প্রাকৃত থেকে বাংলা, তারপর... by মামুন রশীদ
টু-লেট, রুমমেট আবশ্যক, নিউ জড়োয়া হাউস, করিম রাইচ মিল, দি ঢাকা টিম্বার, রাশেদ এন্টারপ্রাইজ, এডমিশন গোয়িং অন, রাজধানী হেয়ার কাটিং, কুইন্স ফার্মা_ এ রকম নানা রকম সাইনবোর্ড প্রতিদিন পথের দু'পাশে চোখে পড়ে।
চোখ এগুলো সয়ে নিয়েছে। আমরা অভ্যসত্ম হয়ে গেছি এ রকম সাইনবোর্ডের ভাষায়। শুধু তাই নয়, এখন বেশিরভাগ সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড লেখা হয় ইংরেজীতে। বাংলা হরফে ইংরেজী লেখার পাশাপাশি ইংরেজী বর্ণমালাতেও কোন রাখ-ঢাক নেই। কোথাও বা বাংলা পুরোপুরিই উধাও।এ অবস্থা খুব বেশি দিনের নয়। মাত্র এক/দুই দশক আগেও প্রচুর বাংলা সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড চোখে পড়ত। ইংরেজী বানানে বাংলাও খুব একটা চোখে পড়ত না। আর সে সময় একুশে ফেব্রম্নয়ারির আগে আগে দোকানে দোকানে বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডের যেগুলো ভুল বানান থাকত তারা শঙ্কিত হয়ে পড়ত। কারণ একুশের প্রভাতফেরি থেকে ছেলেমেয়েরা ভুল বানানের সাইনবোর্ড ভেঙ্গে ফেলতে পারে। তাই শঙ্কিত প্রতিষ্ঠান মালিকরা নিজ উদ্যোগে ভুল বাংলা বানান সংশোধন করতেন। সাইনবোর্ডও লেখা হতো বাংলাতেই। সময় পাল্টেছে। এগিয়েছে, ওলোট-পালট হয়েছে অনেক কিছু। '৫২ সালে ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন আমাদের ভাই। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামও শুরম্ন হয়েছে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মদান থেকেই। স্বাধীনতার পর পেরিয়ে গেছে ৩৯ বছর। অথচ এখন আমাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় পাঁচ কোটির কাছাকাছি মানুষ বাংলা লিখতে পড়তে পারে না। এর মাঝে বাংলা ভাষা আনত্মর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। ২১ ফেব্রম্নয়ারি পেয়েছে আন্তুর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের ভাষাশহীদদের স্মৃতিতে আমাদের মাতৃভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গের আত্মত্যাগকে স্মরণ করা হয়। কিন্তু আমরা আমাদের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগের পূর্ণ মর্যাদা দেবার কথা আজও চিনত্মা করছি না। দেশ স্বাধীন হবার পর দেশের নানা স্থানে দেশপ্রেমিক ছাত্র-ছাত্রীরা দেশের নিরর মানুষকে সার করার আন্দোলনে নেমেছিল। ব্যক্তি পর্যায়ের সে উদ্যোগ এখন কমে এসেছে। সেই সঙ্গে ভাষার েেত্র আমাদের এক প্রকার উন্নাসিকতাও কাজ করছে। মাতৃভাষার প্রতি আমাদের অবহেলাও যেন চরমে। কাগজেকলমে বাংলার ব্যবহার থাকলেও তার প্রয়োগ ত্রে খুবই কম।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে নাম, ঠিকানা বাংলার পরিবর্তে ইংরেজীতে লেখার প্রয়োজন কেন, তাও কিন্তু সহজে বোঝার উপায় নেই। ষাটের দশকে দেশের প্রায় সব সাইনবোর্ড বাংলায় লেখা হতো। এই ধারা ছিল প্রায় আশির দশকের মাঝামাঝি পর্যনত্ম। সে ধারার আর কিছুই এখন অবশ্য নেই। হারিয়ে গেছে প্রায় সবই। এখন ইংরেজীতে সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড লেখার হিড়িক। কেউ আবার একটু এগিয়ে। তারা সাইনবোর্ড বা বিলবোর্ডে ইংরেজী শব্দ ইংরেজী অরে না লিখে বাংলায় লেখেন। বাংলা বানানে দিব্যি চালিয়ে দিচ্ছেন ইংরেজী শব্দমালা। জ্বলজ্বল করছে অরগুলো, যাকে ব্যঙ্গ করে অনেকে বলছেন বাংলিশ।
ভাষাপ্রেমিকদের দৃষ্টিতে এ এক ধরনের উদ্ভট মানসিকতা। মাতৃভাষার জন্য আমাদের ত্যাগ আনত্মর্জাতিক স্বীকৃতিলাভের পরও আমাদের কাছে, আমাদের প্রতিদিনের জীবনে বাংলা ভাষার ব্যবহার কমছে। উপেতি হচ্ছে বাংলা ভাষার চর্চা। এখন বাড়ির নাম থেকে কবরের এপিটাফ সবখানেই ইংরেজী। বাড়ি ভাড়া দেয়া হবে এ কথাটি পুরো শহর খুঁজেও পাওয়া যাবে না। সে স্থানটি দখল করেছে 'টু লেট।' আবার যেসব বিদেশী শব্দের পরিভাষা করা হয়েছে সেগুলোও বেশিরভাগ েেত্রই গ্রহণীয় হয়নি। তাই মহাবিদ্যালয়ের ধাপ পেরম্ননো ছেলে বা মেয়েরা বলে, সদ্য কলেজ পেরিয়েছি। আর এই ধাপ পার হয়ে তারা উচ্চশিার জন্য যে প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে তাও বিশ্ববিদ্যালয় না হয়ে হয়ে যায় ভার্সিটি। এখানেও বাংলা ভাষার শব্দটি চলে যায় ইংরেজী ভাষার দখলে। এ প্রসঙ্গে ড. মুহম্মদ এনামুল হকের একটি মনত্মব্য উদ্ধৃত করছি। তিনি পরিভাষা নিয়ে অভিযোগ করেছেন, "শিতি লোকেরা কোন বিদেশি বৈজ্ঞানিক শব্দের কোন বাংলা শব্দ তৈরি করে না। শুধু ইংরেজি তথা বিদেশি ভাষাকে অাঁকড়ে থাকার চেষ্টা করেছেন।" একুশের চেতনাকে সমুন্নত করে সর্বসত্মরে বাংলা ভাষার প্রচলন করতে হলে আমাদের পরিভাষা তৈরির বিকল্প নেই। আর পরিভাষার েেত্র প্রয়োজন ভাষার সৌন্দর্য রা এবং শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণয়। কারণ অনেক পরিভাষাই ভাষার সৌন্দর্যের অভাবে সাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। কারণ ভাষার সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন নতুন পরিভাষা। জ্ঞান শাখার বিসত্মারের জন্য এর প্রয়োজন। এ বিষয়ে গণমাধ্যমেরও দায়িত্ব অনেক। কারণ ভাষার প্রতি দায়িত্ব পালন না করে আমরা যদি শুধু ভাষার শহীদদের স্মৃতিতে স্মরণীয় ফেব্রম্নয়ারি মাস এলেই আবৃতি করে যাই 'মোদের গরব মোদের আশা আ-মরি বাংলা ভাষা।'
আমাদের বাংলা ভাষার পতাকা আজ বিশ্বে উড়ছে। তার কারণ একুশে ফেব্রম্নয়ারি। কিন্তু আমরা ক'জন শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলি? ক'জন ভাষা শুদ্ধ বানানে প্রিয় বাংলা লিখি? আজও সাইনবোর্ড, ব্যানার, বিজ্ঞাপন, পোস্টার, বিলবোর্ড, সংবাদপত্র সবখানেই ভুলের ছড়াছড়ি। ভুল বানানে লিখি 'প্রীয়'। আমরা বাংলা লিখছি যে যার ইচ্ছেমতো। অথচ ষাটের দশকেও সব দোকানে বাংলা সাইনবোর্ড ছিল। এখন দু'-একটা ছাড়া প্রায় দোকানেই ইংরেজী সাইনবোর্ড। বাংলা ভাষার অনেক শ্রম্নতিমধুর শব্দ রয়েছে। তার ব্যবহারও প্রচুর। কিন্তু এর ব্যতিক্রমও চোখে পড়ার মতো। বাড়ির নাম সমতট। কিন্তু এই নামটি বাংলায় লেখার পরিবর্তে পাথরে খোদাই করে ইংরেজীতে লেখা হয় ঝধসড়ঃধঃ। আমাদের সামনে এ ধরনের মানসিকতার নজির রয়েছে ভূরি ভূরি।
আমাদের বাংলা উচ্চারণেও তৈরি হয়েছে এক খিচুড়ি অবস্থা। এমনকি উচ্চশিা প্রতিষ্ঠানেও একই অবস্থা। সেখানেও বাংলা উচ্চারণে আঞ্চলিকতার প্রভাব। মান বাংলার প্রয়োগ সীমিত। আবার সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমের প্রভাবে নতুন করে তৈরি হওয়া নাগরিক কথ্য বাংলা প্রয়োগের প্রবণতাও বাড়ছে। ভাষা হচ্ছে বহতা নদীর মতো। ক্রমাগত এগিয়ে চলে আর বদলায়। এই একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকে এসে ভাষার বদলে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে আরো দ্রম্নত।
ভাষা আট কিলোমিটার পরপর বদলায়। ভাষাবিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে, ভাষার এই বদল হয় মুখের ভাষার েেত্র। ভাষার উচ্চারণের বেলায় এ পরিবর্তন হয়। তাই একই ভাষায় কথা বলা একই দেশের অধিবাসীরা বিভিন্ন উপভাষায় কথা বলে। পৃথিবীর প্রতিটি ভাষার েেত্রই এ ব্যাপারটি ঘটে থাকে। আমাদের ভাষাতেও আছে। আমাদের এক অঞ্চলের ভাষার সঙ্গে অন্য অঞ্চলের ভাষার অনেক পার্থক্য। নোয়াখালী, চট্টগ্রামের ভাষার সঙ্গে দিনাজপুর, রংপুর অঞ্চলের ভাষার রয়েছে ব্যাপক পার্থক্য। কিন্তু এই পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও আমরা একে অপরকে বুঝি বাংলা ভাষার মাধ্যমেই। আর সেটি হচ্ছে বাংলার মান ভাষা। আর অঞ্চলভিত্তিক ভাষাগুলো হলো আঞ্চলিক ভাষা।
এখন আমাদের ভাষার অবকাঠামো কি হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। আমরা কি সবেেত্র আঞ্চলিক ভাষাতে কথাবার্তা চালাব, নাকি একটি মান ভাষা ব্যবহার করব? কারণ গ্রহণীয় একটি মান ভাষা ছাড়া ভাষার শুদ্ধতা রা করা সম্ভব না। একটি শিশু যখন ভাষা শেখে তখন সে তার পরিবার এবং আশপাশের পরিবেশ থেকেই তা শেখে। তার শেখার পেছনে যেমন মা-বাবা ভূমিকা রাখে, তেমনি তার চারপাশের আত্মীয়স্বজন থেকে শুরম্নু করে স্কুলের শিকদের ভূমিকাও অনেক। শিশু যে পরিবেশে যাদের সঙ্গ পেয়ে বেড়ে ওঠে তাদের উচ্চারণ দ্বারা সে সরাসরি প্রভাবিত হয়। আবার যখন সে স্কুলজীবনে প্রবেশ করে তখন সেখান থেকে সে ভাষার উচ্চারণ প্রণালী শেখে। তার এই শেখার সোপান স্কুলের শিক। কারণ বাড়ির বাইরে সে যখন প্রথম শিখতে এবং জানতে শুরম্নু করে তা হয় শিকদের কাছ থেকে। তাই একজন শিক যখন আঞ্চলিক উচ্চারণে শিশুর কাছে তার পাঠ উপস্থাপন করেন তখন শ্রোতা হিসেবে শিশুটি সে ভাষাকেই আদর্শ মনে করে এবং সেটিই সে রপ্ত করে। ঠিক এমনিভাবে গণমাধ্যমও শিশুর ভাষা শিার েেত্র ভূমিকা পালন করে। বুদ্ধির বিকাশ পর্ব থেকেই শিশু এই জাদুর বাক্সের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। জাদুর বাক্স তাকে যা শেখায় সে অনেক েেত্রই তোতা পাখির মতো তা আউড়ায়। আকাশ সংস্কৃতির কল্যাণে এবং পরিবারের সদস্যদের কারণে শিশু যেসব অনুষ্ঠান দেখে তাতে করে হিন্দী এবং ইংরেজী শব্দভাণ্ডার তার কাছে জমা হয় বিপুল সংখ্যায়। তাই আজকের এই বিশ্বায়ন এবং তড়িৎ-গণমাধ্যমের জন্য ইংরেজী তার উচ্চারণভঙ্গি নিয়ে শিতি পরিবারের বৈঠকখানায় ঢুকেছে। এখন সেই স্থান থেকে তার শোবার ঘরে ঢুকতেও বেশি দিন লাগবে না।
বাংলা সাহিত্যের চর্চা, বিকাশ ও লালনের েেত্র মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ভূমিকা সব সময়ই উলেস্নখ করার মতো। এক সময় মধ্যবিত্ত পরিবারের শিতি বা অর্ধশিতি গৃহবধূ সময় ও সুযোগ পেলেই গল্প বা উপন্যাস নিয়ে বসতেন। দুপুরের খাবার শেষে অলস সময়ে অথবা রাতে ঘুমাতে যাবার আগে কিংবা কোন এক অলস মুহূর্তে মানে যে কোন অবসরে বই-ই ছিল মধ্যবিত্ত পরিবারের সঙ্গী। এখন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেছে সেই সঙ্গীটি। বইয়ের স্থান এখন নিয়েছে জাদুর বাক্স টেলিভিশন। তার দখল এখন আকাশ সংস্কৃতিতে। রাজধানী থেকে অজ পাড়া-গাঁ সবখানেই এখন টেলি-সংস্কৃতি। ঘরে ঘরে ডিশ এ্যান্টেনা। সুইচ টিপলেই ঝলমলে ছবি, চৌকস উপস্থাপকের উজ্জ্বল উপস্থিতি, বাহারি ভাষায় হরেক বিনোদন। সব পেশার মানুষ এখন অবসরে বেছে নিচ্ছে এ ধরনের বিনোদন। আর অধিকতর তরম্নণ এবং নতুন প্রজন্ম ঝুঁকছে ওয়েবনির্ভর সংস্কৃতির দিকে। ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ই-মেইল, বিভিন্ন ওয়েবসাইট তাদের পুরোপুরি বিনোদন এবং জ্ঞানের চাহিদা মেটাচ্ছে। আর এই নির্ভরতাই তাকে বাংলা ভাষার েেত্র নতুন করে ভাবতে শেখাচ্ছে।
ভাষার সঙ্গে জড়িত অর্থনীতি। ভাষার গতি পরিবর্তন করে অর্থনীতি। এক সময় রাজার পৃষ্ঠপোষকতায় ভাষা সমৃদ্ধ হতো। উপমহাদেশের ভাষাগুলোর কথাই যদি ধরি তাহলেও রাজপৃষ্ঠপোষকতার চিত্র চোখের সামনে ফুটে ওঠে। সংস্কৃত পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিল আর্য শাসকদের। কিন্তু সাধারণের সম্পৃক্ততা ছিল না সে ভাষার সঙ্গে। তাই সমৃদ্ধ এই ভাষাটি এখন শুধুই মন্ত্রের ভাষা। আবার বৌদ্ধ শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় সমৃদ্ধ হয়েছে পালি ভাষা। শেষাবধি জনগণের মুখের ভাষার কাছাকাছি ভাষা প্রাকৃত থেকে বাংলার উৎপত্তি। এই হাজার বছরের পুরনো ভাষাটি পেয়েছে আরাকান রাজসভার পৃষ্ঠপোষকতা, পেয়েছে সে সময়কার মুসলিম শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতা। তার গুণেই আজকে আমাদের ভাষার সমৃদ্ধতা। এখন রাজার পৃষ্ঠপোষকতা করার দিন ফুরিয়েছে। এখন রাজদণ্ড ধরে পৃথিবী শাসন করার চিত্র পাল্টেছে। এখন বিশ্ব শাসিত হয় অর্থনীতি দিয়ে। যে জাতি যত অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ সে জাতি সারা পৃথিবীর ওপর তত তার প্রভাব ছড়িয়ে দিতে সম। আর অর্থনৈতিকভাবে সবল জাতির মানুষদের সাথে সহজে যোগাযোগ করার প্রয়োজনেই শিখতে হচ্ছে তাদের ভাষা। দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলোর ভাষার ওপর সবল অর্থনীতির ভাষা প্রভুত্ব বিসত্মার করছে আজকের দিনে। এখন শাসনের হাতিয়ার অর্থনীতি। সেই নীতির ওপর ভর করেই ভাষা বিসত্মার।
সেলফোন এবং চ্যাটিং-এর মাধ্যমে দ্রম্নত পাল্টে যাচ্ছে ভাষা। সঙ্কুচিত হচ্ছে ভাষা। সেলফোনের এসএমএস সার্ভিস খুবই জনপ্রিয় একটি সুবিধা। চিঠির ব্যবহার কমে আসায় দ্রম্নতগতির এই শব্দবাণ এখন সবার কাছেই জনপ্রিয় এবং প্রয়োজনীয় একটি সুবিধা। উৎসব- পার্বণের কথা বাদ দিয়ে শুধু যদি সাধারণ সময়ের কথাও বলি তাহলেও এসএমএস সুবিধা নেন না এমন গ্রাহক কমই আছে। কথার চেয়ে এসএমএসের আলাদা আবেদন রয়েছে তরম্নণ-তরম্নণীদের কাছে। এসএমএস যেহেতু সংপ্তি বার্তা, তাই স্বাভাবিকভাবেই এখানে শব্দ সঙ্কোচনের ব্যাপার থাকে। আর এই সঙ্কোচন করতে গিয়ে ভাষা হয়ে পড়ছে সঙ্কেতনির্ভর। যধাব ধ ফবধঢ় ংষববঢ় হচ্ছে য্থাব ধ ফঢ় ংষঢ়. ঞড় নব ড়ৎ হড়ঃ ঃড় নব হচ্ছে ২ন ড়ৎ হড়ঃ ২ন, ুড়ঁহম হচ্ছে ুহম, আবার ঃধশব পধৎব ড়ভ ুড়ঁৎংবষভ হচ্ছে ঃপৎ ভ ঁৎংষভ. এমনিভাবে সেলফোনের মাধ্যমে ভাষা ক্রমশ সংপ্তি হয়ে উঠছে। এটা একদিকে যেমন ব্যবহারকারীর অর্থ সাশ্রয়ের জন্য, তেমনি পড়ার সুবিধার কারণেও ছোট স্কিনে লেখা । তবে একে ভাষার ওপর জোর জবরদসত্মি বলে মনে করছেন অনেকে। আবার অন্যদিকে এ রকম সংপ্তি ভাষা ব্যবহারের পওে যুক্তি কম নয়। আবার যাঁরা ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন তাঁদের মধ্যে চ্যাট করা খুবই জনপ্রিয়। চ্যাটিং-এর সুবিধার কারণেও তৈরি হচ্ছে সংপ্তি ভাষা। দ্রম্নত অন্যের প্রশ্নের জবার দিতে এবং নিজের প্রশ্নটি হাওয়ার ঘরে ছুড়ে দিতেই এই সংপ্তিতা। একে বাক্য গঠনের ওপর জবরদসত্মি হিসেবে মনে করার রণশীল মনোভাবের পাশাপাশি একে ভাষার উদার দিক বলার লোকেরও অভাব নেই। রণশীলরা মনে করছেন, শিশুরা যারা ভাষা শেখার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে তারা যদি ক্রমশ এই ভাষায় অভ্যসত্ম হয়ে ওঠে তাহলে মূল ভাষা এক সময় তাদের কাছ থেকে হারিয়ে যাবে। এতে একদিকে যেমন মূল ভাষা উচ্চারণ করার প্রবণতা কমে যাচ্ছে, তেমনি ভাষার ব্যাকরণ শেখার প্রবণতাও কমে যাচ্ছে। ফলে ভাষা তার কাঠামো হারিয়ে ফেলছে, যা একটি ভাষার মৃতু্য ডেকে আনছে। অন্যদিকে পরে মতেও রয়েছে যুক্তি। ভাষা যেহেতু বহতা নদীর মতো তাই এতে স্বাভাবিকভাবেই নতুন শব্দ আসবে। যে ভাষা যত বেশি গতিশীল সে ভাষার গ্রহণমতা তত বেশি। ভাষার এই গ্রহণমতা না থাকলেই বরং ভাষার মৃতু্য হওয়া স্বাভাবিক। আর কাঠামোর ভেতরে ভাষা চর্চা করারও পপাতী তাঁরা নন। পাণিনি, পতঞ্জলির বেঁধে দেয়া ছকে থেকে সবচেয়ে সমৃদ্ধ ভাষাগুলোর অন্যতম সংস্কৃতর মৃতু্য হয়েছে। তাই কোন বাঁধ নয়, বরং উদারনীতির পপাতী তারা।
প্রবীণরা এ ধারাকে সংস্কৃতির সঙ্কট বলছেন। অন্যদিকে তরম্নণরা তা মানতে নারাজ। প্রবীণরা বলছেন, এ ভাষার প্রতি অবহেলা। অন্যদিকে বিপরীত মত তরম্নণদের। তারা বলছে, এতে করে সমৃদ্ধ হচ্ছে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি। প্রবীণরা বলছেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের এখন দুর্দিন। আর অন্যপরে অভিমত, এতে করে ভাষা পেঁৗছে যাচ্ছে অনেক মানুষের কাছে সহজে। বাংলা ভাষার গ্রহণমতা অনেক বেশি। তবে এই গ্রহণের েেত্র তাই অর্থনীতির সূত্র ধরে স্বাভাবিকভাবেই প্রভাব পড়ছে বিশ্ব শাসন করা ইংরেজী ভাষার। যার প্রভাব এত বেশি যে রণশীলরা অাঁৎকে উঠতে বাধ্য হচ্ছেন ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের এই সদস্য বাংলার ভাষা নিয়ে। মূল ভাষা পরিবার থেকে ক্রমে ক্রমে বিবর্তন এবং মানুষের মুখে মুখে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আজকের বাংলা, যা প্রাকৃত ভাষার মাধ্যমে আজকের রূপ পেয়েছে। কিন্তু যে হারে এই ভাষা বিদেশী শব্দ আত্মস্থ করছে এবং গণমাধ্যমের বিশেষ করে ওয়েব এবং বেতারের মধ্য দিয়ে তরম্নণ-তরম্নণীদের কাছে ভাষার যে রূপ দেখা দিচ্ছে তাতে করে রণশীলরা প্রশ্ন তুলছেন, প্রাকৃত থেকে বাংলা পেয়েছি। কিন্তু তারপর কি?
সত্যিকার অর্থে দু'পরে তর্কই জোরালো এবং দীর্ঘমেয়াদী। কোন্ দিকের যুক্তির পালস্না ভারি অথবা কোন্টি সঠিক তার বিচার সময়ের হাতে ছেড়ে দেয়া ছাড়া আমাদের কি-ই বা করার আছে আপাতত?
সধসঁহথৎধংযরফ৩০০০@ুধযড়ড়.পড়স
No comments