শুভ জন্মদিন অধ্য
অধ্য কাজী ফারুক আহমেদ। শিক নেতা হিসেবে দেশব্যাপী তাঁর পরিচিতি। চার দশক ধরে শিক আন্দোলনে। সে সাথে শিার মান উন্নয়নেও সরব। শিার মান ও শিকের মর্যাদার যুগপৎ উন্নয়নের কথা তাঁর বক্তব্য-বিবৃতিতে, লেখায়। বিগত চার দলীয় জোট সরকার আমলে শিকদের দাবি আদায় তাঁকে বেশি দেখা গেছে রাজপথের মিছিলে, সংবাদ সম্মেলনে, অনশন কর্মসূচীতে। আন্দোলনের কর্মসূচীতেও বৈচিত্র্য। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বরাবর কয়েক দফা লিখিত আবেদনের পরও সাাতকার না পাওয়ায় 'রক্ত দিয়ে লেখা' স্মারকলিপি পেশ, বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে জোট সরকারের শিকদের ওপর নির্যাতনের চিত্রপ্রদর্শনী উদ্বোধন। আবার জোট সরকারের সময় শিা মন্ত্রণালয় থেকে শিাবিরোধী আদেশ-নির্দেশ, প্রজ্ঞাপন-পরিপত্রের বিরুদ্ধে রাজপথে কার্টুন মিছিল। কার্টুনের শিরোনাম : বাংলাদেশে শিার হাল। এক মহিষ যেখানে পায়ের নিচে দলিত মথিত করছে বই-পুস্তক। পিয়ন থেকে প্রিন্সিপাল ১০০ টাকা বাড়ি ভাড়ার পরিবর্তে, সম্মানজনক বাড়ি ভাড়া অথবা সরকার থেকে আবাসন সুবিধার দাবিতে ঢাকা মহানগরসহ সকল জেলা-উপজেলায় শিকদের নিয়ে কবুতরের বসবাস উপযোগী ঘর তৈরি করে রাজপথে প্রদর্শনী। শিােেত্র অসঙ্গতি ও বিচু্যতির বিরোধিতার সাথে সাথে সে সব দূর করার পথ নির্দেশনাসহ নির্দিষ্ট সুপারিশ নিয়েও তিনি সক্রিয়। কারিকুলাম ও পাঠদানের উন্নয়নে, পরীা পদ্ধতির অসঙ্গতি দূর করতে, নকল প্রতিরোধে তাঁর সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা সরকারকে স্বীকার নিতে বাধ্য করেছেন। এ মানুষটিই কাজী ফারুক। একজন সংগ্রামী ও শিা উন্নয়ন-সংগঠকের প্রতিকৃতি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জনকণ্ঠ সম্পাদক আতিকুল্লাহ খান মাসুদ যখন শাসকগোষ্ঠীর কোপানলে পড়ে কারাগারে, জনকণ্ঠ যখন চরম প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করছে অসীম সাহসিকতার সাথে, তখন অধ্য কাজী ফারুকের উদ্যোগে দেশের সকল বিভাগের শিক-শিাকমর্ীরা সহমর্মিতা ও সংহতি প্রকাশ করেন জনকণ্ঠ পরিবারের সাথে তাদের দুঃসময়ে।
ষাটের দশকে ছাত্রজীবনে কাজী ফারুক আহমেদ বাষট্টির শিা আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা। শরীফ কমিশনের শিা সংকোচনমূলক গণবিরোধী প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে ঢাকা কলেজ থেকে ছাত্রসমাজ যে আন্দোলনের সূত্রপাত করে, পরে যা সারা পূর্ব পাকিস্তানে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তিনি ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক। ছাত্রদের এ কথা বোঝাতে সম হন যে, শিার আন্দোলন ও গণতন্ত্রের আন্দোলন এক সূত্রে গাঁথা। বাষট্টির এ শিা আন্দোলন আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের ভিত নড়িয়ে দেয়। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের ত্রে প্রস্তুতিতে অবদান রাখে।কাজী ফারুক কলেজে শিা জীবনের শুরুতে যে প্রগতিবাদী আন্দোলনের ধারার সাথে যুক্ত হন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও তা অব্যাহত থাকে। সে সময়টি ছিল দুনিয়াজোড়া সমাজ বদলের চিন্তা। সে চিন্তার সাথেও তিনি শামিল হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিা সমাপ্তির পর কিছুদিন সাংবাদিকতা। তারপর শিকতার পেশায় খুলনায় ১৯৭২ থেকে '৯৩ সালে ঢাকা মহানগরীর শেখ বোরহানুদ্দীন কলেজের অধ্য হিসেবে যোগদান। সহকমর্ীদের নিয়ে, অকান্ত শ্রমে একাডেমিক পরিকল্পনা রূপায়ণ করে সাধারণ ডিগ্রী কলেজকে উন্নীত করেন ঢাকা মহানগরের প্রথম বেসরকারী পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজে। কি সরকারী কি বেসরকারী_বাংলাদেশে কলেজ পর্যায়ে প্রথম প্রবর্তন করেন কম্পিউটার সায়েন্স, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, নৃবিজ্ঞানে অনার্স মাস্টার্স কোর্স। গড়ে তোলেন প্রয়োজনীয় ভৌত কাঠামো। ১৯৯৭ সালে প্যারিসে ইউনেস্কোর উনত্রিশতম অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে বক্তব্য রাখেন। তুলে ধরেন বাঙালীর শীতকালের রকমারি পিঠা, মেলা, মাছ ধরার আনন্দময় আয়োজন_চিরায়ত ঐতিহ্য, সংস্কৃতির কথা। কিন্তু চার দলীয় জোট সরকার মতায় এসেই তাঁকে কলেজ থেকে অন্যায় ও অবৈধভাবে অপসারণ করে। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টের রায় পেয়েও তিনি চার দলীয় জোট ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কর্মস্থলে যোগ দিতে পারেননি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার মতায় আসার পর তাঁকে সসম্মানে ঐ কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। ইতোমধ্যে তাঁর চাকরির বয়স শেষ। অবসরকালীন অবস্থায় তিনি এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার।
মহাজোট সরকার মতায় আসার পর তিনি জাতীয় শিানীতি ও এমপিওভুক্ত নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির সদস্য হিসেবে শিার মান উন্নয়নে ও শিক-কর্মচারীদের মর্যাদা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেই ান্ত হননি, 'নতুন জাতীয় স্কেলে বেতন পাওয়ার জন্য শিকদের আন্দোলন করতে হবে না'- শেখ হাসিনার এ প্রতিশ্রুতি কার্যকরেও তার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। শিার মান উন্নয়নের ল্যে ডিগ্রী কলেজে নূ্যনতম ৩ জন শিকসহ সর্বস্তরের শিা প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত শিক নিয়োগ এবং তাদের এমপিও, প্রশিণ নিশ্চিতকরণে অব্যাহতভাবে ভূমিকা পালন করে চলেছেন। একই সাথে শিকদের প্রতি তাঁর আহ্বান পাঠদানসহ শিার উন্নয়নে আরও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের জন্য। এ ব্যতিক্রমী শিক-ব্যক্তিত্বই অধ্য কাজী ফারুক। আজ ১২ ফেব্রুয়ারি, ৬৫ বছরে পদার্পণে তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা, শ্রদ্ধাঞ্জলি। তিনি দীর্ঘায়ু হোন।
লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ শিক সমিতি
No comments