্ঞতা বলে, সেই আগামীকাল ক্বচিৎ কখনও আসবে।
'ঠিক আছে।' একটু ৰুণ্ন হয় মাসুম। তাকে চাঙ্গা করার জন্য বলি, 'আমরা কিন্তু কয়েকজন বাঙালীর সঙ্গে আলাপ করতে চাই।'
'তা হবে', মাসুম জানায়, 'ঐ পাড়ায় আমার দুলাভাইয়ের দোকান আছে।'
মাসুম নিজের কথা খুব একটা বলতে চায় না। বলেওনি। আমিও খুব একটা জিজ্ঞেস করিনি। জানতে পেরেছি, ঢাকায় কোন এক নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তারপর পড়াশোনার জন্য আসে ইউরোপের একটি দেশে। কোন দেশের কথা জানিয়ে ছিল তা আমার মনে নেই। কিন্তু পড়াটা হয়নি। তার বোন থাকে এখানে। চলে এসেছে তাই স্পেনে। বোন যথেষ্ট সচ্ছল। কিন্তু মাসুম একা থাকে মেস করে, চাকরি করে। কালচারে একটা ডিগ্রি নেয়ার ইচ্ছে আছে। অনলাইনে বাংলা পত্রিকা বের করে। তবে, একটা অভিমানও আছে। সেটি কি দেশের নাট্যদলের প্রতি, নাকি পরিবারের প্রতি, নাকি কোন তরম্নণীর প্রতি জানি না। এরকম অনেক অভিমানী বাঙালী যুবক ইউরোপ আমেরিকায় ছড়িয়ে আছে। তাদের কারও কারও সঙ্গে বিভিন্ন সময় দেখা হয়েছে।
বার ছেড়ে আমরা তিনজন বেরম্নই কড়া রোদে। কয়েকটি বাঁক ঘুরে সরম্ন রাসত্মায় চলে আসি। অনেকটা লন্ডনের ব্রিকলেনের মতো। মাসুম মোবাইলে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে। খুব সম্ভব বাঙালী প্রবাসীদের সঙ্গে। আমরা রেসত্মরাঁর খোঁজ করি যেখানে দুপুরের খাবারটা সেরে নিতে পারি। মাসুম জানায়, তার আগে একজনের সঙ্গে আমরা দেখা করব। মাসুম ফোনে এ্যাপয়ন্টমেন্ট করেছে। বোঝা গেল বাঙািলদের মধ্যে তার একটি স্থান আছে।
ছোট একটা অফিস ঘরের সামনে এসে দাঁড়াই। লম্বাটে, অনেকটা সরকারী অফিসের করিডোরের মতো। শেষপ্রানত্মে এক যুবক বসে। তার উল্টোদিকে, বোঝা গেল বাঙালি, কম্পিউটারের সামনে বসে একটি বই থেকে টাইপ করছেন। দেখি সেটি একটি ডিকশনারি।
মাসুম খুব ভক্তিভরে পরিচয় করিয়ে দেয় যুবকটির সঙ্গে। নাম মোঃ শওকত আলী। ১৯৮৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছেন। আমাকে বিলৰণ চেনেন। শিৰকের মর্যাদা দিয়ে আপ্যায়ন করলেন। কুশলাদির পর জিজ্ঞেস করি, মাদ্রিদে বসে তিনি কি করছেন?
শওকত জানান, পাস করার পর তিনি লন্ডন চলে যান। সেখানে কিছুটা পড়াশোনা, তারপর চাকরি, তারপর ছোটখাটো ব্যবসা শুরম্ন করেন। ২০০১ সালের দিকে ব্যবসা সূত্রে আসেন মাদ্রিদে। আসা-যাওয়া করতে করতে মনস্থ করেন মাদ্রিদেই থিতু হবেন। তার কাছে মনে হয়েছিল লন্ডন থেকে মাদ্রিদ তার ব্যবসার জন্য ভাল। একটি রেসত্মরাঁ কিনেছেন। তার অফিসের পাশে চৌমাথায় রেসত্মরাঁটি। ইন্ডিয়ান রেসত্মরাঁ। জানালেন, ব্যবসায় ভাল করতে পারছেন না। রেসত্মরাঁটিও যেমন চলার কথা তেমন চলছে না। এখন বুফে সিস্টেম চালু করেছেন। আগের থেকে তুলনামূলকভাবে রেসত্মরাঁটি ভাল চলছে। আমি বললাম, 'লেগে থাকুন, মাদ্রিদে 'ইন্ডিয়ান' রেসত্মরাঁ কম। এক সময় না এক সময় দাঁড়িয়ে যাবে।'
'আমি আমদানি রফতানির ব্যবসাটা বন্ধ করে দিচ্ছি। তাতে লোকসান। রেস্টুরেন্ট না চললে বন্ধ করে দেব।'
'তা হলে চলবে কীভাবে?'
ব্যবসা বন্ধ করে, চাকরি না করে চলবার ব্যাপারে দেখলাম শওকত খুব কনফিডেন্ট। বললেন, 'লিখব।'
'লিখবেন, লিখে সংসার চালাবেন?'
আমি যাকে বলি, একেবারে বাকরহিত হয়ে যাই। ৩৫ বছর লিখে, একমাস সংসার চালাবার চিনত্মা করি না শুধু লিখে। আর এ যুবক বলে কী! মাদ্রিদে বই লিখে জীবন ধারণ করবে। শওকত জানান, মাঝে মাঝে তিনি দোভাষীর কাজ করেন। তাতে উপার্জন হয়।
'কিন্তু, কী লিখবেন?'
আশ্চর্য হয়ে আমি ফের একই প্রশ্ন করি।
(চলবে)
No comments