বগুড়ায় সেই শহীদ মিনার ফিরিয়ে দেয়া হোক
সেই শহীদ মিনার আজও খুঁজে ফেরে বগুড়ার
হাজারো মানুষ। যা ২ হাজার ২ সালে এক ‘তরুণ প্রভুর’ নির্দেশে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে
দেয়া হয়। রাজনৈতিক দলের কর্মীদের পকেট ভারি করে দিতে আধুনিকতার কথা বলে যে
শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয় তা মেনে নিতে পারেনি বগুড়ার প্রগতিশীল ধারার
সকল মানুষ।
গণমানুষের শহীদ মিনার ভেঙ্গে কৌশলে বিশেষ একটি
দলের নাম লেখা শহীদ মিনার পাল্টাবার দাবি নিয়ে বগুড়ার মানুষ কম আন্দোলন
করেনি। বারবার আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মারপ্যাঁচে অবস্থা যে তিমিরে ছিল সেই
তিমিরেই রয়ে যায়। একুশের দিবসসহ জাতীয় দিবসগুলোতে অনেক সংগঠন নিজেরাই
প্রতীকী শহীদ মিনার বানিয়ে হৃদয়ে শহীদদের প্রতি অপার শ্রদ্ধা লালন করে
পু®পার্ঘ্য অর্পণ করে। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব তৌফিক হাসান ময়না বলেন,
‘আমাদের হৃদয়ের শহীদ মিনার ফিরিয়ে দেয়া হোক।’
বগুড়া শহরের নবাব বাড়ি সড়কের ধারে শহীদ খোকন পার্কের ভিতরে পূর্ব দিকে ১৯৮৩ সালে বগুড়ার কৃতী শিল্পী খন্দকার আমিনুল করিম দুলাল (প্রয়াত) নিজের নকশায় ও তত্ত্বাবধানে বাঙালীর জীবনগাথা শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। ওই শহীদ মিনারের ম্যুরালে (দেয়াল অঙ্কন) ছিল মহান ভাষা আন্দোলন থেকে ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলন, স্বৈরশাসন বিরোধী গণঅভ্যুত্থান এবং বিজয়গাথা মুক্তিযুদ্ধ। নকশাটি এমন ছিল যার উপরে অ আ ক খ এবং এর পথ ধরেই স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয়। পৌরসভা অনুমোদিত নকশায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে এমন শহীদ মিনার বগুড়ার ভাষা আন্দোলনের গর্বকে তুলে ধরে। সর্বস্তরের মানুষের কাছে কেন্দ্রীয় এই শহীদ মিনার শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। মনে করিয়ে দেয় বগুড়ার ভাষা আন্দোলনের দিনগুলোর কথাÑ১৯৫৩ সালে বগুড়ায় প্রথম শহীদ মিনার নির্মিত হয় আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠ, এ্যাডওয়ার্ড পার্ক ও সাতমাথায়। মুক্তিযুদ্ধের আগেই এগুলো ভেঙ্গে দেয় পাকিস্তানী শাসক। বগুড়ায় ভাষা আন্দোলনের দিনগুলোর ইতিহাসে জানা যায়, ১৯৫২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, শ্রমিক সংগঠন আন্দোলনে মাঠে নামে। এ্যাডওয়ার্ড পার্কের জনসভায় রাষ্ট্র ভাষার দাবিতে প্রথম সারিতে উপস্থিত ছিলেন মোখলেছুর রহমান, আব্দুল মতিন, মোশাররফ হোসেন ম-ল, গোলাম মহীউদ্দিন, জালাল উদ্দিন আকবর, শেখ হারুনুর রশীদ, নুরুল হোসেন মোল্লা, আব্দুর রহিম সওদাগর। তাঁদের নিয়েই ১৭ ফেব্রুয়ারি থানা রোডে আব্দুল ওয়াহার খলিফার বাসায় আব্দুল আজিজ কবিরাজের সভাপতিত্বে আন্দোলনের কমিটি গঠিত হয়। এরপর উত্তাল হয়ে ওঠে বগুড়া। ২০ ফেব্রুয়ারি মিছিলের নগরীতে পরিণত হয় গোটা শহর।
২১ ফেব্রয়ারি সন্ধ্যায় খবর আসে ঢাকায় মিছিলে গুলিবর্ষণে অনেক ছাত্র নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বগুড়ার ছাত্র নেতা গাজীউল হক মারা গেছেন। এই খবরে জ্বলে ওঠা বগুড়ায় ২২ ফেব্রুয়ারি হরতাল পালন করা হয় এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের ঘোষণা দেয়া হয়। এই ধর্মঘট চলে ১৮ দিন। এর মধ্যেই খবর আসে গাজীউল হক মারা যাননি। এভাবেই এগিয়ে যায় আন্দোলন। ১৯৫৩ সালে আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠের প্রথম শহীদ মিনারে প্রথম পু®পার্ঘ্য অর্পণ করেণ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের চরম পত্রের লেখক ও পাঠক এবং ‘আমি বিজয় দেখেছি’র প্রণেতা এম আর আখতার মুকুল। মহান ভাষা আন্দোলনের এই বীর যোদ্ধারা কেউ বেঁচে নেই। ভাষাসৈনিক ড. আবু নসর মুহাম্মদ গাজীউল হক (গাজীউল হক নামে অধিক পরিচিতি) ২ হাজার ৯ সালের ১৭ জুন ইন্তেকাল করলে বগুড়া শহরের সুলতানগঞ্জপাড়ায় তাঁর নিজ বাস ভবনে দাফন করা হয়। ভাষা আন্দোলনে বগুড়ার গর্বিত ভূমিকা সামনে রেখে যে শহীদ মিনার নির্মাণ করেছিলেন খন্দকার আমিনুল করিম দুলাল তা গুঁড়িয়ে দেয়ার আগে বাধা দেয়া হয়েছিল। তৎকালীন বিএনপি সরকার স্বৈরাচারী কায়দায় দমন করে। বর্তমান যে শহীদ মিনার স্টিলের বাঁকানো পাইপের মধ্যে বিদঘুটে এক নকশায় ব ন প অক্ষর বসানো আছে। জাতীয় দিবসসহ বিভিন্ন দিবসে এই শহীদ মিনারে কেউ স্বাচ্ছন্দ্যে অনুষ্ঠান করতে পারে না। হৃদয়ের শহীদ মিনার নেই বলে বাধ্য হয়ে কৃত্রিম শহীদ মিনারেই বগুড়ার মানুষ শহীদদের প্রতি পু®পার্ঘ্য অর্পণ করে। যাদের মন চায় না কেন্দ্রীয় এই শহীদ মিনারে যেতে তারা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দিয়ে আসে। এই বিষয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি, বগুড়া থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব তৌফিক হাসান ময়না বলেন, “আধুনিকতার কথা বলে প্রতারণা করে তৎকালীন সরকার যে শহীদ মিনার বানিয়েছে তাতে হৃদয়ের কোন ছাপই নেই। এমন কি সেখানে সাংস্কৃতিক কর্মকা-ও করা যায় না। আমরা চাই গণমানুষের শহীদ মিনার।
Ñসমুদ্র হক, বগুড়া
বগুড়া শহরের নবাব বাড়ি সড়কের ধারে শহীদ খোকন পার্কের ভিতরে পূর্ব দিকে ১৯৮৩ সালে বগুড়ার কৃতী শিল্পী খন্দকার আমিনুল করিম দুলাল (প্রয়াত) নিজের নকশায় ও তত্ত্বাবধানে বাঙালীর জীবনগাথা শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। ওই শহীদ মিনারের ম্যুরালে (দেয়াল অঙ্কন) ছিল মহান ভাষা আন্দোলন থেকে ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলন, স্বৈরশাসন বিরোধী গণঅভ্যুত্থান এবং বিজয়গাথা মুক্তিযুদ্ধ। নকশাটি এমন ছিল যার উপরে অ আ ক খ এবং এর পথ ধরেই স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয়। পৌরসভা অনুমোদিত নকশায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে এমন শহীদ মিনার বগুড়ার ভাষা আন্দোলনের গর্বকে তুলে ধরে। সর্বস্তরের মানুষের কাছে কেন্দ্রীয় এই শহীদ মিনার শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। মনে করিয়ে দেয় বগুড়ার ভাষা আন্দোলনের দিনগুলোর কথাÑ১৯৫৩ সালে বগুড়ায় প্রথম শহীদ মিনার নির্মিত হয় আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠ, এ্যাডওয়ার্ড পার্ক ও সাতমাথায়। মুক্তিযুদ্ধের আগেই এগুলো ভেঙ্গে দেয় পাকিস্তানী শাসক। বগুড়ায় ভাষা আন্দোলনের দিনগুলোর ইতিহাসে জানা যায়, ১৯৫২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, শ্রমিক সংগঠন আন্দোলনে মাঠে নামে। এ্যাডওয়ার্ড পার্কের জনসভায় রাষ্ট্র ভাষার দাবিতে প্রথম সারিতে উপস্থিত ছিলেন মোখলেছুর রহমান, আব্দুল মতিন, মোশাররফ হোসেন ম-ল, গোলাম মহীউদ্দিন, জালাল উদ্দিন আকবর, শেখ হারুনুর রশীদ, নুরুল হোসেন মোল্লা, আব্দুর রহিম সওদাগর। তাঁদের নিয়েই ১৭ ফেব্রুয়ারি থানা রোডে আব্দুল ওয়াহার খলিফার বাসায় আব্দুল আজিজ কবিরাজের সভাপতিত্বে আন্দোলনের কমিটি গঠিত হয়। এরপর উত্তাল হয়ে ওঠে বগুড়া। ২০ ফেব্রুয়ারি মিছিলের নগরীতে পরিণত হয় গোটা শহর।
২১ ফেব্রয়ারি সন্ধ্যায় খবর আসে ঢাকায় মিছিলে গুলিবর্ষণে অনেক ছাত্র নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বগুড়ার ছাত্র নেতা গাজীউল হক মারা গেছেন। এই খবরে জ্বলে ওঠা বগুড়ায় ২২ ফেব্রুয়ারি হরতাল পালন করা হয় এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের ঘোষণা দেয়া হয়। এই ধর্মঘট চলে ১৮ দিন। এর মধ্যেই খবর আসে গাজীউল হক মারা যাননি। এভাবেই এগিয়ে যায় আন্দোলন। ১৯৫৩ সালে আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠের প্রথম শহীদ মিনারে প্রথম পু®পার্ঘ্য অর্পণ করেণ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের চরম পত্রের লেখক ও পাঠক এবং ‘আমি বিজয় দেখেছি’র প্রণেতা এম আর আখতার মুকুল। মহান ভাষা আন্দোলনের এই বীর যোদ্ধারা কেউ বেঁচে নেই। ভাষাসৈনিক ড. আবু নসর মুহাম্মদ গাজীউল হক (গাজীউল হক নামে অধিক পরিচিতি) ২ হাজার ৯ সালের ১৭ জুন ইন্তেকাল করলে বগুড়া শহরের সুলতানগঞ্জপাড়ায় তাঁর নিজ বাস ভবনে দাফন করা হয়। ভাষা আন্দোলনে বগুড়ার গর্বিত ভূমিকা সামনে রেখে যে শহীদ মিনার নির্মাণ করেছিলেন খন্দকার আমিনুল করিম দুলাল তা গুঁড়িয়ে দেয়ার আগে বাধা দেয়া হয়েছিল। তৎকালীন বিএনপি সরকার স্বৈরাচারী কায়দায় দমন করে। বর্তমান যে শহীদ মিনার স্টিলের বাঁকানো পাইপের মধ্যে বিদঘুটে এক নকশায় ব ন প অক্ষর বসানো আছে। জাতীয় দিবসসহ বিভিন্ন দিবসে এই শহীদ মিনারে কেউ স্বাচ্ছন্দ্যে অনুষ্ঠান করতে পারে না। হৃদয়ের শহীদ মিনার নেই বলে বাধ্য হয়ে কৃত্রিম শহীদ মিনারেই বগুড়ার মানুষ শহীদদের প্রতি পু®পার্ঘ্য অর্পণ করে। যাদের মন চায় না কেন্দ্রীয় এই শহীদ মিনারে যেতে তারা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দিয়ে আসে। এই বিষয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি, বগুড়া থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব তৌফিক হাসান ময়না বলেন, “আধুনিকতার কথা বলে প্রতারণা করে তৎকালীন সরকার যে শহীদ মিনার বানিয়েছে তাতে হৃদয়ের কোন ছাপই নেই। এমন কি সেখানে সাংস্কৃতিক কর্মকা-ও করা যায় না। আমরা চাই গণমানুষের শহীদ মিনার।
Ñসমুদ্র হক, বগুড়া
No comments