বিএনপির প্রতিক্রিয়ার চিঠি এখন পাকিস্তান হয়ে মধ্যপ্রাচ্যে by মুহম্মদ শফিকুর রহমান
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনীদের ফাঁসি হয়েছে দু'সপ্তাহ পার হয়ে গেল। বিএনপি বা তার নেত্রী ম্যাডাম খালেদা জিয়ার কোন প্রতিক্রিয়া আমরা জানতে পারলাম না।
আপোসহীন কুলুপ এঁটে বসে আছেন মুখে। রাজনীতি করেন, বিএনপিকে রাজনৈতিক দল বলে দাবি করেন, এমনকি এ দলে এমন আনাড়ি নেতাও আছেন যাঁরা আওয়ামী লীগের চেয়েও বৃহত্তম রাজনৈতিক দল দাবি করেন নিজেদের, তাঁরা প-েবিপ েকোন মন্তব্য করবেন না, তাহলে বলতে হবে এটি কোন রাজনৈতিক দল নয় আর নেতারাও নেতা নন। খুনীদের ফাঁসি হওয়ায় দেশব্যাপী যখন মসজিদ-মন্দির-মঠ-গির্জায় দোয়া প্রার্থনা হয়েছে, হচ্ছে, মানুষ মিষ্টি খেয়ে-খাইয়ে শুকরিয়া আদায় করছে আনন্দ করছে তখনও একেবারে নীরব থাকাটা কি কোন রাজনৈতিক দল এফোর্ড করতে পারে?জামায়াতের কথা আমি বলি না, কারণ এটিকে আমি রাজনৈতিক অর্থে দল মনে করি না। পবিত্র ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে সাধারণ ধর্মভীরু মানুষকে বিভ্রান্ত করে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের চক্র এটি। এর নেতাদের দিকে তাকালে বোঝা যাবে, কি জিনিস ওগুলো। ওরা প্রতিক্রিয়া জানাল কি জানালো না তাতে বাঙালী জাতির কিছু আসে যায় না। আওয়ামী লীগের তো নয়-ই। মীর জাফর আলী খাঁ 'মীরজাফর' (মুনাফিক-বিশ্বাসঘাতক অর্থে) হয়েছিল আড়াই শতাধিক বছর আগে ১৭৫৭ সালে। আজও কোন বাঙালী সন্তানের নাম 'মীরজাফর' রাখে না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ৪০ বছর পূর্ণ করতে চলেছে। এই সময়েও কোন সাচ্চা বাঙালী নিজ সন্তানের নাম গোলাম আযম-নিজামী মুজাহিদ রেখেছে এমন নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না। স্বাধীনতার আগে থেকে আছে এমন নামেরও অপারেশন করে সুদ্ধ করা হতে দেখেছি। বেশি ধিক্কৃত শব্দ যেমন 'গোলাম'-'নিজামী' 'মুজাহিদ' 'সাঈদী' এগুলোর উপর কাঁচি চলেছে বেশি।
এমন কি স্বাধীনতার পর কোন রাজাকার-আলবদর-আল শামস, শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান-মেম্বার কিংবা ঠ্যাটামালিক্কার মন্ত্রিসভার সদস্যও তার সন্তানের নাম গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদ রেখেছে বলেও চোখে পড়ে না। ঐ নামের মানুষেরা এতটাই মতলববাজ ভণ্ড যে গরিব মানুষের সন্তানদের ইসলামী শিা (?) দেয়ার নাম করে ইকরা, মানারাত, আল-আমীন, আল-গাজ্জালী, নুরানী, আদর্শ একাডেমী, মডেল একাডেমী নাম দিয়ে গ্রামে-গঞ্জে অসংখ্য মাদ্রাসা বা শিা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে গরিব মানুষের সন্তানদের ভর্তি করাচ্ছে, কোথাও বিনা বেতনে, কোথাও থাকা-খাওয়াসহ বিনা খরচে। লিল্লাহে। প্রশ্ন আসে টাকা পায় কোথায়? এটাও আজ আর গোপন কিছু না_ ওপেন সিক্রেট। পাকিস্তান, কুয়েত, সৌদি আরব, লিবিয়া, রাবেতা আলমে ইসলাম, ইসলামিক রিভাইবালিজম প্রভৃতি বহির্বিশ্বের গৌরী সেন ও সেনারা। এই সব মাদ্রাসা থেকে যারা পাস করে বেরোচ্ছে তারা কর্মজীবনের কোথাও দাঁড়াতে পারছে না। কর্ম-পঙ্গুত্ব বরণ করে সামাজিক বোঝা হয়ে বাঁচতে হচ্ছে। পান্তরে আধুনিক নামের শিা প্রতিষ্ঠানগুলো (যার মধ্যে কিছু ইংলিশ মিডিয়ামও রয়েছে) থেকে যারা বেরোচ্ছে তারা প্রতিদ্বন্দি্বতায় টিকে সরকারের বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত হয়ে প্রশাসনের কাঁটা হয়ে আছে। এ ধারা আজও অব্যাহত আছে। অথচ অথচ অথচ অই গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদরা তাদের নিজের সন্তানদের আধুনিক প্রচলিত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়ে উকিল-ব্যারিস্টার-মাস্টার বু্যরোক্রাট বানাচ্ছে আর সমাজে ছড়ি ঘুরাচ্ছে।
কিন্তু বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল-এর প্রতিক্রিয়া জনগণ আসা করে। কারণ সামরিক ছাউনিতে জন্ম নিয়ে মিলিটারি শাসনের অর্থে অস্ত্রে যাত্রা শুরু করলেও দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় দলটি আজ একটা অবস্থানে এসেছে। এ দলে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের একটা সমাবেশও ঘটেছে জেনারেল জিয়াউর রহমানকে কেন্দ্র করে। যদিও সবাই জানে এদের আদর্শ পরাজিত পাকিস্তান ও তার নেপথ্য শক্তিগুলো। জিয়ার মুক্তিযুদ্ধের ইমেজ দিয়ে তার সবটুকু ঢাকা যায়নি।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা তা হাজার বছর ধরে এই গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের মানুষের সংগ্রাম-আন্দোলন দুঃখ-বেদনা জীবনসংগ্রামের মাধ্যমে গড়ে ওঠা এক অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ভাবনা। মহান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে টুঙ্গিপাড়ার শেখের বেটার নেতৃত্বে যা বাঙালীর জাতিরাষ্ট্রের স্বপ্নে রূপান্তরিত হয় এবং চূড়ান্ত বিচারে একাত্তরের দুনিয়া কাঁপানো অসহযোগ আন্দোলন ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সেই স্বপ্ন বাস্তব রূপ ধারণ করে। টুঙ্গিপাড়ার শেখের বেটা হয়ে ওঠেন বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা থেকে বঙ্গবন্ধু ও জাতির জনক। যার প্রতিফলন ঘটে আমাদের বায়াত্তরের সংবিধানে।
এ জায়গাটাতেই জিয়া ও তার চেলা-চামুন্ডাদের ভয়। (যারা এসেছে স্বাধীনতা-বিরোধী মুসলিম লীগ, জামায়াত ও মশিউর রহমানের নেতৃত্বে ভাসানী ন্যাপের একটি অংশ এবং পাকিস্তানী মানসিকতার কিছু আমলা-কামলা থেকে। এদের অধিকাংশই মুক্তিযুদ্ধকালীন ঘৃণিত রাজাকার-আলবদর-আলশামস বা তথাকথিত শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান-মেম্বার। এদের কেউ সরাসরি জিয়ার দলে নাম লেখায় কেউবা নিজ নামের পুনজর্ীবন ঘটিয়ে জিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে শক্তি যোগাতে থাকে)। কাজেই বঙ্গবন্ধু যে রাজনীতি, নীতি, রাষ্ট্রাচার দিয়ে গেছেন তাকে এদের বড় ভয় হবে তাই তো স্বাভাবিক। তাই তো জিয়া মতায় এসেই (মোশতাকের সময়ও মতাধর ছিল এবং বঙ্গবন্ধুর খুনীদের পেছনের মানুষ ছিলেন তিনি) মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলোকে একে একে ধ্বংস করে চললেন। যেমন :
ক. প্রথমেই আঘাত হানা হলো মিডিয়ার ওপর। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত 'বাংলাদেশ বেতার' নামটি পাল্টে 'রেডিও-বাংলাদেশ' করা হলো। রেডিও-বাংলাদেশ নামে আমার আপত্তি নেই, কারো থাকার কথা নয়, কিন্তু এর পেছনে সেই পাকি মানসিকতা কাজ করেছে বলেই।
খ. বেতার-টিভিতে অলিখিত নির্দেশ জারি করা হলো কিছুতেই 'বঙ্গবন্ধু' 'জাতির জনক', 'বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা' এসব বলা যাবে না, প্রচার করা যাবে না। আর এই সুযোগে বেতার-টিভির এক শ্রেণীর কর্মচারী যারা শেখ মুজিবুর রহমান নামের একটি মানুষ ছিলেন তা-ই জনগণকে ভোলানোর গুরুদায়িত্বটা নিয়ে নিলেন।
গ. জিয়া সাহেব এবার হাত দিলেন সংবিধানে। প্রথমেই তিনি পাকিস্তান, সৌদি আরাবিয়া প্রভৃতি দেশকে খুশি করার ল্যে সংবিধানের মাথায় 'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম' লিখে দিলেন। একজন মুসলমান হিসেবে 'বিসমিল্লাহ' আমার প্রাণ। আমার দিন শুরু বা যে কোন কাজ শুরুর আরাধনা। আমি তা পালন করারও চেষ্টা করি। কিন্তু এই সংযোজনের মাধ্যমে হিন্দু সম্প্রদায় থেকে শুরু করে অন্য সব ধমর্ীয় সম্প্রদায়, পাহাড়ী-আদিবাসী জনগোষ্ঠী নিজেদের প্রথম শ্রেণীর নাগরিক ভাবা থেকে বিচু্যত হয়ে গেল। পবিত্র ইসলাম কি তা সমর্থন করে?
ঘ. বেতার-টিভিসহ সরকারী মিডিয়ায় আমাদের রণধ্বনি 'জয় বাংলা' বলা যাবে না। বলতে হবে আবার সেই পাকি স্লোগান 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।'
'বাঙালী জাতীয়তাবাদ' বলা যাবে না, বলতে হবে 'বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ।' এর কোনটাতে আপত্তি নেই। এই স্লোগানটিতে পাহাড়ী-আদিবাসীদের খুশি হবার কথা। কিন্তু এখানেও পাকিস্তানী রাষ্ট্রাচার প্রতিষ্ঠার হীন উদ্দেশ্য।
ঙ. ধর্মনিরপেতার বিকৃত ব্যাখ্যা দিলেন তিনি।
চ. স্বাধীনতার পর যে সব শিল্প-কারখানায় জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠার ল্যে রাষ্ট্রীয়করণ বা জাতীয়করণ করা হয়েছিল সেগুলো আবার পানির দামে দালাল-লুটেরাদের কেনার সুযোগ করে দিলেন। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয়করণের বিপরীতে বিরাষ্ট্রীয়করণ আইন পাস করলেন।
ছ. দালাল আইন বাতিল করে দিয়ে গোলাম আযম, শাহ আজিজুর রহমান, হামিদুল হক চৌধুরীদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিলেন বা ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করলেন।
জ. সাজাপ্রাপ্ত, বিচারাধীন বা আটক হাজার হাজার যুদ্ধাপরাধীকে কারাগার থেকে ছেড়ে দিলেন। এমনিভাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রাগ্রসরমান চেতনার ধারা থেকে বাংলাদেশকে পাকি-পশ্চাদপদ ধারায় নিয়ে যাবার জন্যে জিয়াউর রহমান হেন কম্মটি নেই করেননি। এই জিয়াউর রহমানই তো জাতির জনক ও জাতীয় ৪ নেতার খুনীদের বিদেশী দূতাবাসে চাকরি ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন।
খালেদা জিয়া কি এই ধারা থেকে এক চুল সরেছেন? না, বরং আরেক ধাপ এগিয়ে খুনী-জামায়াতী যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী-এমপি বানিয়ে তাদের গাড়িতে শহীদের রক্তরাঙা জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে জাতিকেই অপমান করেছেন।এত গেল এক দিক। আরেকদিকে তাকালে আমরা কি দেখতে পাই। বিএনপির বিভিন্ন সময়ে কতবার শেখ হাসিনার জীবনের ওপর আঘাত এসেছে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা দুঃসহ প্রবাস জীবন থেকে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দেশে আসেন। সেই থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম, নাটোর, ৩২নং বঙ্গবন্ধু ভবন, জামালপুর, কোটালিপাড়া, রাসেল স্কোয়ার, বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ প্রভৃতি স্থানে অন্তত ১৯ বার তাঁর উপর গুলি-বোমা-গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছে। নিশ্চয়ই তাঁকে পুরস্কৃত করার জন্যে নয়, হত্যা করার জন্যেই। কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে রা করেছেন, হায়াত দারাজ করেছেন_ আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু তাঁরই দলের অত্যন্ত সফল অর্থমন্ত্রী শাহ এএসএম কিবরিয়া এমপি, জনপ্রিয় শ্রমিকনেতা রাজনীতিক আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপি, মমতাজ উদ্দিন আহমেদ (সাবেক) এমপিসহ, দেশব্যাপী অসংখ্য নেতাকমর্ীকে হত্যা করা হয়েছে।
জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্যে কোটালিপাড়ায় যে ২টি মাইন পোঁতা হয়েছিল একেকটির ওজন ছিল ৮৬ কেজি। ২১ আগস্ট একটার পর একটা গ্রেনেড হামলার পাশাপাশি বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করা হয়েছিল তাঁকে টার্গেট করে এবং দলের অন্যতম জনপ্রিয় নেতা এবং বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের জনপ্রিয় নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৩ জন নেতাকমর্ী নিহত এবং জননেত্রীসহ তিন শতাধিক নেতাকমর্ী আহত হয়েছেন এবং অনেকেই ত-যন্ত্রণা নিয়ে আজও বেঁচে আছেন। ঢাকার প্রথম সরাসরি ভোটে নির্বাচিত মেয়র তথা সবচে জনপ্রিয় ও মান্যবর মেয়র মোহাম্মদ হানিফসহ অনেকে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার নিয়ে অকালে মৃতু্যবরণ করেছেন। আর এই গ্রেনেড হামলা সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচার তো দূরের কথা খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতেই পার্লামেন্টে কয়েকজন গ্রাম্য টাউটের মতো কুৎসিত ভঙ্গিতে বলছিলেন শেখ হাসিনাই নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন? মন্তব্য নি্#৬৩৭৪৩;্রয়োজন! হাওয়া ভবনের জজ মিয়া নাটক তো উচ্চারণ করতেও ঘৃণা হয়। বস্তুত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ছিল শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার গভীর চক্রান্ত।
মাঝে-মধ্যে টেলিভিশনের টক-শো দেখি। তাও যদি দেখি ভাল লাগছে। সব ভাল লাগে না বলে সব দেখিও না। যেমন সাম্প্রতিককালে আঃ লীগের মাহবুবুল আলম হানিফ বনাম বিএনপির মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং আওয়ামী লীগের নূহ-উল আলম লেনিন বনাম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা জনৈক ব্যারিস্টার (নাম মনে নেই) টক-শোগুলো ভাল লেগেছে। আরও একটি ভাল লেগেছে আওয়ামী লীগের শাহজাহান খান বনাম বিএনপির একজন (নাম মনে নেই)। মনে হয়েছে এঁরা টক শোতে যাবার আগে হোমওয়ার্ক করে গেছেন। কিছু কিছু উঁচু মার্গের টক শো আছে যেখানে 'সরকার ইহা করিয়া ভুল করিয়াছেন উহা করিলে ভাল করিতেন'_ এমন সব উপদেশ দেন যেন ওনারা দায়িত্ব পেলে এক ঘন্টার মধ্যে সব ঠিকঠাক জু-জুহুর হয়ে যাবে। অথচ এঁরা সরকারের বিভিন্ন ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন কেউ কেউ। এসব বলার পেছনে আমার উদ্দেশ্য হলো এইসব টকারগণ পার্লামেন্টে বিএনপির না-যাওয়ার জন্যে ৯০ ভাগ দায়ী করছেন শেখ হাসিনাকে। কিন্তু যে যে কারণ বা দাবিতে তাঁরা পার্লামেন্ট বয়কট করল বা করছে সেগুলো কতটা যৌক্তিক বা জনগুরুত্বসম্পন্ন তা কি টকাটকিতে আসছে? না, বরং দেখি সরকারকে এমনকি সরকারের চেয়ে সরকারপ্রধানকেই বেশি টার্গেট করা হচ্ছে।
গত সোমবার গুলশানের হোটেল লেকশোতে বিরোধীদলীয় নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। ছবি দেখে মনে হয়েছে জমজমাট। মতের আদান-প্রদান, প্রশ্ন-প্রশ্নোত্তর সবই ছিল। বেশি ছিল পার্লামেন্টে যাওয়া নিয়ে। কিন্তু গতকালের (বুধবার) অন্তত তিনটি পত্রিকা পড়ে কোথাও বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসি কার্যকর সম্পর্কে কেউ কোন প্রশ্ন করেছেন বা মত দিয়েছেন এমনটি দেখিনি। না, বেগম জিয়ার প থেকেও না, আমাদের সংবাদপত্রের দিকপালদের মধ্য থেকেও না। এমন একটি শীর্ষ প্রেস কনফারেন্স বা মতবিনিময় সভায় বিষয়টি খুবই অপ্রাসঙ্গিক ছিল কি? ২০০৯ সালের সবচে আলোচিত ইসু্য বলুন আর জনদাবি বলুন তা ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য শুরু করা। সরকারও প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন বলে জেনেছি। কই খালেদা জিয়ার মতবিনিময়কালে এটিও অপ্রাসঙ্গিক ছিল কি? না, ওটা মানসিকতার ব্যাপার। না-কি চান না?
আমার এত সব সাতকাহনের উদ্দেশ্য হলো খালেদা জিয়া কোন প্রতিক্রিয়া দিতে পারছেন না বা পারবেন বলে মনেও হয় না। দিতে হলে তো পাকি-প্রশাসনের অনুমতি লাগবে। পাকিরা আবার তাদের মিত্রদের সমর্থন নিতে হবে। মনে হয় এ প্রক্রিয়ায় পড়েই বেগম জিয়ার প্রতিক্রিয়ার চিঠিটি এখন পাকিস্তান হয়ে মধ্যপ্রাচ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
লেখক : ফ্রি-ল্যান্স সাংবাদিক
No comments