অঙ্ক না পারায়- স্কুলে শিক্ষকদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা শুধু বিদ্যাশিক্ষা করে না; একই সঙ্গে শিক্ষকের সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও ভাল আচরণ শিখে
বাংলাদেশে গত কয়েক দশকে শিক্ষা খাতে
যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। আগের তুলনায় অনেক বেশিসংখ্যক ছাত্রছাত্রী এখন
বিদ্যালয়ে যাচ্ছে; তুলনামূলকভাবে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমেছে।
এত উন্নতির পরও শিক্ষাব্যবস্থায় যা বদলায়নি, তা হলো কিছু শিক্ষকের
মানসিকতা ও প্রবণতা। তাঁরা কেউ কেউ এখনও ঔপনিবেশিক যুগের মতোই মনের দিক
দিয়ে যেন অন্ধকারে আছেন; স্কুলে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের বেধড়ক পেটাচ্ছেন।
তাঁদের প্রহারে শিক্ষার্থীরা অনেক সময়ই মারাত্মকভাবে জখম হচ্ছে। মঙ্গলবার
সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক
বেত দিয়ে পিটিয়ে জখম করেছেন পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রী। তার অপরাধ, সে ক্লাসে
অঙ্ক পারেনি। জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক এই অপরাধে সেই ছাত্রীর শরীরে ৩০
বার বেত্রাঘাত করেন। পড়া না পারলে শাসন করার অধিকার অবশ্যই শিক্ষকের রয়েছে।
কিন্তু এটা কী ধরনের শাসন? ক্লাসে সব ছাত্রছাত্রী যে সমান মেধাবী হবেÑএমন
কথা নেই। কেউ ইংরেজীতে ভাল, অঙ্কে খারাপ; কেউ অঙ্কে ভাল, বাংলায় খারাপ।
ছাত্রছাত্রীদের মেধাগত এই পার্থক্য প্রতিটি ক্লাসে, প্রতিটি স্কুলে রয়েছে। এ
ক্ষেত্রে শিক্ষকদের কর্তব্য ধৈর্য সহকারে শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বিষয়
বোঝানো। একবার না পারলে বার বার চেষ্টা করাই শিক্ষকদের দায়িত্ব। কিন্তু
শিক্ষক যদি ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন বা শিক্ষার্থীদের পড়া না বুঝিয়ে নির্দয়ভাবে
বেত্রাঘাত করেন তবে তা কখনও শিক্ষার্থীদের জন্য ভাল হবে না। এর ফলে তারা
শুধু শারীরিকভাবেই ক্ষতবিক্ষত হবে না; মানসিক দিক দিয়েও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
শিশু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যেসব শিক্ষার্থী স্কুলে শিক্ষকদের কাছ থেকে
নিষ্ঠুর ব্যবহার পায় বা প্রহৃত হয়, তারা পরবর্তী জীবনে এক ধরনের আতঙ্ক ও
হীনম্মন্যতা নিয়ে বড় হয়। স্কুলে প্রহার বা নির্যাতনের ঘটনা শিশুদের কোমল
মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে; তারা সারাজীবন এই দুঃস্বপ্নের স্মৃতি বহন করে। এ
কারণে বিশ্বের অনেক স্কুলে শিক্ষার্থীদের প্রহার করা সম্পূর্ণভাবে
নিষিদ্ধ।
শিক্ষকের উচিত আদর ও ভালবাসা দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিদ্যাশিক্ষা দেয়া। শিক্ষার্থীদের জীবনে বাবা-মার পরেই শিক্ষকদের মর্যাদা। স্কুলে শিক্ষকদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা শুধু বিদ্যাশিক্ষা করে না; একই সঙ্গে শিক্ষকের সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও ভাল আচরণও শিখে। কিন্তু শিক্ষক যদি পড়া না বুঝিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রহার করেন, তবে গুরুজনদের প্রতি সেই শিক্ষার্থী কখনই শ্রদ্ধাশীল হতে পারবে না।
শিক্ষকের উচিত আদর ও ভালবাসা দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিদ্যাশিক্ষা দেয়া। শিক্ষার্থীদের জীবনে বাবা-মার পরেই শিক্ষকদের মর্যাদা। স্কুলে শিক্ষকদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা শুধু বিদ্যাশিক্ষা করে না; একই সঙ্গে শিক্ষকের সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও ভাল আচরণও শিখে। কিন্তু শিক্ষক যদি পড়া না বুঝিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রহার করেন, তবে গুরুজনদের প্রতি সেই শিক্ষার্থী কখনই শ্রদ্ধাশীল হতে পারবে না।
No comments