শ্রেষ্ঠ সন্তান
তাঁর আসল নাম ছালেহা। কিন্তু কেউই এ নামে
ডাকেন না। সবাই ডাকেন মিরাশি বেগম বা মিরাশের মা নামে। এ নামেই তিনি এখন
পরিচিত। তবে এই মিরাশি বেগমের নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এমন আরও এক পরিচয় বা
খ্যাতি; যা অর্জন করা এখন আর কারও পইে কোনদিন সম্ভব নয়।
মিরাশির মা দেশ-মাতৃকার এক 'শ্রেষ্ঠ সন্তান'। আবার চির অবহেলিত, বঞ্চিত এবং
হতভাগ্য (!) নারীর এক প্রতিচ্ছবিও তিনি। কাকন বিবি বা তারামন বিবির মতো
মিরাশির মাও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। নিরৰর, দীনদরিদ্র ও সহজ-সরল এই গ্রাম্য
গৃহবধূ একাত্তরে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন পাকসেনাদের বিরম্নদ্ধে।
বীরের মতোই চালিয়েছিলেন অস্ত্র ও গোলাবারম্নদ। সেবা-শুশ্রূষা দিয়ে, রান্না
করে খাইয়ে সুস্থ করে তুলেছিলেন অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে। কিন্তু এর কোন
স্বীকৃতিই যেন পাননি তিনি। বলাবাহুল্য, আজ তার দিন চলে খেয়ে না খেয়ে।
অন্যের কাছে হাত পেতে।
নেত্রকোনার মদন উপজেলার মদন গ্রামের মৃত চাথু মিয়ার স্ত্রী মিরাশি বেগম (ছালেহা)। একাত্তরে তাঁর বয়স ছিল ৩২-৩৩ এর মতো। স্বামীকে হারান যুদ্ধের আগেই। একাত্তরের আগস্ট মাসে উইং কমান্ডার কাজী শামছুল আলমের নেতৃত্বে কাজী ফোর্সের মুক্তিযোদ্ধারা যখন মদন সদরে অবস্থান নেন, তখন মিরাশি বেগম দায়িত্ব নেন তাঁদের রান্না-বান্নার। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পাকবাহিনীর হত্যা-নির্যাতনের কাহিনী শুনে তিনিও প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠেন। সহযোদ্ধাদের কাছ থেকে রপ্ত করেন অস্ত্র চালনা। মিরাশি বেগমের সহযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের কমান্ডার এখলাছ আহাম্মদ কোরাইশী জানান, মিরাশি বেগম কোন অস্ত্রের নাম বলতে পারতেন না। এলএমজি, এসএলআর বা ব্রেনগানকে তিনি 'ঠ্যাংঅলা রাইফেল', 'মুখফারা রাইফেল' বা 'বাডি বন্দুক'- এরকম আঞ্চলিক নামে বলতেন। সবই চালাতে শিখেছিলেন তিনি। এমনকি মর্টার চালক এখলাছ আহাম্মদ কোরাইশী যখন পাকবাহিনীর ওপর গোলা নিপে করতেন- তখনও তাঁর সহযোগী হিসাবে থাকতেন মিরাশি বেগম। এছাড়া মদনের সব বাড়ি-ঘর, অলিগলি তাঁর পরিচিত হওয়ায় তিনি সহজেই মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে পারতেন। মিরাশির সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর খুব কাছাকাছি নিরাপদ অবস্থানে থেকে আক্রমণ চালাতে পারতেন। ২৮ আগস্ট বিকালে পার্শ্ববর্তী কেন্দুয়া উপজেলা থেকে অসংখ্য পাক সেনা মদনে আক্রমণ চালায়। ওইদিন মদনে ছিলেন মিরাশি বেগমসহ মাত্র ১৫-১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা। তিন গ্রম্নপে ভাগ হয়ে তারা দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। হাতে ব্রেনগানসহ মিরাশি বেগমের অবস্থান ছিল মদন থানার একটি পরিখায়, গাজী আব্দুস সোবহানের নেতৃত্বাধীন গ্রম্নপে। বিকাল চারটা থেকে শুরম্ন হওয়া এ যুদ্ধ চলে টানা ১শ' ৭২ ঘণ্টা।
সহযোদ্ধারা জানান, অসীম সাহসী অথচ আনুষ্ঠানিক প্রশিণবিহীন এ মহিলা কোন মুক্তিযোদ্ধাকেই পাকবাহিনীর সামনে যেতে দেননি। কেউ যেতে চাইলেও বলতেন, 'আমি মরলে তোরা আইবে'। ভয়াবহ সে যুদ্ধে মদন উপজেলা শত্রম্নমুক্ত হয়। নিহত হয় অসংখ্য পাকসেনা। হতাহত হন বেশ ক'জন মুক্তিযোদ্ধাও। মিরাশি বেগমই গোপনে বিভিন্ন বাড়িতে রেখে আহতদের সেবা-শুশ্রূষা করেন।
মুক্তিযোদ্ধা মিরাশি বেগম আজ এক সত্তরোর্ধ, জরা-ব্যাধিগসত্ম অসহায় নারী। নিজের ভিটে-মাটি, সহায়-সম্বল বলতে কিছুই নেই। মিরাশি বেগম কী স্বাধীনতার আটত্রিশ বছর পরও অবহেলিত ও উপেতি এক গ্রাম্য নারীর প্রতিচ্ছবি হয়েই থাকবেন?
_সঞ্জয় সরকার, নেত্রকোনা
নেত্রকোনার মদন উপজেলার মদন গ্রামের মৃত চাথু মিয়ার স্ত্রী মিরাশি বেগম (ছালেহা)। একাত্তরে তাঁর বয়স ছিল ৩২-৩৩ এর মতো। স্বামীকে হারান যুদ্ধের আগেই। একাত্তরের আগস্ট মাসে উইং কমান্ডার কাজী শামছুল আলমের নেতৃত্বে কাজী ফোর্সের মুক্তিযোদ্ধারা যখন মদন সদরে অবস্থান নেন, তখন মিরাশি বেগম দায়িত্ব নেন তাঁদের রান্না-বান্নার। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পাকবাহিনীর হত্যা-নির্যাতনের কাহিনী শুনে তিনিও প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠেন। সহযোদ্ধাদের কাছ থেকে রপ্ত করেন অস্ত্র চালনা। মিরাশি বেগমের সহযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের কমান্ডার এখলাছ আহাম্মদ কোরাইশী জানান, মিরাশি বেগম কোন অস্ত্রের নাম বলতে পারতেন না। এলএমজি, এসএলআর বা ব্রেনগানকে তিনি 'ঠ্যাংঅলা রাইফেল', 'মুখফারা রাইফেল' বা 'বাডি বন্দুক'- এরকম আঞ্চলিক নামে বলতেন। সবই চালাতে শিখেছিলেন তিনি। এমনকি মর্টার চালক এখলাছ আহাম্মদ কোরাইশী যখন পাকবাহিনীর ওপর গোলা নিপে করতেন- তখনও তাঁর সহযোগী হিসাবে থাকতেন মিরাশি বেগম। এছাড়া মদনের সব বাড়ি-ঘর, অলিগলি তাঁর পরিচিত হওয়ায় তিনি সহজেই মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে পারতেন। মিরাশির সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর খুব কাছাকাছি নিরাপদ অবস্থানে থেকে আক্রমণ চালাতে পারতেন। ২৮ আগস্ট বিকালে পার্শ্ববর্তী কেন্দুয়া উপজেলা থেকে অসংখ্য পাক সেনা মদনে আক্রমণ চালায়। ওইদিন মদনে ছিলেন মিরাশি বেগমসহ মাত্র ১৫-১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা। তিন গ্রম্নপে ভাগ হয়ে তারা দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। হাতে ব্রেনগানসহ মিরাশি বেগমের অবস্থান ছিল মদন থানার একটি পরিখায়, গাজী আব্দুস সোবহানের নেতৃত্বাধীন গ্রম্নপে। বিকাল চারটা থেকে শুরম্ন হওয়া এ যুদ্ধ চলে টানা ১শ' ৭২ ঘণ্টা।
সহযোদ্ধারা জানান, অসীম সাহসী অথচ আনুষ্ঠানিক প্রশিণবিহীন এ মহিলা কোন মুক্তিযোদ্ধাকেই পাকবাহিনীর সামনে যেতে দেননি। কেউ যেতে চাইলেও বলতেন, 'আমি মরলে তোরা আইবে'। ভয়াবহ সে যুদ্ধে মদন উপজেলা শত্রম্নমুক্ত হয়। নিহত হয় অসংখ্য পাকসেনা। হতাহত হন বেশ ক'জন মুক্তিযোদ্ধাও। মিরাশি বেগমই গোপনে বিভিন্ন বাড়িতে রেখে আহতদের সেবা-শুশ্রূষা করেন।
মুক্তিযোদ্ধা মিরাশি বেগম আজ এক সত্তরোর্ধ, জরা-ব্যাধিগসত্ম অসহায় নারী। নিজের ভিটে-মাটি, সহায়-সম্বল বলতে কিছুই নেই। মিরাশি বেগম কী স্বাধীনতার আটত্রিশ বছর পরও অবহেলিত ও উপেতি এক গ্রাম্য নারীর প্রতিচ্ছবি হয়েই থাকবেন?
_সঞ্জয় সরকার, নেত্রকোনা
No comments