অভিমত- ঢাবির মেধাবী ছাত্র আবু বকর সিদ্দিক
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি এবার উদযাপিত হবে অন্যভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গরিব মেধাবী ছাত্রের তাজা খুনের শহীদী ভাবগাম্ভীর্যে। নিজ ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাসীদের হাতেই জীবন দিতে হল আবু বকর সিদ্দিক নামের এক মেধাবী ছাত্রকে।
পত্র পত্রিকায় জেনেছি শহীদ আবু বকরের বাবা-মা বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসি হওয়ায় আলস্নাহর দরবারে মোনাজাত করেছিলেন।ইদানীং ছাত্রলীগের কার্যক্রমে মনে হয় সংগঠনটি সন্ত্রাসী দানবে পরিণত হয়েছে। শুধুমাত্র ৰমতা, অর্থের লোভে তারা যে কোন কাজ করতে পারে। বন্দুকের নল ঘুরিয়ে দিতে পারে। নিরাপত্তা এলাকার মধ্যে তাদের ঢুকতে যেন না দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু রৰীবাহিনী গঠন করে নিজ দলের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের, বিপথগামীদের নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন। ইতিহাসের মহৎ মানবিক প্রাণ কঠোর ব্যবস্থা নিতে কোন দুর্বলতা প্রকাশ করেননি। অক্টোপাসের মতো চারদিক থেকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা এক বছরের অধিক সময় ধরে অবাধে হত্যা, খুন, টেন্ডারবাজি করে চলেছে। ৰমতা শক্তির কোন যোগাযোগ ছাড়া বুক ফুলিয়ে ছাত্র হত্যা করা যায় না। সিলেটের পুণ্যভূমিতে যেদিন বিএনপি-জামায়াত জোটের পৃষ্ঠপোষকতায় একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক শাহ কিবরিয়াকে হত্যা করেছিল সেদিনই পতনের সূচনা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যখনই কোন ছাত্র শহীদ হয়েছেন তখনই ৰমতাসীন সরকারের প্রতি অভিশাপ নেমে এসেছে। নিহত হওয়ার পর কয়েকদিন চলে গেছে। বিশ্বাস জন্মানোর মতো কোন শুভ উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। গতানুগতিক তদনত্ম কমিটি গঠন, উল্টাপাল্টা বিবৃতি_ এই তো চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মনে করছে সময়ে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
ছাত্রলীগ কারা নিয়ন্ত্রণ করছে? দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার, ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা, পেশার সন্ত্রাসীরা কোন পদ্ধতিতে মিলেমিশে একটি শক্তিতে পরিণত হয়েছে। উলফা নেতাদের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছিল। সরকারের ভাল কাজকে ধ্বংস করতে এরা গোপন মিশনে কাজ করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিৰার পরিবেশ নষ্ট করছে। সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে। আমরা সবাই তা বিশদভাবে জানি। সংবাদ মাধ্যমে আগাম পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল।
আশ্চর্য হয়েছি, সবকিছু সাদামাটাভাবে দেখা হচ্ছে।
ভাষা আন্দোলনের মহান ফেব্রম্নয়ারি মাসে ইতিহাস আলোচনা করলে দেখা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহ আমাদের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধকে অনিবার্য করে তুলেছিল। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত হত্যাকা-ের প্রাকৃতিক পরিণতি নিয়ে এতটুকু বিচলিত হচ্ছি না। কোন মানবিক দায়িত্ববোধ নিয়েও ভাবছি না। এমনকি মূল শিকড় উৎপাটনের লৰ্যেও কাজ করছি না। নিষ্ঠুরতম হত্যাযজ্ঞ পিলখানার শিৰাও কাজে লাগাতে পারছি না। যারা বন্ধু, যারা সমর্থক, যারা সহানুভূতিশীল তাদের কথাও শুনছি না। তরম্নণ প্রজন্ম যারা আমাদের সাথে ছিল, ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখত।
মানবতার বিরম্নদ্ধে অপরাধ করায় তারা আমাদের বিচার দাবি করছে। পুরনো জমানার হত্যার রাজনীতির পরিবেশ দেখে ৰুব্ধ হচ্ছে। ত্রিশ লাখ শহীদের শপথে উদ্দীপিত হয়ে বলছি শহীদ আবু বকর সন্ত্রাসী ছাত্র রাজনীতির কারণে অন্যায়ভাবে খুন হয়েছে। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কারও নিরাপত্তা নেই। এরা দেশের শত্রম্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শত্রম্ন। গণতন্ত্রের শত্রম্ন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এদের বিরম্নদ্ধে রম্নখে দাঁড়ান।
গ্রামের মানুষের, কৃষকের, শ্রমিকের, মেহনতির সনত্মানকে স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর মর্মন্তুদ কাহিনী আমাদের অনত্মরকে রক্তাক্ত করেছে। গ্রামে ফিরে দিনমজুরের কাজ করে বাবা-মাকে কিছুটা হলেও সাহায্য করার দৃষ্টানত্ম আমাদের এ যাবতকালের সকল অর্জনকেও পিছনে ফেলেছে। খুনীদের যারা আড়াল করার চেষ্টা করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এদের কাউকেই ৰমতা করবে না। ছাত্রলীগকে পুনর্গঠন করলে আবু বকর সিদ্দিকের কি লাভ হবে; তার বাবা মায়ের কি লাভ হবে? দেশের মানুষের কি লাভ হবে? সময় এসেছে ভেতরের যা কিছু সংশয়, যা কিছু দুষ্ট ৰতের, যা কিছু ধ্বংসের তাকে জাতির জনকের নৈতিক শক্তির জোরে আঘাত করে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। পুণ্যের মাটিতে অনাগত ভবিষ্যতের সাধনা করা। জনগণ কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করছে ৰমতার রাজনীতির অলিন্দে মানবিকতার প্রথম আলো উত্তরণ নিয়ে আসুক।
ধানমণ্ডি, ঢাকা
শিরোনামটি পড়ে...
শেখ আবদুল খালেক ॥ বাংলা ভাষায় একটা প্রবাদ আছে। প্রবাদটি সকলের কাছে পরিচিত 'চোরের মার বড় গলা' এর অর্থ সকলের জানা আছে। প্রবাদটির কথা নতুন করে বলার কারণ হলো_ সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী। যাকে নতুন করে পরিচয় করে দেয়ার প্রয়োজন হবে না। নিজ গুণেই সকলের পরিচিত। বর্তমান সময়ের আলোচিত ব্যক্তিদের অন্যতম এই সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। বিগত নির্বাচনে তার মনোনয়ন পত্রের শিৰাগত যোগ্যতার ৰেত্রে উনি 'নাই' লিখেছেন। তার মানে দাঁড়ায় ওনার কোন শিৰাগত যোগ্যতা নাই। আর যদি ওনার শিৰা থেকে থাকে মানে উনি যদি শিৰাগ্রহণ করে থাকেন, তা হলে উনি মিথ্যা বলেছেন। তাই একজন মিথ্যাবাদীর বক্তব্য নিয়ে কথা বলার ইচ্ছা আমার কখনই ছিল না। কিন্তু কথা বলতেই হচ্ছে যখন উনি দেশপ্রেম নিয়ে কথা বলেছেন তখন। গত ৩০/০১/১০ তারিখে 'দৈনিক আমার দেশ' পত্রিকার খবর পড়ি। খবরের শিরোনাম ছিল "চাঁদপুরে সাকা চৌধুরী_ যারা দেশ স্বাধীন করেছিলেন তাদের বিচার হয়েছে।" শিরোনামটি পড়ে প্রথমে মর্মাহত হয়েছিলাম। কিন্তু তা বিসত্মারিত পড়ে কি হয়েছে এখনও বুঝে উঠতে পারছি না।
উনি যেন মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের কর্মকা-ের একটা বিবরণ দেন। তা হলে দেশের জনগণ বুঝতে পারবেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং তার বাবা কি? ইসলামে চুরি করলে হাত কেটে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ইসলাম বলেছে হাতের বদলে হাত, চোখের বদলে চোখ, জানের বদলে জান। আর আমাদের দেশে আইন হলো হত্যার শাসত্মি মৃতু্যদ- এবং তাই দেয়া হয়েছে। যারা দেশ স্বাধীন করেছে তারা অন্যায় করতে পারে না। এই ধারণা সাকা কোথায় পেল? আমরা ইতিহাসের দিকে তাকালে কি দেখতে পাই। সীমার যখন ফোরাত তীরে হযরত ইমাম হোসাইনকে (রা) শিরশ্ছেদ করেন, তারপর সে কিন্তু আসরের নামাজ পড়েছিল। তাই বলে কি তাকে ধার্মিক বলা যাবে? সে তো কাফের। আর বাংলাদেশের ইতিহাসর দিকে যদি তাকাই তা হলে কি দেখতে পাই "কর্নেল তাহের, মেজর হুদা, মেজর জামিল, খালেদ, মোশাররফ, মেজর মঞ্জুরসহ যারা সাত (৭) নবেম্বর এর ঘটনায় নিহত হয়েছেন। সেই ইতিহাস এত তাড়াতাড়ি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ভুলে গেলেন কিভাবে? তাদের পরিবারবর্গকে বিমান বাহিনীর বিদ্রোহের কথা বলে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। তারা কি দেশপ্রেমিক ছিলেন না? তা হলে তাদের হত্যার বিচারের দাবি না করাটা কি অর্বাচীনের কাজ নয় আজ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার বাবার হত্যার বিচার দাবি করেন কেন? আপনারা তো দীর্ঘদিন ৰমতায় ছিলেন। তখন বিচার করতে পারলেন না। আপনার কাছে যেমন আপনার বাবা প্রিয় ঠিক তেমনি শেখ হাসিনার কাছে তার বাবা, মা, ভাই, ভাবী, ফুফা, সবাই প্রিয়। বাংলাদেশ শুধু নয় বিশ্বের ইতিহাসে এত বড় একটা হত্যাকা-ের নজির দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যায় না। তারপরও সেই হত্যাকা-ের বিচারের পথ রম্নদ্ধ করা হয়েছিল ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে। কিন্তু যখন উনি বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করে কথা বলেছেন, তখনই ইচ্ছে হলো একজন রাজাকার, মুক্তিযোদ্ধা বলে পরিচয় দিতে এখনও বুক কাঁপে না? অনত্মত এ হিসেবে এর প্রতিবাদ করা উচিত। যে দেশে নিজামী মুজাহিদ, কামরম্নজ্জামান, কাদের মোলস্না, দেলোয়ার হোসোইন সাইদী_ বীরদর্পে ঘুরে বেড়ায় আর সালউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবরা বীরদর্পে চলে সেখানে মুক্তিযোদ্ধা বলাটাই লজ্জাজনক বলে মনে করি।
মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা এনেছেন_ এ কথাটা বলে সাকা চৌধুরী ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মাকে কয়েকজন রাজাকার বাদে সকল বাংলাদেশীকে অসম্মান করেছেন। কারণ এ কথা একজন অর্বাচীন ও বিশ্বাস করে না যে মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা এনেছেন। হঁ্যা তিনি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন। তিনি একজন উঁচুমানের মুক্তিযোদ্ধা এবং একজন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। তাই সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর উদ্দেশে বলছি, আপনি কেবল একজন ব্যক্তিই নন, আপনি একজন নেতাও। তাই শুধু হাততালি পাবার জন্য ক্যানভাসারের মতো বক্তব্য না দিয়ে বস্তুনিষ্ঠ বক্তব্য রাখুন। তা না হলে সেই মাসিমার গল্পের মতো হবে। গল্পটি দিয়ে সমাপ্তি টানছি। এক মাঝির অনেক টাকা ছিল। তবুও এলাকাবাসী তাকে মাঝি বলে ডাকত। তাতে সে ত্রম্নদ্ধ হতো। ৰিপ্ত হয়ে সে অন্যত্র চলে গেল। ব্যবসার উদ্দেশ্যে একঘাটে নৌকা ভিড়াল। তার নৌকা এমনিভাবে ভিড়াল যে অন্য কোন নৌকা ভিড়ানো যায় না। ফলে অন্য নৌকার মাঝিরা উক্ত নৌকার মাঝিকে মহাজন মহাজন ডেকে নৌকা সোজা করতে বলল। তাতে প্রথম নৌকার মাঝি কর্ণপাত না করায় পুনরায় তাকে মাঝির বাচ্ছা মাঝি আখ্যায়িত করে ডাকতে থাকল।
ডাইংরোড, ঢাকা
No comments