চরাচর-পৌনে তিন আনি জমিদারবাড়ি by হাকিম বাবুল
এক আনা, দুই আনা নয়; কড়ায়-গণ্ডায় গুনে গুনে পুরো পৌনে তিন আনা। এই হিসাব একটি জমিদারির অংশবিশেষ। যদিও এখন 'আনার' হিসাব কিংবা জমিদারিপ্রথা নেই।
কিন্তু প্রাচীন 'কামাখ্যা' জনপদের অংশ শেরপুর পরগনার একসময়কার আনার হিসাবে বিভক্ত ষোল আনা জমিদারির মধ্যে পৌনে তিন আনির জমিদাররা ছিলের অন্যতম প্রভাবশালী জমিদার। তাঁদের বসতবাটি এবং কাছারি আজও শেরপুরবাসীর কাছে 'পৌনে তিন আনি জমিদারবাড়ি' হিসেবেই পরিচিত। শহরের নারায়ণপুর এলাকায়, যেখানে এখন 'কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট' প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, সেটিই পৌনে তিন আনি জমিদারবাড়ি। সাতটি পুকুরঘেরা এই জমিদারবাড়ির নান্দনিক স্থাপত্য নকশা প্রায় দুই-তিন শ বছর পেছনে নিয়ে যায় দর্শনার্থীদের। এখানে আরো আছে চুন-সুরকির উপাদানে তৈরি শিশমহল, রংমহল, কাছারিবাড়ি ও অন্নপূর্ণা-গোপীনাথ মন্দির। অন্নপূর্ণা মন্দিরে আছে একটি মূল্যবান কষ্টিপাথরের মূর্তি।
শিশমহলে জমিদার তাঁর পত্নী নিয়ে থাকতেন। এটি চারপাশে দেয়াল দ্বারা সুরক্ষিত। এর উত্তরপ্রান্তে পৃথক দুটি পুকুরের একটিতে জমিদার ও তাঁর পত্নী এবং অন্যটিতে পরিবারের সদস্যরাই কেবল স্নান করতেন। শানবাঁধানো ঘাটে বসে অলস সময় কাটাতেন। শিশমহলের আঙিনায় প্রবেশাধিকার ছিল সংরক্ষিত। এটির সামনেই রংমহল। এর এক অংশে ছিল কাছারি। রংমহলটি আবার বেশ কয়েকটি কামরায় বিভক্ত। বর্তমানে শিশমহল আর কাছারির মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে একটি গেস্ট হাউস, যা এ জমিদারবাড়ির সৌন্দর্যকে অনেকটাই ম্লান করে দেয়। দৃষ্টিকটু এ গেস্ট হাউস দর্শনার্থীদের কষ্ট দেয়। এক সময় জমিদারবাড়ির রংমহলের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে মহাফেজখানায় বিশাল এক লাইব্রেরি ছিল। 'জয়কিশোরী লাইব্রেরি' নামে পৌনে তিন আনি জমিদারদের প্রতিষ্ঠিত সেই লাইব্রেরিতে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার দুর্লভ গ্রন্থের সংগ্রহ ছিল। বিজ্ঞান সম্পর্কিত, বিশেষ করে বায়োলজি ও ইতিহাস, জীবনী, অর্থনীতি, বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্য প্রভৃতি নানাবিধ বিষয়ের বই ছিল। কিন্তু আজ আর সেই লাইব্রেরি কিংবা বইয়ের অস্তিত্ব নেই। নেই সেই মহাফেজখানা। সেটি ভেঙে সেখানে কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম বানানো হয়েছে।
খ্রিস্টীয় তের শ শতক পর্যন্ত শেরপুর ছিল কামরূপ রাজ্যের অধীন। পঞ্চদশ শতকে আফগান সুলতানরা বাংলা মুলুকের মালিক হলে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলো সরাসরি নিজেদের হাতে রেখে বাকি রাজ্য তাঁদের সেনাপতিদের মধ্যে শাসনের জন্য ভাগ করে দেন। সেনাপতিরা আবার সেগুলো তাঁদের সৈন্যদের মধ্যে ভাগ করে দেন। সৈন্যরা সেগুলো নিজেরা চাষবাস না করে তাঁদের আত্মীয়স্বজন এবং প্রয়োজনে সাহায্য ও উপযুক্ত অর্থের বিনিময়ে স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে বিতরণ করেন। এভাবেই আফগান শাসকদের দ্বারা বাংলায় জমিদারিপ্রথার প্রচলন হয়েছিল।
হাকিম বাবুল
শিশমহলে জমিদার তাঁর পত্নী নিয়ে থাকতেন। এটি চারপাশে দেয়াল দ্বারা সুরক্ষিত। এর উত্তরপ্রান্তে পৃথক দুটি পুকুরের একটিতে জমিদার ও তাঁর পত্নী এবং অন্যটিতে পরিবারের সদস্যরাই কেবল স্নান করতেন। শানবাঁধানো ঘাটে বসে অলস সময় কাটাতেন। শিশমহলের আঙিনায় প্রবেশাধিকার ছিল সংরক্ষিত। এটির সামনেই রংমহল। এর এক অংশে ছিল কাছারি। রংমহলটি আবার বেশ কয়েকটি কামরায় বিভক্ত। বর্তমানে শিশমহল আর কাছারির মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে একটি গেস্ট হাউস, যা এ জমিদারবাড়ির সৌন্দর্যকে অনেকটাই ম্লান করে দেয়। দৃষ্টিকটু এ গেস্ট হাউস দর্শনার্থীদের কষ্ট দেয়। এক সময় জমিদারবাড়ির রংমহলের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে মহাফেজখানায় বিশাল এক লাইব্রেরি ছিল। 'জয়কিশোরী লাইব্রেরি' নামে পৌনে তিন আনি জমিদারদের প্রতিষ্ঠিত সেই লাইব্রেরিতে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার দুর্লভ গ্রন্থের সংগ্রহ ছিল। বিজ্ঞান সম্পর্কিত, বিশেষ করে বায়োলজি ও ইতিহাস, জীবনী, অর্থনীতি, বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্য প্রভৃতি নানাবিধ বিষয়ের বই ছিল। কিন্তু আজ আর সেই লাইব্রেরি কিংবা বইয়ের অস্তিত্ব নেই। নেই সেই মহাফেজখানা। সেটি ভেঙে সেখানে কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম বানানো হয়েছে।
খ্রিস্টীয় তের শ শতক পর্যন্ত শেরপুর ছিল কামরূপ রাজ্যের অধীন। পঞ্চদশ শতকে আফগান সুলতানরা বাংলা মুলুকের মালিক হলে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলো সরাসরি নিজেদের হাতে রেখে বাকি রাজ্য তাঁদের সেনাপতিদের মধ্যে শাসনের জন্য ভাগ করে দেন। সেনাপতিরা আবার সেগুলো তাঁদের সৈন্যদের মধ্যে ভাগ করে দেন। সৈন্যরা সেগুলো নিজেরা চাষবাস না করে তাঁদের আত্মীয়স্বজন এবং প্রয়োজনে সাহায্য ও উপযুক্ত অর্থের বিনিময়ে স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে বিতরণ করেন। এভাবেই আফগান শাসকদের দ্বারা বাংলায় জমিদারিপ্রথার প্রচলন হয়েছিল।
হাকিম বাবুল
No comments